খানিকটা আড়ষ্ট বাক্যকে (গেল পোস্টিং দ্রষ্টব্য) সোজা করে অনুজ বন্ধু লিখে পাঠাল --- 'আকবর ঊষাকালে বৃহত্ ঐরাবতে দিল্লীর অর্ধেক প্রদক্ষিণ করতঃ হঠাত্ স্বগোতক্তি করিলেন এই ঢোল পাখোয়াজ সঙ্গীত আর সৌরভ মন্দ্রিত আড়ম্বরপূর্ন রঙিন জীবনের ছত্রতলে যে বিষণ্ণ দারিদ্র তাহা কি মোগল সাম্রাজ্যের ঈষত্ ঔদাসীন্য, প্রচলিত বৈদেশিক নীতি নাকি বারভুঁইঞার সহিত পুরাণো এবং আত্মঘাতী যুদ্ধের ফসল?' সাধু রীতির বাংলা, সব হরফ নেই। পরের দিন খানিকটা পরিবর্তন --- 'আকবর ঊষাকালে বৃহত্ ঐরাবতে দিল্লীর অর্ধেক প্রদক্ষিণ করতঃ হঠাত্ স্বগোতক্তি করিলেন এই ঢোল পাখোয়াজ সঙ্গীত আর সৌরভ মন্দ্রিত আড়ম্বরপূর্ন রঙিন জীবনের ছত্রতলে যে বিষণ্ণ দারিদ্র তাহা কি মোগল সাম্রাজ্যের ঈষত্ ঔদাসীন্য, প্রচলিত বৈদেশিক নীতি নাকি বারভুঁইঞার সহিত পুরাণো এবং আত্মঘাতী যুদ্ধের ফসল?'
চলতি বাংলায় লিখতে গিয়ে খানিকটা আড়ষ্টতা আর এড়ানোই যায় না। --- 'আষাঢ়ের এক সকালে ঈষান কোণে মেঘের আড়ম্বর এবং সবুজে ঋদ্ধ এই বনভূমির নির্জনতা চিরে ঐরাবতের ডাকে মনে হল ঔদাসীন্যে ঝরে পড়া মাটির উপর শুকনো পাতার ফাঁকে জমে থাকা ঢের পুরনো যত গভীর দুঃখ হঠাৎ বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে অন্ধকার, ঊষর ও নঞর্থক জীবনে রঙধনু এনে দেবে।' সব হরফই আছে। হয়ত আর কয়েকবার এদিক ওদিক করলে একটু ভাল হতে পারে। খুব একটা না। কারণ বাংলায় শুদ্ধ ঞ দিয়ে গুটি কতক শব্দ আছে --- ভুইঞা বা ভুঞা, মিঞা, ডেঞে আর নঞর্থক। বাকি আরও শ' খানেক শব্দ পাওয়া যাবে যার ব্যবহার প্রচলিত বর্তমান বাংলায় নেই। সেগুলো মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সম্পদ।
Tuesday, June 26, 2007
Sunday, June 17, 2007
সব হরফসমেত বাংলা বাক্য
ইংরেজিতে সব হরফসমেত এক বাক্যের সঙ্খ্যা অনেক, এবং সব চেয়ে প্রচলিত বাক্যটি হল A quick brown fox jumps over the lazy dog । বাংলায়ও এমন একটি বাক্য আছে, খুব প্রচলিত নয়। 'বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত নিখুঁত গল্পটি অর্ধেক বলতেই ঋতু ভুঁইঞা আর ঐন্দ্রিলা হৈ-হৈ করে উঠল --- ওঃ, থামো বুঝেছি বড্ডো পুরাণো ঢঙের গল্প --- মূঢ় আড়ম্বর ও আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি --- এ নীতি যার না?' বাক্যটিতে বাংলা বর্ণমালার প্রায় সব হরফই আছে, যদিও রচনাটা একটু আড়ষ্ট। বাক্যটি পাওয়া যাবে মনোজকুমার মিত্রের লেখা প্রবন্ধ "বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং বর্ণমালা"-য়। লেখাটি ছাপা হয়েছিল কলকাতা থেকে ১৯৯৩ সালে বের হওয়া পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বই 'প্রসঙ্গ বাংলাভাষা'-য়। রোমান হরফে লেখা হয় এমন ভাষায়, বিশেষত ইংরেজিতে, হরফযোজনা বা বর্ণবিন্যাসের উদাহরণে একটি লাতিন বাক্যের ব্যবহার করা হয় --- Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur. Excepteur sint occaecat cupidatat non proident, sunt in culpa qui officia deserunt mollit anim id est laborum। প্রায় পনেরশ' খ্রিস্টাব্দ থেকে ছাপার উদাহরণে ইউরোপে এই বাক্যের ব্যবহার করা হতে থাকে। এতে করে বাক্যের বিষয়ের চেয়ে হরফের