বাংলায় নুকতার ব্যবহার ইউনিকোডের অবদান, যদিও এই নুকতা (অভিধানে বা গবেষণা গ্রন্হে হয়ত নুক়ত়া লেখা উচিত কারণ আরবি, ফারসি বা উর্দুতে উচ্চারণ ভিন্ন হলেও, শব্দটির বানান نقطه, অর্থ, বিন্দু; ইংরেজিতে nuqta বা আরও শুদ্ধ করে nuḳt̤a বা nuqt̤a লেখা উচিত হলেও সাধারণত লেখা হয় nukta) ছাপায় দেখতে পাওয়া যায় অনেক দিন থেকেই। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, রাজশেখর বসুর চলন্তিকা, বা সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় এই নুকতার ব্যবহার হয়ে আসছিল, কেবল এর নাম ছিল বিন্দু — পার্শ্ব বা নিম্ন। ইউনিকোডের ওপর ভারতীয় লিপির উপাত্ত বিনিময় নিয়মের (Indian Script Code for Information Interchange) প্রভাবে এর নাম বাংলা থেকে আরবি বা ফারসি হয়ে গেছে। এই নুকতার কারণে ইউনিকোডে তিনটি বাংলা হরফ লেখায় বিকল্প চালু হয়েছে — য়, ড় এবং ঢ়। এককভাবে লেখা ছাড়াও য, ড এবং ঢ এর সাথে নুকতা যোগ করেও লেখা যায়। এতে একটি ছোট অসুবিধা হয় বই কি। জানা না থাকলে কিংবা একই লেখায় দুই ধরণের হরফ থাকলে খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। দুই নুকতা বা দ্বি-বিন্দুর উদাহরণও বাংলার ছাপায় পাওয়া যায়, যদিও ইউনিকোড সাধারণভাবে বাংলা লেখার নিয়মে তা পাওয়া যায় না। বাংলায় ফরাসি বা রুশ সাহিত্যের অনুবাদে ফরাসি j(e)-ধ্বনি, যা ইংরেজির (vi)s(ion)-ধ্বনিতুল্য, বা রুশ ж-ধ্বনি, যা ইংরেজিতে zh দিয়ে লেখা হয়, লেখার জন্য জ-এর নিচে দুই বিন্দুর ব্যবহার করা হয়। আদতে ফরাসি ধ্বনি (/ʒ/) এবং রুশ ধ্বনি (/ʐ/) এক না হলেও ইংরেজিতে একই ধ্বনি দিয়ে প্রকাশ করা হয় বলে বাংলায়ও একই হরফের ব্যবহার করা হয় (ধ্বনিতত্ত্বের আলোচনায় বোধ করি পার্থক্যটা বজায় রাখা উচিত)। ইউনিকোডে জ-এ দ্বি-বিন্দু লিখতে হলে জ-এর সাথে ব্যবহার করতে হবে যে ইউনিকোড ক্যারেক্টার তার নাম Combining Diaresis Below (̤) — জ̤।
বিন্দু ছাড়া আরও একটি অর্থে নুকতা শব্দের ব্যবহার অন্তত কথ্য বাংলায় দেখা যায় — নুকতা দিয়ে বলা, অর্থ জোর দিয়ে বলা। জ্ঞানেন্দ্রমোহনে বা বাংলা একাডেমীর আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে এই অর্থটি নেই। হিন্দুস্তানিতে পাওয়া যায় নুকতা লগানা (नुकता लगाना, نقطه لگانا), অর্থ, গালাগালি করা, দোষ দেওয়া, দোষারোপ করা।
1 comment:
"জ়" এই নিয়ম কে চালু করেন বলতে পারবেন?
য়, ড়, ঢ় নয়, "জ়" এটা কে চালু করেন?
Post a Comment