Tuesday, July 31, 2007

মান্য বাংলার ধ্বনিমূল

সাধারণত যা মান্য বাংলা, চলিতই হোক বা সাধু, তার ধ্বনিমূলের সংখ্যা প্রধানত ৪৫ --- ৮টি স্পৃষ্ট (/p b t d ʈ ɖ k ɡ/), ২টি ঘৃষ্ট (/tʃ dʒ/), ১টি তাড়িত (/ɽ/), ১১টি মহাপ্রাণ (/ pʰ bʱ t̪ʰ d̪ʱ ʈʰ ɖʱ kʰ ɡʱ tʃʰ dʒʱ ɽʱ/), ৩টি নাসিক্য (/ m n ŋ/), ২টি উষ্ম (/ʃ ɦ/), ১টি কম্পিত (/r/), ১টি পার্শ্বিক(/l/), ২টি নৈকট্যক (/ĕ ŏ/), ৭টি সাধারণ স্বরধ্বনি (/i e æ ɑ ɔ o u/), এবং ৭টি অনুনাসিক স্বরধ্বনি (/ɪ̃ ẽ æ̃ ɑ̃ ɔ̃ õ ũ/)।

উষ্ম /s/ ধ্বনিকে মান্য বাংলার /ʃ/ ধ্বনিমূলের সহধ্বনি হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও ৫টি ধ্বনিমূলকে /f v ɸ β z/ গৌণ ধ্বনিমূল হিসেবে ধরা হয়। সাধারণভাবে এগুলো লোকের প্রচলিত বুলিতে না শোনা গেলেও, শিক্ষিত বুলি বা সচেষ্ট উচ্চারণে প্রায়ই শোনা যায়। বাংলায় আরও ৬টি বিদেশি ধ্বনিমূলের /q ʕ ʒ x ɣ ħ/ সাক্ষাত পাওয়া যায়, একটি ইংরেজি শিক্ষিত লোকের বুলিতে, আর বাকিগুলো ভাল আরবি-ফারসি জানা লোকের বাচনে।

সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলায় ধ্বনিমূল ৩৫টি, সাথে ৫টি গৌণ ধ্বনিমূল। উষ্ম /s/ একটি আলাদা ধ্বনিমূল, এবং মহাপ্রাণতা আলাদা ধ্বনিমূলতার দাবি রাখে না। রামেশ্বর শ'র মতে ধ্বনিমূল ৪৪টি, ২টি উষ্মধ্বনি সহ। পবিত্র সরকারের মতে ধ্বনিমূলের সংখ্যা ৪৭। চার্লস্‌ ফার্গুসন ও মুনীর চৌধুরীর মতে ধ্বনিমূলের সংখ্যা ৪৭। রফিকুল ইসলামের মতেও তাই। তবে কারও কারও মতে বাংলায় নৈকট্যকের সংখ্যা চার, কারও মতে /s/ আলাদা ধ্বনিমূল।

Saturday, July 28, 2007

জিহ্বা, বিহ্বল, আহ্বান

জিহ্বা, বিহ্বল আর আহ্বান। বাংলার হ-এ ব-ফলার উচ্চারণ কেমন? সাধারণভাবে মান্য চলিত উচ্চারণ হল জিউভা (dʒiu̯bʱɑ), বিউভল্‌ (biu̯bʱɔl), আর আওভান্‌ (ɑo̯bʱɑn)। যদিও অনেকই জিহ্অব্‌বা, বিহ্‌অব্‌বল্‌ বা আহ্‌অব্‌বান্‌ অথবা জিহোবা, বিহোবল্‌ বা আহো‌বান্‌ উচ্চারণ করে থাকে, যা কোনও এক সময় মান্য বলে গৃহীত হলেও হতে পারে, তবে এখনও অপাঙ্ক্তেয়। ছোটবেলায় ইশ্‌কুলের (দিনাজপুর জিলা স্কুল) পণ্ডিতমশায়ের ভাষ্যে এগুলোর উচ্চারণ জিব্‌ভা (dʒibʱːɑ), বিব্‌ভল (bibʱːɔl) বা আব্‌ভান (ɑbʱːɑn)-ও সম্ভব। সংসদের উচ্চারণ অভিধানে আছে বহ্বারম্ভ-এর উচ্চারণ বব্‌ভারম্‌ভো (bɔbʱːɑrɔmbʱo), পরে বওভারম্‌ভো (bɔo̯bʱɑrɔmbʱo)। সুভাষ ভট্টাচার্যের বাংলাভাষা চর্চা-য় ও তাই। বোঝা যায় আদিতে ব্‌ভ-দিয়েই উচ্চারিত হত। কালে বহুল প্রচলিত শব্দে ব্‌ভ বওভ-এ রূপ নেয়।

