Thursday, July 27, 2006
বাংলার না-চলা বানানো হরফ
বাংলায় বিভিন্ন সময় প্রয়োজন মনে ক'রে, দু'য়েক বার অপ্রয়োজনেও, হরফ বানানো হয়েছে, দু'বাংলায়ই, যদিও সেগুলো চলেনি, কিংবা ব্যবহৃত হয়েছে যারা বানিয়েছে তাদের লেখায়, তাও দু'য়েকবারের বেশি নয়। অনেকে চেষ্টা করেছে এ-কার পরে উলটে লেখার। যোগেশ্চন্দ্র বিদ্যানিধি এদের মধ্যে অগ্রগণ্য। পবিত্র সরকার অ্যা ধ্বনির জন্য এ-র পেট কেটে একটি হরফ বানিয়েছিল, এর কারের রূপটি ছিল এ-কারের মতই, কেবল পেটের কাছে প্যাঁচ-খাওয়া। পলাশ বরন পাল এ এবং কার দুটোরই পেট কেটে দু'টি হরফ বানিয়েছে। বাংলাদেশে ছবির শেষ হরফ দু'টির প্রস্তাব করেছিল মুহম্মদ ফিরদৌস খান, একটি অন্তস্থ ব-এর জন্য, যেন হাওয়া হিন্দির মত দেবনাগরী হরফে हावा লেখা যায়, এবং ও-কারের জন্য প্যাঁচ-খাওয়া উলটানো এ-কার যা শব্দের পরে বসানোর জন্য। অনেকে আবার দেবনাগরী থেকে এ-কার এবং ও-কার, বা ঔ-কারের ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিল। কিন্তু কোনও নতুন হরফই চলে নি। দু'য়েক ক্ষেত্রে, যেমন অভিধান রচনায়, হয়ত কাজে এসেছে বা আসার কথা এসব নতুন হরফের, তবে যারা এর প্রচলনের চেষ্টা করেছিল তারাও তাদের আর কোনও লেখায় এসবের ব্যবহার করে নি।
Tuesday, July 18, 2006
বাংলার অঙ্কপাতন
দশগুণের বাংলা মতে গণনার জন্য আঠারটি ঘর রয়েছে — একক, দশক, শতক, হাজার বা সহস্র, অযুত, লক্ষ, নিযুত, কোটি, অর্বুদ, পদ্ম, খর্ব, নিখর্ব, মহাপদ্ম, শঙ্কু, জলধি, অন্ত্য, মধ্য, পরার্ধ। প্রতিটি ঘর আগের ঘরের মানের দশগুণ। কিন্তু কোটির পরের শব্দগুলি ব্যবহার করা হয় না। আর পড়ার সময় অযুত, নিযুত ও কোটির পরের শব্দগুলি ধরা হয় না। কোটির পরের সব ঘরের সংখ্যা মিলে কোটি, লক্ষ ও নিযুত সব মিলে লক্ষ আর হাজার আর নিযুত মিলে হাজার ধরা হয়। অঙ্কের ডানের দিকের তিন সংখ্যা পর এবং তার পর দুই সংখ্যা পর পর কমা বসিয়ে, পড়াটা সহজ করাই নিয়ম, যেমন ৫২,৯৭,৩১,৭১৫। তবে অনেক সময় দুই বা তিন অঙ্কের মাঝখানের কমার সাথে ভুল করার সম্ভাবনা দূর করার জন্য কমার জায়গায় হসন্ত চিহ্ন ব্যবহার করার নিয়মও আছে, যেমন, ৫২্৯৭্৩১্৭১৫। আজকালের অনেকেই হসন্ত চিহ্নের এই ব্যবহারে একটু বিচলিত হতে পারে। তবে নিয়মটা কিন্তু ছিল।
Saturday, July 15, 2006
বেং এবং ভ্যাক
সেই ছোটবেলায় পশ্চিম বাংলার আনন্দমেলায় পবিত্র সরকারের একটি লেখায় পড়েছিলাম। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক, যশোরের লোক, বাংলা পড়ায় এম এ ক্লাসে। একদিন পড়াচ্ছিল বিদ্যাপতি:
কুলিশ শত শত পাত মোদিত,
ময়ূর নাচত মাতিয়া;
মত্ত দাদুরী, ডাকে ডাহুকি—
ফাটি যাওত ছাতিয়া।
হঠাৎ এক ছাত্র জিজ্ঞেস করল, দাদুরী মানে কি? শিক্ষক বিরক্ত। এম এ ক্লাসের বাংলার ছাত্রের অর্থটি জানা থাকবার কথা। তবুও শিক্ষক উত্তর দিল, বেং। ছাত্রের দ্বিতীয় প্রশ্ন, বেং মানে কি? শিক্ষক রীতিমত হতবাক। তবুও উত্তর এল, ভ্যাক। ছাত্র বে-বাক।
বাংলায় এ এবং অ্যা এই দুই স্বরই লেখা হয় বেশিরভাগ সময় এ দিয়ে। অনেক আগের রীতি। অনেক সময় আবার নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনাও হয়েছিল। তবে কোনওটিই টিকতে পারে নি। বাংলায় এ-কার দুটি, শুরুতে মাত্রা ছাড়া, যা বসে শব্দের শুরুতে, আর মাত্রা সহ যা বসে মাঝে এবং শেষে। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রনাথের বইয়ে শব্দের শুরুতে মাত্রাসহ এ-কারের অর্থ উচ্চারণটি হবে অ্যা দিয়ে। ব্যাপারটি কেবল বিশ্বভারতীর রবিঠাকুরের বইয়েই থেকে যায়। যোগেশচন্দ্রবিদ্যানিধি, পবিত্র সরকার আর হালে পলাশ বরণ পাল সহ অনেকেই নতুন হরফের প্রচলনের চিন্তা করেছে। তাদের ব্যবহার আর হয়ে ওঠে নি। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে নতুন হরফের কথা ভাবা হয়েছিল, কাজ হয়ে ওঠে নি। নিজের বাড়িতে বসে টাকা বানালে তা বাজারে চলে না।