চেহারার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়, কারণ ভাষাটা লাতিন। এই বিবেচনায় বাংলায় এমন একটি বাক্য বা অনুচ্ছেদের ব্যবহার করতে হলে তা সংস্কৃত, প্রাকৃত অথবা পালি থেকে নেওয়া উচিত। কয়েকদিন আগে অনুজ এক বন্ধুর প্রশ্ন ছিল, বাংলার হরফযোজনার উদাহরণ হিসেবে এমন কোনও বাক্য বা অনুচ্ছেদের ব্যবহার করা হয়, বা যায়, কি না? এখনও পর্যন্ত এমন কোনও কিছু চোখে পড়ে নি। বাংলা টাইপ ফাউন্ড্রির নমুনা বইয়ে দেখা যায় তারা বিভিন্ন লেখার অংশ হরফের চেহারা দেখাতে ব্যবহার করেছে।
Friday, June 15, 2007
সহসা জ্যৈষ্ঠে মধুমাস
লিচু এবং আম বাজারে আসতে না আসতেই, ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম আলোর একটি লেখার শুরুটা ছিল মোটামুটি এরকম যে যদিও মধুমাস মানে চৈত্র মাস, আমরা মধুমাস বলতে জ্যৈষ্ঠকেই বুঝব। অনেকটা গায়ের জোরেই। দিন কয়েক পরেই ঢাকার বাকি বাংলা দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও মৌসুমী ফলের উপর লেখায় অবলীলায় পাওয়া যেতে থাকল, এবং এখনও যাচ্ছে, যে জ্যৈষ্ঠ মাসকেই নাকি বাংলায় মধুমাস বলা হয় কারণ এমাসে মধুরসে পরিপূর্ণ ফলের সমাহার দেখা যায়। প্রথম আলো কেবল একদিন দায়সারা গোছের সাফাইমত গেয়ে যা শুরু করে দিল তা দিন সাতেকের মধ্যেই বাংলা ভাষার হাজার বছরের সম্ভার বলে মনে হতে লাগল। অনেকটা পত্রিকাগুলোর 'শীঘ্র' অর্থে 'সহসা'র ব্যবহারের মত। ভাষার ব্যবহারে রক্ষণশীল এবং উদারপন্থীদের মধ্যে টানাটানির মাঝেই ভাষার পরিবর্তন। তবুও লেখকদের একটু দায়িত্ববোধ বোধ করি থাকা উচিত।
Thursday, June 14, 2007
প্রোশ্নো না প্রোস্নো
বাংলা ব্যাকরণে পড়ানো হয় শ-এর (শ-উচ্চারণের) সাথে ত, থ, ন, র এবং ল যুক্ত হলে তার উচ্চারণ সংস্কৃত স-এর (যা কিনা ইংরেজি -এর) মত হবে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, চালর্স ফারগুসন এবং আরও অনেকের অন্তত তাই মত। বেশিরভাগ বাংলা শব্দের ক্ষেত্রে তাই দেখা যায়। আর একারণেই বাংলায় সংস্কৃত স-এর উচ্চারণকে আলাদা ধ্বনিমূল হিসেবে না ধরে শ-উচ্চারণ ধ্বনিমূলের প্রকারভেদ হিসেবে ধরা হয়, যা কিনা তার পারিপার্শ্বিকতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যদিও একালের কয়েকজনের মতে সংস্কৃত স-উচ্চারণকে আলাদা ধ্বনিমূল হিসেবে ধরাই ভাল (বোধ করি তাই ভাল, বাংলায় বিদেশি ধ্বনিমূল হিসেবে হলেও)। অর্থাৎ বাংলা শব্দে স-উচ্চারণ এবং শ-উচ্চারণ একই, শ-এর মত, কেবল পরে ত, থ, ন, র এবং ল থাকলে তার উচ্চারণ স-এর মত হবে। যেমন, সকল, সকাল, শালিক, শীষ, আসল, আসর, বিশাল, কুশল, মাস, রাস, রাশ, কুশ, ইত্যাদি।
যুক্ত বর্ণের ক্ষেত্রে পাশাপাশি ধ্বনি থাকলেও তাই, যেমন, অস্ত, স্থিত, স্নান, শ্রী, শ্লীল (যদিও অনেকেই এখন এর নঞ্র্থক শব্দটিকে অ-শ্-লিল্ উচ্চারণ করে, যা তাদের মতে শ্লীল শোনালেও অনেকের মতে খানিকটা অশ্লীল)। নাস্তা (বিকল্প বানানে নাশতা) অনেক আগে রাস্তার মত করে না-স্-তা উচ্চারিত হলেও, অনেকেই না-শ্-তা উচ্চারণ করে (কার যেন লেখায় পড়েছিলাম এই উচ্চারণ উর্দু প্রভাবিত, বিশেষ করে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হবার পরের পূর্ব পাকিস্তানেই এটি বেশি ঘটত এবং এখনও বাংলাদেশে, হয়ত উর্দু অধ্যুষিত কলকাতাতেও, কিছুটা ঘটে)। বেশ পুরনো বাংলা সিনেমায় শোনা যায় প্রো-স্-নো, আবার এখন বেশির ভাগই শোনা যায় প্রো-শ্-নো। বাংলা ভাষার উচ্চারণ-ভিত্তিক নিরীক্ষা কখনই হয়নি, তবে হওয়া উচিত, অন্তত কয়েক দশক পর পর। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত উচ্চারণ অভিধানে দেওয়া আছে প্রো-স্-নো। ভারতের অভিধানে প্রো-শ্-নো এবং প্রো-স্-নো দু'ই।