Tuesday, July 17, 2007

আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক/ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালা

আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা, ধ্বনি বর্ণমালা, নাকি ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালা? হিন্দিতে অন্তর্রাষ্ট্রীয় ধ্বন্যাত্মক লিপি (अन्तर्राष्ट्रीय ध्वन्यात्मक लिपि)। আদিতে ফরাসি আলফাবে ফোনেতিক অ্যাঁত্যারনাসিওনাল (Alphabet phonétique international), এবং তারই ইংরেজি রূপ ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক অ্যালফাবেট (International Phonetic Alphabet)এর অনুবাদ বাকি সব; জর্মনে, ইন্টারনাট্‌সিওনালেস ফোনেটিশ্যস আলফাবেট (Internationales Phonetisches Alphabet), রুশে, মেঝ্‌দুনারোদ্‌নিই ফোনেতিচেস্কিই আলফাবিত (Международный фонетический алфавит), ইত্যাদি। বর্ণমালায় ধ্বনিমূলক সংকেত থাকলেও তা দিয়ে বাচনের ধ্বনিগত রূপও লেখা যায় এবং একারণে কোন ভাষার ধ্বনিমূলক (phonemic) এবং ধ্বনিগত (phonetic) উচ্চারণ লেখার জন্য এই বর্ণমালা। এই বিচার থেকে এর নাম ফরাসিতে phonétique বা ইংরেজিতে phonetic হলে এর বাংলা হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক ধ্বনিগত বর্ণমালা, ধ্বনিমূলক নয়। আর যদিবা ধ্বনিতত্ত্ব নিয়ে কারবার বলে সংস্থার নাম phonetic association থেকে phonetic হয়ে থাকে, তাহলে তার বাংলা নাম হওয়া উচিত, ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালা। ধ্বনিতত্ত্ব থেকে ধ্বনিতাত্ত্বিক। বেশিরভাগ বইতেই ধ্বনিমূলক বর্ণমালা কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। উইকিপেডিয়াতেও। দু'য়েক জন ঝামেলা এড়াতেই বোধ করি একে ধ্বনি বর্ণমালা বলেছে। বাংলা একাডেমীর ১৯৯০-এর 'ভাষাতত্ত্ব পরিভাষাকোষ'-এ ধ্বনিমূলক বর্ণমালা এবং পরে ধ্বনি বর্ণমালা লেখা আছে। কেউ কেউ আবার ধ্বনি লিপি বা লিপিমালাও বলেছে।

