বাংলায় এ-কার দু'টি, দৃশ্যত। শুরুতে মাত্রা ছাড়া এ-কার শব্দের প্রথমে এবং মাত্রাসহ এ-কার মাঝে বসে। বাংলার হরফযোজনার এ-ই নিয়ম। কম্পিউটারের বাংলা লেখার সময়ও এই হাত-কম্পোজ-এর যুগের একটি নিয়মই এখনও মানা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে ছাপানো তার লেখায়, বিশেষত গানে, একটি নিয়ম মানা হত, এ-র বিবৃত উচ্চারণের (অ্যা) জন্য শব্দের প্রথমে মাত্রাসহ এ-কার বসানো হত।
বুদ্ধদেব বসুর লেখায়ও তেমন দুয়েকটি ব্যাপার দেখা যায়। তার প্রচেষ্টা ছিল হ-এ য-ফলার দু'রকম ব্যবহারের: য-ফলা খানিকটা ছোট হয়ে হ-এর গায়ে লাগানো রূপটি ব্যবহৃত হত সংস্কৃত শব্দ যেখানে জ-ঝ-এর উচ্চারণ সেখানে, যেমন সহ্য শব্দে; আবার তদ্ভব বা বিদেশি শব্দ যেখানে য-ফলা অ্যা-কারের ভূমিকা পালন করে সেখানে য-ফলা একটু বড় হয়ে হ-এর থেকে একটু দূরত্বে বসত, যেমন হ্যাঁ, হ্যাপা বা হ্যালসিঅন শব্দে। তার আরও একটি ব্যবহার বেশ কাজের এবং চোখে পড়বার মত। যেহেতু বইয়ে প্রতি পাতায় উপরের সাদা প্রান্তের পরিমাপ একই, তাই সাধারণভাবে দুই স্তবকের মাঝে ফাঁক থাকলেও কখনও স্তবক নতুন পাতায় শুরু হলে তার প্রথম চরণটি ইন্ডেন্ট (একটু ডানে সরিয়ে) করে ছাপানো হত, যেন স্তবকের শুরু বুঝতে অসুবিধা না হয়।
বুদ্ধদেবের ইলেক চিহ্নের ব্যবহার এখন অনেকাংশে উঠে গেলেও, ব্যবহার অন্য জায়গায়ও দেখা গেছে। রবীন্দ্রনাথের দুই এ-কারের ব্যবহার বা বুদ্ধদেবের হ-এ য-ফলার ব্যবহার তাদের লেখার ছাপাতেই সীমাবদ্ধ। নতুন গজিয়ে ওঠা অনেক প্রকাশনা সংস্থার অনেকেই, বিশেষত কম্পিউটারের ভিড়ে ছাপাখানার অনেক ছোটখাট নিয়ম হারিয়ে যাওয়ার যুগে, হয়ত জানে না এরকম হরফের এরকম ব্যবহার কখনও ছিল।
No comments:
Post a Comment