এলাকাভেদে বর্ণমালার পঠনও ভিন্ন। অনেকে বাচ্চাদের মনে রাখার সুবিধার জন্য দ না ব'লে বলে হাঁটু-ভাঙ্গা দ কিংবা মূর্ধন্য ষ না ব'লে বলে পেট-কাটা মুর্ধন্য ষ। ক-এ ষ যুক্ত অনেক জায়গায় পুরনো রীতি অনুযায়ী ক্ষিয়; অনেকের কাছে ঙ হল উম্অ আর ঞ হল নিয়্অ। তবে বাংলার বর্ণমালার স্বরবর্ণের প্রথম দুই হরফের নাম নিয়ে বেশ মতভেদ আছে। সাধারণ ভাবে এগুলো স্বরে অ বা স্বরে আ; অন্তত ছোটদের তাই শেখানো হয়। ফারসি বা উর্দুর নিয়মে স্বর-এ-অ আ স্বর-এ-আ কিন্তু নয়। তাই ধারণা করা হয় ‘স্বরের অ’ এবং ‘স্বরের আ’-র বিকৃত রূপ স্বরে অ এবং আ। কেবল অ এবং আ বললেই চলে যদিও।
স্বর হরফ সাথে উচ্চারণ: অ বা স্বরের অ (/ɔ/ বা /ʃɔrer ɔ/); আ বা স্বরের আ (/ɑ/ বা /ʃɔrer ɑ/); হ্রস্ব ই (/rɔʃːo i/); দীর্ঘ ঈ (/dirgʱo i/); হ্রস্ব উ (/rɔʃːo u/); দীর্ঘ ঊ (/dirgʱo u/); ঋ (/ri/); ঌ (/li/); এ (/e/); ঐ (/oi/); ও (/o/); এবং ঔ (/ou/)। আর ব্যঞ্জন হরফ: ক (/kɔ/); খ (/kʰɔ/); গ (/gɔ/); ঘ (/gʱɔ/); ঙ (/uɔ̃/ বা /ũɔ̃/); চ (/tʃɔ/); ছ (/tʃʰɔ/); বর্গীয় বা বর্গ্য জ (/borgio/ বা /bɔrgo dʒɔ/); ঝ (/dʒʱɔ/); ঞ (/iɔ̃/ বা /ɪ̃ɔ̃/); ট (/ʈɔ/); ঠ (/ʈʰɔ/); ড (/ɖɔ/); ঢ (/ɖʱɔ/); মূর্ধন্য ণ (/murd̪ʱonːo nɔ/); ত (/t̪ɔ/); থ (/t̪ʰɔ/); দ (/d̪ɔ/); ধ (/d̪ʱɔ/); দন্ত্য ন (/d̪ɔnt̪o nɔ/); প (/pɔ/); ফ (/pʰɔ/); বর্গীয় বা বর্গ্য ব (/borgio/ বা /bɔrgo bɔ/); ভ (/bʱɔ/); ম (/mɔ/); অন্তঃস্থ য (/ ɔnt̪ɔst̪ʰo dʒɔ/); র (/rɔ/); ল (/lɔ/); তালব্য শ (/t̪ɑlobːo ʃɔ/); মূর্ধন্য ষ (/murd̪ʱonːo ʃɔ/); দন্ত্য স (/d̪ɔnt̪o ʃɔ/); হ (/ɦɔ/); ড-এ শূন্য বা বিন্দু ড় (/ɖɔ-e ʃunːo/ বা /bind̪u ɽɔ/); ঢ-এ শূন্য বা বিন্দু ঢ় (/ɖʱɔ-e ʃunːo/ বা /bind̪u ɽʱɔ/); অন্তঃস্থ য় (/ɔnt̪ɔst̪ʰo ɔ/); খণ্ড ত (/kʰɔnɖo tɔ/); ং-অনু্স্বার (/onuʃːɑr/); ঃ-বিসর্গ (/biʃɔrgo/); এবং ঁ-চন্দ্রবিন্দু (/tʃɔnd̪robind̪u/)।
অনেকে আবার ড় থেকে পৃথক করার জন্য র কে ব-এ শূন্য বা বিন্দু র বলে। স্বরের বর্ণাশ্রয়ী চিহ্নগুলোকে কার বলা হয়, যেমন, আ-কার, হ্রস্ব ই-কার, ইত্যাদি। বর্ণপূর্ব বর্ণাশ্রয়ী র-কে রেফ এবং আরও বেশ কিছু উত্তর-বর্ণাশ্রয়ী ব্যঞ্জনের নাম ফলা, যেমন, ন-ফলা, ল-ফলা, ব-ফলা, ইত্যাদি। ক-এ ষ যুক্ত হরফের নাম যুক্ত খ। বঙ্গহরফে সংস্কুত লিখতে গেলে আধা মাত্রার হ-এর মত দেখতে একটি হরফের ব্যবহার করতে হয়, ঽ। হরফটির দেখা মেলে পুরনো সাধু বাংলায়ও, যেমন ততোঽধিক। এর নাম অবগ্রহ, হরফের নিজস্ব কোনও উচ্চারণ নেই, কেবন সন্ধিজাত শব্দাদ্য অ-এর লোপ নির্দেশ করে।
Thursday, July 31, 2008
Monday, July 28, 2008