Saturday, July 07, 2007

বাংলা লিখনের নতুন হরফ, নববাংলা

নববাংলা বলে একটা ব্যাপার বেশ কিছুদিন ধরে নীরবে থেকে হঠাৎ করেই জ্বলে উঠে নিভে গেল। নিভে গেল কারণ, এর ওয়েব সাইটে এখন আর ঢোকা যায় না। কারণটি অবশ্য জানা নেই। তবে অনেক ব্লগে এর বিরুদ্ধে বক্তব্য আছে বেশ, কিঞ্চিৎ স্তুতিও, বুঝে বা না বুঝে। নববাংলা হল বাংলা লেখার নতুন হরফ এবং লিখন পদ্ধতি, মোটামুটি ধ্বনিমূলক এবং উচ্চারণ ভিত্তিক (মোটামুটি, কারণ এর ধ্বনিমূলতা এবং উচ্চারণের ভিত্তিতে স্পষ্টত গলদ লক্ষ্যণীয়)। উদ্ভাবক বা উদ্যোক্তা হল শাহ এম মুসা, ইন্টেল কর্পোরেশনের একজন মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইনার। তবে নববাংলার ওয়েব সাইটে আর ঢোকা না গেলেও ভারতীয় ভাষাবিষয়ক অনলাইন পত্রিকা 'ল্যাঙ্গুয়েজ ইন ইন্ডিয়া'-র ষষ্ঠ সঙ্খ্যায় (পহেলা জানুআরি ২০০৬) একটি লেখা ছিল --- "এ সিম্প্‌ল স্ক্রিপ্ট ফর বাংলা অ্যান্ড দি আইপিএ ম্যাপিং দেয়ারঅব।" ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখে ঢাকায় সঙ্ঘটিত একটি অনুষ্ঠানে পেশ করা একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশনও (নববাংলা অ্যান্ড দি ফনেটিক্‌স দেয়ারঅব) ইন্টারনেটে পাওয়া যায়, এক সময় অন্তত যেত। ২০০৬-এর মাঝামাঝি ঢাকার পত্রিকাগুলোতে এ সম্পর্কে লেখাও ছাপা হয়। এই লিপি উদ্ভাবনের কাজ ২০০৪-এর আগে থেকেই সম্ভবত হয়ে আসছে। এইসব লেখার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে নববাংলার সমস্ত ব্যঞ্জন ধ্বনিমূলক, স্বরচিহ্ন ব্যঞ্জনের পরে বসে, লেখার রীতি অ্যালফাবেটিক, এবং যুক্তবর্ণ বিযুক্ত, অন্তত উদ্ভাবকের তাই ধারণা। লেখাটিতে বাংলা ধ্বনিমূলের আলোচনার দিকে যত কম দৃষ্টি দেওয়া যায় ততই মঙ্গল।

তবে উদ্ভাবকের ধ্বনিমূলকতা ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ নববাংলার লেখার রীতিতে প্রকাশ পায় যে প্রতিটি ব্যঞ্জনই হলন্ত, অনেকটা রোমান হরফের মত, বাংলা অন্তর্নিহিত অ সেখানে অনুপস্থিত। বাংলায় ক অর্থ ক্‌ + অ; কিন্তু নববাংলায় ক অর্থ ক্‌, বাংলার ক লিখতে একটি অ-দ্যেতক হরফ ব্যবহার করতে হবে, আর তাই অজগর-এর র-এর অ-কে লেখা হয় না। ধরে নিতেই হয় উচ্চারণানুগ বানান। মজার ব্যাপার হল বাংলায় সাধারণ উচ্চারণ হল অজোগর্‌, তবে নববাংলায় লেখা হয় অজ্‌অগ্‌অর। উদ্ভাবকের পূর্ণিমা বানান ধ্বনিমূল থেকে সরে গিয়ে অনেকটা বাংলার অক্ষরানুগ। কারণ নববাংলায় শব্দটির দীর্ঘ ঊ লেখা হয়, আবার মূর্ধন্য ণ-ও লেখা হয়। বাংলায় ধ্বনিমূলতার দিক দিয়ে হ্রস্ব উ এবং দীর্ঘ ঊ-র মাঝে কোনও প্রভেদ নেই। তেমনি মূর্ধন্য ণ এবং দন্ত্য ন-এর উচ্চারণও এক। সাধারণভাবে বাংলায় ঞ-এর উচ্চারণ য়ঁ এবং যুক্তবর্ণে ন, তাহলে ঝঞ্ঝাট বানানে নববাংলায় ঞ-এর ব্যবহার কেন? অ-তিরোহিত ত দিয়ে যদি 'হঠাত' লেখাই যায়, তাহলে বর্ণমালায় খণ্ড-ত রাখা কেন? নববাংলায় দুঃখ বানান 'ক্‌খ' দিয়ে লেখা হয়, আবার বিসর্গ দিয়েও লেখা যায়। এখানে বিসর্গের উচ্চারণ কোথায়? যেহেতু হরফ-পশ্চাৎ হ্রস্ব-ইকে দু'বার লিখে দীর্ঘ-ঈ লেখা হয় নববাংলায়, (আমি) দিই-কে কিভাবে লেখা হবে? নববাংলার হিসেবে তাকে কি 'দী' পড়বার অবকাশ থাকবে না?

