Monday, June 26, 2006

প্রমিত বাংলায় চ, ছ, জ, ঝ-ধ্বনি: ঘৃষ্ট না স্পৃষ্ট

বাংলাদেশের বেশির ভাগ ধ্বনিতাত্ত্বিকেরা বলে থাকে চ-ধ্বনিটি তালব্য স্পৃষ্ট ধ্বনি। সংস্কৃতে একসময় ব্যাপারটি তাই ছিল, অন্তত বইয়ে তেমনটিই পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলায় সেটি হবার জো খুব কম। আগের দিনের ধ্বনিতাত্ত্বিকেরা, বিশেষত বাংলাদেশের, তাই বিশ্বাস করত এবং এখনকার ধ্বনিতাত্ত্বিকেরাও তাই লিখে আসছে। সম্ভবত এ কারণে যে যুক্তির পক্ষে আগেরজনের লেখা থেকে সমর্থন নেওয়া যায়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে ধ্বনিটি তালব্য ঘৃষ্ট, যদিও এসময়ের অনেকেই, বিশেষত বাংলাদেশের বাইরে ভাষাতাত্ত্বিকেরা একে দন্তমূলীয় ঘৃষ্ট বলে উল্লেখ করে। পিটার লাডিফোগিডকে বাংলার ধ্বনিটি কি তা জিজ্ঞেস করায় তার উত্তর ছিল, আমি বাংলা ধ্বনিটি শুনিনি, তবে হিন্দি ভাষার ধ্বনিটি অবশ্যই ঘৃষ্ট, ইংরেজিতে যাকে অ্যাফ্রিকেট বলে। ছ, জ এবং ঝ ধ্বনিটিও ঘৃষ্ট হবে।

Saturday, June 24, 2006

বাংলা বর্ণমালার প্রায় না-ব্যবহৃত অক্ষর

বাংলা ভাষার বর্ণমালায় তিনটি প্রায় না-ব্যবহৃত অক্ষর আছে। এই তিন হরফের ব্যবহার তেমন একটা চোখে পড়ে না। দুটি ঌর ব্যবহার তো বাংলায় নেই-ই। দুটি ঋ-র ব্যবহার আছে কেবল বাংলা হরফে লেখা সংস্কৃত ভাষায়। বাংলা হরফে লেখা সংস্কৃত বই বাংলা হরফেরই সম্পদ, এটি কিন্তু ভুললে চলবে না। ঌর ব্যবহার অন্তত দুটি বাংলা শব্দে অভিধানেই পাওয়া যাবে। কৢপ্ত বা সংকৢপ্ত, যা কিনা লি দিয়ে যেমন ক্লিপ্ত বা সংক্লিপ্ত লেখা যায়, জ্ঞানেন্দ্রমোহন আর হরিচরণের অভিধানে। এর আরও ব্যবহার দেখা যায় পুরনো পুথিতে, যেগুলো বাংলা ভাষার সম্পদও বটে।

Thursday, June 22, 2006

বাংলায় তারিখবাচক শব্দের আপদ

গেল কয়েক বছর ধরে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রতিদিনই ধ্বনিত হচ্ছে এক জানুয়ারি, দুই বৈশাখ আর তিন মহররম। শ্রুতিকটু বটে। মনে হয় কোথায় যেন কেটে গেল। বাংলা ভাষারীতির পুরনো সম্পদ পহেলা বৈশাখ, দোসরা জানুয়ারি আর তেসরা শাবান ভালই তো ছিল। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে যা সম্পদ বলে বিবেচনা করছে কিছু লোক তা এখনও লেখ্য রীতির আপদই থেকে গেল। ভাল হল কি?

সহসা-র অর্থচ্যুতি

সহসা শব্দটির হঠাত্ই যেন অর্থচ্যুতি ঘটেছে। 'সহসা ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই।' যেন সহসার অর্থ শীঘ্রই। এ অর্থ হয়ত কোনদিন অভিধানে জায়গা করে নেবে। অভিধান এই অর্থের কোন জায়গা না দিলেই ভাল। কারণ ততদিনে শব্দটি অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যাবে। বাংলা ভাষা সম্পর্কে সংবেদনশীল লোকেরা তখন শব্দটি আর হয়ত ব্যবহার করবে না। বাংলার ভাণ্ডার থেকে একটি শব্দ কমে যাবে।

দীর্ঘ-ঈ না হ্রস্ব-ই

যারা একুশে ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন তারা প্রায়ই 'শ্রদ্ধাঞ্জলী' দেন। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু। হ্রস্ব-ই হবে। শব্দটি সংস্কৃত। তবে ১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বানান রীতি প্রবর্তন করে, যাতে বলা ছিল যদি শব্দটি সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত বা অপভ্রংশ হয়ে বাংলায় আসে, তবে হ্রস্ব-ই এবং দীর্ঘ-ঈ দুই-ই সিদ্ধ। নিয়মটি করা হয়েছিল এই ভেবে যে একদিন ধীরে ধীরে এধরণের সমস্ত শব্দে হ্রস্ব-ই লেখা হবে। এই দুই বিধান সিদ্ধ হওয়ায় হ্রস্ব-ই তেমনটা পেরে ওঠেনি। আমাদের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের দাপ্তরিক কাগজপত্রে প্রায়ই লিখতে হত 'ইংরেজি' শব্দটি। আর আমরা ইংরেজি লিখলেই কেরানি সাহেবরা কেটে ইংরেজী করে দিত, খানিকটা রক্তচক্ষু হয়ে। বাংলাটাই শেখনি, ইংরেজি পড়তে এসেছ? এভাবে কি বানান প্রমিতকরণ হয়?

বাংলায় ইংরেজি z-এর উচ্চারণ

বাংলায় ইংরেজির z-এর উচ্চারণ খুব স্বাভাবিক নয়। বাংলা ভাষার ধ্বনিমূলের তালিকায় এর স্বীকৃতি নেই। তবে দক্ষিণ বাংলার আঞ্চলিকতায় এর উচ্চারণ শুনতে পাওয়া যায়, উত্তর বাংলার বাংলায় নয়। কারণটি কি চট্টগ্রামে আরবদের আবাসন? আরবরা বাংলার অনেক জায়গায় ব্যবসা করেছে। তবে বসবাস, খুব ছোট পরিসরে হলেও, শুরু করেছিল চট্টগ্রামে। আর তার পরেই এসেছিল পর্তুগিজরা। এবং তারাও ও তল্লাটে বিচরণ করেছিল অনেকদিন। এখন কেবল এ ধ্বনিটি শুনতে পাওয়া যায় শিক্ষিত বাংলাভাষীদের বুলিতেই এবং বিদেশি ভাষা থেকে আসা শব্দে। তবে বাংলায় প্রচলিত আরবি আর ফারসি নামের ইংরেজি বানানে z-এর সাক্ষাত মেলে।