tag:blogger.com,1999:blog-300612552024-03-05T22:08:01.920+06:00বাংলা ভাষাবাংলা ভাষা ও ভাষা বিষয়ক চিন্তাভাবনাAbu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.comBlogger122125tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-9274446678650026212010-11-09T12:04:00.001+06:002010-11-09T13:12:01.730+06:00উত্তুরে বাতাস আর সূর্য: সিলেটের উপভাষা<span style="font-size:130%;">সিলেটের উপভাষা এখন পৃথক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত স্বে মহিম্নি — নিজের মহিমায়, অন্তত এথনোলগের মতে, বেশ কিছুদিন ধরেই। এই সিলেটির সাথে বাংলার আভিধানিক সাদৃশ্য প্রায় সত্তর শতাংশ। একই রকম মর্যাদা চট্টগ্রামের উপভাষারও; তবে এ ক্ষেত্রে বাংলার সাথে আভিধানিক সাদৃশ্য তেতাল্লিশ থেকে চৌষট্টি শতাংশের মধ্যে। জায়গা বদলালেই ভাষা হঠাৎ করে পালটায় না; অনেক জায়গা জুড়ে একটু একটু করে পালটায়; আর তাই এই তেতাল্লিশ থেকে চৌষট্টি শতাংশ। এর একটা অর্থ সিলেটি বাংলা বেশ খানিকটা কাছের, অন্তত চট্টগ্রামের উপভাষা সাপেক্ষে।<br /><br />সিলেটির একটি ধ্বনিমূলের সহধ্বনি বাংলার আর কোনও উপভাষায় চোখে পড়ে না — /<span style="font-size:95%;">q</span>/, আরবির ق। মান্য বাংলায় যা /<span style="font-size:95%;">k</span>/, সিলেটিতে তা হয় /<span style="font-size:95%;">q</span>/ বা /<span style="font-size:95%;">x</span>/। সাধারণত পূর্ণ-বিবৃত স্বরধ্বনির আগে মান্য /<span style="font-size:95%;">x</span>/; অন্যত্র /<span style="font-size:95%;">q</span>/। /<span style="font-size:95%;">e</span>/-স্বরধ্বনি অনেকটা বিবৃত হয়ে /<span style="font-size:95%;">ɛ</span>/; মহাপ্রাণতা প্রায় লুপ্ত; /<span style="font-size:95%;">r</span>/ এবং /<span style="font-size:95%;">ɽ</span>/-এ পার্থক্য নেই; মান্য বাংলার উত্তরদন্তমূলীয় ঘৃষ্ট /<span style="font-size:95%;">tʃ</span>/ এবং /<span style="font-size:95%;">dʒ</span>/ ধ্বনি হয় উষ্ম /<span style="font-size:95%;">s</span>/ এবং /<span style="font-size:95%;">z</span>/ নয়ত অনেকটা সামনে এগিয়ে দন্তমূলীয় ঘৃষ্ট ধ্বনি /<span style="font-size:95%;">ts</span>/ কিংবা /<span style="font-size:95%;">dz</span>/। মান্য বাংলার /<span style="font-size:95%;">ɦ</span>/ কখনও /<span style="font-size:95%;">ɦ</span>/ এবং কখনও /<span style="font-size:95%;">ʔ</span>/.<br /><br />উতরর বাতাস আর সুরুজ ঝগড়া করের, তারার মাঝে কে বেশি শক্তিমান, অখটা নিয়া। অউ সময় এখ পথিক গরম পুষাক গাত দিয়া অউ পথ দিয়া জার । বাতাস আর সুরুজ দুইজনেউ রাজি অইল তারার মাজ থাকি যে পথিকরে তার পুশাক খুলাইতে বাইদ্য করাইত পারব, হেউ অইব বেশি শক্তিমান। এরপর উতরর বাতাস তার বিশন জোরে বইতে শুরু করল। বাতাসর জোর যত বাড়তে লাগল পথিকও তত শক্তি করি পুশাক শরিরর লগে জড়াইতে থাকের। হেশকালো বাতাস আল ছাড়তে বাইদ্য অইল । ইবার সুরুজ পরবল তেজ ছড়াইতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে পথিকও তার জামা খুলি ফালাইল। আর উতরর বাতাস মানিয়া নিল যে সুরুজ বেশি শক্তিমান।<br /><br /><span style="font-size:95%;">/ut̪rɔr bɑt̪ɑʃ ɑr suruz zɔɡrɑ xɔrɛr, t̪ɑrɑr mɑze qɛ bɛʃi ʃoqt̪imɑn, ɔxtɑ niɑ. ou ʃɔmɔĕ æx ɸot̪iq ɡɔrɔm puʃɑq ɡɑt d̪iɑ ou pɔt d̪iɑ zɑr. bɑt̪ɑʃ ɑr suruz d̪uizonɛu rɑzi ʔoilo t̪ɑrɑr mɑz t̪ɑqi zɛ ɸot̪iqrɛ t̪ɑr puʃɑq xulɑit̪ɛ bɑid̪ːo xɔrɑit̪ɛ ɸarbo, ɛu ʔoibo bɛʃi ʃoqt̪imɑn. ɛrɸɔr ut̪rɔr bɑt̪ɑʃ t̪ɑr biʃɔn zorɛ boit̪ɛ ʃuru xorlo. bɑt̪ɑʃɔr zor zɔt̪o bɑrt̪ɛ lɑɡlo ɸot̪iqo t̪ɔt̪o ʃɔqt̪i xori puʃɑq ʃoriror lɔɡɛ zorɑit̪ɛ t̪ɑxɛr. ɦɛʃxɑlo bɑt̪ɑʃ ʔɑl sɑrt̪ɛ bɑid̪ːo ʔoilo. ibɑr suruj ɸɔrbol t̪ɛz sɔrɑit̪ɛ ʃuru xɔlro. ʃɔŋɡɛ ʃɔŋɡɛ ɸot̪iqo t̪ɑr zɑmɑ xuli ɸɑlɑilo. ɑr ut̪ror bɑt̪ɑʃ maniɑ nilo zɛ suruz bɛʃi ʃoqt̪imɑn/</span><br /><br />আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালায় সিলেটের উপভাষার উচ্চারণের উদাহরণ দিতে গিয়ে ঈশপের এই গল্পটিতে কোনও রকম স্বরাঘাত চিহ্নের ব্যবহার করা হয় নি।</span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com11tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-24834553913886343852010-11-08T23:11:00.001+06:002010-11-08T23:12:46.199+06:00মর্দামির রকমফের<span style="font-size:130%;">রাস্তাঘাটে যানবাহনে একটু ভীড়ে বা ধীরে চলার সময় বাহনের জানালা গলে টুক করে কোলে পড়ে ছোট ছাপানো কাগজ, কখনও বা দুই বা তিন ভাঁজের। তেমন কিছুই নয়। বিভিন্ন কবিরাজি ঔষধের, বিশেষত যৌন রোগ নিরাময়ের, বিজ্ঞাপন। তবে ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা করার মত। তারই মাঝে একটি শব্দ মর্দামি (বিজ্ঞাপনের কাগজগুলোয় কিন্তু মর্দামী লেখা হয়)। মান্য বাংলায় শব্দটি খুব একটা নজরে পড়ে না। তারপরও সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজীর রায় নন্দিনীতে পাওয়া যায়: ‘আমি ত একটু তীর ও তরবারি চালনার অভ্যাস ক'রেছি। কিন্তু বাবা ব্যতীত আর সকলেই তার জন্য আমাকে ঠাট্রা বিদ্রূপ করে-বলে যে, “মর্দামী শিখছে।”’ (২য় পরিচ্ছেদ)।<br /><br />ফারসি মর্দমী (مرد থেকে مردمي); অর্থ, পৌরূষ, বীর্যবত্তা, সাহস, ইত্যাদি। হিন্দিতে <span style="font-size:95%;">मर्दानगी</span>, অর্থ সাহস, শৌর্যবীর্য, পুরুষত্ব ইত্যাদি।বাংলায় অভিধানে শব্দটিকে মর্দানি (মর্দ্দানী, মরদানি, মরদানী, মর্দাঙ্গি, মদ্দানি ইত্যাদি) রূপেও পাওয়া যায়। কিন্তু উদাহরণের প্রথমটিতে শব্দটির অর্থ পুরুষত্ব, বিশেষত যৌনক্রিয়া বা সন্তানোৎপাদন কর্ম সংক্রান্ত বাহাদুরি; আবার দ্বিতীয়টিতে বাহাদুরি অর্থে নেওয়া যায়, তবে বীরত্ব বা মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরুষালি ভাব অর্থে নেওয়াটা ভাল।</span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com3tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-76978852243678122742010-02-02T00:23:00.001+06:002010-02-02T00:46:30.786+06:00বৈঠকের সভ্য<span style="font-size:130%;">বাংলায় প্রয়োগসিদ্ধ কিন্তু (সংস্কৃত) ব্যাকরণানুগ নয় এমন অনেক তৎসম (?) শব্দ প্রচলিত। সন্দেহটা এ কারণে যে সংস্কৃতের লেবাস, কিন্তু সংস্কৃতে ব্যবহার নেই এমন শব্দকে কি তৎসম (তার, অর্থাৎ সংস্কৃতের, সমান) বলা যাবে? সাংসদ এমনই একটি শব্দ। মনিয়ের-মনিয়ের উইলিয়ামস্-এ সাংসদ বলে কোনও শব্দ নেই। বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে সংসদ শব্দের ভুক্তিতে সাংসদ, সংসদ বা পরিষদ সদস্য হিসেবে, আছে বটে, কিন্তু জ্ঞানেন্দ্রমোহন, হরিচরণ, রাজশেখর, ওদুদ কোনওটাতেই শব্দটি নেই। প্রায় সব অভিধানেই সংসদ (আদতে সংসৎ বা সংসদ্, সম্ — √সদ্ + ক্বিপ্) অর্থ সভা, পরিষৎ, সমিতি, গোষ্ঠী, সমাজ, এবং পরিভাষা হিসেবে ইংরেজির <span style="font-size:95%;">parliament</span>; কেবল হরিচরণেই দ্বিতীয় অর্থ সামাজিকবর্গ। মনিয়ের-মনিয়ের উইলিয়ামস্-এ সংসদ (<span style="font-size:95%;">संसद्</span>) অর্থ <span style="font-size:95%;">sitting together</span>, একসাথে বসা অর্থাৎ সভা, সমিতি, আসর ইত্যাদি। আবার সেই একই শব্দের অর্থ <span style="font-size:95%;">one who sits together</span>, যারা এক সাথে বসে, অর্থাৎ একই সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি। তবে শব্দাভিধানে না থাকলেও সাংসদ শব্দটি কিন্তু বাংলা একাডেমি, সাহিত্য সংসদ এবং বাংলা আকাদেমির বানান অভিধানে আছে, সংসদ-সদস্য অর্থে। আকাদেমির বানান অভিধানে আবার সামনে বিন্দু দিয়ে সংস্কৃত হিসেবে চিহ্নিত শব্দটি।<br /><br />সাংসদ শব্দটি বাংলায়, দুই বঙ্গেই, যথেষ্ট প্রচলিত শব্দ। হিন্দিতেও তাই; এবং সংসদ-সদস্য অর্থেই। কিন্তু শ্যামসুন্দরের হিন্দী শব্দসাগরে সাংসদ নেই। সংসদ অর্থ দেওয়া আছে একসাথে বসে এমন কেউ (<span style="font-size:95%;">साथ साथ बैठनेवाला</span>, সাথ সাথ বৈঠনেৱালা) এবং পার্লামেন্ট (<span style="font-size:95%;">पार्लामेंट</span>)। মহেন্দ্র চতুর্বেদীর ইংরেজিতে লেখা ব্যবহারিক হিন্দি-ইংরেজি অভিধানে সাংসদের দেখা মেলে, সংসদীয় বা <span style="font-size:95%;">parliamentary</span> অর্থে; দেখা মেলে সাংসদিক (<span style="font-size:95%;">सांसदिक</span>) বলে একটি শব্দের; এটিও বিশেষণ, যেমন সাংসদিক চুনাৱ (<span style="font-size:95%;">सांसदिक चुनाव</span>) অর্থাৎ সংসদ নির্বাচন।<br /><br />সংসদ-সদস্য বললে খানিকটা পুনরুক্তির দোষ হয় কি? সংসদ অর্থ যারা এক সাথে বসে। আবার সদস্ অর্থ আসন, বাস, বাসস্থান, আবাসন, সভা, সাথে য (সদস্ + য), অর্থ সভ্য।