কুলিশ শত শত পাত মোদিত,
ময়ূর নাচত মাতিয়া;
মত্ত দাদুরী, ডাকে ডাহুকি—
ফাটি যাওত ছাতিয়া।
হঠাৎ এক ছাত্র জিজ্ঞেস করল, দাদুরী মানে কি? শিক্ষক বিরক্ত। এম এ ক্লাসের বাংলার ছাত্রের অর্থটি জানা থাকবার কথা। তবুও শিক্ষক উত্তর দিল, বেং। ছাত্রের দ্বিতীয় প্রশ্ন, বেং মানে কি? শিক্ষক রীতিমত হতবাক। তবুও উত্তর এল, ভ্যাক। ছাত্র বে-বাক।
বাংলায় এ এবং অ্যা এই দুই স্বরই লেখা হয় বেশিরভাগ সময় এ দিয়ে। অনেক আগের রীতি। অনেক সময় আবার নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনাও হয়েছিল। তবে কোনওটিই টিকতে পারে নি। বাংলায় এ-কার দুটি, শুরুতে মাত্রা ছাড়া, যা বসে শব্দের শুরুতে, আর মাত্রা সহ যা বসে মাঝে এবং শেষে। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রনাথের বইয়ে শব্দের শুরুতে মাত্রাসহ এ-কারের অর্থ উচ্চারণটি হবে অ্যা দিয়ে। ব্যাপারটি কেবল বিশ্বভারতীর রবিঠাকুরের বইয়েই থেকে যায়। যোগেশচন্দ্রবিদ্যানিধি, পবিত্র সরকার আর হালে পলাশ বরণ পাল সহ অনেকেই নতুন হরফের প্রচলনের চিন্তা করেছে। তাদের ব্যবহার আর হয়ে ওঠে নি। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে নতুন হরফের কথা ভাবা হয়েছিল, কাজ হয়ে ওঠে নি। নিজের বাড়িতে বসে টাকা বানালে তা বাজারে চলে না।
Sunday, July 09, 2006
ফ এবং জ এর দুই উচ্চারণ
মান্য বাংলা উচ্চারণে ফ স্পৃষ্ট এবং জ ঘৃষ্ট ধ্বনি হিসেবে ধরা হয়। দু'টি উচ্চারণেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসা বাতাস বাধা পেয়ে ধাক্কা খেয়ে শব্দ তৈরি করে। তবে কিছু বাংলাভাষীর কথায় ফ উস্ম ধ্বনি, জ-ও। বিশেষত চট্টগ্রাম, নোয়াখালি বা সিলেটের দিকে। শিক্ষিত অনেকেই বিশেষ করে ফ-কে উস্ম ধ্বনি হিসেবে উচ্চারণ করে, সাধারণত বিশেষ কিছু শব্দে, যেমন, ফুফা, যদিও শব্দটি ফুপা, এবং দুফুর, যদিও শব্দটি দুপুর। তারপরও উস্ম ধ্বনির মত করে, ইংরেজির এফ এবং জেড-এর মত, উচ্চারিত হয় ফ এবং জ, খোদা হাফেজ বলতে গিয়ে, শিক্ষিত কি অশিক্ষিত সবার বুলিতেই।
Tuesday, July 04, 2006
বাংলায় জ়েড-এর রূপ
বাংলায় দন্তমূলীয় উস্ম, ইংরেজিতে যা জ়েড-দিয়ে প্রকাশ করা হয়, তার কোন রূপ নেই। অনেক আগে বুদ্ধদেব বসুকে বানাতে হয়েছিল নতুন অক্ষর, জ-এর নিচে এক ফোঁটা, অর্থাৎ ইংরেজি জ়েড; আর জ-এর নিচে দুই ফোঁটা, অর্থাৎ ইংরেজি pleasure-এর s (জ̤), ডাঃ জিভাগো অনুবাদ করতে গিয়ে। মাঝে অনেক বইতে অগ্র, পার্শ্ব, নিম্ন বা পশ্চাৎ ফোঁটা, ইউনিকোডে যাকে নুকতা বলা হয়, ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষত গবেষণার বই বা অভিধানে, কিন্তু তার চলন তেমন একটা ঘটে নি। মাঝে মাঝে ভারতীয় দেশ পত্রিকায় জ-এর নিচে ফোঁটার ব্যবহার দেখা যেত, এখন তা পাকাপাকিভাবে রাজত্ব করছে। নিউজ়িল্যান্ডে গিয়ে বালজ়াকের লেখা পড়ে সময় কাটাতে ভালোই লাগবে। তবে এর ব্যবহার কোনওভাবে বাংলায় আত্মীকৃত ফারসি, আরবি, পর্তুগিজ ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রে ব্যবহার না করাই ভালো। যদিও অভিধানে তা করা যেতেই পারে।
Subscribe to:
Posts (Atom)