দেশ পত্রিকায় অনেক আগে ছাপা একটি বিজ্ঞাপনে একটি নতুন যুক্তহরফের দেখা মিলেছিল — হেল্থ। আবারও ল-এ থ। তবে যুক্তাক্ষরটি যে বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছিল তা হাতে লেখা; কোনও ফন্টের অংশ নয়। তবুও তা যুক্তাক্ষরই এবং বিধিবহির্ভূত। বিদেশি শব্দ লিখতে গিয়ে হসন্ত বা হলন্তের একটু চিন্তিত ব্যবহার করলেই নতুন যুক্তাক্ষর তৈরি করতে হয় না। হেল্থ কেয়ার না লিখে হেল্থ বা হেল্থ্ (দুটি হসন্ত একটু কেমন যেন দেখায়) কেয়ার লিখলেও স্বাস্থ্য সেবা বা পরিষেবাতে কোন দোষ হয় না।
Wednesday, April 23, 2008
Monday, April 21, 2008
লিখিবার আলমারি
মেজ বা লেখার জন্য ব্যবহার্য ছোট চৌকিকে নাকি বাংলায় 'লিখিবার আলমারি' বলা হয়। হত হয়ত। এখন তো চোখে পড়ে না। মনসিনিওর সেবাস্তিআঁউ রোদোল্ফো দালগাদো'র ইনফ্লুয়েন্সিয়া দো ভোকাবুলারিউ পোর্তুগেস এম লিঙ্গুয়াস আসিয়াতিকাস (Influência do vocabulario português em linguas asiáticas) এর ১৯৩৬ সালে ছাপানো আন্তনি হাভিয়ের সোআরেস-এর ইংরেজি অনুবাদ এশীয় ভাষায় পর্তুগিজ শব্দের প্রভাব (Portuguese vocables in Asiatic Languages)-এ তেমনটিই বলা আছে। বইটিতে হিন্দি থেকেও একই রকম উদাহরণ দেওয়া আছে: লিখনে কী আলমারী (लिखने की आलमारी)। যদিও আলমারি বলতে সাধারণত ইংরেজির almirah, cupboard বা closet-কেই বোঝায়। কোনও বাংলা অভিধানেই আলমারির চৌকি অর্থের দেখা মেলে না। বাংলার আলমারি এবং ইংরেজির almirah দুটি শব্দর উৎস এক: পর্তুগিজ armário।
Sunday, April 20, 2008
যুক্তাক্ষর: ল-এ স
দিনাজপুরে রেল স্টেশন থেকে একটু পশ্চিমে এগিয়ে রাস্তার দক্ষিণে ছোট একটা কাপড় ধোলাইয়ের দোকান। তার দরজার কাঠে লেখা 'এখানে ফল্স লাগানো হয়' — ল্ + স। অর্থাৎ আলগা কাপড়। যাই হোক, যুক্তাক্ষরটি নতুন, চোখে পড়ার মত আবার বাংলায় প্রচলিত যুক্ত হরফের তালিকার বাইরে। এই সময়ে বাংলা ইউনিকোড ফন্টের কারণে অনেক ধরণের যুক্তাক্ষরই লেখা যায়, যাওয়া উচিত কিনা তা যদিও বিতর্কের বিষয়। ফল্স বা ফল্স্ লিখলেই হত, যুক্তহরফের ঝামেলা না বাড়িয়ে।
Monday, April 07, 2008
জন মেন্ডিসের হরফ পরিবর্ধন
পরশুরামের দরকার পড়েছিল তারিণী কবিরাজের ভাষায় পূর্ববঙ্গীয় আমেজের; আর তাই ‘Zান্তি পারো না।’ হাসির গল্প বলে রোমক হরফের মিশেল দেওয়া। কিন্তু অভিধান বা গবেষণাধর্মী কাজে একটি বিশেষ নিয়মে ব্যবহার দেখা যায়। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানানের নিয়মে, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাজে এবং আরও অনেক জায়গায় পরিবর্ধিত হরফের ব্যবহার দেখা যায়। বিংশ শতকের শুরুর প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করে যে জ-এর নিচে ফুটকি জ় দিয়ে ইংরেজির জ়েড (z) বা আরবির জ়াল (ذ ,ز ,ض ,ظ) এবং সমধ্বনি বোঝানো হবে; বিকল্পে জ-এর পাশে নিচের দিকে ফুটকি, জ.। সুনীতিকুমার এবং জ্ঞানেন্দ্রমোহনেরও একই মত। তবে সুনীতিকুমারের পছন্দ পাশে ফুটকি, কারণ এতে করে নতুন হরফ বানাতে হত না; আর জ্ঞানেন্দ্রমোহনে পছন্দ নিচে ফুটকি।