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-31709927676803315172010-01-25T23:24:00.001+06:002010-01-25T23:28:09.097+06:00অনু পূর্বক স্থা ধাতু যোগ তব্য<span style="font-size:130%;">গুগলে খোঁজ করলেই অনুষ্ঠিতব্য শব্দটির হাজার তিরিশেকের বেশি উদাহরণ পাওয়া যাবে। খেয়াল করলে পত্রিকায় এবং বইয়ের পাতায়ও চোখে পড়বে। কিন্তু এর দেখা মিলবে না কোনও অভিধানে। কোনও অভিধানই একে শব্দ বলে মানে না। কারণও আছে। অনুষ্ঠিত নিজেই অনু-স্থা + ত (ক্ত) হিসেবে সাধিত ক্রিয়া বিশেষণ; অর্থ আচরিত, সম্পাদিত, নিষ্পাদিত, কৃত, সঙ্ঘটিত, আরব্ধ, আয়োজিত, নির্বাহিত ইত্যাদি। -তব্য সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়, ঔচিত্য বা আবশ্যকতা বোঝানোর জন্য, ব্যবহৃত হয় সাধারণত তৎসম ধাতুর সঙ্গে যেমন, — √ জ্ঞা + তব্য = জ্ঞাতব্য বা √ গ্রহ্ + তব্য = গ্রহীতব্য। বাংলা দুয়েকটা ধাতুর সঙ্গেও -তব্য বসে পড়তে পারে, যেমন √ কহ্ + তব্য = কহতব্য। অনুষ্ঠিত ক্রিয়া বিশেষণটির তাই -তব্য প্রত্যয়ের ভারটা সয় না। তা ছাড়া যে কর্ম ইতিমধ্যে সম্পাদিত তার সম্পাদন হওয়ার ভবিষ্যত কোনও ঔচিত্য বা আবশ্যকতার প্রয়োজন না থাকাই ভাল।<br /><br />তারপরও যদি এরকম একটি ভাবের প্রয়োজন পড়ে তৎসম শব্দেই তার সমাধান আছে — অনুষ্ঠাতব্য কিংবা অনুষ্ঠেয়; গুগল খোঁজে প্রথমটি পাওয়া যায় গুটিকয়েক বার আর পরেরটির চল্লিশ হাজারের বেশি। অনুষ্ঠাতব্য শব্দটি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ আর মিলন দত্ত আর অমলেন্দু মুখোপাধ্যায়ের শব্দ সঞ্চয়িতা বাংলা অভিধানেই মিলবে; অর্থ অনুষ্ঠেয়, আচরণীয়, কার্য, অনুষ্ঠানের যোগ্য বা করণীয়; মনিয়ে-মনিয়ের উইলিয়ামসে তো অবশ্যই — <span style="font-size:95%;">अनुष्ठातव्य</span>, অর্থ <span style="font-size:95%;">to be accomplished</span>; ১৮২৭-এ ছাপা কেরির বাংলা অভিধানেও আছে অনুষ্ঠাতব্য। অনুষ্ঠেয় শব্দটি দুই বাংলার পরিচিত সব অভিধানেই আছে, অর্থ অনুষ্ঠানযোগ্য, যার অনুষ্ঠান করতে হবে, সম্পাদ্য, আচরণীয়, সাধ্য, কার্য, করণীয়, অনুষ্ঠানযোগ্য, কর্তব্য, সম্পাদন-যোগ্য ইত্যাদি; আছে সংস্কৃতেও, <span style="font-size:95%;">अनुष्ठेय</span>, অর্থ <span style="font-size:95%;">to be effected, done or accomplished</span>।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-56334146489624228662010-01-02T16:01:00.003+06:002010-01-02T16:08:28.574+06:00প্রতিবর্ণন এবং লিপ্যন্তর<span style="font-size:130%;">ইংরেজিতে <span style="font-size:95%;">Romanisation</span> বলতে বোঝায় (যা সাধারণত রোমক হরফে লেখা হয় না তেমন কিছু) রোমক হরফে লেখা; এই রোমক হরফে লেখাটাকে বাংলায় হয়ত রোমকায়ন বলা যেতে পারে। আবার সে ব্যাপারটাও দু’রকমের। ইংরেজিতে এদের বলা হয় <span style="font-size:95%;">transcription</span> এবং <span style="font-size:95%;">transliteration</span>। ইংরেজি শব্দ দু’টির জন্য বাংলায় দেখা মেলে বেশ কিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছের: প্রতিবর্ণীকরণ, লিপ্যন্তরীকরণ, অক্ষরান্তরীকরণ, প্রতিবর্ণিত করণ, বর্ণান্তরিত করণ, লিপ্যন্তরিত করণ, অক্ষরান্তরিত করণ, ইত্যাদি। যদিও <span style="font-size:95%;">transcription</span>-এর জন্য নকল করা অর্থে প্রতিলিপিকরণ এবং অনুলিখন দুটোই চলে। ইংরেজিতে দুটো শব্দের দু’রকম মানে থাকলে বাংলা শব্দগুলোর যে কোনও একটি ইংরেজি শব্দ দুটির জন্য নির্বিচারে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্রে, অন্তত পরিভাষা হিসেবে, ইংরেজি শব্দ দু’টির আলাদা দু’টি বাংলা থাকা উচিত, না হলে বিষয় বোঝানোর ক্ষেত্রে ঝামেলা হবে। <br /><br />ক্রিয়াজাত বিশেষ্য হিসেবে বোধ করি <span style="font-size:95%;">transliteration</span>-এর জন্য প্রতিবর্ণীকরণ এবং <span style="font-size:95%;">transcription</span>-এর জন্য লিপ্যন্তরীকরণ ব্যবহার করা উচিত। কারণ <span style="font-size:95%;">transliteration</span>-এ একটি ভাষার শব্দ সে ভাষার বানান অনুযায়ী অন্য একটি ভাষার মান্য হরফ বা পরিবর্ধিত হরফে লেখা হয়, মূল এবং দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণের দিকে লক্ষ্য না রেখে। আর সে কারণেই কেবল বর্ণান্তর (বর্ণের অন্তর) ঘটে বলে তাকে প্রতিবর্ণীকরণ, বা প্রতিবর্ণনও, বলা যেতে পারে। প্রতিবর্ণীকরণে বানান অর্থাৎ বর্ণন মেনে চলা হয়; তাছাড়া এই পরিবর্তনে এক ভাষার হরফের সাথে অন্য ভাষার হরফের এক ধরণের প্রতিসাম্য থাকে। এবং সে কারণে প্রতিবর্ণিত শব্দ থেকে মূল শব্দে আবার ফিরে যাওয়া যায়। আর <span style="font-size:95%;">transcription</span>-এ প্রচেষ্টা থাকে একটি ভাষার শব্দকে আরেকটি ভাষার উচ্চারণনীতি মেনে দ্বিতীয় ভাষার হরফ ব্যবহার করে মূল ভাষার উচ্চারণের যতটা কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে তার। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মুল ভাষার উচ্চারণকে দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণের কাছাকাছি নিয়ে সে ভাষার হরফে লিখে যাওয়া। এ ধরণের সঙ্ঘটনকে লিপ্যন্তরীকরণ, বা অক্ষরান্তর, বলা যেতে পারে। এখানে থাকে প্রতিসাম্যের অভাব এবং পুরো ব্যাপারটা উচ্চারণ-সংবেদী বলে হরফের চিন্তা না করে বরং অক্ষরের (<span style="font-size:95%;">syllable</span>) চিন্তা করা হয়। লিপির একটি অর্থ একটি অর্থ অক্ষর বা লিখন, অর্থাৎ অক্ষরবিন্যাস, আর তাই দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণনীতি এবং অক্ষরবিন্যাসের প্রাধান্যের কারণে একে লিপ্যন্তর বলাই ভাল।<br /><br />গুরুগম্ভীর কাজের জন্য যেমন গবেষণায় সাধারণত প্রতিবর্ণীকরণ, যেমন নিঃশব্দ থেকে <span style="font-size:95%;">niḥśabda</span>। সাধারণ কাজের জন্য লিপ্যন্তরীকরণ, যেমন নিঃশব্দ থেকে ইংরেজি-ভাষীদের জন্য <span style="font-size:95%;">nishshobdo</span>, <span style="font-size:95%;">nishshabdo</span>, <span style="font-size:95%;">nishshawbdo</span> বা <span style="font-size:95%;">nishshaubdo</span>, ফরাসি-ভাষীদের জন্য <span style="font-size:95%;">nichchaubdo</span> কিংবা জর্মন-ভাষীদের জন্য <span style="font-size:95%;">nicshobdo</span>, তেমনি আরও অনেক। যারা শব্দটির উচ্চারণ মূল ভাষায় ভুল করে তাদের করা লিপ্যন্তর আরেকটু অন্য রকমের হবে। প্রতিবর্ণীকরণের যেমন আছে ঋজুতা, লিপ্যন্তরীকরণে তেমনি লঘুতা। একটিতে নিয়মের বাড়বাড়ি, বানানের দার্ঢ্য। অন্যটিতে নিয়মের বালাই নেই, উচ্চারণের প্রাণান্তকর চেষ্টা। সংস্কৃত শব্দ নিঃশব্দের দেবনাগরীতে প্রতিবর্ণন হবে <span style="font-size:95%;">निःशब्द</span>, সেই একই বানান, তৎসম। দেবনাগরীতে হিন্দি-ভাষীদের জন্য হবে <span style="font-size:95%;">निश्शौब्दो</span> (নিশ্শৌব্দো); মরাঠি বা নেপালিতে অন্য কিছু।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com3tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-28061432771955413142009-08-08T15:24:00.001+07:002009-08-08T15:29:27.087+07:00বাংলার বাড়তি ধ্বনিমূল<span style="font-size:130%;">বাংলার ভূখণ্ডে অনেক দিন ধরে ফারসি আর ইংরেজি রাজভাষা থাকবার কারণে বাংলায় বিদেশি ধ্বনিমূলের দেখা মেলে। মান্য বাংলার ধ্বনিভাণ্ডারের বাইরে এই রকম পাঁচটি ধ্বনিমূল আছে – অঘোষ দ্বি-ঔষ্ঠ্য উষ্ম ধ্বনি /<span style="font-size:95%;">f</span>/, ঘোষ দ্বি-ঔষ্ঠ্য উষ্ম ধ্বনি /<span style="font-size:95%;">v</span>/, অঘোষ দ্বি-ঔষ্ঠ্য নৈকট্যক /<span style="font-size:95%;">ɸ</span>/, ঘোষ দ্বি-ঔষ্ঠ্য নৈকট্যক /<span style="font-size:95%;">β</span>/, আর ঘোষ দন্তমূলীয় শিস ধ্বনি /<span style="font-size:95%;">z</span>/। এবং প্রায়ই /<span style="font-size:95%;">f</span>/ ও /<span style="font-size:95%;">ɸ</span>/ গিয়ে ঠেকে /<span style="font-size:95%;">pʰ</span>/-এ, /<span style="font-size:95%;">v</span>/ ও /<span style="font-size:95%;">β</span>/ গিয়ে ঠেকে /<span style="font-size:95%;">bʱ</span>/-এ, এবং /<span style="font-size:95%;">z</span>/ গিয়ে ঠেকে /<span style="font-size:95%;">dʒ</span>/-এ। /<span style="font-size:95%;">f</span>/ ও /<span style="font-size:95%;">ɸ</span>/ এবং /<span style="font-size:95%;">v</span>/ ও /<span style="font-size:95%;">β</span>/ প্রায়ই শোনা যায় ইংরেজি শিক্ষিত এবং বাংলায় সতর্ক উচ্চারণে অভ্যস্ত নয় এমন লোকের বুলিতে, কারণটা হল ইংরেজির /<span style="font-size:95%;">f</span>/ ও /<span style="font-size:95%;">v</span>/। আপিস /<span style="font-size:95%;">ɑpiʃ</span>/ কথাটা বাংলায় শোনা যায় বটে, কিন্তু অফিস বলাই দস্তুর। কিন্তু উচ্চারণটা কি? সাহিত্য সংসদের উচ্চারণ অভিধান এবং কলিকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির অবাঙালিদের জন্য আধুনিক বাংলা অভিধান মতে /<span style="font-size:95%;">ɔpʰiʃ</span>/, বাংলা একাডেমির উচ্চারণ অভিধানে /<span style="font-size:95%;">ɔfis</span>/। অনেকের কাছে মাঝামাঝি /<span style="font-size:95%;">ɔpʰis</span>/ গোছের কিছু একটা। দাঁড়ালটা কি? পশ্চিমবঙ্গের বাংলায় /<span style="font-size:95%;">ɔpʰiʃ</span>/; আর পূর্ববঙ্গের বাংলায় /<span style="font-size:95%;">ɔfis</span>/। অনেকে এই /<span style="font-size:95%;">f</span>/-টা ঠিকমত উচ্চারণ করতে না পেরে উচ্চারণ করে /<span style="font-size:95%;">ɸ</span>/। তেমনি অনেকের কাছেই ভুল /<span style="font-size:95%;">bʱul</span>/ হয়ে যাচ্ছে /<span style="font-size:95%;">vul</span>/ বা /<span style="font-size:95%;">βul</span>/। <br /><br />আরবি, ফারসি বা উর্দু থেকে আসা /<span style="font-size:95%;">z</span>/-ধ্বনির শব্দগুলো বাংলায় সাধারণত /<span style="font-size:95%;">dʒ</span>/ – জাহাজ (জহাজ়, <span style="font-size:95%;">جـﮩاز</span>) /<span style="font-size:95%;">dʒɑɦɑdʒ</span>/, মেজাজ (মিজ়াজ, <span style="font-size:95%;">مزاج</span>) /<span style="font-size:95%;">medʒɑdʒ</span>/, সাজা (সজ়া, <span style="font-size:95%;">سزا</span>) /<span style="font-size:95%;">ʃɑdʒɑ</span>/, কিংবা উজির (ব়জ়ীর, <span style="font-size:95%;">وزير</span>) /<span style="font-size:95%;">udʒir</span>/। অসাধারণত জ় /<span style="font-size:95%;">z</span>/, কারণ নাটকে উজিরে আজম ( ব়জ়ীর-এ-‘আজ়ম, <span style="font-size:95%;">وزير اعظم</span>)-কে /<span style="font-size:95%;">udʒireɑdʒom</span>/ বললে কেমন যেন একটু ঠেকে, তাই /<span style="font-size:95%;">uzireʔɑzɔm</span>/ শোনা যায়। অন্যান্য ভাষা থেকে আসা অল্প-প্রচলিত শব্দে, শিক্ষিতের বুলিতে /<span style="font-size:95%;">z</span>/ প্রায়শই /<span style="font-size:95%;">z</span>/, /<span style="font-size:95%;">dʒ</span>/ নয়। তবে মান্য বাংলার /<span style="font-size:95%;">dʒ</span>/ অনেক উপভাষায় /<span style="font-size:95%;">z</span>/, পরশুরামের zানতি-র মত।<br /><br />শতাংশের হিসেবে বাংলায় অনেক কম ব্যবহৃত একটি ধ্বনিমূল হল /<span style="font-size:95%;">ʕ</span>/। আস্সালামু ‘আলাইকুম (<span style="font-size:95%;">السلام عليكم</span>, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বাংলাদেশে এবং এ অঞ্চলের অনেক দেশে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত সম্ভাষণ বাক্য। অনেকেই সাধারণভাবে /<span style="font-size:95%;">asalaːmʊ alaɪkʊm</span>/ বললেও, আরবির শুদ্ধ উচ্চারণ হল /<span style="font-size:95%;">ʔasːaˈlaːmʊ ʕaˈlaɪkʊm</span>/। এবং আরবি এবং আরবি-পঠনে শিক্ষিত লোকের বুলিতে শুদ্ধ উচ্চারণটি শোনা যায়।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-77700921043847757662009-08-05T01:56:00.001+07:002009-08-05T01:58:14.949+07:00পত্রিকায় সাধু ভাষা-রীতি<span style="font-size:130%;">পত্রিকায় এখন সাধু ভাষার দেখা মেলে কেবল সম্পাদকীয় নিবন্ধে। পশ্চিম বঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকায় আর বাংলাদেশে দৈনিক ইত্তেফাকে। আগে দু’টি পত্রিকাতেই সাধু ভাষায় সংবাদ ছাপা হত। আনন্দবাজার পত্রিকা খবরের পাতা থেকে সাধু ভাষা গুটিয়ে নিয়েছে ১৯৬৫ সালের ২২শে মার্চে। তার দেখাদেখি অন্যান্য পত্রিকাও সংবাদ পরিবেশনে সাধু ভাষার ইতি টানে। দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদ পরিবেশনে সাধু ভাষা ছেড়ে চলতি ভাষার ব্যবহার শুরু করে ২০০১ সালের ১৪ই নভেম্বর। তার আগের দিন অর্থাৎ ১৩ই নভেম্বর ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ঘোষণা ছাপা হয়– <br />‘একটি ঘোষণা–<br />ভাষা-বিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানী, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, তরুণ প্রজন্ম, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, পাঠক-পাঠিকা এবং শুভানুধ্যায়ীদের সুচিন্তিত মতামত অনুযায়ী আগামীকাল বুধবার থেকে দৈনিক ইত্তেফাকে সাধু ভাষা-রীতির বদলে চলতি ভাষা-রীতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের গত ৫০ বছরের ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে সম্পাদকীয় নিবন্ধ আগের মতই সাধু-রীতিতে প্রকাশিত হবে। – ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।’<br />ইত্তেফাকের সম্পাদকীয় নিবন্ধের সাধু ভাষা কিন্তু কেবল সর্বনামে আর ক্রিয়াপদে; বিশেষণ, ক্রিয়া-বিশেষণ আর সমাসবদ্ধ পদের বড়ই অভাব। আর সংস্কৃতাগত তৎসম শব্দের চেয়ে আরবি-ফারসির তদ্ভব বা তৎসম শব্দের ব্যবহার বেশি।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-65913727742568588542009-08-04T10:38:00.003+07:002010-01-25T23:29:15.527+06:00ক্রিয়া-বিশেষ্যে অভিশ্রুতির ধ্বনি প্রবর্তন<span style="font-size:130%;">বাংলা ভাষায় -ইবা (চলিত রীতিতে -বা) প্রত্যয় যোগে ক্রিয়া-বাচক বিশেষ্য পদ, ইংরেজিতে যাকে <span style="font-size:95%;">verbal noun</span> বলা হয়, ‘মাত্র’-যোগে এবং চতুর্থী ও ষষ্ঠী বিভক্তিতে ব্যবহৃত হয় – করিবা-মাত্র, করিবার এবং করিবার জন্য। চলিত রীতিতে তা করা-মাত্র, করবার এবং করবার জন্য। সাধু ভাষায় উচ্চারণ নিয়ে সমস্যা না থাকলেও, চলিত ভাষায় আছে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে করবার উচ্চারণ /<span style="font-size:95%;">kɔrbɑr</span>/, তেমনিভাবে বলবার উচ্চারণ /<span style="font-size:95%;">bɔlbɑr</span>/; খেলবার শব্দটি সুনীতিকুমারের ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণে নেই; কিন্তু সুনীতি-সূত্র অনুসারে /<span style="font-size:95%;">kʰælbɑr</span>/ হওয়ার কথা। ঢাকার বাংলা একাডেমির বাংলা বানান-অভিধানে করবার /<span style="font-size:95%;">kɔrbɑr</span>/, কিন্তু খেলবার বা দেখবার শব্দ দুটো নেই। সংসদ সাহিত্যের বা বাংলা একাডেমির উচ্চারণ অভিধানের একটিতেও করবার বা খেলবার শব্দ দুটি নেই।<br /><br />সাধু করিবার থেকে অপিনিহিতি কইরবার, এবং বিশেষত পূর্ববঙ্গের কথ্য বাংলায় এধরণের অপিনিহিত উচ্চারণের দেখা মেলে। সেই অপিনিহিত কইর্বার থেকে অভিশ্রুতির ফলে চলিত ভাষায় প্রতিস্থাপিত ধ্বনির লুপ্তি, অর্থাৎ করবার। করিবার - কইরবার - করবার, খেলিবার - খেইলবার - খেলবার, শুনিবার - শুইনবার - শুনবার, ইত্যাদি। অপনিহিত এই স্বরধ্বনিগুলো আবার শুদ্ধ ধ্বনি নয়, বরং অনাক্ষরিক। ধ্বনি প্রবর্তেনের নিয়মে উচ্চারণগুলো হওয়া উচিত /<span style="font-size:95%;">koribɑr/ - /koirbɑr/ - /korbɑr/, /kʰelibɑr/ - /kʰeilbɑr/ - /kʰelbɑr/, /ʃunibɑr/ - /ʃuinbɑr/ - /ʃunbɑr</span>/, ইত্যাদি। কিন্তু সুনীতিকুমারের বইতে বলা হয়েছে, /<span style="font-size:95%;">kɔrbɑr</span>/; এবং এ নিয়ম মেনে চললে /<span style="font-size:95%;">kʰælbɑr</span>/ ও /<span style="font-size:95%;">ʃonbɑr</span>/।<br /><br />তবে ভাস্করজ্যোতি সেনগুপ্তের বাংলা উচ্চারণ রীতি বইয়ের ভূমিকায় পবিত্র সরকারের ব্যাখ্যা – বাংলায় আরেক ধরণের ক্রিয়া-বিশেষ্য পদের ব্যবহার আছে এবং সেগুলোও চতুর্থী এবং ষষ্ঠী বিভক্তিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর স্বরধ্বনিগুলো সাধু ভাষার একই রকম ক্রিয়াপদের স্বরধ্বনির চেয়ে খানিকটা নিচু। এই নিচু স্বরধ্বনিগুলো (/<span style="font-size:95%;">ɔ, æ, o</span>/) উঁচু স্বরধ্বনিগুলোকে (/<span style="font-size:95%;">o, e, u</span>/) হটিয়ে দিচ্ছে, অর্থগত নৈকট্যের কারণে; হয়ত খানিকটা উঁচু ধ্বনির উচ্চারণের অলসতায়, নিচু ধ্বনির উচ্চারণ করতে জিহ্বার খাটুনি অনেক কম। আপাতত ক্অর্বার্ /<span style="font-size:95%;">kɔrbɑr</span>/ বিশেষত পশ্চিম বঙ্গের ভাষায় এবং কোর্বার্ /<span style="font-size:95%;">korbɑr</span>/ সাধারণত পূর্ববঙ্গের ভাষায় পরিলক্ষিত হয়। পবিত্র সরকারের মতে দুটি উচ্চারণই মান্য, তবে একসময় করবার /<span style="font-size:95%;">korbɑr</span>/, খেলবার /<span style="font-size:95%;">kʰelbɑr</span>/ আর শুনবার /<span style="font-size:95%;">ʃunbɑr</span>/ আর শোনা যাবে না, থাকবে কেবলই করবার /<span style="font-size:95%;">kɔrbɑr</span>/, খেলবার /<span style="font-size:95%;">kʰælbɑr</span>/ এবং শোনবার/<span style="font-size:95%;">ʃonbɑr</span>/, প্রথম দু’ক্ষেত্রে বানানের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-43825323526619135972009-07-30T02:13:00.002+07:002009-07-30T17:18:55.700+07:00উচ্চারণে জিহ্বা জড়ানো<span style="font-size:130%;">এমন কিছু শব্দবন্ধ বা বাক্য থাকে যা উচ্চারণ করতে গেলে জিহ্বা জড়িয়ে যায়, পরপর দ্রুত ঠিকমত বলে ওঠা যায় না। যেমন আমরা বলে থাকি ক লিখতে কলম ভাঙ্গা, ঠিক তেমনি উচ্চারণ করতে দাঁত ভাঙ্গা। ইংরেজিতে একেই বলে টাং টুইস্টার (<span style="font-size:95%;">tongue twister</span>), অভিধানের মতে বাংলায় বলতে হবে দুরুচ্চার্য বাক্য বা শব্দবন্ধ, উচ্চারণের কাঠিন্য এতে বেশ ফুটে ওঠে। দাঁত ভাঙ্গা শব্দও বলা যেতে পারে, যদিও বাংলায় শব্দ সন্নিবেশ (<span style="font-size:95%;">collocation</span>)-এর নিয়মে দাঁত ভাঙ্গা জবাবই দস্তুর। ইংরেজি ভাষায় এ রকম সবচেয়ে প্রচলিত দাঁতভাঙ্গা বাক্য বোধ করি <span style="font-size:95%;">Peter Piper picked a peck of pickled peppers. / A peck of pickled peppers Peter Piper picked</span>। অনেক সময় বাড়তি দুই পঙ্ক্তি যোগ করা হয়: <span style="font-size:95%;">If Peter Piper picked a peck of pickled peppers, / Where’s the peck of pickled peppers Peter Piper picked</span>? এর পরেই হয়ত <span style="font-size:95%;">She sells sea shells on the sea shore</span>। এ ধরণের বাক্য বা শব্দবন্ধ তৈরি হয় ভাষায় ব্যবহৃত প্রায় একই ধরণের ধ্বনিমূলের পাশাপাশি ব্যবহার করে, তা সে ব্যঞ্জনেরই হোক, বা স্বরের।