কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটির ১৮১৯ সালে ছাপা ‘হার্লের অ্যারিথমেটিক: ফর দ্য ইউস অব বেঙ্গালি স্কুলস’ বা বাংলায় ‘গণিতাঙ্ক, পাঠশালার নিমিত্তে’ বইয়ে বর্তমানে প্রচলিত শব্দের পরিবর্তে কিছু আরবি এবং সংস্কৃত শব্দের দেখা মেলে। বইয়ে আছে,—
‘+ তেরিজের চিহ্ন এই; অর্থাৎ যে স্থানে এই চিহ্ন দেখিবা, সে সকল অঙ্কের তেরিজ করিতে হইবে জানিবা. ... যেমন ৫ + ৫ = ১০
- জমা খরচের চিহ্ন, .. যেমন ৫ - ৪ = ১
× পূরণের চিহ্ন, ... যেমন ৫ × ৫ = ২৫
÷ হরণের চিহ্ন, . . . যেমন ৮ ÷ ২ = ৪
= লব্ধের চিহ্ন, এই চিহ্ন সর্বত্রই ব্যবহার্য্য, যেমন ৫+৫ তেরিজ লব্ধ=১০।’
পূরণ, হরণ, লব্ধ এবং জমা খরচ বেশ বোঝা গেলেও তেরিজ শব্দটি বর্তমানে যথেষ্ট অচেনা। অথচ এক সময় এর বেশ প্রচলন ছিল। আরবি তা'রীজ় (تعريض, বিশেষ্য, বৃদ্ধি হওয় বা ঘটানো, জাহির করা, বিরোধিতা করা, আপত্তি করা, ইত্যাদি) এসেছে ʻআর্জ় (عرض, ক্রিয়াপদ, প্রশস্ত হওয়া বা করা, আর দ্বিতীয় অর্থ দেখানো বা পেশ করা) থেকে। জন টম্সন প্ল্যাট্স এবং জন শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানে শব্দটির দেখা মেলে। বাংলায় অর্থ পাল্টে গেছে।। তেরিজ কষা অর্থ অঙ্ক করা বা যোগফল বের করা। প্রমথ চৌধুরীতে আছে,— ‘ঠাকুরানি এখন আয়ব্যয়ের হিসাব তাঁর কাছে বুঝিয়ে দিতে চান; সেই জন্যই তাঁর তেরিজ খারিজ শেখা দরকার।’
তবে আরবির একই ধাতুমূল (عرض, আরজ) থেকে আসা আরেকটি শব্দকে বাংলার সম্পদ বলে চিনে নিতে কষ্ট হয় না মোটেও ,— আরজ, সাথে ফারসি গুজার (گذار, যে করছে এমন) অর্থাৎ আরজগুজার অর্থ আবেদনকারী, বা আরজ, সাথে ফারসি প্রত্যয় (ي, ই) অর্থাৎ আরজি ও আর্জি অর্থ আবেদনপত্র। উর্দুতেও আরজি একই অর্থে প্রচলিত।
No comments:
Post a Comment