উদ্ভাবক বাংলার উচ্চারণ বা প্রতিলিপিকরণ বা লিপ্যন্তরীকরণ (transcription) বানানো হরফে লিখতে গিয়ে প্রতিবর্ণীকরণ (transliteration) দ্বারা অজান্তেই প্রভাবিত। পৃথিবীতে প্রচলিত যে কোনও হরফে বাংলার প্রতিবর্ণীকরণ হলে তা কখনই ধ্বনিমূলক হবে না। কারণ বানান (প্রতিবর্ণীকরণ) এবং উচ্চারণ (প্রতিলিপিকরণ) দুটো দুই বস্তু।

শেষে একটা কথা বলে রাখা ভাল যে উচ্চ-প্রযুক্তির যুগে গণকযন্ত্রে বৈদ্যুতিন বার্তা আর মুঠোফোনে সংক্ষিপ্ত বার্তা লিখতে গিয়ে বাংলায় লিখতে পারার যোগ্যতা বা সুযোগের অভাবে চ্যাংড়ার দল রোমান হরফে এক ধরণের বাংলা লিখে থাকে, তা যতই দৃষ্টিকটু এবং অবোধ্য হোক না কেন নববাংলার চেয়ে অনেক বেশি ধ্বনিমূলক। নববাংলা হয়ত বাংলার ইতিহাসে উটকো বানানো লিখনপদ্ধতি (constructed script) হিসেবে অত্যুৎসাহী-অবোধ্যতাগামী গুটি কয়েক লোকের মাঝে টিকে থাকবে। আর ব্যক্তিগত বা বিশেষ কোন কাজে ব্যবহারের জন্য লিখন পদ্ধতি যে কেউই বানাতে পারে। তাতে বাধা দেবার কিছু নেই।

Friday, July 06, 2007

উচ্চারণের উপসর্গ

বাংলা ভাষায় বানান দেখে উচ্চারণের (ইংরেজিতে যাকে phonics বলে) একটি নিয়মে বলা হয় যে তিন অক্ষরের কোন শব্দের আদিতে অ, আ, এ বা ও থাকলে এবং মাঝে অ থাকলে, মাঝের অ-এর উচ্চারণ হয় ও-এর (/o/) মত। যেমন, ফসল (ফশোল), ছাগল (ছাগোল), বেতন (বেতোন), ভোজন (ভোজোন), ইত্যাদি। এর প্রথম ব্যতিক্রমটি হল যদি প্রথম অক্ষরটি অ(না-বোধক)- বা স(সাথে-বোধক)- উপসর্গ হয়, তাহলে মাঝের অ-এ উচ্চারণের কোনও হেরফের হবে না। সাধারণভাবে বলা যায় উচ্চারণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উপসর্গের কোনও দাম নেই। অথচ আমরা হামেশাই অজর (অজোর), সজল (শজোল), সফল (শফোল) বা অমর (অমোর) উচ্চারণ করে আসছি। সচেতন বাচন ছাড়া আর কোথাও নিয়মমাফিক উচ্চারণটি শোনা যায় না, তবে একেবারেই যে না তাও নয়।

