Monday, January 25, 2010

অনু পূর্বক স্থা ধাতু যোগ তব্য

গুগলে খোঁজ করলেই অনুষ্ঠিতব্য শব্দটির হাজার তিরিশেকের বেশি উদাহরণ পাওয়া যাবে। খেয়াল করলে পত্রিকায় এবং বইয়ের পাতায়ও চোখে পড়বে। কিন্তু এর দেখা মিলবে না কোনও অভিধানে। কোনও অভিধানই একে শব্দ বলে মানে না। কারণও আছে। অনুষ্ঠিত নিজেই অনু-স্থা + ত (ক্ত) হিসেবে সাধিত ক্রিয়া বিশেষণ; অর্থ আচরিত, সম্পাদিত, নিষ্পাদিত, কৃত, সঙ্ঘটিত, আরব্ধ, আয়োজিত, নির্বাহিত ইত্যাদি। -তব্য সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়, ঔচিত্য বা আবশ্যকতা বোঝানোর জন্য, ব্যবহৃত হয় সাধারণত তৎসম ধাতুর সঙ্গে যেমন, — √ জ্ঞা + তব্য = জ্ঞাতব্য বা √ গ্রহ্‌ + তব্য = গ্রহীতব্য। বাংলা দুয়েকটা ধাতুর সঙ্গেও -তব্য বসে পড়তে পারে, যেমন √ কহ্‌ + তব্য = কহতব্য। অনুষ্ঠিত ক্রিয়া বিশেষণটির তাই -তব্য প্রত্যয়ের ভারটা সয় না। তা ছাড়া যে কর্ম ইতিমধ্যে সম্পাদিত তার সম্পাদন হওয়ার ভবিষ্যত কোনও ঔচিত্য বা আবশ্যকতার প্রয়োজন না থাকাই ভাল।

তারপরও যদি এরকম একটি ভাবের প্রয়োজন পড়ে তৎসম শব্দেই তার সমাধান আছে — অনুষ্ঠাতব্য কিংবা অনুষ্ঠেয়; গুগল খোঁজে প্রথমটি পাওয়া যায় গুটিকয়েক বার আর পরেরটির চল্লিশ হাজারের বেশি। অনুষ্ঠাতব্য শব্দটি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ আর মিলন দত্ত আর অমলেন্দু মুখোপাধ্যায়ের শব্দ সঞ্চয়িতা বাংলা অভিধানেই মিলবে; অর্থ অনুষ্ঠেয়, আচরণীয়, কার্য, অনুষ্ঠানের যোগ্য বা করণীয়; মনিয়ে-মনিয়ের উইলিয়ামসে তো অবশ্যই — अनुष्ठातव्य, অর্থ to be accomplished; ১৮২৭-এ ছাপা কেরির বাংলা অভিধানেও আছে অনুষ্ঠাতব্য। অনুষ্ঠেয় শব্দটি দুই বাংলার পরিচিত সব অভিধানেই আছে, অর্থ অনুষ্ঠানযোগ্য, যার অনুষ্ঠান করতে হবে, সম্পাদ্য, আচরণীয়, সাধ্য, কার্য, করণীয়, অনুষ্ঠানযোগ্য, কর্তব্য, সম্পাদন-যোগ্য ইত্যাদি; আছে সংস্কৃতেও, अनुष्ठेय, অর্থ to be effected, done or accomplished

Saturday, January 02, 2010

প্রতিবর্ণন এবং লিপ্যন্তর

ইংরেজিতে Romanisation বলতে বোঝায় (যা সাধারণত রোমক হরফে লেখা হয় না তেমন কিছু) রোমক হরফে লেখা; এই রোমক হরফে লেখাটাকে বাংলায় হয়ত রোমকায়ন বলা যেতে পারে। আবার সে ব্যাপারটাও দু’রকমের। ইংরেজিতে এদের বলা হয় transcription এবং transliteration। ইংরেজি শব্দ দু’টির জন্য বাংলায় দেখা মেলে বেশ কিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছের: প্রতিবর্ণীকরণ, লিপ্যন্তরীকরণ, অক্ষরান্তরীকরণ, প্রতিবর্ণিত করণ, বর্ণান্তরিত করণ, লিপ্যন্তরিত করণ, অক্ষরান্তরিত করণ, ইত্যাদি। যদিও transcription-এর জন্য নকল করা অর্থে প্রতিলিপিকরণ এবং অনুলিখন দুটোই চলে। ইংরেজিতে দুটো শব্দের দু’রকম মানে থাকলে বাংলা শব্দগুলোর যে কোনও একটি ইংরেজি শব্দ দুটির জন্য নির্বিচারে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্রে, অন্তত পরিভাষা হিসেবে, ইংরেজি শব্দ দু’টির আলাদা দু’টি বাংলা থাকা উচিত, না হলে বিষয় বোঝানোর ক্ষেত্রে ঝামেলা হবে।