বুদ্ধদেব বসু পরে জ-এর নিচে দুই ফুটকি দিয়ে, জ̤, এর ব্যবহার শুরু করে ফরাসি je (জ্য̤, আমি) বা রুশ жизнь (জি̤জ়ন্, জীবন) এর প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনি বোঝাতে। যদিও এই ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রমোহন এবং সুনীতিকুমারের বিধান ঝ় বা ঝ.। কিন্তু এরও বেশ আগে, আগের শতকের মাঝামাঝিতে, ১৮৫১ সালে কলকাতায় ছাপানো জন মেন্ডিসের কম্প্যানিঅন টু জনসন্'স ডিকশনারি: বেঙ্গলি অ্যান্ড ইংলিশ-এ এই হরফ পরিবর্ধনের একটি উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়। মেন্ডিসের অভিধানের একটি উল্লেখ করার মত বিষয় হল আরবি-ফারসি থেকে আসা শব্দে জ এবং জ় ধ্বনির বানানে পার্থক্য নির্দেশ, জ̤-এর নিচে দুই ফুটকি দিয়ে। ছবিতে উপরে আজি এবং আজিকার শব্দ দুটি বাংলার নিজের, আর নিচের আজি̤জ̤ এবং আজি̤ম শব্দ দুটি আরবি-ফারসির, জ-এর নিচে দুটি করে ফুটকি।
বুদ্ধদেব বসু পরে জ-এর নিচে দুই ফুটকি দিয়ে, জ̤, এর ব্যবহার শুরু করে ফরাসি je (জ্য̤, আমি) বা রুশ жизнь (জি̤জ়ন্, জীবন) এর প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনি বোঝাতে। যদিও এই ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রমোহন এবং সুনীতিকুমারের বিধান ঝ় বা ঝ.। কিন্তু এরও বেশ আগে, আগের শতকের মাঝামাঝিতে, ১৮৫১ সালে কলকাতায় ছাপানো জন মেন্ডিসের কম্প্যানিঅন টু জনসন্'স ডিকশনারি: বেঙ্গলি অ্যান্ড ইংলিশ-এ এই হরফ পরিবর্ধনের একটি উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়। মেন্ডিসের অভিধানের একটি উল্লেখ করার মত বিষয় হল আরবি-ফারসি থেকে আসা শব্দে জ এবং জ় ধ্বনির বানানে পার্থক্য নির্দেশ, জ̤-এর নিচে দুই ফুটকি দিয়ে। ছবিতে উপরে আজি এবং আজিকার শব্দ দুটি বাংলার নিজের, আর নিচের আজি̤জ̤ এবং আজি̤ম শব্দ দুটি আরবি-ফারসির, জ-এর নিচে দুটি করে ফুটকি।
Tuesday, April 01, 2008
আরবি-ফারসির র, বাংলায় ড়
আরবি বা ফারসির র বাংলায় ড় হয়ে যায়। সবক্ষেত্রে অবশ্যই নয়। তবে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে তার পুরোটা এখনও হয়ত জানা যায় নি। আপাতত দুটো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আজুড়ে বা আজাড়ে প্যাঁচাল, অর্থাৎ বেহুদা বা অত্যধিক বক্তৃতা — বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে আজুড়ে শব্দটার মূল ফারসি আজার (آزار, অর্থ অসুবিধা, বিরক্তি, উচ্ছৃঙ্খলা, ঝগড়া, অত্যাচার ইত্যাদি), সাথে বাংলা ইয়া প্রত্যয় যোগে আজাড়িয়া (ঢাকার ভাষায় প্রায়ই শোনা যায় আজাইরা, অপিনিহিতির উদাহরণ) এবং সেখান থেকে আজাড়ে, অভিশ্রুতি, এবং সেখান থেকে আজুড়ে। অনেক অভিধানে শব্দটি নেই আবার বাংলা একাডেমির বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে শব্দটি ব্যুৎপত্তি অন্যভাবে দেখানো হয়েছে; চলন্তিকা মতে যার জাড় (জড়) বা মূল নাই, অমূলক, যেমন আজাড়িয়া গল্প।