Thursday, July 05, 2007

সম্মার্জিত গালাগাল

ইংরেজিতে আপত্তিকর, অশ্লীল গালাগাল লেখার নিয়ম একেক জায়গায় একেক রকম। কোনও কোনও প্রকাশন সংস্থা শব্দটির শুরুর হরফের পরে বাকি হরফের জায়গার তারকা চিহ্ন বসিয়ে দেয়। যেমন, f***ing । কেউ কেউ শুরুর হরফটিও তারকার চিহ্নে প্রকাশ করে, যেমন, ****ing। অনেকে আপত্তিকর শব্দের সব হরফের জন্য কেবল একটি তারকা চিহ্নের ব্যবহার করে, যেমন, f*ing। অনেক জায়গায় বন্ধনীর মধ্য লেখা থাকে expletives deleted। বেশ আপত্তিকর, উচ্চারণ করা বা লেখা যাচ্ছে না। অনেকে আবার এত বায়ানাক্কা না করে পুরো শব্দটি লিখে ফেলে।

এই তারকা চিহ্নের ইংরেজি রীতি অনুসারে (হনুসারে কি হওয়া উচিত, অনুকরণ আর হ[নুমানের মত অ]নুকরণের পার্থক্যটুকু বোঝাতে), বাংলা ব্লগের কয়েকটি পোস্টে পাওয়া যাচ্ছে চো*না। বোকা*োদা-ও কি? গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কথা উঠতেই পারে। তবে ব্যবহারটাও বাংলায় খানিকটা অভিনব। ইংরেজির আদলে তারকা চিহ্ন ব্যবহার না করে বাংলার তারকা চিহ্ন, যা কিনা মাত্রা ছাড়িয়ে উপরে উঠে না, বা কাকপদ, যা দেখতে খানিকটা গুণ চিহ্নের মত, ব্যবহার করলে দেখতে ভাল হত। আবার ড্যাশের ব্যবহারও খারাপ লাগবে না। যেমন, চো-না, বোকা-দা, ইত্যাদি।

বাংলা ভাষায় অক্ষরের ব্যবহার এ ধরণের গালাগাল সম্মার্জন দেখতে পাওয়া যায়। বাংলা অভিধানে আছে 'শকার-বকার করা,' অর্থ শালা-বাঞ্চোত বলে গালি দেওয়া বা অশ্লীল গালি দেওয়া। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দ্রষ্টব্য।

Wednesday, July 04, 2007

উদ্যোগ, উদ‌্‌যোগ

কয়েকদিন আগের ঘটনা। এক টেলিভিশন সাংবাদিক বন্ধুর প্রশ্ন উদ্যোগ-এর উচ্চারণ উদ‌্‌যোগ আদতেই ঠিক কি না? হাল আমলে টেলিভশন চ্যানেলগুলো লিখছে উদ্যোগ আর বলছে উদ্‌যোগ‌। উদ্‌যোগ হল উদ্যোগের ভেঙ্গে লেখা রূপ। দ্‌ + য দু'ভাবেই লেখা যায়। প্রাকৃত ভাষায় সংস্কৃত শব্দটি ভেঙ্গে উজ্জোগ হয়েছিল। চৈতন্যচরিতকার এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতদের সংস্কৃতায়নের কারণে বাংলা ভাষায় সংস্কৃত রূপটি ফিরে আসে। তবে উচ্চারণ দুটি শব্দের দু'রকমই হওয়া উচিত। সংসদের অভিধানে দু'টির উচ্চারণ দু'রকম --- উদ্যোগ (উদ্‌দোগ) আর উদ্‌যোগ (উদ্‌জোগ)। জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটের অভিধানে --- উদ্যোগ (উদ্‌জোগ)। এভাবে সাধারণ লোকেরা কেউ বলে না। যারা কবিতা আবৃত্তি করে, তার হয়ত করে। কিংবা যারা গান করে, যদিও এরকম একটি শব্দ গানে খুব বেশি পাওয়া যাবে না। আর বাংলা একাডেমীর অভিধানে --- উদ্যোগ (প্রথমে উদ্‌দোগ, পরে উদ্‌জোগ)। এ বাংলার উচ্চারণ অভিধান এখনও লোকেদের কথার উপর ভিত্তি করে লেখা হয় না।

