Friday, November 23, 2007

সিদ্‌র্‌ নামের ঘূর্ণিঝড়

গেল ১৫ই নবেম্বরের বিকেলে বাংলাদেশের পশ্চিম উপকূলে ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের নাম সিড্‌র (হয়ত সিদ্র্‌ হলে ভাল হত, বা সিদ্‌র্‌, আরও ভাল; হিন্দিতে লেখা হচ্ছে भीषण चक्रवाती तूफान सिद्र, ভীষণ চক্রবাতী তূফান সিদ্র), যদিও বাংলায় উচ্চারিত হচ্ছে সিড্‌অর্‌, লেখাও হচ্ছে হসন্ত ছাড়া। যাই হোক। পরের দিন ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় একটি লেখার শিরনাম, সিডর অর্থ চোখ; সিংহলীতে, অর্থটি গর্তও হতে পারে। পরের দিন একটি ইংরেজি দৈনিকের একটি খবরে ছিল সিংহলী ভাষায় সিডর অর্থ গর্ত বা চোখ। ঘূর্ণিঝড়েরও একটি চোখ ছিল, বেশ বড়। এ থেকে ভ্রান্ত অনুমান হতে পারে। সিংহলীতে চোখকে বলা হয় অ্যাস (ඇස); আর গর্তকে সিদুর (සිදුර); দুটোই অ-কারান্ত উচ্চারণ। হয়ত বাংলা (নাকি সংস্কৃত) ছিদ্রের কোনও ভাবে জ্ঞাতি ভাই। সিংহলী একটি ইন্দীয় ভাষা। দেখে মনে হয় ভগ্ন সংস্কৃত শব্দের সঙ্খ্যা সিংহলীতে বিস্তর। বাংলায় এধরণের শব্দগুলো পালি বা প্রাকৃতের মাধ্যমে আগত, তদ্ভব। সিংহলীতে তৎসম শব্দ স্তুতি (ধন্যবাদ), হিম (বরফ), বয়স (বয়স), নব (নতুন, আধুনিক), আরম্ভ (শুরু) ইত্যাদি যেমন আছে, তেমনি দেখা পাওয়া যায় তদ্ভব শব্দের, মুণ (মুণ্ড?) মুখ অর্থে, মিহিরি (মিছরি?) মিষ্টি অর্থে, দোর (দ্বার > দুয়ার?) বাংলাও দোর, দরজা অর্থে, গঙ্গ (গঙ্গা?) নদী অর্থে, অ্যাঙ্গ (অঙ্গ?) শরীর অর্থে, বা রহস (রহস্য?) গোপন অর্থে, ইত্যাদি; সব শব্দই অ-কারান্ত।

বিশ্ব আবহাওয়া বিজ্ঞান সংস্থার উত্তর ভারত সাগরের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের তালিকায় থাকা সিদ্‌র্‌ (السّدرة, আস্‌-সিদ্‌রা) শব্দটি আদতে ওমানের দেওয়া, এবং তা আরবি শব্দ। ওমানের দেওয়া তালিকায় আর সাতটি নামও আরবিতেই। ২০০৬-এর ২৮শে এপ্রিল মায়ানমারের আঘাত হানা ঝড়টির নাম ছিল মালা, শ্রীলঙ্কার দেওয়া নাম, সিংহলীতে, যদিও বাংলাতে শব্দটি একই, অর্থ সমেত। সিংহলীতে সিদ্‌র্‌-এর পরের পরের ঝড়টির নাম হতে পারে আবে। তবে মাঝের সম্ভাব্য ঝড়টির নাম হবে নার্গিস, পাকিস্তানের দেওয়া। বর্তমান তালিকায় আটটি দেশের দেওয়া ৬৪টি নাম আছে, সময়কাল মধ্য ২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত।

আরবি আস-সিদ্‌রা বা আস-সিদ্‌র্‌ অর্থ সাধারণভাবে কুলগাছ যার বৈজ্ঞানিক নাম Ziziphus spina-christi। প্রাচীন গাছ। ইবনে সিনার বই আল-কানুন ফ়ি আল-তিব্ব্‌-এ ভেষজ গুণের জন্য গাছটির নাম পাওয়া যায়। আগে ওমানে সিদ্‌র্‌-এর পাতার চূর্ণ দিয়ে মাথার চুল পরিষ্কার করা হত।

No comments: