Thursday, September 07, 2006

দামা হামানো, ফম না থাকা, ঘুমানো

ঊনিশ শ' পঁচানব্বই সালে সিলেটের এক সহকর্মী বলেছিল, মাদানকু বালা ফুবর আইল বায়ে দি দামা হামাই গিসে, সিলেটের ভাষায়। অর্থ হল, দুপুর বেলা পূর্বদিকের আলের বাঁ দিয়ে ষাঁড় প্রবেশ করেছে। গেল রাতে এক সহকর্মী, যে উর্দু ভাষায় পারঙ্গম, গাইছিল একটি গান, কৌন হৈ জো দিল মেঁ সমায়া। হঠাৎ মনে হল, দামা হামাই গিসে; হিন্দি ক্রিয়া সমানা বা প্রবেশ করার কথা। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে লেখা আছে হামানো শব্দটির প্রচলন আছে সিলেট, ময়মনসিংহ এক কুমিল্লা অঞ্চলে। শুদ্ধ বাংলার স আঞ্চলিক ভাষায় হ হামেশাই হয়ে থাকে।

দিনাজপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বলে, মোর ফম নাই, আমার খেয়াল ছিল না। শব্দটি আরবি ফহ‌ম‌ থেকে যার অর্থ ধারণা, যেমন হিন্দিতে গলতফহ‌মী, ভুল ধারণা। আর একটি ধমক বেশ প্রচলিত, থাপড়ে ঘুম নাগাইম, থাপ্পড় দিয়ে (মাথা) ঘুরিয়ে দেব, হিন্দির ঘুমনা, ঘুরানো, থেকে এসেছে। দিনাজপুরের আঞ্চলিক ভাষায় হিন্দি বা উর্দু থেকে আসা শব্দের সংখ্যা কম নেহাতই কম হবে না।

Monday, August 28, 2006

দাঁড়িও‍ালা (?), মাঞিফিক...

আদি বাংলার অন্তস্থঃ ব একসময়ে বর্গ্য ব-এর সাথে একীভুত হয়ে যায়। বাংলায় অন্তস্থঃ ব-এর উচ্চারণ হয় আগের অক্ষরের সাথে মিলে যায়, নয়ত বর্গ্য ব-এর উচ্চারণে রূপ নেয়। পাণিনির মতে উচ্চারণটি দন্ত্যৌষ্ঠ্য, তবে সুনীতিকুমারের ভাষায় সামবেদের প্রাতিশাখ্য ঋক্‌তন্ত্র ব্যাকরণের মতে ধ্বনিটি ওষ্ঠ্য বর্ণ। অনেক পরে বাংলায় ধ্বনিটি ফিরে আসে, তবে লেখা হয় ওআ, ওয়া, এমনকি ও‍া দিয়ে, যেমন ফেরও‍ারিও লেখা হত, পুঁথির যুগে। এবং উচ্চারণটি পাওয়া যায় আ ধ্বনির আগে। আধুনিক বাংলায় বোধ করি ও‍া-কে আর ফেরানো যাবে না, গেলে হয়ত ভাল হত — পাও‍া লেখা যেত পাওয়া-র পরিবর্তে। তেমনটি আর হবে না। তবে গেল সংখ্যার দেশ-এ, তপন রায়চৌধুরির আত্মজীবনী বাঙালনামায় লেখা হয়েছে, সে মাঞিফিক, ফরাসি C'est magnifique। বিদ্যাপতির সময়ের পুরনো বাংলায় ঞ-তে কারের ব্যবহার পাওয়া যায়, যেমন গোঙাঞি। হালে ফরাসি ভাষায় বাঙালি পণ্ডিতেরা যেমন লেখে, শম্পাঞ‌্, শেম্পেনের জায়গায়। বাংলায় সংস্কৃত লেখা হলে দুই ব-এর পার্থক্য করা হয় না। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় পাওয়া যায়, বর্গ্য ব এবং অন্তস্থঃ ৱ, এই রীতিই ব্যাকরণ এবং চোখের জন্য ভাল।

