Tuesday, March 11, 2008

হরফের রেখা আর চতুষ্কোণ

হরফের চেহারা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কিছু বিশেষ শব্দের প্রয়োজন পড়ে। রোমক হরফ নিয়ে বিস্তর চর্চা হবার ফলে ইংরেজি বা অন্য ইউরোপীয় ভাষায় বিষয়-সম্পর্কিত শব্দও ঢের। বাংলায় হরফের চেহারার চর্চা যারা টাইপ বানাত তাদের মধ্যে থাকলেও তাদের ব্যবহৃত শব্দগুলো বাইরের জগতে এসে পড়তে পারে নি, বোধ করি তেমন লেখালেখি না হবার কারণে। ধরা হয় রোমক হরফ চার সরলরেখার একটি অদৃশ্য নকশার ওপর বসানো: একদম উপরের রেখাটির নাম অ্যাসেন্ডার লাইন (ascenderline), তারপর ক্যাপলাইন (capline), তারপর বেসলাইন (baseline) এবং শেষে ডিসেন্ডারলাইন (descenderline); ক্যাপলাইন এবং বেসলাইনের মাঝে আরও একটি রেখা টানা হয়, ছোটহাতের হরফের উচ্চতা (x-height) বরাবর, তার নাম মিনলাইন ((meanline) বা মিডলাইন midline)।

বাংলা হরফও তেমনি একটি অদৃশ্য নকশার উপর বসানো যায়। মাত্রার সাথে যে রেখাটি চলে যাবে তার নাম হতে পারে মাত্রারেখা (১) বা headline। আর মাত্রা থেকে ঝুলে নিচে বেশির ভাগ হরফের নিচ যেখানে ঠেকে যাবে তার নাম হতে পারে ভূমিরেখা (২) বা baseline। এই মাত্রারেখা থেকে ভূমিরেখার দূরত্বকে ধরা হবে হরফের মূল উচ্চতা বা base height। মাত্রারেখার উপর আরও একটি রেখা টানা যেতে পারে যা ছুঁয়ে থাকবে ই-কারের উড়াল বা রেফের মাথা আর এই রেখাটির নাম হতে পারে শিরোরেখা (৩) বা topline। ঠিক তেমনিভাবে সবচেয়ে নিচে একটি রেখা টানা হবে, উ-কারের নিচ ছুঁয়ে, যার নাম হতে পারে পাদরেখা (৪) বা dropline। ক বা ত এর মূল রূপ যেখান থেকে শুরু সেখানে আরও একটি রেখা টানা যেতে পারে যার নাম হতে পারে মধ্যরেখা (৫) বা meanline। ভূমিরেখা থেকে মাত্রারেখার উচ্চতাকে হরফরের সাধারণ উচ্চতা (height) বলে ধরা হবে। পাদরেখা থেকে শিরোরেখার দূরত্বকে সাধারণভাবে হরফের উচ্চতা (letter height বা corps size) বলে ধরা যেতে পারে। রোমক হরফ ভূমিরেখার উপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে; বাংলায় কিন্তু হরফগুলো মাত্রারেখা থেকে ঝুলে থাকে; এবং অনেকক্ষেত্রেই হরফের নিম্নাংশ ভূমিরেখা ছোঁয় না। এ কারণে বোধহয় ফিওনা জি ই রস (Fiona GE Ross) তার মুদ্রিত বাংলা হরফ ও তার বিবর্তন (The Printed Bengali Character and its Evolution) বইয়ে একে বেসলাইন না বলে নোশ্যনাল (notional) বেসলাইন বা ধারণাগত বা ধরে-নেওয়া ভূমিরেখা বলেছে।

হরফ সাধারণত একটি অদৃশ্য চতুষ্কোণের মধ্যে বসানো থাকে। এবং এই চতুষ্কোণের দু'পাশে খানিকটা জায়গা ছেড়ে তারপর হরফটি বসে। এই চতুষ্কোণটি ছবিতে লাল রঙে আঁকা হয়েছে। আর হরফটি বসানো আছে সবুজ দু'টি দাগের মাঝে। এই লাল দাগ থেকে সবুজ দাগের ইংরেজি নাম সাইডবেয়ারিং (sidebearing), বাংলায় হতে পারে পার্শ্বস্থান। দু'পাশের পার্শস্থান বাদ দিলে বাকি জায়গা যেখানে হরফ বসানো থাকে তাকে হরফের মূল প্রস্থ বলা যায়। পাশাপাশি দু'টি হরফের পার্শ্বস্থান মিলে ধরা হয় দু'টি হরফের মাঝে ফাঁক।

1 comment:

Bangla klm said...

আপনার লেখায় মনে হয়েছে বাংলা হরফ চতুষ্কোণ, কিন্তু বস্তুত বাংলা হরফ ‎আয়তাকার৤ তাই বাংলা হরফ যদি পাশের দিকে টেনে বাড়ানো যায় তাহলে তা ‎দেখতে খারাপ লাগে না, কিন্তু উপরের দিকে টেনে বাড়ালে তা বিসদৃস হয়ে ‎ওঠে৤ ঋ,ক,ঝ,ধ,ব,র ইত্যাদি হরফগুলি ত্রিভুজাকৃতি, অআউঊওঔ,ঙ,ড,ত,ভ,ড় ‎হরফগুলি বৃত্তাকার, বা এর মধ্যে বৃত্তাভাস আছে৤ আসলে কোনও একটি ‎নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বাংলা হরফের নেই৤ তবে প্রধানত তা আয়তাকার৤ এ সম্পর্কে ‎দয়া করে আপনার অভিমত জানাবেন৤ ‎
মনোজকুমার দ. গিরিশ কোলকাতা ১৬/০১/২০১১ ‎
manojkumardgirish@yahoo.com