<br /><br />ফরাসিতে <span style="font-size:95%;">un chasseur sachant chasser sait chasser sans son chien de chasse</span> (যে শিকারী শিকার করতে পারে সে তার শিকারী কুকুর ছাড়াই শিকার করতে পারে)। জর্মনে <span style="font-size:95%;">Es grünt so grün, wenn Spaniens Blüten blühen</span> (স্পেনে ফুল ফুটলে সবুজ অনেক সবুজ দেখায়, বার্নার্ড শ’র পিগম্যালিয়নের <span style="font-size:95%;">The rain in Spain stays mainly in the plain</span>-এর অনুকরণে)। হিন্দিতে বেশ জুতসই এমন একটি বাক্য হল: <span style="font-size:95%;">एक ऊंचा ऊंट है पूंछ ऊंची ऊँट की। पूंछ से भी ऊंची क्या पीठ ऊंची ऊंट की॥</span> (এক ঊঁচা ঊঁট হৈ পূঁছ ঊঁচী ঊঁট কী। পূঁছ সে ভী ঊঁচী ক্যা পীঠ ঊঁচী ঊঁট কী॥ সে এক লম্বা ঊট, উঁচু তার লেজ। লেজের চেয়ে উঁচু সে ঊটের পিঠ।) বাংলায়ও তেমন বেশ কিছু বাক্য রয়েছে: ‘পাখি পাকা পেঁপে খায়,’ ‘বাবলা গাছে বাঘ ঝোলে’ আর ‘জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা’ বেশ প্রচলিত। অন্তত ছোটবেলায় প্রত্যেকেই একবার না বলেছে বা বলিয়েছে। আরও কয়েকটি আছে: ‘চাচা চাঁচা চটা চেঁচোনা, আচাঁচা চটা চাঁচো,’ ‘বার হাঁড়ি রাবড়ি বড় বাড়াবাড়ি,’ ‘গড়ের মাঠে গরুর গাড়ি গড়গড়িয়ে যায়,’ ‘কাচা গাব, পাকা গাব’ আর ‘কত না জনতা জানাল যাতনা যতনে।’<br /><br />মুক ও বধিরদের ব্যবহৃত আঙ্গুলের সাঙ্কেতিক ভাষায়ও জিহ্বা জড়ানোর মত আঙ্গুল পেঁচিয়ে ফেলবার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সাঙ্কেতিক ভাষার দুরুচ্চার্য শব্দবন্ধকে বলা হয় ফিঙ্গার-ফাম্বলার (<span style="font-size:95%;">finger fumbler</span>)।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-47407821702981922922009-07-27T03:23:00.002+07:002009-07-27T03:34:56.703+07:00বুলির অবোধগম্যতা<span style="font-size:130%;">ভাষার খেলা বা গুপ্ত ভাষা হল মুখের বুলিকে একটু এদিক-ওদিক ক'রে পালটে দেওয়া যেন অনভ্যস্ত কানে একটু অন্য রকম ঠেকে, বোঝার অসুবিধে হয়। ইংরেজিতে অনেক ভাবেই কাজটি করা হয়। এদের মধ্যে প্রধান এবং সবচেয়ে প্রচলিত বোধ করি পিগ ল্যাটিন (<span style="font-size:95%;">Pig Latin</span>)। ভাষাতত্ত্বের নিয়মে সাধারণভাবে প্রতিটি অক্ষরকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায় – আরম্ভ বা অনসেট (<span style="font-size:95%;">onset</span>) এবং অবশিষ্ট বা রাইম (<span style="font-size:95%;">rime</span>)। রাইমের আবার দু’টি ভাগ – কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস (<span style="font-size:95%;">nucleus</span>) আর অন্ত বা কোডা (<span style="font-size:95%;">coda</span>)। নাম /<span style="font-size:95%;">nɑm</span>/ শব্দটিতে ন্ /<span style="font-size:95%;">n</span>/ হল আরম্ভ, আ /<span style="font-size:95%;">ɑ</span>/ হল কেন্দ্র আর ম্ /<span style="font-size:95%;">m</span>/ হল অন্ত। পিগ ল্যাটিনে প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষরের আরম্ভকে শব্দের শেষে নিয়ে সাথে <span style="font-size:95%;">ay</span>, উচ্চারণ /<span style="font-size:95%;">eɪ</span>/, যোগ করতে হয়। এতে করে পিগ ল্যাটিন (<span style="font-size:95%;">Pig Latin</span>) কথাটি মুখের বুলিতে গিয়ে দাঁড়াবে ‘ইগপেই অ্যাটিনলেই’ (<span style="font-size:95%;">Igpay Atinlay</span>) /<span style="font-size:95%;">ɪɡpeɪ ætɪnleɪ</span>/। সবসময় যে <span style="font-size:95%;">ay</span>-র ব্যবহার হয় তা নয়, অনেকক্ষেত্রে <span style="font-size:95%;">way</span>, <span style="font-size:95%;">yay</span>, বা <span style="font-size:95%;">hay</span>-র ব্যবহারও দেখা যায়। এই গুপ্ত ভাষার আছে রকমফের এবং বাহারি নাম। পিগ গ্রিক (<span style="font-size:95%;">Pig Greek</span>) বা আবি ডাবি (<span style="font-size:95%;">Ubbi Dubbi</span>) বলে একটি নিয়মে শব্দের প্রতিটি অক্ষরের অবশিষ্টের আগে <span style="font-size:95%;">es</span> /<span style="font-size:95%;">es</span>/ ঢোকানো হয় – <span style="font-size:95%;">how are you</span>? হবে <span style="font-size:95%;">hesow arese yesou</span>? জিবারিশ (<span style="font-size:95%;">Gibberish</span>) বলে একটি নিয়মে প্রতিটি শব্দের প্রথম আরম্ভের পর <span style="font-size:95%;">itherg</span>, <span style="font-size:95%;">itug</span> বা <span style="font-size:95%;">idig</span> ঢোকানো হয় – <span style="font-size:95%;">dog</span> হবে <span style="font-size:95%;">dithergog</span>, <span style="font-size:95%;">ditugog</span> বা <span style="font-size:95%;">didigog</span>। জার্মান ভাষায় <span style="font-size:95%;">B-Language</span>-এ প্রতিটি স্বর বা দ্বিস্বরের পর একই স্বর বা দ্বিস্বর আগে <span style="font-size:95%;">b</span> বসিয়ে আবার উচ্চারণ করা হয় – <span style="font-size:95%;">Deutsche Sprache</span> হয়ে যায় <span style="font-size:95%;">Deubeutschebe Sprabachebe</span>।<br /><br />এধরণের ভাষার খেলা সাধারণত ছোটদের মধ্যে দেখা যায়। মেয়েদের মাঝেও ব্যবহার আছে। বাংলায় এ ধরণের বেশি প্রচলিত রীতিটি হল শব্দের আগে ‘চি’ বসিয়ে দেওয়া – চিআমি চিভাত চিখাই। যদি আরেকটু অবোধ্য করতে হয় তবে শব্দের প্রতিটি প্রতিটি আরম্ভের আগে ‘চি’ বসালেই হবে – চিআচিমি চিভাচিত চিখাচিই। অনেক সময় ‘চি’-এর পরিবর্তে ‘পি’ বা অন্য কোন বর্ণও দেখা যায়। রুশীদেরও প্রায় একই রকম একটি নিয়ম আছে; প্রতিটি অক্ষরের আগে ফু় (<span style="font-size:95%;">фу</span>) যোগ করা হয়, প্রিভ্যেত (<span style="font-size:95%;">привет</span>, অর্থ খানিকটা ওহে’র মত, আর য অর্থাৎ য-ফলার সংস্কৃত উচ্চারণটি একটু খেয়াল রাখতে হবে) হয়ে যায় ফু়প্রিফু়ভ্যেত (<span style="font-size:95%;">фуприфувет</span>); আর এর নাম <span style="font-size:95%;">фуфайский язык</span> বা ফু়ফ়া ভাষা। আরেকটি আরেকটু কঠিন নিয়মে অক্ষরের আরম্ভে ইট যোগ করা হয় – ইটামিটি ভিটাতিট খিটাইটি। প্রায় একই রকম আরেকটি নিয়মে আরম্ভের সাথে ইংচ যোগ করা হয় – ইংচামি ভিংচাত খিংচাব। চি এবং ইংচ যোগে বুলির কথা অভ্র বসুর বাংলা স্ল্যাং: সমীক্ষা ও অভিধান বইতে পাওয়া যায়। পশ্চাৎ বুলির ব্যবহারও বেশ লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে কাজটি হল শব্দটিকে পিছন থেকে উচ্চারণ ক’রে যাওয়া – মিআ তভা ইখা। দুই অক্ষরের, অন্ত সহ, শব্দ হলে অনেক সময় ‘বিস্কুট’কে টস্কুবি না বলে কুট্বিস্-ও বলা হয়। অক্ষরের প্রতিটি অভ্যস্ত জিহ্বা এবং কানের কাছে এটা কোনও ব্যাপারই নয়। ফরাসিতে ভ়ের্লঁ বা <span style="font-size:95%;">Verlan</span> (লঁভের, <span style="font-size:95%;">l'envers</span> থেকে) নামের এক নিয়মে শব্দের প্রতিটি অক্ষর পিছন থেকে উচ্চারণ করা হয় একটু পালটে নিয়ে, অনেকটা কুট্বিসের ধাঁচে – <span style="font-size:95%;">arabe</span> থেকে হয় <span style="font-size:95%;">beur</span> বা <span style="font-size:95%;">femme</span> থেকে <span style="font-size:95%;">meufeu</span>।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-11825286404617833062009-07-15T02:13:00.000+07:002009-07-15T02:15:19.246+07:00মরা কার্তিকের মঙ্গা<span style="font-size:130%;">বাংলাদেশের উত্তরে পাঁচটি জেলায় আশ্বিনের শুরুতে ধান-বোনার কাজ শেষ হয়ে গেলে গরিব, পরের ক্ষেতে-কাজ-করা লোকের হাতে না থাকে কাজ, না থাকে রেস্ত। দ্রব্যমূল্যের দাম যায় বেড়ে। এ-অবস্থাটা চলে প্রায় দু’মাস ধরে – আশ্বিন আর কার্তিক, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি; স্থানীয় লোকের মুখের ভাষায় মরা কার্তিক। ফিছরই এমনটি ঘটে রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট আর গাইবান্ধায়। দু’মাসের এই সময়টা উত্তারঞ্চলে মঙ্গা নামে পরিচিত। উচ্চারণ /mɔŋɡɑ/। মঙ্গা-পড়া এলাকার লোকেরা আগে নিজেদের মত করে ব্যাপারটা সামলে নিত। ২০০৪ সালে মঙ্গা মোটামুটি হঠাৎ করে গণমাধ্যমের নজরে পড়ে যাওয়ায় বেশ শোর ওঠে ব্যাপারটা নিয়ে। দিনের পর দিন দৈনিক পত্রিকার পাতায় খবর, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ইত্যাদি।<br /><br />অনেক পত্রিকার উপসম্পাদকীয়তে দেখা যায় মঙ্গা শব্দটি এসেছে মাগা, অর্থাৎ চাওয়া বা ভিখ মাগা, থেকে; মান্য বাংলার মাগা মঙ্গা-পীড়িত অঞ্চলে মাঙ্গা। অনেক ক্ষেত্রে শব্দটির ব্যুৎপত্তিতে দেওয়া থাকত দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করে যাওয়া বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত। মঙ্গা-পড়া এলাকার অনেক গরিব লোকই মরা কার্তিকে ভিক্ষে করে দিনাতিপাত করত বা এখনও করে, কিন্তু মাঙ্গা থেকে মঙ্গার সঙ্ঘটন বোধ করি একটু বেশি সহজ হয়ে গেল। মাঙ্গা শব্দটা সে অঞ্চলের মুখের বুলিতে এখনও বিদ্যমান, ত্রিশ বছর আগেও ছিল; একটি আ-কার কমে গিয়ে নতুন শব্দ তৈরি হবার কথা নয়, বিশেষত যখন মঙ্গা শব্দটাও সেই অঞ্চলে ত্রিশ বছর আগেও ছিল?