তেরিজ, আরবির আর বাংলার
কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটির ১৮১৯ সালে ছাপা ‘হার্লের অ্যারিথমেটিক: ফর দ্য ইউস অব বেঙ্গালি স্কুলস’ বা বাংলায় ‘গণিতাঙ্ক, পাঠশালার নিমিত্তে’ বইয়ে বর্তমানে প্রচলিত শব্দের পরিবর্তে কিছু আরবি এবং সংস্কৃত শব্দের দেখা মেলে। বইয়ে আছে,—
‘+ তেরিজের চিহ্ন এই; অর্থাৎ যে স্থানে এই চিহ্ন দেখিবা, সে সকল অঙ্কের তেরিজ করিতে হইবে জানিবা. ... যেমন ৫ + ৫ = ১০
- জমা খরচের চিহ্ন, .. যেমন ৫ - ৪ = ১
× পূরণের চিহ্ন, ... যেমন ৫ × ৫ = ২৫
÷ হরণের চিহ্ন, . . . যেমন ৮ ÷ ২ = ৪
= লব্ধের চিহ্ন, এই চিহ্ন সর্বত্রই ব্যবহার্য্য, যেমন ৫+৫ তেরিজ লব্ধ=১০।’
পূরণ, হরণ, লব্ধ এবং জমা খরচ বেশ বোঝা গেলেও তেরিজ শব্দটি বর্তমানে যথেষ্ট অচেনা। অথচ এক সময় এর বেশ প্রচলন ছিল। আরবি তা'রীজ় (تعريض, বিশেষ্য, বৃদ্ধি হওয় বা ঘটানো, জাহির করা, বিরোধিতা করা, আপত্তি করা, ইত্যাদি) এসেছে ʻআর্জ় (عرض, ক্রিয়াপদ, প্রশস্ত হওয়া বা করা, আর দ্বিতীয় অর্থ দেখানো বা পেশ করা) থেকে। জন টম্সন প্ল্যাট্স এবং জন শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানে শব্দটির দেখা মেলে। বাংলায় অর্থ পাল্টে গেছে।। তেরিজ কষা অর্থ অঙ্ক করা বা যোগফল বের করা। প্রমথ চৌধুরীতে আছে,— ‘ঠাকুরানি এখন আয়ব্যয়ের হিসাব তাঁর কাছে বুঝিয়ে দিতে চান; সেই জন্যই তাঁর তেরিজ খারিজ শেখা দরকার।’
তবে আরবির একই ধাতুমূল (عرض, আরজ) থেকে আসা আরেকটি শব্দকে বাংলার সম্পদ বলে চিনে নিতে কষ্ট হয় না মোটেও ,— আরজ, সাথে ফারসি গুজার (گذار, যে করছে এমন) অর্থাৎ আরজগুজার অর্থ আবেদনকারী, বা আরজ, সাথে ফারসি প্রত্যয় (ي, ই) অর্থাৎ আরজি ও আর্জি অর্থ আবেদনপত্র। উর্দুতেও আরজি একই অর্থে প্রচলিত।
‘+ তেরিজের চিহ্ন এই; অর্থাৎ যে স্থানে এই চিহ্ন দেখিবা, সে সকল অঙ্কের তেরিজ করিতে হইবে জানিবা. ... যেমন ৫ + ৫ = ১০
- জমা খরচের চিহ্ন, .. যেমন ৫ - ৪ = ১
× পূরণের চিহ্ন, ... যেমন ৫ × ৫ = ২৫
÷ হরণের চিহ্ন, . . . যেমন ৮ ÷ ২ = ৪
= লব্ধের চিহ্ন, এই চিহ্ন সর্বত্রই ব্যবহার্য্য, যেমন ৫+৫ তেরিজ লব্ধ=১০।’
পূরণ, হরণ, লব্ধ এবং জমা খরচ বেশ বোঝা গেলেও তেরিজ শব্দটি বর্তমানে যথেষ্ট অচেনা। অথচ এক সময় এর বেশ প্রচলন ছিল। আরবি তা'রীজ় (تعريض, বিশেষ্য, বৃদ্ধি হওয় বা ঘটানো, জাহির করা, বিরোধিতা করা, আপত্তি করা, ইত্যাদি) এসেছে ʻআর্জ় (عرض, ক্রিয়াপদ, প্রশস্ত হওয়া বা করা, আর দ্বিতীয় অর্থ দেখানো বা পেশ করা) থেকে। জন টম্সন প্ল্যাট্স এবং জন শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানে শব্দটির দেখা মেলে। বাংলায় অর্থ পাল্টে গেছে।। তেরিজ কষা অর্থ অঙ্ক করা বা যোগফল বের করা। প্রমথ চৌধুরীতে আছে,— ‘ঠাকুরানি এখন আয়ব্যয়ের হিসাব তাঁর কাছে বুঝিয়ে দিতে চান; সেই জন্যই তাঁর তেরিজ খারিজ শেখা দরকার।’
