Tuesday, April 17, 2007

পয়লা জানুআরি না এক জানুআরি

চলতি বাংলায় রেডিও এবং টেলিভিশনে এবং গুরুগম্ভীর ভাষায় বৈদ্যুতিন মাধ্যমে, কেবল বাংলাদেশে, বেশ কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে --- ১ (এক) জানুআরি এবং ১৩ (তের) ডিসেম্বর ইত্যাদি, পহেলা জানুআরি বা তেরই ডিসেম্বরের বদলে। ব্যাপারটা বাংলাবাচনসম্মত নয়, বিরক্তিকরও বটে। বোধ করি ইংরেজির, বিশেষ করে বিলেতি ইংরেজির, নিয়মে লেখা তারিখের সরাসরি বাংলাপঠন এইসব আপদবাচ্য শব্দসমাহার। মার্কিনি ইংরেজিতে লেখা হয় December 25 (ডিসেম্বর ২৫), বলা হয় December twenty-fifth (ডিসেম্বর টুয়েন্টি-ফিফ‌্থ), সংখ্যাটাকে ক্রমবাচক করে নিয়ে। আর বিলেতি ইংরেজিতে লেখা হয় 25 December আর বলা হয় the twenty-fifth of December (দি টুয়েন্টি-ফিফথ অব ডিসেম্বর) বা December the twenty-fifth (ডিসেম্বর দি টুয়েন্টি-ফিফথ)। যারা দুই মার্চ বা নয় এপ্রিল বলে তারা এরকম কেন বলে তাদের অনেকেরই তার জবাব জানা নেই।

বাংলা ভাষায় ক্রমবাচক বা ক্রমপর্যায়সূচক সঙ্খ্যা দু'ধরণের --- তৎসম এবং তদ্ভব। সরাসরি সংস্কৃত থেকে গৃহীত ক্রমবাচক শব্দের ব্যবহার প্রায় সব ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও, তদ্ভব ক্রমবাচক শব্দের ব্যবহার তারিখের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, এবং এর দৌড় এক থেকে কেবল বত্রিশ পর্যন্ত, কারণ বাংলা মাসে কোনওদিনই বত্রিশের বেশি দিন ছিল না। এক থেকে হয় পহেলা বা পয়লা, শব্দটিকে বাংলায় হিন্দি থেকে নব্য আমদানি ভাবার কোনও কারণ নেই, কারণ চর্যাপদের অন্তত দুই জায়গায় শব্দটির ব্যবহার পাওয়া যায়; এরপর -রা, দোসরা এবং তেসরা; -ঠা, চৌঠা; -উই, পাঁচুই, ছউই, এভাবে আঠারই; এবং ঊনিশ থেকে বত্রিশ পর্যন্ত -শে, ঊনিশে, বিশে ইত্যাদি। এটিই বাংলার নিয়ম।

তদ্ভব ক্রমবাচক সংখ্যার বদলে তৎসম শব্দও ব্যবহার করা যায়, যেমন প্রথম জানুআরি, দ্বিতীয় ফেব্রুআরি ইত্যাদি, পরের দিকে হবে দ্বাবিংশতিতম (বাইশে) মার্চ। কানের এবং চোখের বারো টা, শুনতে এবং পড়তে ও বানান করতে। আরেকটা সোজা রাস্তা আছে, মার্চের তিন তারিখ, বা মে'র পনের তারিখ লেখা এবং বলা।

Wednesday, April 11, 2007

নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জো

বাংলায় গঞ্জ, হাট বা কোনও জায়গার নামের শেষাংশ হিসেবে, বেশ অনেকদিন ধরেই টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলগুলোতে অ-কারান্ত উচ্চারিত হতে শোনা যাচ্ছে। যদিও দুই বাংলা থেকে প্রকাশিত অভিধানে উচ্চারণটি তাই দেখানো হয়েছে, খটকা থেকেই যায়, এটি প্রচলিত না আরোপিত উচ্চারণ। কারণ অ-কারান্ত উচ্চারণ হলে শব্দের শেষে -য় বা -তে বসবে, -এ নয়, হবার কথা গঞ্জয় বা গঞ্জতে, গঞ্জে নয়; হবার কথা গঞ্জর, গঞ্জের নয়, যেমন পশ্চিম বঙ্গের বাংলায়, নাম হিসাবে, অমিতাভর, অথচ বাংলাদেশে অমিতাভের। কিন্তু এই চ্যানেলগুলোই আবার গঞ্জে (যেমন নারায়ণগঞ্জে) বা গঞ্জের ব্যবহার করে, নারায়ণগঞ্জতে, নারায়ণগঞ্জয় বা নারায়ণগঞ্জর নয়। বাংলাদেশে এবং ভারতে বিভিন্ন নামের ইংরেজি বানানে পাওয়া যায় -ganj অথবা -gunge। বোঝা যায় সে সময় অন্তত অ-কারান্ত উচ্চারণ প্রচলিত ছিল না। বাঙ্গালা ভাষার অভিধানের উচ্চারণ দেখানোর রীতিতে মনে হয় শব্দটির উচ্চারণ অ-কারান্ত নয়।