Saturday, August 05, 2006

ইংরেজি মাসের পুরনো বানান

মুহম্মদ শাহজাহান মিয়ার পুরোনো বাংলা দলিলপত্র (১৬৩৮-১৮৮২)-এ দেখা যায় ফেরও‍ারি যা আধুনিক বাংলায় ফেব্রুয়ারি, আপরিল বা আপরেল যা এখন এপ্রিল, মাই যা মে, সেতাম্বর যা এখন সেপ্টেম্বর এবং দিজাম্বর যা কিনা ডিসেম্বর। অনেকটা হিন্দিতে এখন যেভাবে লেখা হয় তার মত — ফ়রৱরী (फ़रवरी), অপ্রৈল (अप्रैल), মঈ (मई), সিতম্বর (सितम्बर), ও দিসম্বর (दिसम्बर)। সিতম্বর ও দিসম্বর-এর মাঝে খানিকটা ফরাসি গন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভবত এই শব্দগুলো পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ-এর হাতে বিধিবদ্ধ হওয়ায় তাদের ইংরেজি রূপ ফিরে পায়। ইংরেজরা না এলে কিংবা তারা বাংলা ভাষা সংস্কারে মন না দিলে, ভাষাটি কিঞ্চিৎ অন্যরকম হত আশা করি।

Friday, August 04, 2006

সম্প্রদান ও কর্ম কারক, দান না দেওয়া?

স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এর হানে-রুথ ঠমসন (যদিও বাংলায় টমসন লেখাটাই রীতি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্‌স্টিটিউট-এ এক বক্তৃতায় বলেছে যে বাংলার কারকে কিছু সমস্যা বিদ্যমান। তার বক্তব্য ধোপাকে কাপড় দেওয়া আর ভিখিরিকে ভিক্ষা দেওয়া দু'টি দুই কারক কেন হবে। সাধারণ ব্যাকরণে ধোপাকে কাপড় দেওয়া কর্ম কারক আর ভিখিরিকে ভিক্ষা দেওয়া সম্প্রদান কারক কারণ পরের ক্ষেত্রে দেওয়া ব্যাপারটি দান। ঠমসনের কথা ঠিক। সংস্কৃত ব্যাকরণের ধারায় বাংলাকে বিচার করলে হয়ত দু'টি কারক ঠিকই আছে। তবে বাংলা যেহেতু একটি আলাদা ভাষা এবং ব্যাকরণের দৃষ্টিতে দুই বাক্য বা বাক্যাংশের গঠন এবং প্রকৃতি এক, তাই দু'ক্ষেত্রেই কারকটি একই হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ তার মতেই, এবং কথাটি সত্যি, ব্যাকরণ ভাষা বর্ণনা করে, ভাষার বাইরে তার কোন অস্তিত্ব নেই।

Thursday, July 27, 2006

বাংলার না-চলা বানানো হরফ

বাংলায় বিভিন্ন সময় প্রয়োজন মনে ক'রে, দু'য়েক বার অপ্রয়োজনেও, হরফ বানানো হয়েছে, দু'বাংলায়ই, যদিও সেগুলো চলেনি, কিংবা ব্যবহৃত হয়েছে যারা বানিয়েছে তাদের লেখায়, তাও দু'য়েকবারের বেশি নয়। অনেকে চেষ্টা করেছে এ-কার পরে উলটে লেখার। যোগেশ্চন্দ্র বিদ্যানিধি এদের মধ্যে অগ্রগণ্য। পবিত্র সরকার অ্যা ধ্বনির জন্য এ-র পেট কেটে একটি হরফ বানিয়েছিল, এর কারের রূপটি ছিল এ-কারের মতই, কেবল পেটের কাছে প্যাঁচ-খাওয়া। পলাশ বরন পাল এ এবং কার দুটোরই পেট কেটে দু'টি হরফ বানিয়েছে। বাংলাদেশে ছবির শেষ হরফ দু'টির প্রস্তাব করেছিল মুহম্মদ ফিরদৌস খান, একটি অন্তস্থ ব-এর জন্য, যেন হাওয়া হিন্দির মত দেবনাগরী হরফে हावा লেখা যায়, এবং ও-কারের জন্য প্যাঁচ-খাওয়া উলটানো এ-কার যা শব্দের পরে বসানোর জন্য। অনেকে আবার দেবনাগরী থেকে এ-কার এবং ও-কার, বা ঔ-কারের ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিল। কিন্তু কোনও নতুন হরফই চলে নি। দু'য়েক ক্ষেত্রে, যেমন অভিধান রচনায়, হয়ত কাজে এসেছে বা আসার কথা এসব নতুন হরফের, তবে যারা এর প্রচলনের চেষ্টা করেছিল তারাও তাদের আর কোনও লেখায় এসবের ব্যবহার করে নি।