তবে আরবির একই ধাতুমূল (عرض, আরজ) থেকে আসা আরেকটি শব্দকে বাংলার সম্পদ বলে চিনে নিতে কষ্ট হয় না মোটেও ,— আরজ, সাথে ফারসি গুজার (گذار, যে করছে এমন) অর্থাৎ আরজগুজার অর্থ আবেদনকারী, বা আরজ, সাথে ফারসি প্রত্যয় (ي, ই) অর্থাৎ আরজি ও আর্জি অর্থ আবেদনপত্র। উর্দুতেও আরজি একই অর্থে প্রচলিত।
Saturday, July 26, 2008
চিত না পট?
একটি পয়সা উপরে ছুঁড়ে দিয়ে মাটিতে পড়ার অপেক্ষা। চিত না পট? চিত হলে কারুর জিত, আর পট হলে জিত অন্য কারুর। ইংরেজিতে একটি লোক-ঠকানো কথা আছে, – heads I win, tails you lose (চিত হলে আমার জিত, আর পট হলে তোমার হার)। হিন্দিতেও প্রায় একই রকম, তবে একটু বাড়িয়ে,– चित भी मेरी , पट भी मेरी (চিত ভী মেরী পট ভী মেরী, চিত হলেও আমার, পটও আমার); আর যেহেতু পয়সা কখনও কখনও কোনও দিকে না পড়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাই সাথে বলা হয়,— खड़ा मेरे बाप का (খড়া মেরে বাপ কা, আর দাঁড়িয়ে থাকলে আমার বাবার)।
তা যাই হোক, প্রাচীন কাল থেকেই পয়সার একদিকে শাসনকর্তার ছবি আর অন্যদিকে যে কোনও ছবি থাকার চল। হালে অনেক দেশেই নিয়মটা যদিও পাল্টেছে। আগে যে দিকে শাসনকর্তার ছবি থাকত সে দিকে এখন অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীক। এই শাসনকর্তার মাথার ছবি বা রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীকের দিককে ইংরেজিতে বলা হয় obverse আর অন্য দিককে reverse; এই obverse-ই heads বা বাংলায় চিত, আর reverse হল tails বা বাংলায় পট। বাংলায় চিৎপটাং শব্দটির অর্থ ঊর্ধমুখে শয়ান এবং চিত-পটের চিতের ছবির মাথা আকাশের দিকে মুখ করে পড়া হলেও ‘চিত না পটে’র আগমন সম্ভবত হিন্দি चित या पट (চিত য়া পট) থেকে। চিত সংস্কৃত চিত্র থেকে, যার অর্থ চিত্র, উজ্জ্বল, স্পষ্ট, এমনকি আকাশ; আর পট সংস্কৃত পট্ থেকে যার অর্থ পড়া, নিচে ছোঁড়া, ইত্যাদি। বাংলায় পট শব্দের একটি অর্থ মূল ছবির পিছনের বা দূরের দৃশ্য।