Thursday, April 05, 2007

গর্দভ ও গর্ধব

অনন্যার প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা উচ্চারণে গর্দভের উচ্চারণ দেওয়া আছে 'গর্‌দ্‌দোভ' (/gɔrd:obʱ/) খুব কম লোকই শব্দটি এভাবে উচ্চারণ করে। প্রায় একই বইয়ের পরবর্তী বাংলা একাডেমীর বর্ধিত সংস্করণে বলা আছে গর্‌দোভ > গর্‌ধোব ( /gɔrdobʱ/ > /gɔrdʱob/ )। সাহিত্য সংসদের বাংলা উচ্চারণ অভিধানে দেখতে পাই সচেষ্ট উচ্চারণ হিসেবে /gɔrdɔb(ɦ)/ যেখানে অন্ত্য অ লোপ পাবার কারণে শেষ ব্যঞ্জনের মহাপ্রাণতা লোপ পাচ্ছে; এবং দ্রুত উচ্চারণে /gɔrdɦob/। শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ রূপ গর্দভীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে মূল সংস্কৃতে বোধ করি এই সমস্যা ছিলই না, কারণ শব্দের অন্ত্য অ, गर्दभ। ইংরেজি ভাষার উচ্চারণ অভিধানে প্রচলিত উচ্চারণ আগে এবং কম কিংবা অপ্রচলিত উচ্চারণ পরে দেওয়া হয়। এরকম বাংলা অভিধানে ঠিক তার উল্টোটি দেখা যায়।

Sunday, April 01, 2007

একটি জোড়াহরফের নতুন রূপ

বাংলা লেখায় ষ + ্ + ণ যে যুক্ত রূপ (ষ্ণ, ছবির প্রথম রূপ) নেয় তাকে ষ + ্ + ঞ বলে ভুল করা স্বাভাবিক, বাচ্চাদের পক্ষে তো বটেই। তারই বোধ করি অত্যন্ত হালকা প্রতিফলন ঘটেছে বেশ কয়েকটি বাংলা ব্লগে। 'কৃষ্ণ' লেখা হয়েছে 'কৃষ্ঞ'। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি বেশ আগেই ঠিক করেছে যে এখন থেকে তাদের প্রকাশিত বইয়ে ষ-এর নিচে ণ, যা কি না হলফের নিচে বসলে ন-এর মত দেখায়, তা ব্যবহৃত হবে (ছবির দ্বিতীয় রূপ)। প্রশ্ন উঠতে পারে ন- এবং ণ-ফলা একই রকম দেখালে কি করে হবে? হক কথা। রুগ্ন শব্দে গ-এর নিচে কিন্তু ণ-ই, ন নয়। এর জন্য আলাদা কোনও ফলা চিহ্ন নেই। বাংলা আকাদেমির অনেক বইয়ে আবার ছোট ষ-এর নিচে-পাশে ণ দেখা যায় (ছবির তৃতীয় রূপ)। অনেক পুরনো অ-আ-ক-খ বইতে ছবির চতুর্থ রূপটিও দেখা যায়। এর আগে অনেকেই যুক্ত হরফের নতুন রূপের প্রস্তাব করে চালু করতে পারে নি। বাংলা আকাদেমি সমালোচনার মুখেও নতুন রূপের হরফ দিয়ে বই ছাপিয়ে যাচ্ছে। পুরো বাংলায় চালু হতে সময় লাগলেও, একে অগ্রাহ্য করার কোন কারণ বোধ করি আর থাকবে না?