সংস্কৃতে ঘর্ম বা ঘর্ম্মের সাধারণ অর্থ গরম বা রৌদ্র, আর সেখান থেকে থেকে বাংলায় তদ্ভব ঘাম, অর্থ স্বেদ। বাংলায় তৎসম ঘর্ম অর্থও স্বেদ। হিন্দিতে অবশ্য ঘাম (घाम) শব্দের অর্থ রৌদ্র বা তাপ — বড়া ঘাম হৈ (बड़ा घाम है, অনেক গরম বা রোদ)। কালিদাসের মেঘদূতম-এর বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে, — গ্রীষ্মে খরতাপে তোমাকে পেয়ে তারা না যদি দিতে চায় মুক্তি (১/৬২)। সংস্কৃতে খরতাপের জন্য মূলের শব্দটি হল ঘর্ম। মনিয়ের-উইলিয়াম্স্-এ ঘর্মের প্রথম অর্থ তাপ, এবং চতুর্থ অর্থ স্বেদ। এই ঘর্ম থেকেই অন্য বাংলা শব্দ গরম, খানিকটা ঘোরা পথে। প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় *gʷʰer- (গরম) থেকে ফারসিতে গর্ম (گرم), আবেস্তা (garema) এবং পহলবি (garm) হয়ে। প্রত্নরূপ *gʷʰer- থেকে সংস্কৃতে ঘর্ম (घर्म), প্রাচীন গ্রিকে থেরমোস (θερμός) আর লাতিনে ফোরমুস (formus)। ইংরেজির warm (পুরনো ইংরেজিতে wearm) শব্দটিও একই উৎস থেকে ব্যুৎপন্ন।
Sunday, September 28, 2008
Friday, September 26, 2008
পাঞ্জাবি, বাঙালির কুর্তা
পাকিস্তানে এক পোশাকের দোকানে এক বাঙালি গিয়ে নাকি পাঞ্জাবি খুঁজেছিল। অনেক কসরত এবং ইশারার পর দোকানির উত্তর ছিল — আপলোগ বংগালী কুর্তা মাংগতে হৈঁ (আপনি বাঙালি কুর্তা চাইছেন)? বাংলা দেশে যা পাঞ্জাবি বা পাঞ্জাবী, অবাঙালির কাছে তা বাঙালি কুর্তা। তাহলে পাঞ্জাবি কেন? পাঞ্জাবের লোকেরা এক ধরণের কুর্তা পড়ে ঠিকই, তবে তা দেখতে ঠিক পাঞ্জাবির মত নয়। তাই কি বাঙালি কুর্তা? বেশির ভাগ বাংলা অভিধানেই শব্দটির ব্যাপারে কোনও দিক্নির্দেশনা পাওয়া যায় না। বেশ কয়েকটি অভিধানে শব্দটিই নেই। দুয়েকটি অভিধানে শব্দটিকে দেশজ বলে ধরা হয়েছে। দেশজ শব্দ হলে পানজাবি লেখাই যুক্তিসঙ্গত, পাঞ্জাবি নয়। তবুও পাঞ্জাবের সাদৃশ্যে পাঞ্জাবি চলতে পারে। ঢাকার বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে বলা আছে ফারসি পানজাহ (پنجه), সাথে বাংলা প্রত্যয় ই বা ঈ যোগে ব্যুৎপন্ন। অর্থ পাঞ্জা (পাঁচের বা পাঁচ আঙ্গুলের সমাহার) বা হাতের তালু অবধি বিস্তৃত আস্তিনবিশিষ্ট ঢিলা জামা। কুর্তার আস্তিন সাধারণত ছোট হয়; বাঙালি কুর্তায় আস্তিন তালু পর্যন্ত লম্বিত; যুতসই বর্ণনা। ফারসি পানজাহ + বাংলা প্রত্যয় ই হতে পারে। তবে এতে বর্গ্য ব আসা একটু কঠিন; অন্তস্থ ব হলে ভাল হত। প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় *penkʷe (পাঁচ) থেকে সংস্কৃতে পঞ্চ (पंच) আর ফারসিতে পান্জ্ (پنج), যেখান থেকে পানজাহ। বাঙালি কুর্তা বা kurta (হিন্দিতে कुरता এবং উর্দুতে كرته) আদতে ফারসি থেকে আসা, অর্থ লম্বা ঢিলা জামাবিশেষ।
Thursday, September 25, 2008
চলভাষ না মুঠোফোন?
