Monday, August 28, 2006

দাঁড়িও‍ালা (?), মাঞিফিক...

আদি বাংলার অন্তস্থঃ ব একসময়ে বর্গ্য ব-এর সাথে একীভুত হয়ে যায়। বাংলায় অন্তস্থঃ ব-এর উচ্চারণ হয় আগের অক্ষরের সাথে মিলে যায়, নয়ত বর্গ্য ব-এর উচ্চারণে রূপ নেয়। পাণিনির মতে উচ্চারণটি দন্ত্যৌষ্ঠ্য, তবে সুনীতিকুমারের ভাষায় সামবেদের প্রাতিশাখ্য ঋক্‌তন্ত্র ব্যাকরণের মতে ধ্বনিটি ওষ্ঠ্য বর্ণ। অনেক পরে বাংলায় ধ্বনিটি ফিরে আসে, তবে লেখা হয় ওআ, ওয়া, এমনকি ও‍া দিয়ে, যেমন ফেরও‍ারিও লেখা হত, পুঁথির যুগে। এবং উচ্চারণটি পাওয়া যায় আ ধ্বনির আগে। আধুনিক বাংলায় বোধ করি ও‍া-কে আর ফেরানো যাবে না, গেলে হয়ত ভাল হত — পাও‍া লেখা যেত পাওয়া-র পরিবর্তে। তেমনটি আর হবে না। তবে গেল সংখ্যার দেশ-এ, তপন রায়চৌধুরির আত্মজীবনী বাঙালনামায় লেখা হয়েছে, সে মাঞিফিক, ফরাসি C'est magnifique। বিদ্যাপতির সময়ের পুরনো বাংলায় ঞ-তে কারের ব্যবহার পাওয়া যায়, যেমন গোঙাঞি। হালে ফরাসি ভাষায় বাঙালি পণ্ডিতেরা যেমন লেখে, শম্পাঞ‌্, শেম্পেনের জায়গায়। বাংলায় সংস্কৃত লেখা হলে দুই ব-এর পার্থক্য করা হয় না। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় পাওয়া যায়, বর্গ্য ব এবং অন্তস্থঃ ৱ, এই রীতিই ব্যাকরণ এবং চোখের জন্য ভাল।

Saturday, August 05, 2006

ইংরেজি মাসের পুরনো বানান

মুহম্মদ শাহজাহান মিয়ার পুরোনো বাংলা দলিলপত্র (১৬৩৮-১৮৮২)-এ দেখা যায় ফেরও‍ারি যা আধুনিক বাংলায় ফেব্রুয়ারি, আপরিল বা আপরেল যা এখন এপ্রিল, মাই যা মে, সেতাম্বর যা এখন সেপ্টেম্বর এবং দিজাম্বর যা কিনা ডিসেম্বর। অনেকটা হিন্দিতে এখন যেভাবে লেখা হয় তার মত — ফ়রৱরী (फ़रवरी), অপ্রৈল (अप्रैल), মঈ (मई), সিতম্বর (सितम्बर), ও দিসম্বর (दिसम्बर)। সিতম্বর ও দিসম্বর-এর মাঝে খানিকটা ফরাসি গন্ধ পাওয়া যায়। সম্ভবত এই শব্দগুলো পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ-এর হাতে বিধিবদ্ধ হওয়ায় তাদের ইংরেজি রূপ ফিরে পায়। ইংরেজরা না এলে কিংবা তারা বাংলা ভাষা সংস্কারে মন না দিলে, ভাষাটি কিঞ্চিৎ অন্যরকম হত আশা করি।

Friday, August 04, 2006

সম্প্রদান ও কর্ম কারক, দান না দেওয়া?

স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এর হানে-রুথ ঠমসন (যদিও বাংলায় টমসন লেখাটাই রীতি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্‌স্টিটিউট-এ এক বক্তৃতায় বলেছে যে বাংলার কারকে কিছু সমস্যা বিদ্যমান। তার বক্তব্য ধোপাকে কাপড় দেওয়া আর ভিখিরিকে ভিক্ষা দেওয়া দু'টি দুই কারক কেন হবে। সাধারণ ব্যাকরণে ধোপাকে কাপড় দেওয়া কর্ম কারক আর ভিখিরিকে ভিক্ষা দেওয়া সম্প্রদান কারক কারণ পরের ক্ষেত্রে দেওয়া ব্যাপারটি দান। ঠমসনের কথা ঠিক। সংস্কৃত ব্যাকরণের ধারায় বাংলাকে বিচার করলে হয়ত দু'টি কারক ঠিকই আছে। তবে বাংলা যেহেতু একটি আলাদা ভাষা এবং ব্যাকরণের দৃষ্টিতে দুই বাক্য বা বাক্যাংশের গঠন এবং প্রকৃতি এক, তাই দু'ক্ষেত্রেই কারকটি একই হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ তার মতেই, এবং কথাটি সত্যি, ব্যাকরণ ভাষা বর্ণনা করে, ভাষার বাইরে তার কোন অস্তিত্ব নেই।