তেমনি ভাবে গোমড়া মুখ, অপ্রসন্ন, গুমট, মেঘাছন্ন অর্থে। ফারসিতে গুমরাহ্ (گمراه, অর্থ পথ-ভ্রষ্ট, বঞ্চিত, হতবুদ্ধি ইত্যাদি), অন্তত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে। বাঙ্গালা ভাষার অভিধান মত শব্দটি ফারসি গুমান (گمان, অর্থ মত, ধারণা, পছন্দ, চিন্তা, সন্দেহ, অবিশ্বাস ইত্যাদি, যা পহ্লবি গুমান gumān থেকে আগত) > হিন্দি গুমর (गुमर, অর্থ অভিমান, অহঙ্কার) থেকে ব্যুৎপন্ন।
বাংলার ফেঁকড়া বা ফ্যাঁকড়াও, মূল বিষয়ের আনুষাঙ্গিক বিঘ্ন অর্থে, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে আরবির ফিক়রাহ (فقرة, অর্থ চিহ্ন, উদ্দেশ্য ইত্যাদি) থেকে আগত। যদিও জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দটির উৎপত্তি হিসেবে তিনটি ভাষার শব্দ দেওয়া আছে, ওড়িয়া ফাঁকড়া (ଫାଁକଡ଼ା), সংস্কৃত ফর্ফরীক (फर्फरीक) আর অসমিয়া ফেরকেটা (ফেৰকেটা) । বাংলা একাডেমির অভিধানে আরবি শব্দের সাথে ওড়িয়া এবং সংস্কৃত শব্দদুটি দেওয়া আছে। আরবি থেকে এসে থাকলে শব্দটিতে র > ড় হতে পারে, কিন্তু চন্দ্রবিন্দুর কোন জায়গা দেখতে পাওয়া যায় না। হয়ত ওড়িয়া ফাঁকড়ার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে।
যদি আরবি-ফারসির ব্যুৎপত্তিগুলো ঠিক হয় তাহলে বলা যায় যে ফারসি বা আরবির র বাংলায় ড় হিসেবে দেখা যায়, ঠিক কতগুলো শব্দে তা বলা মুশকিল। তবে অভিধানগুলো ঘেঁটে দেখলে আরেকটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায় যে শব্দ ব্যুৎপত্তি নির্ধারণে বাংলায় অনেক কাজ করা বাকি।
তেমনি ভাবে গোমড়া মুখ, অপ্রসন্ন, গুমট, মেঘাছন্ন অর্থে। ফারসিতে গুমরাহ্ (گمراه, অর্থ পথ-ভ্রষ্ট, বঞ্চিত, হতবুদ্ধি ইত্যাদি), অন্তত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে। বাঙ্গালা ভাষার অভিধান মত শব্দটি ফারসি গুমান (گمان, অর্থ মত, ধারণা, পছন্দ, চিন্তা, সন্দেহ, অবিশ্বাস ইত্যাদি, যা পহ্লবি গুমান gumān থেকে আগত) > হিন্দি গুমর (गुमर, অর্থ অভিমান, অহঙ্কার) থেকে ব্যুৎপন্ন।
বাংলার ফেঁকড়া বা ফ্যাঁকড়াও, মূল বিষয়ের আনুষাঙ্গিক বিঘ্ন অর্থে, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে আরবির ফিক়রাহ (فقرة, অর্থ চিহ্ন, উদ্দেশ্য ইত্যাদি) থেকে আগত। যদিও জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দটির উৎপত্তি হিসেবে তিনটি ভাষার শব্দ দেওয়া আছে, ওড়িয়া ফাঁকড়া (ଫାଁକଡ଼ା), সংস্কৃত ফর্ফরীক (फर्फरीक) আর অসমিয়া ফেরকেটা (ফেৰকেটা) । বাংলা একাডেমির অভিধানে আরবি শব্দের সাথে ওড়িয়া এবং সংস্কৃত শব্দদুটি দেওয়া আছে। আরবি থেকে এসে থাকলে শব্দটিতে র > ড় হতে পারে, কিন্তু চন্দ্রবিন্দুর কোন জায়গা দেখতে পাওয়া যায় না। হয়ত ওড়িয়া ফাঁকড়ার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে।
যদি আরবি-ফারসির ব্যুৎপত্তিগুলো ঠিক হয় তাহলে বলা যায় যে ফারসি বা আরবির র বাংলায় ড় হিসেবে দেখা যায়, ঠিক কতগুলো শব্দে তা বলা মুশকিল। তবে অভিধানগুলো ঘেঁটে দেখলে আরেকটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায় যে শব্দ ব্যুৎপত্তি নির্ধারণে বাংলায় অনেক কাজ করা বাকি।
Subscribe to:
Posts (Atom)