তা যাই হোক, প্রাচীন কাল থেকেই পয়সার একদিকে শাসনকর্তার ছবি আর অন্যদিকে যে কোনও ছবি থাকার চল। হালে অনেক দেশেই নিয়মটা যদিও পাল্টেছে। আগে যে দিকে শাসনকর্তার ছবি থাকত সে দিকে এখন অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীক। এই শাসনকর্তার মাথার ছবি বা রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীকের দিককে ইংরেজিতে বলা হয় obverse আর অন্য দিককে reverse; এই obverse-ই heads বা বাংলায় চিত, আর reverse হল tails বা বাংলায় পট। বাংলায় চিৎপটাং শব্দটির অর্থ ঊর্ধমুখে শয়ান এবং চিত-পটের চিতের ছবির মাথা আকাশের দিকে মুখ করে পড়া হলেও ‘চিত না পটে’র আগমন সম্ভবত হিন্দি चित या पट (চিত য়া পট) থেকে। চিত সংস্কৃত চিত্র থেকে, যার অর্থ চিত্র, উজ্জ্বল, স্পষ্ট, এমনকি আকাশ; আর পট সংস্কৃত পট্ থেকে যার অর্থ পড়া, নিচে ছোঁড়া, ইত্যাদি। বাংলায় পট শব্দের একটি অর্থ মূল ছবির পিছনের বা দূরের দৃশ্য।
Sunday, July 20, 2008
পুরনো বাংলায় শব্দের পুনরুক্তি
পুরনো বাংলায় নিয়ম ছিল শব্দ দ্বিরুক্তির জন্য শব্দ একবার লিখে পরে, অনেক সময় তার প্রায় গায়ে লাগিয়ে, ২ সঙ্খ্যাটি লেখা — অর্থ আগের শব্দটি পুনরুক্ত হচ্ছে। যেমন, — ‘যেহেতুক পৃথিবীর মধ্যে যে২ কর্ম্ম হইয়াছে সে২ কর্ম্মহইতে এ কর্ম্ম বড়।’ শ্রীরামপুর থেকে মিশনারিদের প্রকাশিত মাসিক দিগ্দর্শন প্রথম সংখ্যার (এপ্রিল ১৮১৮) প্রথম পৃষ্ঠা থেকে নেওয়া। গেল শতকের মাঝামাঝির পরেও ছাপানো পুঁথিতে এই ব্যাপারটি চোখে পড়ে। পুরনো লেখায়, পুঁথি বা সাধারণ কাজে, এই নিয়মের প্রচলন ছিল। পুঁথিতে দেখা যায়, ‘কৃষ্ণ২ বলি গোপী ডাকে অচেতনে।’
১৮৯১ সালে অক্সফোর্ড ক্ল্যারেন্ডন প্রেসের ছাপানো সাহিত্যিক ও কথ্য রূপের বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (Grammar of the Bengali Language: Literary and Colloquial)-এ জন বিম্স-এর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, — যখন কোনও শব্দের পুনরুক্তি হয়, বিশেষত বাংলা যা প্রায়শই ঘটে, তখন শব্দটি একবার লেখার পর যতবার তার পুনরুক্তি ঘটবে তার সঙ্খ্যাটি লেখার নিয়ম। যেমন যে যে লেখা হয় যে২, পুনঃ পুনঃ লেখা হয় পুনঃ২, শ্রী শ্রী শ্রী লেখা হয় শ্রী৩।
আধুনিক মান্য সাহিত্যের বা চলতি বাংলায় নিয়মটি উঠে গেছে।
১৮৯১ সালে অক্সফোর্ড ক্ল্যারেন্ডন প্রেসের ছাপানো সাহিত্যিক ও কথ্য রূপের বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (Grammar of the Bengali Language: Literary and Colloquial)-এ জন বিম্স-এর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, — যখন কোনও শব্দের পুনরুক্তি হয়, বিশেষত বাংলা যা প্রায়শই ঘটে, তখন শব্দটি একবার লেখার পর যতবার তার পুনরুক্তি ঘটবে তার সঙ্খ্যাটি লেখার নিয়ম। যেমন যে যে লেখা হয় যে২, পুনঃ পুনঃ লেখা হয় পুনঃ২, শ্রী শ্রী শ্রী লেখা হয় শ্রী৩।
আধুনিক মান্য সাহিত্যের বা চলতি বাংলায় নিয়মটি উঠে গেছে।
Wednesday, July 16, 2008
