Tuesday, June 30, 2009

আণ্টাঘরের ময়দান আর (আফিঙের) গুলি

ঢাকার একটি মাঠের নাম আণ্টাঘরের (নাকি আন্টাঘরের?) ময়দান, অবশ্য এখন কেবলই মুখের কথায়। দুয়েক জায়গায় আণ্ডাঘর কথাটাও দেখা যায়, কারণটা বোধ করি আণ্টা বলে কোনও শব্দ বাঙালির মুখে এখন আর শোনা যায় না, কিন্তু আণ্ডা, ডিম অর্থে, খুবই কাছের। জায়গাটির গাল-ভারী নাম বাহাদুর শাহ পার্ক। আর ১৯৫৭ সালের আগে লোকে বলত ভিক্টোরিয়া পার্ক, ১৮৫৮ থেকে; কারণ রানি ভিক্টোরিয়া শাসনভার গ্রহণ করার কথা এই জায়গায় পড়ে শোনানো হয়েছিল। ১৯৫৭ নামটি পালটানো হয়েছিল সিপাহি বিদ্রোহের সময় যাদের ময়দানের গাছে ঝুলিয়ে মারা হয়েছিল তাদের স্মরণে।

যাই হোক, আণ্টাঘর কেন? অনেক বইয়ে চোখে পড়ে যে সে সময় স্থানীয় লোকেরা বিলিয়ার্ডের বলকে আণ্টা বলত, আণ্ডা থেকে; এবং এইখানে আর্মেনীয়দের একটি বিলিয়ার্ড খেলার ঘর ছিল আর তাই আণ্টাঘর। কিন্তু তখন স্থানীয় লোকেরাই কেবল আণ্টা বলত এই কথাটি ঠিক নয়। কারণ শব্দটি হিন্দুস্তানি, অণ্টা, হিন্দিতে अंटा সে থেকে अंटाघर আর উর্দুতে انٹا সে থেকে انٹا گهر। আণ্টা শব্দটি প্ল্যাট্‌সের উর্দু অভিধানে আর শ্যামসুন্দর দাসের ‘হিন্দী শব্দসাগর’ অভিধানে আছে। ব্যুৎপত্তি — সংস্কৃত অণ্ড তার থেকে প্রাকৃত অণ্ডঅ এবং সেখান থেকে অণ্টা বা আণ্টা, অর্থ বল বা (আফিঙের) গুলি । শ্যামসুন্দরে পাওয়া যায় আণ্টাঘর, বিলিয়ার্ড খেলার ঘর অর্থে। সে আমলে ইংরেজ কর্মকর্তাদের লেখায়ও আণ্টাঘর শব্দটির হদিস মেলে।

Saturday, June 13, 2009

চীনা ভাষার কথকতা

চীনা ভাষায় বাংলাদেশকে বলা হয় 孟加拉国, ফিনিন (pinyin) mèng jiā lā guó; আর বাংলা ভাষাকে 孟加拉语, (ফিনিন mèng jiā lā yǔ)। Mèng jiā lā সম্ভবত বাঙ্গালাহ্‌ (সুলতানি) থেকে, সে সময়ের কোনও চীনা রাজবংশের আমলের অনুবাদ; আর guó অর্থ দেশ; অর্থ ভাষা। অনভ্যস্ততার কারণে অনেকের কাছেই mèng jiā lā শব্দটির উচ্চারণ খানিকটা মুনজালা-র মত ঠেকে, যদিও আসল উচ্চারণটা প্রায় (যথেষ্ট জ্ঞানের অভাবে ‘প্রায়’) /mɤ˥˩ŋtɕɑ˥˥lɑ˥˥/, প্রথম অক্ষরের স্বরটি সংবৃত-মধ্য অবর্তুল পশ্চাৎধ্বনি।

যাই হোক এই চীনা ভাষার শব্দ বাংলায় লেখা খুব কঠিন, কারণ এতে চ বা ছ ধ্বনিমূল হিসেবে দুই ধরণের, আর সহধ্বনি হিসেবে তিন ধরণের ts (z), ʈʂ (zh), tɕ (j), tsʰ (c), ʈʂʰ (ch), এবং tɕʰ (q); বন্ধনীর হরফ ফিনিনের; তৃতীয়টি দ্বিতীয়টির এবং ষষ্ঠটি পঞ্চমটির সহধ্বনি। তালিকার প্রথমটি দন্তমূলীয় ঘৃষ্টধ্বনি, তৃতীয়টি প্রতিবেষ্টিত ঘৃষ্টধ্বনি আর পঞ্চমটি দন্তমূল-তালব্য ঘৃষ্টধ্বনি। বাংলা হরফে লিখতে গেলে অসুবিধা। অগত্যা ৎস, ট্ষ এবং ট্শ় হিসেবে লিখতে হয়। তারপরেও উচ্চারণে পার্থক্য করা বাঙালির জিহ্বায় এবং কানে বেশ কঠিন। আরও একটি ব্যঞ্জনধ্বনি যার ভাষাতত্ত্বে নাম প্রতিবেষ্টিত নৈকট্যক বেশ বিপদে ফেলে — তামিল ழ এবং মলয়ালম ഴ-এর ধ্বনিটি। মাংস অর্থে চীনা শব্দ 肉 (ফিনিন ròu) /ɻou̯˥˩/-এর প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনিটি। স্বরধ্বনির ক্ষেত্রেও কয়েকটি কঠিন উচ্চারণ দেখা যায়, বিশেষ করে বাঙালির কান এবং জিহ্বার জন্য; সংবৃত-মধ্য অবর্তুল ধ্বনি তাদের মধ্যে অন্যতম।

ম্যান্ডারিন চীনা ভাষা যা কিনা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধান ভাষা তাতে অক্ষর শুরু হয় ২১টি ব্যঞ্জনধ্বনির যে কোন একটি দিয়ে আর শেষ হয় ৩৫টি স্বর বা অনুনাসিক স্বরের যে কোন একটি দিয়ে। সাথে আছে সাতটি বিশেষ অক্ষর। সব মিলিয়ে ৪১৩টি অক্ষর। সাথে চারটি শ্বাসাঘাত যোগ দিলে হয় প্রায় ১,৬০০টি অক্ষর। লেখারও আছে রকম ফের। ম্যান্ডারিন চীনা ভাষায় প্রায় ২,০০০টির মত অক্ষর শিখতে হয় সাধারণ কাজ চালাতে গেলে। মোটামুটি শিক্ষিত লোক নাকি প্রায় ৫,০০০টির মত অক্ষরের সাথে পরিচিত। সর্ববৃহৎ অভিধানে আছে এক লাখেরও বেশি অক্ষর।

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে সনাতনী অক্ষর বদলে সহজীকৃত অক্ষরে লেখা হয়, যদিও ম্যান্ডারিন নয় এমন চীনা ভাষা অনেকক্ষেত্রে লেখা হয় সনাতন অক্ষরে। ম্যান্ডারিন শব্দটি কিন্তু পর্তুগিজদের অবদান; মান্দারিম বা মান্দারিঁ থেকে, অর্থ সরকারি কর্মকর্তা, অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তাদের ভাষা।