Tuesday, July 07, 2009

মাগির অশিষ্টতা

বাংলা মৌচাক (১৯৭৫) ছায়াছবিতে উত্তম কুমারকে ছোটভাই রঞ্জিত মল্লিকের সামনে তার প্রেমিকা মিঠু মুখোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়: তুমি ওকে মাগিপাড়া দিয়ে যেতে বলেছ? ছোটভাইয়ের প্রেমিকা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে উত্তর দেয়। একটা জিনিস মোটামুটি পরিষ্কার বোঝা যায় যে মাগি শব্দটা পুরনো আমলে অশিষ্ট ছিল না মোটেই। শোনা যায় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং কালিপ্রসন্ন সিংহ হরহামেশা শব্দটি ব্যবহার করত। শব্দটিতে হয়ত গ্রাম্যতা ছিল। শব্দটি রবীন্দ্রযুগ থেকে সাহিত্যে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যায়। রাজশেখর বসুর চলন্তিকায় শব্দটি অশিষ্ট, কিন্তু মাগী বানানে, যদিও শব্দটি তদ্ভব, যে কোনও ব্যুৎপত্তির দিক থেকে, আর তাই ই-কার হওয়াই রীতি। বাংলায় শব্দটি দিয়ে তুচ্ছার্থে নারী এবং বয়স্ক মহিলা বোঝানো হয়। মাগিপাড়া শব্দের অর্থ যদিও বেশ্যাপাড়া। তবে যে কোনও অর্থেই শব্দটি অন্তত শহুরে বুলিতে অশিষ্ট।

জ্ঞানেন্দ্রমোহনে আছে সংস্কৃত মাতৃগাম থেকে প্রালিতে মাতুগাম, সে থেকে প্রাকৃতে মাউগ্গাম, তা থেকে মাউগ, মাগু এবং মাগী (পুরনো বানানে)। রাল্‌ফ লিলি টার্নারের ইন্দো-আর্য ভাষার তুলনামূলক অভিধানেও প্রায় একই ব্যুৎপত্তি। হরিচরণের মতে শব্দটি মাগ-এর সাথে ই যোগে নিষ্পন্ন, মাগ এসেছে মাউগ বা মাগু থেকে, মৈথিলিতে মৌগী বা মাগু দুইয়েরই অর্থ নারী। সুকুমার সেনের ব্যুৎপত্তি-সিদ্ধার্থে শব্দটি মার্গিতা থেকে যার অর্থ মাগিবার জিনিস। বিজয়চন্দ্র মজুমদারের মতে শব্দটি মাউগি থেকে এসেছে। বিহারে শব্দটি এখনও চলে। তবে আদি শব্দ দ্রবিড় মুক্কণ্, মোক্কন্ বা মোগ্‌গন্। ওড়িয়াতে মাইকিনা। টমাস বারো এবং মারে বার্নসন এম্যনোর দ্রাবিড়ীয় ব্যুৎপত্তির অভিধানে নারী অর্থে মুঙ্কনি পাওয়া যায়।