রেস্তোরাঁর চন্দ্রবিন্দু
কেউ খাবার কিনে খেতে পারে এমন জায়গাবিশেষের নাম রেস্তোরাঁ। রেস্তরাঁও লেখা হয়। শব্দটি বহুল প্রচলিত এবং বহুল ব্যবহৃত যদিও বেশিরভাগ বাংলা অভিধানে শব্দটির দেখা মেলে না। আর রাস্তার পাশে রেস্তোরাঁর নামে চন্দ্রবিন্দুটিও প্রায়ই অনুপস্থিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা মধুর ক্যান্টিন নামে পরিচিত সেখানে লেখা — মধুর রেস্তোরা; চন্দ্রবিন্দু নেই।
শব্দটি রাজশেখর বসু, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা যোগেশচন্দ্র রায়ে নেই, নেই কাজী আব্দুল ওদুদেও। বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনও বানান বা উচ্চারণ অভিধানেও নেই। এর দেখা মেলে কেবল বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক অভিধান এবং সাহিত্য সংসদের বাংলা অভিধানে। বাংলা একাডেমির অভিধানে ক্রমটি রেস্তোরাঁ, রেস্তরাঁ; ব্যুৎপত্তি ফারসি (ছাপার ভুল হয়ে থাকতে পারে); আর সংসদ অভিধানে রেস্তরাঁ, রেস্তোরাঁ; ব্যুৎপত্তি ইংরেজি হয়ে, ফরাসি থেকে। এর আরও দেখা মেলে পশ্চিম বঙ্গ আকাদেমির বানান অভিধানে, রেস্তোরাঁ; সাহিত্য সংসদের বানান অভিধানে, রেস্তরাঁ; এবং সাহিত্য সংসদের উচ্চারণ অভিধানে, রেস্তরাঁ।
তবে জন মেন্ডিস, জে সাইক্স, উইলিয়াম কেরি, হেনরি পিট্স ফর্স্টার বা পি, এস, ডি'রোজারিওর পুরনো দিনের কোনও বাংলা অভিধানে শব্দটি পাওয়া যায় না। শব্দটি বাংলায় প্রবেশ ফরাসি থেকে, ইংরেজির হাত ধরে হলে হতেও পারে। ইংরেজিতে শব্দটি এসেছে ফরাসি ক্রিয়া restaurer এর বর্তমান ক্রিয়াবাচক বিশেষণ restaurant থেকে, অর্থ সেই খাদ্য যা সতেজ করে। এই ফরাসি ক্রিয়ার আগমন পুরনো ফরাসি restorer থেকে, আর তার আগমন লাতিন restaurare (re- + -staurare) থেকে, অর্থ আবার তৈরি করা। আর ফরাসিতে কেনার পর বসে খাবার জায়গা অর্থে প্রথম ব্যবহার ১৭৬৫ সালে, আর ইংরেজিতে ১৮২৭ সালে।
গুগলে শব্দটির সাতটি বানান পাওয়া গেছে — রেস্তোরা, রেস্তোরাঁ, রেস্তোঁরা, রেঁস্তোরা, রেস্তরাঁ, রেস্তঁরা, রেঁস্তরা; এর বাইরে আর একটি বানানই কেবল সম্ভব — রেস্তরা; একটু খুঁজলে হয়তও তারও দেখা পাওয়া যাবে। ব্যবহার দেখে মনে হয় একসময় রেস্তোরাঁর চন্দ্রবিন্দুটি লুপ্ত হবে, বিশেষত পূর্ব বঙ্গে।