যুক্ত বর্ণের ক্ষেত্রে পাশাপাশি ধ্বনি থাকলেও তাই, যেমন, অস্ত, স্থিত, স্নান, শ্রী, শ্লীল (যদিও অনেকেই এখন এর নঞ্র্থক শব্দটিকে অ-শ্-লিল্ উচ্চারণ করে, যা তাদের মতে শ্লীল শোনালেও অনেকের মতে খানিকটা অশ্লীল)। নাস্তা (বিকল্প বানানে নাশতা) অনেক আগে রাস্তার মত করে না-স্-তা উচ্চারিত হলেও, অনেকেই না-শ্-তা উচ্চারণ করে (কার যেন লেখায় পড়েছিলাম এই উচ্চারণ উর্দু প্রভাবিত, বিশেষ করে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান হবার পরের পূর্ব পাকিস্তানেই এটি বেশি ঘটত এবং এখনও বাংলাদেশে, হয়ত উর্দু অধ্যুষিত কলকাতাতেও, কিছুটা ঘটে)। বেশ পুরনো বাংলা সিনেমায় শোনা যায় প্রো-স্-নো, আবার এখন বেশির ভাগই শোনা যায় প্রো-শ্-নো। বাংলা ভাষার উচ্চারণ-ভিত্তিক নিরীক্ষা কখনই হয়নি, তবে হওয়া উচিত, অন্তত কয়েক দশক পর পর। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত উচ্চারণ অভিধানে দেওয়া আছে প্রো-স্-নো। ভারতের অভিধানে প্রো-শ্-নো এবং প্রো-স্-নো দু'ই।
Monday, June 11, 2007
বাংলা দুই ব, বর্গ্য এবং অন্তস্থ
বাংলার এক ব কালের স্রোতে হারিয়ে যায়, সাধারণ লেখায়, তবে ব্যাকরণের আলোচনায় নয়; কারণ দুই ব দেখতে একই রকম। সিদ্ধান্ত : হয় একটি ব লুপ্ত হয়েছে, অথবা দুই ব একীভূত হয়েছে। প্রথমটি সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঠিক, তবে দ্বিতীয়টি ব্যাকরণের লেখায় বা দেখায় ঠিক, কিন্তু ধারণায় ভুল, কারণ এখনও সন্ধিতে দুই ব-এর অস্তিত্ব বিদ্যমান। একারণেই চলন্তিকা অন্তস্থ ব-আদি শব্দ তারকা চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করেছে। যে ব-টি লুপ্ত হয়েছে তার একটা ব্যবহার এখনও কারও কারও লেখায় দেখা যায়।
অনেকে পুরনো দিনের মত এখনও লেখে নবেম্বর (November) বা অব (of)। ইংরেজি v-এর বাংলা সগোত্র হল সেই হারিয়ে যাওয়া অন্তস্থ ব। আর এ কারণেই নবেম্বর। কিন্তু অব কেন? অফ না হয়ে। ইংরেজি of-এর মার্জিত উচ্চারণ হল প্রায় ov-এর মত, যা বাংলায় অব দিয়ে প্রকাশ করা ভাল। আর বাংলা ভ-এর ইংরেজি সগোত্র হল bh, v নয়। অনেকেই এখন ভাষা ইংরেজি বানানে লেখেন vasha; পরিশীলিত মনের মার্জিত বানান bhasha-ই বোধ করি ভাল হবে।
অনেকে পুরনো দিনের মত এখনও লেখে নবেম্বর (November) বা অব (of)। ইংরেজি v-এর বাংলা সগোত্র হল সেই হারিয়ে যাওয়া অন্তস্থ ব। আর এ কারণেই নবেম্বর। কিন্তু অব কেন? অফ না হয়ে। ইংরেজি of-এর মার্জিত উচ্চারণ হল প্রায় ov-এর মত, যা বাংলায় অব দিয়ে প্রকাশ করা ভাল। আর বাংলা ভ-এর ইংরেজি সগোত্র হল bh, v নয়। অনেকেই এখন ভাষা ইংরেজি বানানে লেখেন vasha; পরিশীলিত মনের মার্জিত বানান bhasha-ই বোধ করি ভাল হবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)