ইংরেজদের বুলিতে মোবাইল, ফোন বা সেট না বললেও চলে; মার্কিনি বুকনিতে এই একই বস্তু সেলুলার ফোন, সেলুলার বা শুধু সেল। আধুনিক যুগের হাতের মুঠোয় চলতে চলতে কথা বলার যন্ত্র। ২০০৩ এর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বইমেলায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু গুণের ‘মুঠোফোনের কাব্য’; প্রথম খণ্ড। চলতে চলতে মোবাইল ফোনে লিখে রাখা কবিতার সঙ্কলন। দেশে ছাপানো অলক সোম চৌধুরীর ‘বিজ্ঞাপনের মেয়ে’ গল্পে চলভাষ শব্দটির দেখা। এই মুঠোফোন শব্দটির ব্যঞ্জনায় হাতে ধরার ব্যাপারটি আছে, কিন্তু চলভাষে আছে চলার গতিময়তা। বাংলায় টেলিফোনের বাংলা দূরালাপনী বা দূরভাষ তেমন একটি চলে নি; তারা এখনও পরিভাষা। মুঠোফোন বা চলভাষের ব্যবহার শুরু হয়েছে। মুঠোফোন চলতি, আর চলভাষ গম্ভীর, খানিকটা পরিভাষার গন্ধ। গুগলে মুঠোফোন পাওয়া যায় ১,৩০,০০০ বার আর চলভাষ মোটে ৪ বার।
Wednesday, September 24, 2008
ঘুরে ঘুরে বাজার করা
ব্যাপারি-নৌকা সত্যি সত্যি হাটে-হাটে গস্ত করে বেড়াচ্ছে। এই গস্ত করার অর্থ ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করা। ফারসি শব্দ গশ্ত্ (گشت), শব্দের যাত্রায় শ পর্যবসিত স-এ। জ্ঞানেন্দ্রমোহনের অভিধানে অর্থ হাটে ঘোরা, গস্ত করা, হাটবাজার করা, মাল খরিদ করা। ফারসিতে অর্থ হাঁটা, ঘুরে বেড়ানো, পাহারা ভ্রমণ, ইত্যাদি। হিন্দিতে গশ্ত (गश्त) অর্থ পাহারা, আর গশ্ত লগানা (गश्त लगाना) অর্থ পাহারা দেওয়া। বাংলায় গস্ত থেকে গস্তিদার, 'যে দ্রব্যাদির অনুসন্ধান করিয়া বেড়ায়; কোন স্থানে কোন জিনিস সুবিধা ধরে বিক্রী হয় ইহা যে অনুসন্ধান করে।'
আকার যোগে এবং শ সহযোগে শব্দটি একটু ভিন্ন ব্যঞ্জনায়ও প্রচলিত আছে। তাবলিগ জামাতের লোকেরা ধর্মের কাজে বের হয়ে বিকেলে গাস্ত (উচ্চারণ গাশ্ত্) করতে যায় বা গাস্তে যায়, অর্থাৎ মসজিদের মহল্লার মানুষকে ধর্ম পথে ডাক দেয়।
আকার যোগে এবং শ সহযোগে শব্দটি একটু ভিন্ন ব্যঞ্জনায়ও প্রচলিত আছে। তাবলিগ জামাতের লোকেরা ধর্মের কাজে বের হয়ে বিকেলে গাস্ত (উচ্চারণ গাশ্ত্) করতে যায় বা গাস্তে যায়, অর্থাৎ মসজিদের মহল্লার মানুষকে ধর্ম পথে ডাক দেয়।
Subscribe to:
Posts (Atom)