ক্রিয়াজাত বিশেষ্য হিসেবে বোধ করি transliteration-এর জন্য প্রতিবর্ণীকরণ এবং transcription-এর জন্য লিপ্যন্তরীকরণ ব্যবহার করা উচিত। কারণ transliteration-এ একটি ভাষার শব্দ সে ভাষার বানান অনুযায়ী অন্য একটি ভাষার মান্য হরফ বা পরিবর্ধিত হরফে লেখা হয়, মূল এবং দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণের দিকে লক্ষ্য না রেখে। আর সে কারণেই কেবল বর্ণান্তর (বর্ণের অন্তর) ঘটে বলে তাকে প্রতিবর্ণীকরণ, বা প্রতিবর্ণনও, বলা যেতে পারে। প্রতিবর্ণীকরণে বানান অর্থাৎ বর্ণন মেনে চলা হয়; তাছাড়া এই পরিবর্তনে এক ভাষার হরফের সাথে অন্য ভাষার হরফের এক ধরণের প্রতিসাম্য থাকে। এবং সে কারণে প্রতিবর্ণিত শব্দ থেকে মূল শব্দে আবার ফিরে যাওয়া যায়। আর transcription-এ প্রচেষ্টা থাকে একটি ভাষার শব্দকে আরেকটি ভাষার উচ্চারণনীতি মেনে দ্বিতীয় ভাষার হরফ ব্যবহার করে মূল ভাষার উচ্চারণের যতটা কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে তার। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মুল ভাষার উচ্চারণকে দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণের কাছাকাছি নিয়ে সে ভাষার হরফে লিখে যাওয়া। এ ধরণের সঙ্ঘটনকে লিপ্যন্তরীকরণ, বা অক্ষরান্তর, বলা যেতে পারে। এখানে থাকে প্রতিসাম্যের অভাব এবং পুরো ব্যাপারটা উচ্চারণ-সংবেদী বলে হরফের চিন্তা না করে বরং অক্ষরের (syllable) চিন্তা করা হয়। লিপির একটি অর্থ একটি অর্থ অক্ষর বা লিখন, অর্থাৎ অক্ষরবিন্যাস, আর তাই দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণনীতি এবং অক্ষরবিন্যাসের প্রাধান্যের কারণে একে লিপ্যন্তর বলাই ভাল।

গুরুগম্ভীর কাজের জন্য যেমন গবেষণায় সাধারণত প্রতিবর্ণীকরণ, যেমন নিঃশব্দ থেকে niḥśabda। সাধারণ কাজের জন্য লিপ্যন্তরীকরণ, যেমন নিঃশব্দ থেকে ইংরেজি-ভাষীদের জন্য nishshobdo, nishshabdo, nishshawbdo বা nishshaubdo, ফরাসি-ভাষীদের জন্য nichchaubdo কিংবা জর্মন-ভাষীদের জন্য nicshobdo, তেমনি আরও অনেক। যারা শব্দটির উচ্চারণ মূল ভাষায় ভুল করে তাদের করা লিপ্যন্তর আরেকটু অন্য রকমের হবে। প্রতিবর্ণীকরণের যেমন আছে ঋজুতা, লিপ্যন্তরীকরণে তেমনি লঘুতা। একটিতে নিয়মের বাড়বাড়ি, বানানের দার্ঢ্য। অন্যটিতে নিয়মের বালাই নেই, উচ্চারণের প্রাণান্তকর চেষ্টা। সংস্কৃত শব্দ নিঃশব্দের দেবনাগরীতে প্রতিবর্ণন হবে निःशब्द, সেই একই বানান, তৎসম। দেবনাগরীতে হিন্দি-ভাষীদের জন্য হবে निश‌्शौब्दो (নিশ্‌শৌব্দো); মরাঠি বা নেপালিতে অন্য কিছু।