শব্দটি রাজশেখর বসু, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা যোগেশচন্দ্র রায়ে নেই, নেই কাজী আব্দুল ওদুদেও। বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনও বানান বা উচ্চারণ অভিধানেও নেই। এর দেখা মেলে কেবল বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক অভিধান এবং সাহিত্য সংসদের বাংলা অভিধানে। বাংলা একাডেমির অভিধানে ক্রমটি রেস্তোরাঁ, রেস্তরাঁ; ব্যুৎপত্তি ফারসি (ছাপার ভুল হয়ে থাকতে পারে); আর সংসদ অভিধানে রেস্তরাঁ, রেস্তোরাঁ; ব্যুৎপত্তি ইংরেজি হয়ে, ফরাসি থেকে। এর আরও দেখা মেলে পশ্চিম বঙ্গ আকাদেমির বানান অভিধানে, রেস্তোরাঁ; সাহিত্য সংসদের বানান অভিধানে, রেস্তরাঁ; এবং সাহিত্য সংসদের উচ্চারণ অভিধানে, রেস্তরাঁ।
তবে জন মেন্ডিস, জে সাইক্স, উইলিয়াম কেরি, হেনরি পিট্স ফর্স্টার বা পি, এস, ডি'রোজারিওর পুরনো দিনের কোনও বাংলা অভিধানে শব্দটি পাওয়া যায় না। শব্দটি বাংলায় প্রবেশ ফরাসি থেকে, ইংরেজির হাত ধরে হলে হতেও পারে। ইংরেজিতে শব্দটি এসেছে ফরাসি ক্রিয়া restaurer এর বর্তমান ক্রিয়াবাচক বিশেষণ restaurant থেকে, অর্থ সেই খাদ্য যা সতেজ করে। এই ফরাসি ক্রিয়ার আগমন পুরনো ফরাসি restorer থেকে, আর তার আগমন লাতিন restaurare (re- + -staurare) থেকে, অর্থ আবার তৈরি করা। আর ফরাসিতে কেনার পর বসে খাবার জায়গা অর্থে প্রথম ব্যবহার ১৭৬৫ সালে, আর ইংরেজিতে ১৮২৭ সালে।
গুগলে শব্দটির সাতটি বানান পাওয়া গেছে — রেস্তোরা, রেস্তোরাঁ, রেস্তোঁরা, রেঁস্তোরা, রেস্তরাঁ, রেস্তঁরা, রেঁস্তরা; এর বাইরে আর একটি বানানই কেবল সম্ভব — রেস্তরা; একটু খুঁজলে হয়তও তারও দেখা পাওয়া যাবে। ব্যবহার দেখে মনে হয় একসময় রেস্তোরাঁর চন্দ্রবিন্দুটি লুপ্ত হবে, বিশেষত পূর্ব বঙ্গে।
Tuesday, July 08, 2008
চন্দ্রবিন্দু, আগে না পরে?
চলতি প্রথায় চাঁদের বানান চ-এ চন্দ্রবিন্দু যোগ আ-কার আর দ। অন্তত এভাবেই শিশুদের বর্ণশিক্ষা দেওয়া হয়। কারণটি বোধ করি সীসার সাবেকি ছাঁদের হরফে চন্দ্রবিন্দু ছাপায় সাধারণত মূল ব্যঞ্জনের উপরে বসে। প্রযুক্তিগত কারণে। মূল হরফের সাথে একই ছাঁদে চন্দ্রবিন্দু ঢালাই করা হত যেন ছাপার সময় হরফ ভেঙ্গে না যায়। সেই ধারায় কম্পিউটারে ২৫৬-হরফের নিয়মে যখন বাংলা লেখা হয়, তখনও আগে মূল হরফ, তারপর চন্দ্রবিন্দু এবং তারপর কার বসানো হয়। হালে ইউনিকোড চালু হওয়ায় ক্রমটি পাল্টে গেছে। আগে মূল ব্যঞ্জন, পরে কার এবং শেষে চন্দ্রবিন্দু, কারণ চন্দ্রবিন্দুর কাজটি হল স্বর বা স্বরের চিহ্নকে আনুনাসিক করা, মূল ব্যঞ্জন হরফকে নয়। আবার স্বরের চিহ্ন ছাড়া চন্দ্রবিন্দু বসলে তা মূল হরফের পরেই বসে, তার কারণ চন্দ্রবিন্দু এখানে চ্ ব্যঞ্জনে নিহিত অ-এর উচ্চারণকে আনুনাসিক করে। ব্যাপারটা একটু গোলমেলে ঠেকলেও চাঁদ বানানে আ-কারের পরেই চন্দ্রবিন্দু বসা উচিত, চ-এর পরে নয়, আর আ-কার বসলে চ্-এর নিহিত অ-স্বরের কোনও অস্তিত্ব থাকে না।
Subscribe to:
Posts (Atom)