<br /><br />উত্তরাঞ্চলে মাঙ্গা কথাটা চাওয়া বা যাচ্ঞা করা অর্থে প্রচলিত ঠিক যেমনটি ছিল মধ্য বাংলায় – লৈলুঁ দান কপোত মাঙ্গিয়া, কবিকঙ্কণ থেকে। এই শব্দটি মান্য বাংলার শব্দ মাগা থেকে এসেছে। জ্ঞানেন্দ্রমোহনের মতে সংস্কৃত মার্গন থেকে মাগন, সাথে আ-যুক্ত হয়ে মাগনা, সে থেকে সঙ্ক্ষেপ মাগা। মাগা থেকে মাঙ্গা কি ভাবে এল? মধ্য বাংলায় শব্দটিতে চন্দ্রবিন্দু ছিল, সম্ভবত মৈথিলির প্রভাবে – বিরহি যুবতী মাঁগ দরশন দান, বিদ্যাপতি থেকে। হিন্দি ক্রিয়াটিতে চন্দ্রবিন্দু – <span style="font-size:95%;">माँगना</span> (মাঁগনা)। আর দুর্মূল্য অর্থে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে বলতে শোনা যায় চাল বেশ মঙ্গা হয়ে পড়েছে, হয়ত কিঞ্চিত হ-এ ভাবও আছে – ম(হ্)ঙ্গা। এই মহঙ্গা শব্দটি হিন্দিতে <span style="font-size:95%;">महँगा</span> বা <span style="font-size:95%;">महंगा</span> আর উর্দুতে مہنگا। উর্দুতে উচ্চারণ অনেকসময় অনেকটা মহ্ঙ্গা। এবং প্ল্যাট্সের মতে মহঙ্গা এসেছে প্রাকৃত মহগ্ঘও, যা কিনা সংস্কৃত মহার্ঘ + কঃ থেকে আগত; অর্থ দুর্মূল্য। মহঙা শব্দটি অসমীয়া ভাষায়ও আছে; চন্দ্রকান্ত অভিধানের মতে, সংস্কৃত মহার্ঘ থেকে হিন্দি মহংগা হয়ে। শৈলেন্দ্র বিশ্বাসের সংসদ বাংলা অভিধানে মাঙ্গা, বিশেষণ হিসেবে অর্থ দুর্মূল্য আর ক্রিয়া হিসেবে চাওয়া।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-22835299548122137832009-07-13T15:09:00.000+07:002009-07-13T15:11:02.119+07:00খাতিরজমা আর খাতির জমানো<span style="font-size:130%;">কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯২২ সালে ছাপানো শিব রতন মিত্রের পুরনো বাঙলা গদ্যের ধরণ (<span style="font-size:95%;">Types of Early Bengali Prose</span>) বইয়ে দেখা যায় ‘সাহ গোলাম আহম্মদ খাতির জমাতে বাগের সাবিক দস্তুরে ভোগ করিবেন’ কিংবা ‘এখন শ্রীযুক্ত আমিন্দী এক ইঙ্গরেজী সনন্দ হুকুম হয় তবে খাতির জমাতে জমি আবাদ করিয়া শ্রী৺ সেবা পূজা করি।’ পুরনো বাংলা গদ্যের নমুনা, প্রথমটির লিপিকাল বঙ্গাব্দ ১১৭২ বা ইংরেজি ১৭৬৫ সাল, পরেরটির ঠিক বিশ বছর পর। ‘খাতির জমা,’ যদিও বর্তমানে প্রায় সব অভিধানেই ‘খাতিরজমা।’ অর্থ কিন্তু তিন ধরণের পদের মাঝে ঘুরপাক খায়।<br /><br />জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দটি বিশেষ্য হিসেবে নিশ্চয়তা আর বিশেষণ হিসেবে নিশ্চিন্ত, পাশে বন্ধনীস্থ টীকা [এই শব্দ ক্রমে বঙ্গভাষায় ব্যবহারে আসিতেছে]। বাঙ্গালা ভাষার অভিধানের প্রথম প্রকাশ ১৯১৬ সালে! উইলিয়াম কেরির অভিধানেও কিন্তু শব্দটি আছে, বিশেষ্য এবং বিশেষণে; অর্থ আরামপ্রাপ্ত, শান্ত, খুশি, মনের স্থিরতা, সন্তুষ্টি, নিশ্চয়তা। কেরির অভিধান বেরিয়েছিল ১৮২৭ সালে। হরিচরণে বিশেষ্য হিসেবে অর্থ মনের শান্তি বা সুখ বা দৃঢ়বিশ্বাস; উদাহরণ, দাশরথি রায়ের পাঁচালি থেকে ‘ক্ষুদ্র বেটাকে খাতির ক’রে, খাতির জমায় ছিলাম ভুলে।’ রাজশেখরে বিশেষ্য দৃঢ়বিশ্বাস, বিশেষণ নিশ্চিন্ত। বাংলা একাডেমির অভিধানে ক্রিয়া বিশেষণ হিসেবে অর্থ নিশ্চিন্তে, নিরুদ্বেগে; উদাহরণ আবুল মনসুর আহমদ থেকে ‘যান, খাতিরজমা থাকুন গিয়া, কিছুই হইব না’ আর সৈয়দ হামজা থেকে ‘চলিল খাতেরজমা ডর নাহি আর।’ শব্দ সঞ্চয়িতায় বিশেষ্য নির্ভীকতা, নিশ্চিন্তভাব আর বিশেষণ নিশ্চিন্ত, যার উপর নির্ভর করা যায় এমন। ব্যুৎপত্তি সিদ্ধার্থে বিশেষণ আরামপ্রাপ্ত, খুশি, তৃপ্ত; উদাহরণ রাধাকান্তের গসপেল থেকে, ‘থাকিহ খাতিরজমা কাল যায় নাই।’ কাজী আব্দুল ওদুদে বিশেষণ, নিশ্চিন্ত, নিরুদ্বিগ্ন; উদাহরণ ‘বিরুদ্ধপক্ষ কিছুই করতে পারবে না, আপনি খাতিরজমা থাকুন।’ সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধানে, ক্রিয়া বিশেষণ, নিশ্চিন্তে, নির্ভাবনায়, আর উদাহরণ সেই সৈয়দ হামজা থেকে। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে অবশ্য শব্দটিকে ঢাকার বুলি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থ ধীরে সুস্থে, অর্থাৎ ক্রিয়া বিশেষণ। আর কলিকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি’র অবাঙালিদের জন্য আধুনিক বাংলা অভিধান (<span style="font-size:95%;">Modern Bengali Dictionary for Non-Bengali Readers</span>)-এ, যেখানে উচ্চারণ দেওয়া আছে /<span style="font-size:95%;">kʰɑtirdʒɔmɑ</span>/, অর্থ বিশেষ্য হিসেবে নিরুদ্বেগ, নিশ্চিন্ত আর বিশেষণ হিসেবে নিশ্চিন্ত, তৃপ্ত, আত্মস্থ। উইলিয়াম গোল্ডস্যাকেও শব্দটির দেখা মেলে বিশেষ্য এবং বিশেষণ হিসেবে।<br /><br />খাতিরজমা, বা খ়াত়িরজমা‘, শব্দটি ফারসি خاطرجمع থেকে এসেছে। সব অভিধানের তাই মত। জন শেক্সপিয়ারে খাতির অর্থ হৃদয়, চিত্ত, মন, ঝোঁক, স্মৃতি, বর্ণনা, পক্ষ, ইচ্ছা, ইত্যাদি। বাংলায় খাতির শব্দে এর বেশির ভাগ অর্থই বোঝায়। এই ফারসি খাতির এসেছে আরবি خطر থেকে। আর জমার অর্থ ফারসিতে সমাবেশ, যুক্তি, সংগ্রহ, পরিমাণ, যোগফল, সমগ্র এবং বহুবচন। আলাদা ভাবে এই শব্দও বাংলায় প্রচলিত। এরও আগমন আরবি থেকে। তবে খাতিরজমা পূর্ণাঙ্গ শব্দবন্ধ হিসেবে ফারসিতে বিশেষ্য এবং বিশেষণ। ক্রিয়া বিশেষণ বোধ করি বাংলার অবদান। হিন্দিতেও এই শব্দের দেখা মেলে – <span style="font-size:95%;">खातिरजमा</span> (বানানটা বাংলার মতই), বা <span style="font-size:95%;">ख़ातिरजमा</span>, তবে সাথে বাংলার মত থাকা না হয়ে ক্রিয়াপদটা সাধারণত হয় রখনা (<span style="font-size:95%;">रखना</span>, রাখা)। হিন্দিতে বলে গাঁঠ মেঁ জমা রহে তো খাতির জমা (<span style="font-size:95%;">गाँठ में जमा रहे तो खातिरजमा</span>, পয়সা থাকলে নিশ্চিন্ত থাকা যায়)। সকালে ‘খাতিরজমা’ ঘুম থেকে উঠে ঘরের বাইরে গিয়ে অপরিচিত লোকের সাথে ‘খাতির জমানো’ পুরোদস্তুর ভিন্ন জিনিস।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com4tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-10550689608219092062009-07-09T03:21:00.005+07:002009-07-09T03:29:22.363+07:00ভাষার সাধু, চলিত<span style="font-size:130%;">সাধু আর চলিত,বা চলতি, বাংলা ভাষার প্রধান দুই মান্য রীতি। শান্তিপুর আর নদিয়ার হলেও, চলিত ভাষা এখন কোন অঞ্চলের ভাষা নয়। বরং সর্বগ্রাহ্য মান্য ভাষা। আর সাধু ভাষার ব্যবহার এখন বেশ পড়ে গেছে, প্রায় লেখাই হয় না, দুয়েকটি দৈনিকের সম্পাদকীয় ছাড়া। আগে ছিল লেখায় সাধু, আর বচনে চলিত। ভাষাতত্ত্বে একেই বলে দ্বিবাচনভঙ্গি বা দ্বিবিধ ভাষারীতি। এই অবস্থাটা অন্তত বাংলার ক্ষেত্রে আর নেই। সাধু ভাষা নতুন করে আর ব্যবহৃত হয় না। সাধু ভাষা এখন পুরনো সাহিত্যের অঙ্গ। তাই এই দ্বিবাচনভঙ্গির ব্যাপারটা এখন আর আছে বলা বোধ করি চলে না। গ্রিসেও বোধ হয় ব্যাপারটা একই রকম। ১৮২০-এর পর থেকে লেখার ভাষাকে বলা হত কাথারেভুসা বা পরিশীলিত অর্থাৎ সংস্কৃত গ্রিক, আর মুখের বুলি ছিল দিমোতিকি বা দেহাতি অর্থাৎ চলতি গ্রিক। গেল শতাব্দীর সাতের দশকের খানিক পরে মান্য ভাষার তকমা দেওয়াতে দিমোতিকি-ই গ্রিসে এখন মান্য প্রচলিত বুলি।<br /><br />এখন চলিত বাংলার সময়। ভবিষ্যতে হয়ত নতুন কিছু আসবে। এখনই আঞ্চলিকতা ছাড়াও শহর-নগরে যা বলা হয় এবং যা লেখা হয় তার মধ্যে বেশ ফারাক দেখা যায়। ভাষাতত্ত্বের বুকনিতে এগুলো অ্যাক্রেলেক্ট, মেসোলেক্ট, ব্যাসিলেক্ট (<span style="font-size:95%;">acrolect</span>, <span style="font-size:95%;">mesolect</span> এবং <span style="font-size:95%;">basilect</span>)-এর পর্যায়ে পড়বে। অ্যাক্রোলেক্ট হল শীর্ষভাষা, মান্য চলিত রূপ যা আমরা লিখে থাকি এবং দপ্তর বা আদালতে এবং গণমাধ্যমে ব্যবহারের চেষ্টা করি। শিক্ষিত দুই অঞ্চলের লোকের মাঝেও এর ব্যবহার দেখা যায়, বোঝার সুবিধার জন্য, বিলেতে যেমন একসময় গৃহীত উচ্চারণ (<span style="font-size:95%;">received pronunciation</span>) ব্যবহৃত হত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খাইয়াছি (সাধু), খেয়েছি (মান্য চলিত, অ্যাক্রোলেক্ট), এবং খাইছি বা খাইসি (মেসো- বা ব্যাসিলেক্ট)। এক্ষেত্রে খাইছু বা খাইসু কিংবা খাউসু হবে আঞ্চলিকতা (ডায়ালেক্ট, <span style="font-size:95%;">dialect</span>)।<br /><br />মধ্য যুগে আলাওলদের ভাষাই ছিল আদর্শ। পরে ষোলশ' খ্রিস্টাব্দের দিকে ভাষা পালটে সাধু ভাষার রূপ নেয়। সাধু ভাষা হয় সাহিত্যের ভাষা, শিক্ষিতের ভাষা, অনুষ্ঠানের ভাষা। সাধু কথাটির অর্থ সাধারণভাবে এখন পরিশীলিত, মার্জিত বা ভদ্র ধরা হলেও, সেসময় এর অর্থ ছিল বণিক। সমাজভাষা বিশেষজ্ঞ মনসুর মুসার এই মত। অর্থটির দ্যোতনা এখনও ‘সাধু সাবধান’ কথাটির মধ্যে বিদ্যমান। অর্থাৎ সাধু ভাষা ছিল আমির-সাধুদের ভাষা। পরে ইংরেজদের হাতে পরে প্রাকৃত প্রভাব মুক্ত হয়; এবং সংস্কৃত প্রভাব যুক্ত হয়ে তৈরি মান্য সাধু ভাষা, খানিকটা যেন সংস্কৃতের ব্যাসিলেক্ট। ১৮০১ সালে মৃত্যুঞ্জয় তর্কালঙ্কারের লেখা থেকে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে – ‘এতদরূপে প্রবর্তমান সকল ভাষা হইতে সংস্কৃত ভাষা উত্তমা বহু বর্ণময়ত্ব প্রযুক্ত এক দ্ব্যক্ষর পশুপক্ষি ভাষা হইতে বহুতরাক্ষর মনুষ্য ভাষার মত ইত্যনুমানে সংস্কৃত ভাষা সর্বোত্তমা এই নিশ্চয়।’ সেসময় দ্বিভাষারীতির ব্যাপারটা আমলে নেওয়া যেত। এরও প্রায় একশ বছরের বেশ কিছু সময় পরে, ১৯১৩ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং প্রমথ চৌধুরী সাধু ভাষার জায়গায় সাহিত্যে চলিত ভাষা চালানোর চেষ্টা করে। তাই পরে মান্য ভাষা হয়ে দাঁড়ায়। একই লেখায় সাধু আর চলিতের মিশ্রণকে গুরুচণ্ডালী বলে অভিহিত করা হত, পরীক্ষার খাতায় তো বটেই।