বাংলার ভূখণ্ডে অনেক দিন ধরে ফারসি আর ইংরেজি রাজভাষা থাকবার কারণে বাংলায় বিদেশি ধ্বনিমূলের দেখা মেলে। মান্য বাংলার ধ্বনিভাণ্ডারের বাইরে এই রকম পাঁচটি ধ্বনিমূল আছে – অঘোষ দ্বি-ঔষ্ঠ্য উষ্ম ধ্বনি /f/, ঘোষ দ্বি-ঔষ্ঠ্য উষ্ম ধ্বনি /v/, অঘোষ দ্বি-ঔষ্ঠ্য নৈকট্যক /ɸ/, ঘোষ দ্বি-ঔষ্ঠ্য নৈকট্যক /β/, আর ঘোষ দন্তমূলীয় শিস ধ্বনি /z/। এবং প্রায়ই /f/ ও /ɸ/ গিয়ে ঠেকে /pʰ/-এ, /v/ ও /β/ গিয়ে ঠেকে /bʱ/-এ, এবং /z/ গিয়ে ঠেকে /dʒ/-এ। /f/ ও /ɸ/ এবং /v/ ও /β/ প্রায়ই শোনা যায় ইংরেজি শিক্ষিত এবং বাংলায় সতর্ক উচ্চারণে অভ্যস্ত নয় এমন লোকের বুলিতে, কারণটা হল ইংরেজির /f/ ও /v/। আপিস /ɑpiʃ/ কথাটা বাংলায় শোনা যায় বটে, কিন্তু অফিস বলাই দস্তুর। কিন্তু উচ্চারণটা কি? সাহিত্য সংসদের উচ্চারণ অভিধান এবং কলিকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির অবাঙালিদের জন্য আধুনিক বাংলা অভিধান মতে /ɔpʰiʃ/, বাংলা একাডেমির উচ্চারণ অভিধানে /ɔfis/। অনেকের কাছে মাঝামাঝি /ɔpʰis/ গোছের কিছু একটা। দাঁড়ালটা কি? পশ্চিমবঙ্গের বাংলায় /ɔpʰiʃ/; আর পূর্ববঙ্গের বাংলায় /ɔfis/। অনেকে এই /f/-টা ঠিকমত উচ্চারণ করতে না পেরে উচ্চারণ করে /ɸ/। তেমনি অনেকের কাছেই ভুল /bʱul/ হয়ে যাচ্ছে /vul/ বা /βul/।
আরবি, ফারসি বা উর্দু থেকে আসা /z/-ধ্বনির শব্দগুলো বাংলায় সাধারণত /dʒ/ – জাহাজ (জহাজ়, جـﮩاز) /dʒɑɦɑdʒ/, মেজাজ (মিজ়াজ, مزاج) /medʒɑdʒ/, সাজা (সজ়া, سزا) /ʃɑdʒɑ/, কিংবা উজির (ব়জ়ীর, وزير) /udʒir/। অসাধারণত জ় /z/, কারণ নাটকে উজিরে আজম ( ব়জ়ীর-এ-‘আজ়ম, وزير اعظم)-কে /udʒireɑdʒom/ বললে কেমন যেন একটু ঠেকে, তাই /uzireʔɑzɔm/ শোনা যায়। অন্যান্য ভাষা থেকে আসা অল্প-প্রচলিত শব্দে, শিক্ষিতের বুলিতে /z/ প্রায়শই /z/, /dʒ/ নয়। তবে মান্য বাংলার /dʒ/ অনেক উপভাষায় /z/, পরশুরামের zানতি-র মত।
শতাংশের হিসেবে বাংলায় অনেক কম ব্যবহৃত একটি ধ্বনিমূল হল /ʕ/। আস্সালামু ‘আলাইকুম (السلام عليكم, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বাংলাদেশে এবং এ অঞ্চলের অনেক দেশে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত সম্ভাষণ বাক্য। অনেকেই সাধারণভাবে /asalaːmʊ alaɪkʊm/ বললেও, আরবির শুদ্ধ উচ্চারণ হল /ʔasːaˈlaːmʊ ʕaˈlaɪkʊm/। এবং আরবি এবং আরবি-পঠনে শিক্ষিত লোকের বুলিতে শুদ্ধ উচ্চারণটি শোনা যায়।
No comments:
Post a Comment