অর্থের অন্তর একটি সাধারণ ঘটনা। যে কোনও ভাষাতেই। ইংরেজিতে meat বলতে একসময় কেবল খাদ্যকে বোঝাত এবং যেহেতু মাংসই তখন প্রধান খাদ্য ছিল, অনেক পরে এসে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় মাংস। খাদ্য অর্থের ছোঁওয়া এখনও sweetmeat বা মিষ্টান্ন শব্দে থেকেই গেছে। সংস্কৃতে এখনও মৃগ শব্দের অর্থ যে সবসময় হরিণ তা নয়। শব্দটির পুরনো এবং এখনও প্রচলিত একটি অর্থ পশু, যে কোনও পশু। মৃগপক্ষিন্ অর্থাৎ পশু এবং পাখিসমূহ। মৃগয়া বা বন্য পশু শিকার। অর্থ পাল্টে বাংলায় একমাত্র অর্থ হরিণ। অনেকেই গরুকে গোরু লিখে থাকে। এই গোত্রেরই একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সংস্কৃতে গোরূপ শব্দের অর্থ গোরুসদৃশ বা গোরুর মত। অর্থাৎ গোরুর মত যে কোনও পশু। সেখান থেকে প্রাকৃতে গোরুঅ এবং তার থেকে বাংলা গোরু বা গরু। অর্থ পাল্টে কেবলই গো, রূপ উধাও।
শব্দের এই অর্থ পাল্টানোর ব্যাপাটাকে ভাষাতত্ত্বে অর্থসংকোচ বা narrowing of meaning বলা হয়। কোনও শব্দ এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় প্রবেশ করার সময়ও প্রায়ই অর্থের সংকোচ ঘটে। বাংলা মোরগ অর্থ কুক্কুট বা কুঁকড়া। শব্দটি ফারসি মুর্গ্ (مرغ) থেকে আগত; পুরনো ফারসিতেও তাই, পহলবিতে মুরু (mūrū), জেন্দাবেস্তায় মেরেগা (meregha), খানিকটা সংস্কৃতের মৃগের (मृग) সাথেও সম্পর্কিত। শব্দটির আদি অর্থ যে কোনও পাখি, স্ত্রী বা পুরুষ, যদিও জন শেক্সপিয়ারের ফারসি অভিধানে মুরগা (مرغا) অর্থ কুক্কুট। ফারসিতে গৃহপালিত পাখিদের বলা হয় মুর্গ-ই-খানগি (مرغ خانگي), পানির পাখিদের বলা হয় মুর্গ-আবি (مرغابی), ইত্যাদি। বাংলায় মোরগ বলতে পুরুষ বোঝায়; কখনও বা আ-যোগে মোরগা বা মুরগা, বিশেষত আঞ্চলিক ভাষায়। আর ই-যোগে মুরগি হলে তা স্ত্রীলিঙ্গ। হিন্দি এবং উর্দুতেও তেমনই।
1 comment:
অর্থের সংকোচন যেমন হয়, তেমনই প্রসারণও হতে পারে। ইংরেজি hound এবং dog শব্দের ইতিহাস মনে আসে। আদতে "hound" (বা প্রাচীন ইংরেজিতে "hund") ছিল যেকোনও কুকুর, আর "dog" (প্রাচীন ইংরেজিতে "docga") ছিল একরকম বিশেষ শক্তিশালী কুকুর যা শিকারের সঙ্গী হিসাবে ব্যবহার হত। পরবর্তীকালে অবশ্য hound-এর অর্থসংকোচ হয়েছে, আর dog-এর হয়েছে অর্থবিস্তার।
ইংরেজির নিকট আত্মীয় জার্মানে কিন্তু আজও Hund যেকোনও কুকুর, আর Dogge এক রকম বিশেষ শক্তিশালী জাতের কুকুর।
Post a Comment