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-62716706201941870022009-07-07T02:18:00.003+07:002009-07-13T15:11:54.212+07:00মাগির অশিষ্টতা<span style="font-size:130%;">বাংলা মৌচাক (১৯৭৫) ছায়াছবিতে উত্তম কুমারকে ছোটভাই রঞ্জিত মল্লিকের সামনে তার প্রেমিকা মিঠু মুখোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়: তুমি ওকে মাগিপাড়া দিয়ে যেতে বলেছ? ছোটভাইয়ের প্রেমিকা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে উত্তর দেয়। একটা জিনিস মোটামুটি পরিষ্কার বোঝা যায় যে মাগি শব্দটা পুরনো আমলে অশিষ্ট ছিল না মোটেই। শোনা যায় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং কালিপ্রসন্ন সিংহ হরহামেশা শব্দটি ব্যবহার করত। শব্দটিতে হয়ত গ্রাম্যতা ছিল। শব্দটি রবীন্দ্রযুগ থেকে সাহিত্যে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যায়। রাজশেখর বসুর চলন্তিকায় শব্দটি অশিষ্ট, কিন্তু মাগী বানানে, যদিও শব্দটি তদ্ভব, যে কোনও ব্যুৎপত্তির দিক থেকে, আর তাই ই-কার হওয়াই রীতি। বাংলায় শব্দটি দিয়ে তুচ্ছার্থে নারী এবং বয়স্ক মহিলা বোঝানো হয়। মাগিপাড়া শব্দের অর্থ যদিও বেশ্যাপাড়া। তবে যে কোনও অর্থেই শব্দটি অন্তত শহুরে বুলিতে অশিষ্ট।<br /><br />জ্ঞানেন্দ্রমোহনে আছে সংস্কৃত মাতৃগাম থেকে প্রালিতে মাতুগাম, সে থেকে প্রাকৃতে মাউগ্গাম, তা থেকে মাউগ, মাগু এবং মাগী (পুরনো বানানে)। রাল্ফ লিলি টার্নারের ইন্দো-আর্য ভাষার তুলনামূলক অভিধানেও প্রায় একই ব্যুৎপত্তি। হরিচরণের মতে শব্দটি মাগ-এর সাথে ই যোগে নিষ্পন্ন, মাগ এসেছে মাউগ বা মাগু থেকে, মৈথিলিতে মৌগী বা মাগু দুইয়েরই অর্থ নারী। সুকুমার সেনের ব্যুৎপত্তি-সিদ্ধার্থে শব্দটি মার্গিতা থেকে যার অর্থ মাগিবার জিনিস। বিজয়চন্দ্র মজুমদারের মতে শব্দটি মাউগি থেকে এসেছে। বিহারে শব্দটি এখনও চলে। তবে আদি শব্দ দ্রবিড় মুক্কণ্, মোক্কন্ বা মোগ্গন্। ওড়িয়াতে মাইকিনা। টমাস বারো এবং মারে বার্নসন এম্যনোর দ্রাবিড়ীয় ব্যুৎপত্তির অভিধানে নারী অর্থে মুঙ্কনি পাওয়া যায়।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-71815110793556134492009-07-06T12:53:00.007+07:002009-07-09T02:38:14.794+07:00উদ্বেধী ও-ধ্বনি<span style="font-size:130%;">হস্ চিহ্নের প্রয়োজন অনেক ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য হলেও, এর ব্যবহার (অন্তত গড়পড়তা) বাঙালির কলম থেকে উঠে গেছে অনেক আগে। তাতে করে বিপত্তিও তৈরি হয়েছে অনেক। পৃথক্ শব্দটিকে পৃথক লেখার কারণে ব্যাকরণ-অজ্ঞান বাঙালি খুব সহজেই ভুলে যায় যে সন্ধির সময় পরে স্বর থাকলে আগের ক-য়ে হসন্ত গ-এ পর্যবসিত হয়, হবে পৃথগন্ন; তা না করে অনেকেই লিখে ফেলে পৃথকান্ন। পর্ষৎ থেকে হয়েছে পর্ষত, তা থেকে পর্ষতের, যা সর্বৈব ভুল, হবে পর্ষদের। মতুপ্ প্রত্যয়-সাধিত শব্দে হস্ চিহ্নের ব্যবহার কেবল পুরনো দিনের ছাপায় চোখে পড়ে। এখন শুধু বুদ্ধিমান (বুদ্ধিমান্), রুচিবান (রুচিবান্), ধীমান (ধীমান্), ও বলবান (বলবান্)। শানচ্ প্রত্যয়-সাধিত শব্দে মান-এ এই হস চিহ্নটিই একমাত্র পার্থক্য: যেমন, রোরুদ্যমান, বহমান, ইত্যাদি। হস্ চিহ্ন দিয়ে সংস্কৃত ব্যাকরণের এই পার্থক্যকে বজায় রাখা-না-রাখা নিয়ে অনেক বিতর্ক বিদ্যমান। যাই হোক, কালের যাত্রায় হস্ চিহ্নটির অন্তত এইক্ষেত্রে ঝরে পরবে বলেই মনে হয়।<br /><br />কিন্তু কলম থেকে হস্ চিহ্ন ঝরে পড়ার আগেও হয়ত বাঙালির মুখের বুলি থেকে হস্ চিহ্নের ব্যবহার কয়েকটি ক্ষেত্রে উঠে গেছে। কারণ ষড়্যন্ত্র, আদিতে উচ্চারণ হয়ত ছিল /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽdʒɔntro</span>/ অর্থাৎ শড়্যন্ত্রো এবং আইনমাফিক সেটিই ঠিক। তবে এখন দুয়েকজন ছাড়া তেমনটি উচ্চারণ আর কেউই করে না। এখন দস্তুর হল /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽodʒontro</span>/ – প্রথম অক্ষরের শেষে একটি উদ্বেধী, বা <span style="font-size:90%;">intrusive</span>, /<span style="font-size:90%;">o</span>/, অর্থাৎ শড়োযন্ত্রো।<br /><br />ঢাকার বাংলা একাডেমির বানান অভিধানে (যেখানে উচ্চারণ দেওয়া আছে) ষট্ক (ইংরেজিতে যাকে <span style="font-size:90%;">sestet</span> বলা হয়) /<span style="font-size:90%;">ʃɔʈko</span>/, ষড়্ঋতু /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽritu</span>/, ষড়্জ /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽdʒo</span>/, ষড়্দর্শন /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽdɔrʃon</span>/, ষড়্যন্ত্র /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽdʒontro</span>/, ষড়্রিপু /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽripu</span>/, এবং ষড়্বিধ /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽbidʱo</span>/। যদিও একাডেমির উচ্চারণ অভিধানে বিকল্প হিসেবে /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽo-</span>/ অনেক ক্ষেত্রে; এই উচ্চারণ অভিধানেই আবার ষটক বিকল্পে /<span style="font-size:90%;">ʃɔtok</span>/। তবে কলিকাতার সাহিত্য সংসদের অভিধানে আবার আর সব ক্ষেত্রে /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽo-</span>/ এবং /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽ-</span>/-এর বিকল্প দেওয়া থাকলেও, ষড়্যন্ত্রের উচ্চারণ কেবল /<span style="font-size:90%;">ʃɔɽodʒontro</span>/।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-89029112045132673072009-07-01T12:10:00.000+07:002009-07-01T12:11:22.338+07:00ঘুণ্টিঘর বা ঘুমটিঘর<span style="font-size:130%;">ছোটবেলার স্কুলের সামনে দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তাকে কেটে দিয়ে যেন চলে গেছে রেললাইন। তৈরি হয়েছে <span style="font-size:95%;">level crossing</span>, বাংলায় যা হরহামেশাই রেলক্রসিং নামে পরিচিত। রেললাইনের দু'ধারে রাস্তার উপর দু'টি লোহার পাইপ। ট্রেন যাওয়া-আসার সময় নামানো হয়; পরে তুলে দেওয়া হয় যেন রাস্তা দিয়ে যাওয়া-আসা করা যায়। পুরোটার নাম অন্তত বাংলায় রেলগেট। সেই রেলগেটের পাশে লাল-ইঁটের একটি ছোট ঘর। একজন রেলের কর্মচারীও হয়ত থাকে। সবাই বলে সেইটেই নাকি ঘুণ্টিঘর, যেখান থেকে ট্রেনের যাওয়া-আসার ঘণ্টা বাজানো হয়। ঘুমটিঘর কথাটিও শোনা যায়।<br /><br />পুরনো প্রায় সব অভিধানেই ঘুণ্টী শব্দের অর্থ ছোট ঘণ্টা বা বোতাম। কিন্তু ঘুণ্টী- বা ঘুণ্টিঘর শব্দটি পাওয়া যায় না। জ্ঞানেন্দ্রমোহন এবং বাংলা একাডেমির মতে ঘুণ্টিঘর হল (জামায়) বোতামের ঘর। বোতামের ঘর অর্থে ঘুণ্টিঘরাও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে ঘুণ্টিঘর শব্দটিকে রাজশাহীর বলে দেখানো হয়েছে, অর্থ রেলের ক্রসিং, সাথে আছে ঘণিট শব্দটি দেখার নির্দেশ, যাকে রংপুরের বলে দেখানো হয়েছে, অর্থ রেল খালাসিদের থাকার ঘর। সেই একই অভিধানে ঘুনটি দোআন অর্থ চট্টগ্রামের ভাষায় পানের দোকান। হিন্দিতে <span style="font-size:95%;">घुमटी</span> (ঘুমটী)-র দেখা মেলে, <span style="font-size:95%;">पुलिस की घुमटी</span> (পুলিস কী ঘুমটী, পুলিশের ঠেক)। <br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-3670576256590944302009-06-30T00:51:00.001+07:002009-06-30T00:53:10.243+07:00আণ্টাঘরের ময়দান আর (আফিঙের) গুলি<span style="font-size:130%;">ঢাকার একটি মাঠের নাম আণ্টাঘরের (নাকি আন্টাঘরের?) ময়দান, অবশ্য এখন কেবলই মুখের কথায়। দুয়েক জায়গায় আণ্ডাঘর কথাটাও দেখা যায়, কারণটা বোধ করি আণ্টা বলে কোনও শব্দ বাঙালির মুখে এখন আর শোনা যায় না, কিন্তু আণ্ডা, ডিম অর্থে, খুবই কাছের। জায়গাটির গাল-ভারী নাম বাহাদুর শাহ পার্ক। আর ১৯৫৭ সালের আগে লোকে বলত ভিক্টোরিয়া পার্ক, ১৮৫৮ থেকে; কারণ রানি ভিক্টোরিয়া শাসনভার গ্রহণ করার কথা এই জায়গায় পড়ে শোনানো হয়েছিল। ১৯৫৭ নামটি পালটানো হয়েছিল সিপাহি বিদ্রোহের সময় যাদের ময়দানের গাছে ঝুলিয়ে মারা হয়েছিল তাদের স্মরণে।<br /><br />যাই হোক, আণ্টাঘর কেন? অনেক বইয়ে চোখে পড়ে যে সে সময় স্থানীয় লোকেরা বিলিয়ার্ডের বলকে আণ্টা বলত, আণ্ডা থেকে; এবং এইখানে আর্মেনীয়দের একটি বিলিয়ার্ড খেলার ঘর ছিল আর তাই আণ্টাঘর। কিন্তু তখন স্থানীয় লোকেরাই কেবল আণ্টা বলত এই কথাটি ঠিক নয়। কারণ শব্দটি হিন্দুস্তানি, অণ্টা, হিন্দিতে <span style="font-size:95%;">अंटा</span> সে থেকে <span style="font-size:95%;">अंटाघर</span> আর উর্দুতে انٹا সে থেকে انٹا گهر। আণ্টা শব্দটি প্ল্যাট্সের উর্দু অভিধানে আর শ্যামসুন্দর দাসের ‘হিন্দী শব্দসাগর’ অভিধানে আছে। ব্যুৎপত্তি — সংস্কৃত অণ্ড তার থেকে প্রাকৃত অণ্ডঅ এবং সেখান থেকে অণ্টা বা আণ্টা, অর্থ বল বা (আফিঙের) গুলি । শ্যামসুন্দরে পাওয়া যায় আণ্টাঘর, বিলিয়ার্ড খেলার ঘর অর্থে। সে আমলে ইংরেজ কর্মকর্তাদের লেখায়ও আণ্টাঘর শব্দটির হদিস মেলে।