Tuesday, July 18, 2006

বাংলার অঙ্কপাতন

দশগুণের বাংলা মতে গণনার জন্য আঠারটি ঘর রয়েছে — একক, দশক, শতক, হাজার বা সহস্র, অযুত, লক্ষ, নিযুত, কোটি, অর্বুদ, পদ্ম, খর্ব, নিখর্ব, মহাপদ্ম, শঙ্কু, জলধি, অন্ত্য, মধ্য, পরার্ধ। প্রতিটি ঘর আগের ঘরের মানের দশগুণ। কিন্তু কোটির পরের শব্দগুলি ব্যবহার করা হয় না। আর পড়ার সময় অযুত, নিযুত ও কোটির পরের শব্দগুলি ধরা হয় না। কোটির পরের সব ঘরের সংখ্যা মিলে কোটি, লক্ষ ও নিযুত সব মিলে লক্ষ আর হাজার আর নিযুত মিলে হাজার ধরা হয়। অঙ্কের ডানের দিকের তিন সংখ্যা পর এবং তার পর দুই সংখ্যা পর পর কমা বসিয়ে, পড়াটা সহজ করাই নিয়ম, যেমন ৫২,৯৭,৩১,৭১৫। তবে অনেক সময় দুই বা তিন অঙ্কের মাঝখানের কমার সাথে ভুল করার সম্ভাবনা দূর করার জন্য কমার জায়গায় হসন্ত চিহ্ন ব্যবহার করার নিয়মও আছে, যেমন, ৫২‍্৯৭‍্৩১‍্৭১৫। আজকালের অনেকেই হসন্ত চিহ্নের এই ব্যবহারে একটু বিচলিত হতে পারে। তবে নিয়মটা কিন্তু ছিল।

Saturday, July 15, 2006

বেং এবং ভ্যাক

সেই ছোটবেলায় পশ্চিম বাংলার আনন্দমেলায় পবিত্র সরকারের একটি লেখায় পড়েছিলাম। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক, যশোরের লোক, বাংলা পড়ায় এম এ ক্লাসে। একদিন পড়াচ্ছিল বিদ্যাপতি:
কুলিশ শত শত পাত মোদিত,
ময়ূর নাচত মাতিয়া;
মত্ত দাদুরী, ডাকে ডাহুকি—
ফাটি যাওত ছাতিয়া।
হঠাৎ এক ছাত্র জিজ্ঞেস করল, দাদুরী মানে কি? শিক্ষক বিরক্ত। এম এ ক্লাসের বাংলার ছাত্রের অর্থটি জানা থাকবার কথা। তবুও শিক্ষক উত্তর দিল, বেং। ছাত্রের দ্বিতীয় প্রশ্ন, বেং মানে কি? শিক্ষক রীতিমত হতবাক। তবুও উত্তর এল, ভ্যাক‌। ছাত্র বে-বাক।
বাংলায় এ এবং অ্যা এই দুই স্বরই লেখা হয় বেশিরভাগ সময় এ দিয়ে। অনেক আগের রীতি। অনেক সময় আবার নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনাও হয়েছিল। তবে কোনওটিই টিকতে পারে নি। বাংলায় এ-কার দুটি, শুরুতে মাত্রা ছাড়া, যা বসে শব্দের শুরুতে, আর মাত্রা সহ যা বসে মাঝে এবং শেষে। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রনাথের বইয়ে শব্দের শুরুতে মাত্রাসহ এ-কারের অর্থ উচ্চারণটি হবে অ্যা দিয়ে। ব্যাপারটি কেবল বিশ্বভারতীর রবিঠাকুরের বইয়েই থেকে যায়। যোগেশচন্দ্রবিদ্যানিধি, পবিত্র সরকার আর হালে পলাশ বরণ পাল সহ অনেকেই নতুন হরফের প্রচলনের চিন্তা করেছে। তাদের ব্যবহার আর হয়ে ওঠে নি। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে নতুন হরফের কথা ভাবা হয়েছিল, কাজ হয়ে ওঠে নি। নিজের বাড়িতে বসে টাকা বানালে তা বাজারে চলে না।

Sunday, July 09, 2006

ফ এবং জ এর দুই উচ্চারণ

মান্য বাংলা উচ্চারণে ফ স্পৃষ্ট এবং জ ঘৃষ্ট ধ্বনি হিসেবে ধরা হয়। দু'টি উচ্চারণেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসা বাতাস বাধা পেয়ে ধাক্কা খেয়ে শব্দ তৈরি করে। তবে কিছু বাংলাভাষীর কথায় ফ উস্ম ধ্বনি, জ-ও। বিশেষত চট্টগ্রাম, নোয়াখালি বা সিলেটের দিকে। শিক্ষিত অনেকেই বিশেষ করে ফ-কে উস্ম ধ্বনি হিসেবে উচ্চারণ করে, সাধারণত বিশেষ কিছু শব্দে, যেমন, ফুফা, যদিও শব্দটি ফুপা, এবং দুফুর, যদিও শব্দটি দুপুর। তারপরও উস্ম ধ্বনির মত করে, ইংরেজির এফ এবং জেড-এর মত, উচ্চারিত হয় ফ এবং জ, খোদা হাফেজ বলতে গিয়ে, শিক্ষিত কি অশিক্ষিত সবার বুলিতেই।