Tuesday, July 03, 2007

ডেঙ্গুর নাম হাড়ভাঙ্গা জ্বর

ইংরেজিতে যা dengue, বাংলা তা ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর। ২০০০ সালে জ্বরের প্রকোপ নতুন করে দেখা দেয় ঢাকায়। এরও অনেক আগে ১৯৬৪-৬৫ সালের দিকে ঢাকায় ডেঙ্গু বা একই রকম জ্বর ধরা পড়ে। তখন নাকি ঢাকার স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা একে 'ঢাকা জ্বর' বা 'ঢাকার জ্বর' বলত। বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে শব্দটি আছে 'ডেঙ্গু' এবং 'ডেঙ্গো' রূপে, অর্থ বিশ্লেষণে বলা আছে এটি 'হাড়ভাঙ্গা জ্বর'। ২০০৫-এর সেপ্টেম্বরের শুরুতে ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সাপ্তাহিক স্বাস্থ্য পাতায় লেখা হয়েছিল একে আগে লোকেরা break-bone fever বলে জানত। অর্থাৎ কিনা, হাড়ভাঙ্গা জ্বর। ইংরেজি অভিধান Concise Oxford English Dictionary-র মতে ইংরেজিতে যা ডেঙ্গি তা breakbone fever বা dandy fever নামেও পরিচিত। শব্দটি এসেছে সোয়াহিলি denga বা dinga থেকে হিস্পানি dengue হয়ে। ইংরেজিতে, তারপরে বাংলায়।

Monday, July 02, 2007

দশের পাতা, পাঁচদিনের দিন

বাংলায় দু'ধরণের ক্রমবাচকশব্দের প্রচলন। তৎসম ও তদ্ভব। তৎসম বা সংস্কৃত থেকে নেওয়া ক্রমবাচক শব্দের ব্যবহার সব ক্ষেত্রে করা গেলেও, গুনতে থাকলে খানিক পরেই অন্তত চলতি ভাষায় বড় বেমানান ঠেকে। সাধু রীতিতে খানিকটা বিপত্তি বিদ্যমান। সংস্কৃতের লিঙ্গের জের ধরে প্রথম বালক এবং প্রথমা বালিকা লেখা কতখানি গ্রহণযোগ্য হবে তা প্রায়ই ঠিক বোঝা যায় না। আবার তদ্ভব বা প্রাকৃত বা অপভ্রংশ হয়ে বাংলায় আসা ক্রমবাচক শব্দ মাসের তারিখের চেয়ে খুব বেশি নেই। কারণ মাসের তারিখ বোঝানোর কাজেই তা ব্যবহৃত হয়। যেমন, পয়লা মার্চ, পনেরই মে, বা ত্রিশে ডিসেম্বর, এমনকি বত্রিশে বৈশাখ (বাংলাদেশে যেমনটি আগে ছিল, আদি বাংলা মাস ব্যবহার করে এমন জায়গায় এখনও আছে)। তৎসম ক্রমবাচক শব্দের ব্যবহার করে 'প্রথম পরীক্ষা' এবং তদ্ভব শব্দের ব্যবহার করে বাইশে জুলাই বেশ বলা যায়। তবে কোন বইয়ের বিশেষ পাতাকে
একশ' পচিশে, তদ্ভব নিয়মে, বা পঞ্চবিংশত্যাধিকতম, তৎসম নিয়মে, বলা কোনভাবেই যায় না। ইংরেজিত এই বিশেষপাতাটির নাম page 225। দশক গণনার সময় বলা হয় একের বা ছয়ের দশক। শব্দ সঙ্ঘটনও খুবই সহজ। বাংলা সঙ্খ্যা, শেষে বাংলা সম্বন্ধপদ বিভক্তি, -এর। আমরা অনেকেই বলি একশ' পচিশ নম্বর পাতা। তা না বলে একশ' পচিশের পাতা বললেই ভাল শোনায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে যা গোনা হচ্ছে সে শব্দের আগে সঙ্খ্যা এবং পরে -এর বসালে শ্রুতিকটু হয় না, যেমন, পাঁচদিনের দিন।