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-3133196202384019232009-06-13T14:05:00.004+06:002009-06-14T17:17:21.328+06:00চীনা ভাষার কথকতা<span style="font-size:130%;">চীনা ভাষায় বাংলাদেশকে বলা হয় 孟加拉国, ফিনিন (<span style="font-size:95%;">pinyin</span>) <span style="font-size:95%;">mèng jiā lā guó</span>; আর বাংলা ভাষাকে 孟加拉语, (ফিনিন <span style="font-size:95%;">mèng jiā lā yǔ</span>)। <span style="font-size:95%;">Mèng jiā lā</span> সম্ভবত বাঙ্গালাহ্ (সুলতানি) থেকে, সে সময়ের কোনও চীনা রাজবংশের আমলের অনুবাদ; আর <span style="font-size:95%;">guó</span> অর্থ দেশ; <span style="font-size:95%;">yǔ</span> অর্থ ভাষা। অনভ্যস্ততার কারণে অনেকের কাছেই <span style="font-size:95%;">mèng jiā lā</span> শব্দটির উচ্চারণ খানিকটা মুনজালা-র মত ঠেকে, যদিও আসল উচ্চারণটা প্রায় (যথেষ্ট জ্ঞানের অভাবে ‘প্রায়’) /<span style="font-size:95%;">mɤ˥˩ŋtɕɑ˥˥lɑ˥˥</span>/, প্রথম অক্ষরের স্বরটি সংবৃত-মধ্য অবর্তুল পশ্চাৎধ্বনি।<br /><br />যাই হোক এই চীনা ভাষার শব্দ বাংলায় লেখা খুব কঠিন, কারণ এতে চ বা ছ ধ্বনিমূল হিসেবে দুই ধরণের, আর সহধ্বনি হিসেবে তিন ধরণের <span style="font-size:95%;">ts (z), ʈʂ (zh), tɕ (j), tsʰ (c), ʈʂʰ (ch)</span>, এবং <span style="font-size:95%;">tɕʰ (q)</span>; বন্ধনীর হরফ ফিনিনের; তৃতীয়টি দ্বিতীয়টির এবং ষষ্ঠটি পঞ্চমটির সহধ্বনি। তালিকার প্রথমটি দন্তমূলীয় ঘৃষ্টধ্বনি, তৃতীয়টি প্রতিবেষ্টিত ঘৃষ্টধ্বনি আর পঞ্চমটি দন্তমূল-তালব্য ঘৃষ্টধ্বনি। বাংলা হরফে লিখতে গেলে অসুবিধা। অগত্যা ৎস, ট্ষ এবং ট্শ় হিসেবে লিখতে হয়। তারপরেও উচ্চারণে পার্থক্য করা বাঙালির জিহ্বায় এবং কানে বেশ কঠিন। আরও একটি ব্যঞ্জনধ্বনি যার ভাষাতত্ত্বে নাম প্রতিবেষ্টিত নৈকট্যক বেশ বিপদে ফেলে — তামিল ழ এবং মলয়ালম ഴ-এর ধ্বনিটি। মাংস অর্থে চীনা শব্দ 肉 (ফিনিন <span style="font-size:95%;">ròu</span>) /<span style="font-size:95%;">ɻou̯˥˩</span>/-এর প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনিটি। স্বরধ্বনির ক্ষেত্রেও কয়েকটি কঠিন উচ্চারণ দেখা যায়, বিশেষ করে বাঙালির কান এবং জিহ্বার জন্য; সংবৃত-মধ্য অবর্তুল ধ্বনি তাদের মধ্যে অন্যতম।<br /><br />ম্যান্ডারিন চীনা ভাষা যা কিনা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধান ভাষা তাতে অক্ষর শুরু হয় ২১টি ব্যঞ্জনধ্বনির যে কোন একটি দিয়ে আর শেষ হয় ৩৫টি স্বর বা অনুনাসিক স্বরের যে কোন একটি দিয়ে। সাথে আছে সাতটি বিশেষ অক্ষর। সব মিলিয়ে ৪১৩টি অক্ষর। সাথে চারটি শ্বাসাঘাত যোগ দিলে হয় প্রায় ১,৬০০টি অক্ষর। লেখারও আছে রকম ফের। ম্যান্ডারিন চীনা ভাষায় প্রায় ২,০০০টির মত অক্ষর শিখতে হয় সাধারণ কাজ চালাতে গেলে। মোটামুটি শিক্ষিত লোক নাকি প্রায় ৫,০০০টির মত অক্ষরের সাথে পরিচিত। সর্ববৃহৎ অভিধানে আছে এক লাখেরও বেশি অক্ষর।<br /><br />গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে সনাতনী অক্ষর বদলে সহজীকৃত অক্ষরে লেখা হয়, যদিও ম্যান্ডারিন নয় এমন চীনা ভাষা অনেকক্ষেত্রে লেখা হয় সনাতন অক্ষরে। ম্যান্ডারিন শব্দটি কিন্তু পর্তুগিজদের অবদান; মান্দারিম বা মান্দারিঁ থেকে, অর্থ সরকারি কর্মকর্তা, অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তাদের ভাষা।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com6tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-58956677105841873632009-04-01T02:05:00.007+06:002009-04-06T20:26:19.815+06:00আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালার পরিভাষা<span style="font-size:130%;">আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালার ছক ১৮৮৮ সালে তৈরি। তখন দেখতে অবশ্য এখনকার ছকের মত ছিল না। প্রথমে হরফ, পরে ইংরেজি, ফরাসি এবং জার্মান শব্দ দিয়ে উচ্চারণের উদাহরণ, তারও পরে অন্য কোনও ভাষার শব্দের উদাহরণ, যদি প্রয়োজন পড়ে। তালিকার মত। তার বর্ণনার ভাষা ইংরেজি, যদিও আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক সংস্থার কার্যক্রম ছিল ফরাসি ভাষায়। সেই ১৮৮৮ সালের তালিকায় ছিল এখন নেই এমন হরফের সঙ্খ্যা মাত্র দুই। তখন ব্যবহৃত হত আর সব হরফই সর্বশেষ ২০০৫ সালের পরিমার্জিত ছকে আছে, তবে অনেক ক্ষেত্রে তাদের মানও পাল্টে গেছে। তখন সাতটির মত হরফ ছিল তারকা-চিহ্নিত, যার অর্থ সাময়িকভাবে ব্যবহৃত হরফ, যা প্রয়োজন পড়লে পরে পাল্টানো হবে। সেই সাতটির ছয়টি পাল্টে গেছে ২০০৫-এর ছকে।<br /><a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhoYrCpHvNn-ccxgiJdLRtJAi9rpk-ti2fLugfg9RKisgm9E_jNta8aeQoxmC9wT02Uqa6cyyKlx8HASIJsfy3WdfNMbUvoz5W2HyL-vmm9dnWG2RcgNzwx7CUgnWsUREpbdGmh/s1600-h/ipach2005-full.jpg"><img style="display:block; margin:0px auto 10px; text-align:center;cursor:pointer; cursor:hand;width: 234px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhoYrCpHvNn-ccxgiJdLRtJAi9rpk-ti2fLugfg9RKisgm9E_jNta8aeQoxmC9wT02Uqa6cyyKlx8HASIJsfy3WdfNMbUvoz5W2HyL-vmm9dnWG2RcgNzwx7CUgnWsUREpbdGmh/s320/ipach2005-full.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5319448096405969490" /></a>ধ্বনিমূলের বর্ণনার জন্য ছকে বেশ কিছু শব্দের ব্যবহার করা হয় আর সেগুলোর বাংলাও খুব একটা জুতসই হয় না। এই তালিকাটি বেশ কয়েকটি যেমন ইংরেজি, ফরাসি, জর্মন, রুশ ইত্যাদি ভাষায় পাওয়া যায়। বেশ আগে করা একটি বাংলায় ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালার একটি ছক এখানে দেওয়া হল। বাংলা পরিভাষাগুলো যে খুব লাগসই এবং জুতসই হয়েছে তা হয়ত নয়।</span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-56270425771269885262009-03-31T02:57:00.000+06:002009-03-31T03:03:34.763+06:00স্বপ্ন, বাংলার ও ইংরেজির<span style="font-size:130%;">প্রধান ভাষা পরিবারের মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয়'র দু্ই গুচ্ছ — কেন্তুম আর শতম। কেন্তুম গুচ্ছের জার্মানিক শাখার পশ্চিম জার্মানিক হয়ে নিম্ন জার্মানের একটি ভাষা ইংরেজি। আবার একই পরিবারের শতম গুচ্ছের ইন্দো-ইরানিয়ান শাখার ইন্দো-আর্য হয়ে বাংলা। কিন্তু নাড়ির যোগটা রয়েই গেছে। এই যোগাযোগের এক টা উদাহরণ 'স্বপ্ন'। বাংলা (বা সংস্কৃত) স্বপ্ন শব্দের ইংরেজি জ্ঞাতি হল <span style="font-size:95%;">swefn</span>। অনেক পুরনো ইংরেজি কবিতা <span style="font-size:95%;">The Dream of the Rood</span>-এ আছে: <span style="font-size:95%;">Hwæt! Ic swefna cyst secgan wylle। আধুনিক ইংরেজিতে বলা যায় <span style="font-size:95%;">I am minded to tell a marvellous dream</span> যা কেতকী কুশারী ডাইসনের অনুবাদে ‘অহো! আমি স্বপ্নশ্রেষ্ঠের সংবাদ দিতে উদ্যত।’ মিলটা বেশ স্পষ্ট। পুরনো ইংরেজি সাহিত্যে <span style="font-size:95%;">swefn</span> (নরওয়ের পুরনো ভাষার শব্দ <span style="font-size:95%;">svefn</span> থেকে) শব্দটি দেড়শ'র বেশি বার ব্যবহৃত হয়েছে। তবে পুরনো ইংরেজিতে স্বপ্ন অর্থে বর্তমান <span style="font-size:95%;">dream</span> শব্দটির মানে বোঝাত আনন্দ বা গানবাজনা, এটিও নরওয়ের পুরনো ভাষার শব্দ। মধ্য ইংরেজিতে শব্দটি <span style="font-size:95%;">sweven</span>, অনেক পরের ইংরেজিতেও তাই। জেফ্রি চসারে পাওয়া যায় <span style="font-size:95%;">I trowe no man hadde the wit/To conne wel my sweven rede</span> (আমার বিশ্বাস কারুর এমন জ্ঞান ছিল না যে আমার স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে)। ১৮৮৫ সালের রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টনের আরব্য রজনীর অনুবাদে পাওয়া যায় — <span style="font-size:95%;">[The queen] went in to the Sultan and assured him that their daughter had suffered during all her wedding-night from swevens and nightmare</span>; তবে অর্থটি হয় স্বপ্ন বা ঘুমের মধ্যে দেখতে পাওয়া দৃশ্য।<br /><br />সংস্কৃতেও স্বপ্নের (स्वप्न) চেয়ে ঘুমের অর্থ প্রধান, অন্তত মনিয়ের-উইলিয়ামসের মতে। ইংরেজি <span style="font-size:95%;">swefn</span> শব্দটির ব্যুৎপত্তি দেখানো হয় প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় <span style="font-size:95%;">*swépnos</span> বা <span style="font-size:95%;">*súpnos</span> থেকে। গ্রিকে <span style="font-size:95%;">ὕπνος</span> (<span style="font-size:95%;">hypnos</span> বা হুপ্নোস)।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-87907712257988409042009-03-14T04:10:00.001+06:002009-03-15T00:05:55.563+06:00শব্দের সোজা দিক-উল্টো দিক<span style="font-size:130%;">ইংরেজি <span style="font-size:95%;">palindrome</span>, বাংলায় প্যালিনড্রোম, প্যালিন্ড্রোম-ও লেখা যেতে পারে। এক-কথার বাংলা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থ এমন কোন শব্দ বা শব্দবন্ধ কিংবা বাক্য যা উল্টোদিক থেকে পড়লেও সোজাই মনে হয়। সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে গ্রিক <span style="font-size:95%;">πάλιν</span> (<span style="font-size:95%;">palin</span> অর্থ পিছন) এবং <span style="font-size:95%;">δρóμος</span> (<span style="font-size:95%;">dromos</span> অর্থ দিক) মিলে শব্দ বানানো হয়েছিল ইংরেজিতে। যদিও গ্রিকদের কাছে এই ধরণের শব্দ বা শব্দবন্ধ <span style="font-size:95%;">καρκινική επιγραφή</span> (<span style="font-size:95%;">karkiniké epigrafé</span>, কারকিনিকে এপিগ্রাফে অর্থ কাঁকড়া লেখা) নামে পরিচিত ছিল। তেমনই প্রাচীন গ্রিক একটি শব্দবন্ধ হল <span style="font-size:95%;">ΝΙΨΟΝΑΝΟΜΗΜΑΤΑΜΗΜΟΝΑΝΟΨΙΝ</span> (প্রাচীন গ্রিকে বাক্যের শব্দ আলাদা করে লেখ হত না) (<span style="font-size:95%;">nipson anomemata me monan opsin</span> অর্থ মুখের সাথে আমার পাপও ধুয়ে দাও); লেখা থাকত সাধারণ ফোয়ারার গায়ে। ধ্রুপদী গ্রিকের পরের জমানার প্যালিনড্রোম।