ইংরেজিতে Romanisation বলতে বোঝায় (যা সাধারণত রোমক হরফে লেখা হয় না তেমন কিছু) রোমক হরফে লেখা; এই রোমক হরফে লেখাটাকে বাংলায় হয়ত রোমকায়ন বলা যেতে পারে। আবার সে ব্যাপারটাও দু’রকমের। ইংরেজিতে এদের বলা হয় transcription এবং transliteration। ইংরেজি শব্দ দু’টির জন্য বাংলায় দেখা মেলে বেশ কিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছের: প্রতিবর্ণীকরণ, লিপ্যন্তরীকরণ, অক্ষরান্তরীকরণ, প্রতিবর্ণিত করণ, বর্ণান্তরিত করণ, লিপ্যন্তরিত করণ, অক্ষরান্তরিত করণ, ইত্যাদি। যদিও transcription-এর জন্য নকল করা অর্থে প্রতিলিপিকরণ এবং অনুলিখন দুটোই চলে। ইংরেজিতে দুটো শব্দের দু’রকম মানে থাকলে বাংলা শব্দগুলোর যে কোনও একটি ইংরেজি শব্দ দুটির জন্য নির্বিচারে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্রে, অন্তত পরিভাষা হিসেবে, ইংরেজি শব্দ দু’টির আলাদা দু’টি বাংলা থাকা উচিত, না হলে বিষয় বোঝানোর ক্ষেত্রে ঝামেলা হবে।
ক্রিয়াজাত বিশেষ্য হিসেবে বোধ করি transliteration-এর জন্য প্রতিবর্ণীকরণ এবং transcription-এর জন্য লিপ্যন্তরীকরণ ব্যবহার করা উচিত। কারণ transliteration-এ একটি ভাষার শব্দ সে ভাষার বানান অনুযায়ী অন্য একটি ভাষার মান্য হরফ বা পরিবর্ধিত হরফে লেখা হয়, মূল এবং দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণের দিকে লক্ষ্য না রেখে। আর সে কারণেই কেবল বর্ণান্তর (বর্ণের অন্তর) ঘটে বলে তাকে প্রতিবর্ণীকরণ, বা প্রতিবর্ণনও, বলা যেতে পারে। প্রতিবর্ণীকরণে বানান অর্থাৎ বর্ণন মেনে চলা হয়; তাছাড়া এই পরিবর্তনে এক ভাষার হরফের সাথে অন্য ভাষার হরফের এক ধরণের প্রতিসাম্য থাকে। এবং সে কারণে প্রতিবর্ণিত শব্দ থেকে মূল শব্দে আবার ফিরে যাওয়া যায়। আর transcription-এ প্রচেষ্টা থাকে একটি ভাষার শব্দকে আরেকটি ভাষার উচ্চারণনীতি মেনে দ্বিতীয় ভাষার হরফ ব্যবহার করে মূল ভাষার উচ্চারণের যতটা কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে তার। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মুল ভাষার উচ্চারণকে দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণের কাছাকাছি নিয়ে সে ভাষার হরফে লিখে যাওয়া। এ ধরণের সঙ্ঘটনকে লিপ্যন্তরীকরণ, বা অক্ষরান্তর, বলা যেতে পারে। এখানে থাকে প্রতিসাম্যের অভাব এবং পুরো ব্যাপারটা উচ্চারণ-সংবেদী বলে হরফের চিন্তা না করে বরং অক্ষরের (syllable) চিন্তা করা হয়। লিপির একটি অর্থ একটি অর্থ অক্ষর বা লিখন, অর্থাৎ অক্ষরবিন্যাস, আর তাই দ্বিতীয় ভাষার উচ্চারণনীতি এবং অক্ষরবিন্যাসের প্রাধান্যের কারণে একে লিপ্যন্তর বলাই ভাল।
গুরুগম্ভীর কাজের জন্য যেমন গবেষণায় সাধারণত প্রতিবর্ণীকরণ, যেমন নিঃশব্দ থেকে niḥśabda। সাধারণ কাজের জন্য লিপ্যন্তরীকরণ, যেমন নিঃশব্দ থেকে ইংরেজি-ভাষীদের জন্য nishshobdo, nishshabdo, nishshawbdo বা nishshaubdo, ফরাসি-ভাষীদের জন্য nichchaubdo কিংবা জর্মন-ভাষীদের জন্য nicshobdo, তেমনি আরও অনেক। যারা শব্দটির উচ্চারণ মূল ভাষায় ভুল করে তাদের করা লিপ্যন্তর আরেকটু অন্য রকমের হবে। প্রতিবর্ণীকরণের যেমন আছে ঋজুতা, লিপ্যন্তরীকরণে তেমনি লঘুতা। একটিতে নিয়মের বাড়বাড়ি, বানানের দার্ঢ্য। অন্যটিতে নিয়মের বালাই নেই, উচ্চারণের প্রাণান্তকর চেষ্টা। সংস্কৃত শব্দ নিঃশব্দের দেবনাগরীতে প্রতিবর্ণন হবে निःशब्द, সেই একই বানান, তৎসম। দেবনাগরীতে হিন্দি-ভাষীদের জন্য হবে निश्शौब्दो (নিশ্শৌব্দো); মরাঠি বা নেপালিতে অন্য কিছু।
3 comments:
সাধু! সাধু্!
অনেক দিন পরে পোস্ট দিলেন ।
একটা প্রশ্ন - জার্মানকে কেউ কেউ (যেমন আপনি) জর্মন লেখেন কেন ? হিন্দিতেও এই চল দেখি । এটার কারন কি ?
হ্যাঁ, পোস্টটা বেশ অনেক দিন পরে হল। অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। যাই হোক, জর্মন লিখি ছোটবেলায় আগের দিনের লেখকদের দ্বারা খানিকটা প্রভাবিত হয়ে। ইংরেজিতে German তার উচ্চারণ /dʒɜːmən/ (জর্মনে অবশ্য Deutsch /dɔʏtʃ/)। প্রথম স্বর /ɜː/ এবং দ্বিতীয় স্বর /ə/ দুটোর কোনওটি বাংলায় নেই। এবং এদের সবচেয়ে কাছাকাছি স্বর [অ]। যদিও একভাষার শব্দ আরেক ভাষায় লিখতে গেলে উৎকট উৎস ভাষা-নির্ভর শুদ্ধতায় আমি বিশ্বাসী নই। মুজতবা আলীতে বোধ করি জর্মন, তারও আগে তাই ছিল। জর্মনকে জার্মান থেক অনেক আপন মনে হয়। গেল শতকের মাঝামাঝির পরেও সংস্কারপন্থীরা এটা নিয়ে মাথা না ঘামালে জর্মন বাংলা হয়ে দাঁড়াত এতদিনে। জার্মান শুনলেই পর-পর ভাব আসে। আর হিন্দিতেও जर्मन, কারণটা বোধ করি অনেকটা স্বরের কাছাকাছি থাকার একটা ব্যাপার। ভাল থাকবেন।
Post a Comment