Tuesday, July 04, 2006

বাংলায় জ়েড-এর রূপ

বাংলায় দন্তমূলীয় উস্ম, ইংরেজিতে যা জ়েড-দিয়ে প্রকাশ করা হয়, তার কোন রূপ নেই। অনেক আগে বুদ্ধদেব বসুকে বানাতে হয়েছিল নতুন অক্ষর, জ-এর নিচে এক ফোঁটা, অর্থাৎ ইংরেজি জ়েড; আর জ-এর নিচে দুই ফোঁটা, অর্থাৎ ইংরেজি pleasure-এর s (জ̤), ডাঃ জিভাগো অনুবাদ করতে গিয়ে। মাঝে অনেক বইতে অগ্র, পার্শ্ব, নিম্ন বা পশ্চাৎ ফোঁটা, ইউনিকোডে যাকে নুকতা বলা হয়, ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষত গবেষণার বই বা অভিধানে, কিন্তু তার চলন তেমন একটা ঘটে নি। মাঝে মাঝে ভারতীয় দেশ পত্রিকায় জ-এর নিচে ফোঁটার ব্যবহার দেখা যেত, এখন তা পাকাপাকিভাবে রাজত্ব করছে। নিউজ়িল্যান্ডে গিয়ে বালজ়াকের লেখা পড়ে সময় কাটাতে ভালোই লাগবে। তবে এর ব্যবহার কোনওভাবে বাংলায় আত্মীকৃত ফারসি, আরবি, পর্তুগিজ ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রে ব্যবহার না করাই ভালো। যদিও অভিধানে তা করা যেতেই পারে।

Monday, June 26, 2006

প্রমিত বাংলায় চ, ছ, জ, ঝ-ধ্বনি: ঘৃষ্ট না স্পৃষ্ট

বাংলাদেশের বেশির ভাগ ধ্বনিতাত্ত্বিকেরা বলে থাকে চ-ধ্বনিটি তালব্য স্পৃষ্ট ধ্বনি। সংস্কৃতে একসময় ব্যাপারটি তাই ছিল, অন্তত বইয়ে তেমনটিই পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলায় সেটি হবার জো খুব কম। আগের দিনের ধ্বনিতাত্ত্বিকেরা, বিশেষত বাংলাদেশের, তাই বিশ্বাস করত এবং এখনকার ধ্বনিতাত্ত্বিকেরাও তাই লিখে আসছে। সম্ভবত এ কারণে যে যুক্তির পক্ষে আগেরজনের লেখা থেকে সমর্থন নেওয়া যায়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে ধ্বনিটি তালব্য ঘৃষ্ট, যদিও এসময়ের অনেকেই, বিশেষত বাংলাদেশের বাইরে ভাষাতাত্ত্বিকেরা একে দন্তমূলীয় ঘৃষ্ট বলে উল্লেখ করে। পিটার লাডিফোগিডকে বাংলার ধ্বনিটি কি তা জিজ্ঞেস করায় তার উত্তর ছিল, আমি বাংলা ধ্বনিটি শুনিনি, তবে হিন্দি ভাষার ধ্বনিটি অবশ্যই ঘৃষ্ট, ইংরেজিতে যাকে অ্যাফ্রিকেট বলে। ছ, জ এবং ঝ ধ্বনিটিও ঘৃষ্ট হবে।

Saturday, June 24, 2006

বাংলা বর্ণমালার প্রায় না-ব্যবহৃত অক্ষর

বাংলা ভাষার বর্ণমালায় তিনটি প্রায় না-ব্যবহৃত অক্ষর আছে। এই তিন হরফের ব্যবহার তেমন একটা চোখে পড়ে না। দুটি ঌর ব্যবহার তো বাংলায় নেই-ই। দুটি ঋ-র ব্যবহার আছে কেবল বাংলা হরফে লেখা সংস্কৃত ভাষায়। বাংলা হরফে লেখা সংস্কৃত বই বাংলা হরফেরই সম্পদ, এটি কিন্তু ভুললে চলবে না। ঌর ব্যবহার অন্তত দুটি বাংলা শব্দে অভিধানেই পাওয়া যাবে। কৢপ্ত বা সংকৢপ্ত, যা কিনা লি দিয়ে যেমন ক্লিপ্ত বা সংক্লিপ্ত লেখা যায়, জ্ঞানেন্দ্রমোহন আর হরিচরণের অভিধানে। এর আরও ব্যবহার দেখা যায় পুরনো পুথিতে, যেগুলো বাংলা ভাষার সম্পদও বটে।