<br /><br />ইংরেজিতে খুব প্রচলিত একটি প্যালিনড্রোম হল <span style="font-size:95%;">Able was I ere I saw Elba</span> (যদিও বলা হয়ে থাকে সম্রাট নাপোলেওনের মুখের কথা, তবুও এ নিয়ে বিবাদ আছে)। ইংরেজিতে প্যালিনড্রোমের অভাব নেই; অভাব নেই ইউরোপের অনেক ভাষাতেই। ফিনিশ ভাষাকে তো প্যালিনড্রোমের ভাষাই বলা হয়। সংস্কৃতেও চতুর্দশ শতকের দৈবজ্ঞ সূর্য পণ্ডিতের লেখা ৪০ শ্লোকের রামকৃষ্ণ বিলোম কাব্যম নামের একটি কবিতা পাওয়া যায় যার প্রতিটি শ্লোক একেকটি প্যালিনড্রোম। উদাহরণ: তামসীত্যসতি সত্যসীমতা মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা। মায়য়াক্ষমসমক্ষয়ায়মা তামসীত্যসতি সত্যসীমতা॥ (৩ নং শ্লোক)। যাই হোক, বাংলায় প্যালিনড্রোম বেশ বিরল। ছোটবেলার প্রায় সবার জানা ‘রমাকান্ত কামার’ ছাড়া আর প্রায় তেমন নেই। তিন অক্ষরের কয়েকটি শব্দ পাওয়া যায়: মধ্যম, নতুন, নবীন, সমাস, মলম, জমজ, দরদ ইত্যাদি। একটু বড়: নবজীবন। কয়েকটি শব্দবন্ধও পাওয়া যায়: ‘থাক রবি কবির কথা,’ ‘বিরহে রাধা নয়ন ধারা হে রবি’ ইত্যাদি; ধারণা করা হয় এ দু'টি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান। আরও দুয়েকটি পাওয়া গেছে, যদিও উৎস জানা নেই: ‘কীর্তন মঞ্চ পরে পঞ্চম নর্তকী’ এবং ‘মার কথা থাক, রমা।’</span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com3tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-52450650979885831072009-03-11T02:14:00.001+06:002009-03-11T02:17:55.241+06:00দপ্তর, দিফথেরা থেকে<span style="font-size:130%;">অফিস বা আগের দিনের বুলিতে যা আপিস তারই বাংলা দফতর। মানে যেখানে খাতাপত্র রাখা হয়। বাংলায় দফতর, দফ্তর বা দপ্তর যে বানানেই লেখা হোক না কেন তা আদতে ফারসির دفتر (দফ়তর), হিন্দিতে दफ़्तर; আরবির মাধ্যমে, বানান একই। আরবিতে অর্থ হিসাবের খাতা, যা কিনা বেশ কিছু হিসাবের কাগজ সুতো দিয়ে বাঁধা। আরবিতে শব্দটি গেছে গ্রিক থেকে। গ্রিক ভাষায় <span style="font-size:95%;">διφθέρα</span> (<span style="font-size:95%;">diphthera</span>, দিফথেরা), প্রাচীন গ্রিকে <span style="font-size:95%;">*διψτέρα</span>; অর্থ পাতলা ঝিল্লি বা চামড়া। প্যাপিরাস আসার আগে পর্যন্ত এই পাতলা চামড়া ব্যবহৃত হত লেখার জন্য। ফারসিতে অফিস অর্থে দফতরখানার (دفترخانه) ব্যবহারও আছে। সেই গ্রিক থেকেই সম্ভবত হিব্রুতে <span style="font-size:95%;">daftar</span> বা <span style="font-size:95%;">diftar</span> (דפתר), লেখার খাতা; আদি গ্রিক <span style="font-size:95%;">diphthera</span> হিব্রুতেও পাওয়া যায় — <span style="font-size:95%;">diftera</span> (דפתרא), সেই গ্রিক অর্থেই। ইংরেজিতে <span style="font-size:95%;">daftar</span> শব্দটির দেখা মেলে ১৭৭৬ সালে। বাংলায় ইংরেজি <span style="font-size:95%;">headquarters</span> অর্থে সদরদপ্তর প্রচলিত আছে।<br /><br />ফারসিতে দফতরী (دفتری) শব্দের অর্থ দফতরের লোক, যদিও বাংলায় দফতরী (সাধারণত দপ্তরী) বলতে আর্দালি বোঝানো হয়। হিন্দিতে दफ़्तरी বলতে অফিস সঙ্ক্রান্ত (दफ़्तरी कामकाज, দফ়তরী কামকাজ, অফিসের কাজ) কিংবা অফিসে কাজ করে (प्रेस के एक दफ़्तरी, প্রেস কি এক দফ়তরী, প্রেসের এক কর্মচারী) বা বই বাঁধাই করে এমন লোককে বোঝায়।</span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-36354444102507630502009-03-10T02:49:00.000+06:002009-03-10T02:50:10.587+06:00ইংরেজির বিশেষণ, বাংলায় বিশেষ্য?<span style="font-size:130%;">গ্রামদেশে একসময় প্রায় সবাই বলত এবং এখনও অনেকেই ব'লে থাকে যে লোকটির বাসা জেলা প্রোপারে, হয়ত বা শুধুই প্রোপারে অথবা জায়গাটা থানা প্রোপার থেকে বেশ দূর। শব্দটি ইংরেজি, তবে অর্থ খানিকটা বাংলায় প্রচলিত আরবি সদর (صدر) এর মত। কেন্দ্র, প্রধান ইত্যাদি অর্থে। হিন্দিতে যে অর্থে বলা হয় <span style="font-size:95%;">सदरबाज़ार</span> (সদরবাজার) বা উর্দুতে صدر بازار, অর্থাৎ প্রধান বাজার। বাংলায় বলা হয় জেলার বা জেলা সদর শহর, সঙ্ক্ষেপে জেলার বা জেলা সদর; আর সে থেকে উপজেলা সদর বা থানা সদর; যা কিনা মফস্সল (পুরনো বানানে মফস্বল এবং এটিও একটি আরবি শব্দ, مفصل; অর্থ সদর ছাড়া জেলার আর সব এলাকা)-এর বিপরীত। ইংরেজিতে কোনও স্থানবাচক শব্দের পরে proper বিশেষণটি বসলে তার অর্থ দাঁড়ায় সেই জায়গার মূল এলাকা বা কেন্দ্র। বাংলার ক্ষেত্রে ইংরেজির এই <span style="font-size:95%;">proper /ˈprɒpə/</span> উচ্চারণ পাল্টে প্রোপার <span style="font-size:95%;">/propɑr/</span> এবং যদি ধরে নিতে হয় যে ইংরেজি ব্যাকরণের বিশেষ্য-পরবর্তী বিশেষণের ব্যবহার বাংলায় একদমই চলে না, তাহলে বলতে হবে ইংরেজিতে শব্দটি বিশেষণ হলেও বাংলায় তা বিশেষ্য এবং এর আগের জেলা বা থানা শব্দটি তার বিশেষণ।</span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-82242269083028010222008-10-31T13:43:00.003+06:002010-11-08T19:59:40.425+06:00উত্তুরে বাতাস আর সূর্য: দিনাজপুরের উপভাষা<span style="font-size:130%;">হিন্দিতে বলা হয় কোস কোস পর বদলে পানী চার কোস পর বানী (कोस कोस पर बदले पानी चार कोस पर बानी, পানি বদল হয় প্রতি ক্রোশ দূরত্বে, আর ভাষা বদল হয় চার ক্রোশ পর পর)। পদ্মার পশ্চিম এবং পূর্ব পাড়ের বাঙালির আঞ্চলিক ভাষায় উচ্চারণের পার্থক্য ঢের। বাংলাদেশের পশ্চিমে দিনাজপুরের ভাষায় স্পর্শধ্বনি মান্য বাংলার স্পর্শধ্বনির মতই, উষ্মতা নেই; এবং র ও ড় এর পার্থক্য রক্ষিত। হ যথেষ্ট মহাপ্রাণ। ব্যঞ্জনধ্বনির মহাপ্রাণতাও স্পষ্ট।<br /><br />উত্তরিয়া বাতোইস আর সুরুজ কাজিয়া করছল যে কার বেশি জোর। ঠিক অই সময়টাত একটা মানুষ গরম পিরহান পিন্ধি অই পাক দিয়া যাছল। বাতোইস আর সুরুজ ওমরা ঠিক কইল যে যায় অর পিরহানখান খুলিবা পারিবে অরহে জোর বেশি। তারপর উত্তরিয়া বাতোইস খুব জোরে বহিবা শুরু করিল। বাতোইস যত বারহেছে মানুষটা অর পিরহানখান ততয় শক্ত করি ধরি রাখেছে। দিশদুয়ার না পারি বাতোইস হার মানিল। এইবার সুরুজ তেজ বাড়াবা শুরু করিল। এতে সহিবা না পারি মানুষটা পিরহানখান খুলি ফেলাইল। এইটা দেখি বাতোইস মানি নিল যে সুরজয় বড়।<br /><br /><span style="font-size:95%;">/ut̪ːoriɑ bɑtoi̯ʃ ɑr ʃurudʒ kɑdʒiɑ kɔrtʃʰɔlɔ dʒe kɑr beʃi dʒor. ʈʰik oi̯ ʃɔmɔĕʈɑt ekʈɑ mɑnuʃ ɡɔrom pirɦɑn pind̪ʱi oi̯ pɑk d̪iɑ dʒɑtʃʰɔlɔ. bɑtoiʃ ɑr surudʒ omrɑ ʈʰik koi̯l dʒaĕ ɔr pirɦɑnkʰɑn kʰulibɑ pɑribe ɔrhe dʒor beʃi. t̪ɑrpɔr ut̪ːoriɑ bɑtoi̯ʃ kʰub dʒore boɦibɑ ʃuru koril. bɑtoi̯ʃ dʒɔto bɑrhetʃʰe mɑnuʃʈɑ ɔr pirɦɑnkʰɑn tɔtɔĕ ʃɔkto kori d̪ʱori rɑkʰetʃʰe. diʃdu(ĕ)ɑr nɑ pɑri bɑtoi̯ʃ ɦɑr mɑnil. ei̯bɑr ʃurudʒ t̪edʒ bɑɽɑbɑ ʃuru koril. et̪e ʃoɦibɑ nɑ pɑri mɑnuʃʈɑ pirɦɑnkʰɑn kʰuli pʰælɑ(i̯)il. ei̯ʈɑ d̪ekʰi bɑtoi̯ʃ mɑni nil dʒe ʃurdʒɔĕ bɔɽo/</span><br /><br />বাংলাদেশের দিনাজপুরের সদরের প্রান্তের ভাষা। কোনও রকম স্বরাঘাত চিহ্নের ব্যবহার করা হয় নি। আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালায় বিভিন্ন ভাষার উচ্চারণের উদাহরণ দিতে গিয়ে <a href="http://bangalabhasha.blogspot.com/2007/09/blog-post_14.html">ঈশপের এই গল্পটিই</a> উদ্ধৃত হয়।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-30061255.post-2693745985642725752008-09-28T15:52:00.001+06:002008-09-28T15:54:49.541+06:00ঘর্ম, ঘাম, গরম<span style="font-size:130%;">সংস্কৃতে ঘর্ম বা ঘর্ম্মের সাধারণ অর্থ গরম বা রৌদ্র, আর সেখান থেকে থেকে বাংলায় তদ্ভব ঘাম, অর্থ স্বেদ। বাংলায় তৎসম ঘর্ম অর্থও স্বেদ। হিন্দিতে অবশ্য ঘাম (घाम) শব্দের অর্থ রৌদ্র বা তাপ — বড়া ঘাম হৈ (बड़ा घाम है, অনেক গরম বা রোদ)। কালিদাসের মেঘদূতম-এর বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে, — গ্রীষ্মে খরতাপে তোমাকে পেয়ে তারা না যদি দিতে চায় মুক্তি (১/৬২)। সংস্কৃতে খরতাপের জন্য মূলের শব্দটি হল ঘর্ম। মনিয়ের-উইলিয়াম্স্-এ ঘর্মের প্রথম অর্থ তাপ, এবং চতুর্থ অর্থ স্বেদ। এই ঘর্ম থেকেই অন্য বাংলা শব্দ গরম, খানিকটা ঘোরা পথে। প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় <span style="font-size:95%;">*gʷʰer-</span> (গরম) থেকে ফারসিতে গর্ম (گرم), আবেস্তা (<span style="font-size:95%;">garema) এবং পহলবি (<span style="font-size:95%;">garm</span>) হয়ে। প্রত্নরূপ *gʷʰer-</span> থেকে সংস্কৃতে ঘর্ম (घर्म), প্রাচীন গ্রিকে থেরমোস (<span style="font-size:95%;">θερμός</span>) আর লাতিনে ফোরমুস (<span style="font-size:95%;">formus</span>)। ইংরেজির <span style="font-size:95%;">warm</span> (পুরনো ইংরেজিতে <span style="font-size:95%;">wearm</span>) শব্দটিও একই উৎস থেকে ব্যুৎপন্ন।<br /></span>Abu Jar M Akkashttp://www.blogger.com/profile/16506074180669434152noreply@blogger.com0