ভারতবর্ষের সাথে গ্রিসের লেনদেন শুরু যিশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩২৭ বছর আগে মহামতি আলেকজান্ডারের পাঞ্জাব আক্রমণের মধ্য দিয়ে, তক্ষশীলার অধিপতি রাজা অম্ভি দিগ্বিজয়ী সিকন্দারের কাছে আর্তসমর্পন করে সে সময়। পরে আলেকজান্ডারের সাথে মগধের রাজা পুরুর যুদ্ধ পরের বছর। আরও পরে সেলুকাসের আক্রমণ রাজা চন্দ্রগুপ্তের রাজ্য, যা বর্তমানে পাঞ্জাব নামে পরিচিত। সেলুকাসের দূত মেগাস্থিনিসের একটি বইও আছে এ বিষয়ে, ইন্দিকা নামে। তারও আগের গ্রিসে ভারতবর্ষ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ পারস্যের রাজা কুরুর (Cyrus) মাধ্যমে, ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি। এ অঞ্চলের ভাষায় তাই গ্রিক শব্দ থাকা স্বাভাবিক। এবং বাংলায় বর্মি শব্দের মত গ্রিক শব্দের সংখ্যাও খুবই অল্প, হালি দুয়েক। এর প্রায় সবই এসেছে সংস্কৃতের হাত ধরে। সুড়ঙ্গ, কেন্দ্র, হোরা, দাম, ময়দা, এবং জামিত্র। মনিয়ের মনিয়ের-উইলিয়ামস্-এর অভিধান মতে যবনিকা (যার জবনিকা বানানটিও শুদ্ধ, ইওনিয়া (Ἰόνια) > যবন (यवन) > যবনিকা, জবনিকা) ইত্যাদিও গ্রিক থেকে আগত। আরও দুয়েকটা শব্দ থাকতে পারে। সংস্কৃতে তো আছেই, বংশীয় শব্দের পাশাপাশি গ্রিক থেকে আগত অর্বাচীন শব্দ: যেমন, উষ্ট্র (বাংলায় উট) আর ক্রমেলক।
বাংলায় সুড়ঙ্গ বেশি প্রচলিত হলেও আসল বানান সুরঙ্গ। শব্দটি সংস্কৃততে सुरङ्ग (-ङ्गा), অর্থ, দেয়ালে বা মাটির নিচে খোঁড়া গর্ত। বাংলায় সিঁধ কাটা অর্থেও সুড়ঙ্গের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। প্রাচীন গ্রিকে σύριγξ (syringx, গুহা)। শব্দটি লাতিনে ঢুকেছে syrinx হিসেবে, অর্থ গুহাপথ, বা মাটির নিচে চলাচলের গর্ত। আধুনিকে গ্রিকে শব্দটি একটু অন্যভাবে আছে, σηραγξ (sēranx)। বাংলায় কেন্দ্র, সংস্কৃতের केन्द्र, বৃত্তের কেন্দ্র, আর গ্রিকে κέντρον (kentron, বৃত্তের মাঝের বিন্দু)। শব্দটি লাতিনে আছে centrum হিসেবে, কম্পাসের স্থির কাঁটা বা বৃত্তের মাঝবিন্দু অর্থে। হোরা, সংস্কৃতে होरा (ঘণ্টা, সময়), এবং গ্রিকে ὡρα (hōra, দিনের চব্বিশ ভাগের একভাগ সময়)। এই শব্দ দিয়েই বোধ করি ভারতবর্ষে চব্বিশ ঘণ্টার দিনের হিসেবের শুরু। আগে কালগণনা হত বিপল, পল, দণ্ড, প্রহর ইত্যাদি দিয়ে। দাম শব্দটি গ্রিক δραχμή (drakhmē, মুদ্রার নাম) থেকে আগত সংস্কৃত द्रम्य (দ্রম্য, দাম), তার প্রাকৃতের আধুনিক রূপ । দ্রাখ্মে > দ্রম্য > দম্ম > দাম। বনেদি সংস্কৃত শব্দ মূল্য সমানভাবে বিরাজমান। ময়দা শব্দটির পরিবর্তন ঘটেছে, সাথে পরিভ্রমণও। গ্রিক σεμίδαλις (semidalis, মিহি গমের আটা) থেকে সংস্কৃতে समीदा (সমীদা), সেখান থেকে প্রাকৃত মীদা এবং সম্ভবত মধ্য এশিয়া ভ্রমণের পর ফারসি ميده (ময়দা) হিসেবে বাংলায় আগমন। কারও কারও মতে জামিত্র শব্দটিও গ্রিক δίαμετρον (diametron, ব্যাসরেখা) সংস্কৃত जामित्र-এর মাধ্যমে।
1 comment:
উপকৃত হলাম!
Post a Comment