Thursday, June 22, 2006

বাংলায় তারিখবাচক শব্দের আপদ

গেল কয়েক বছর ধরে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রতিদিনই ধ্বনিত হচ্ছে এক জানুয়ারি, দুই বৈশাখ আর তিন মহররম। শ্রুতিকটু বটে। মনে হয় কোথায় যেন কেটে গেল। বাংলা ভাষারীতির পুরনো সম্পদ পহেলা বৈশাখ, দোসরা জানুয়ারি আর তেসরা শাবান ভালই তো ছিল। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে যা সম্পদ বলে বিবেচনা করছে কিছু লোক তা এখনও লেখ্য রীতির আপদই থেকে গেল। ভাল হল কি?

সহসা-র অর্থচ্যুতি

সহসা শব্দটির হঠাত্ই যেন অর্থচ্যুতি ঘটেছে। 'সহসা ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই।' যেন সহসার অর্থ শীঘ্রই। এ অর্থ হয়ত কোনদিন অভিধানে জায়গা করে নেবে। অভিধান এই অর্থের কোন জায়গা না দিলেই ভাল। কারণ ততদিনে শব্দটি অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যাবে। বাংলা ভাষা সম্পর্কে সংবেদনশীল লোকেরা তখন শব্দটি আর হয়ত ব্যবহার করবে না। বাংলার ভাণ্ডার থেকে একটি শব্দ কমে যাবে।

দীর্ঘ-ঈ না হ্রস্ব-ই

যারা একুশে ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন তারা প্রায়ই 'শ্রদ্ধাঞ্জলী' দেন। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু। হ্রস্ব-ই হবে। শব্দটি সংস্কৃত। তবে ১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বানান রীতি প্রবর্তন করে, যাতে বলা ছিল যদি শব্দটি সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত বা অপভ্রংশ হয়ে বাংলায় আসে, তবে হ্রস্ব-ই এবং দীর্ঘ-ঈ দুই-ই সিদ্ধ। নিয়মটি করা হয়েছিল এই ভেবে যে একদিন ধীরে ধীরে এধরণের সমস্ত শব্দে হ্রস্ব-ই লেখা হবে। এই দুই বিধান সিদ্ধ হওয়ায় হ্রস্ব-ই তেমনটা পেরে ওঠেনি। আমাদের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের দাপ্তরিক কাগজপত্রে প্রায়ই লিখতে হত 'ইংরেজি' শব্দটি। আর আমরা ইংরেজি লিখলেই কেরানি সাহেবরা কেটে ইংরেজী করে দিত, খানিকটা রক্তচক্ষু হয়ে। বাংলাটাই শেখনি, ইংরেজি পড়তে এসেছ? এভাবে কি বানান প্রমিতকরণ হয়?

বাংলায় ইংরেজি z-এর উচ্চারণ

বাংলায় ইংরেজির z-এর উচ্চারণ খুব স্বাভাবিক নয়। বাংলা ভাষার ধ্বনিমূলের তালিকায় এর স্বীকৃতি নেই। তবে দক্ষিণ বাংলার আঞ্চলিকতায় এর উচ্চারণ শুনতে পাওয়া যায়, উত্তর বাংলার বাংলায় নয়। কারণটি কি চট্টগ্রামে আরবদের আবাসন? আরবরা বাংলার অনেক জায়গায় ব্যবসা করেছে। তবে বসবাস, খুব ছোট পরিসরে হলেও, শুরু করেছিল চট্টগ্রামে। আর তার পরেই এসেছিল পর্তুগিজরা। এবং তারাও ও তল্লাটে বিচরণ করেছিল অনেকদিন। এখন কেবল এ ধ্বনিটি শুনতে পাওয়া যায় শিক্ষিত বাংলাভাষীদের বুলিতেই এবং বিদেশি ভাষা থেকে আসা শব্দে। তবে বাংলায় প্রচলিত আরবি আর ফারসি নামের ইংরেজি বানানে z-এর সাক্ষাত মেলে।