বার্নার্ড শ-এর পিগম্যালিঅন নাটকে প্রফেসর হিগিন্সকে দেখা যায় একটি খাতা থেকে পড়ছে — Cheer ap, Keptin; n' baw ya flahr orf a pore gel. লন্ডনের কক্নি ইংরেজিতে ফুলওয়ালির বলা কথা। আন্তর্জাতিক ধ্বনিমাত্রিক বর্ণমালা ছাড়া আসল উচ্চারণ বোঝানো দায়। তাই মান্য লেখ্য রীতি বেশ খানিকটা এদিক ওদিক করে সাধারণ বোধগম্যতার মধ্যে রেখে কক্নি ইংরেজির ধরণ বোঝানো হয়েছে। হার্পার লি'র To Kill a Mocking Bird-এ পাওয়া যায়: Mr. Nathan put cement in that tree, Atticus, an' he did it to stop us findin' things-he's crazy, I reckon, like they say, but Atticus, I sweat to God he ain't ever harmed us, he ain't ever hurt us, he coulda cut my throat from ear to ear that night but he tried to mend my pants instead.... তেমনটি আছে চালর্স ডিকেন্স কিংবা মার্ক টোয়েনে। সাহিত্যে উপভাষা বা লোকভাষা উঠে আসবেই। সব ভাষার সাহিত্যেই হয়। বাংলায়ও, হামেশাই। শওকত আলীর (হাতের কাছে আছে বলে, বিশেষ কোনও কারণ নেই) উত্তরের খেপ-এ পাওয়া যায় — 'আইবো, সাতটা বাজলেই আইয়া পড়বো। চিন্তা নাই। ... ওস্তাদ, একটা কথা কমু?' এ রকমটি পাওয়া যাবে মানিক বন্দ্যেপাধ্যায়, পরশুরাম (রাজশেখর বসু), তারাশঙ্কর বন্দ্যেপাধ্যায় থেকে শুরু করে হাল আমলের অনেকেরই লেখায়। সাহিত্যে কোনও একভাবে উচ্চারণের কাছাকাছি লিখেই পার পাওয়া যায়। যার ওই ভাষার সাথে পরিচিতি আছে সেই কেবল স্বাদটা নিতে পারে, বাকি সবাই কল্পনার রং মিশিয়ে নিজেদের মত বুঝে নেয়। এ ধরণের উপভাষার লেখন থেকে ভাষার উচ্চারণের প্রকৃতি বোঝা যায় না। কারণ উপভাষা কিভাবে লেখা হবে তার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। 'জোর' লিখলে বোঝা যায় না এটা জোর, যেমনটি দিনাজপুরের ভাষায়, নাকি জ়োর, যেমনটি বরিশালের ভাষায় বলা হয়, ইংরেজির z-এর মত করে। বাংলা একাডেমীর ফরমায়েশ অনুসারে য হরফটি দিয়ে ইংরেজির z বোঝানোর ব্যাপারটি অনেকেই মানে না। যুক্তিও দূর্বল। কারণ সেই য-ই তৎসম এবং তদ্ভব শব্দে ইংরেজির -ধ্বনির প্রতীক, আবার আরবি-ফারসি শব্দে ইংরেজির -ধ্বনির প্রতীক। একটু গোলমেলে ঠেকে। ইউনিকোডের জগতে বোধ করি জ-নিম্নবিন্দু (জ়) জায়গা করে নেবে। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসেও একই রকম ব্যবহার। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতও প্রায় একই রকম। আর কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাসহ যে কোনও প্রকাশনাতেই এই বিন্দুর ব্যবহার করে আসছে। তাই বোধ করি পরশুরামের গড্ডালিকায় পাওয়া যায় — 'অয়, অয়, zানতি পার না।' এই অয়-এ শুরুতে জিহ্বামূলীয় স্পর্শ ধ্বনি (glottal stop) আছে কি না তা কিন্তু দেখানো হচ্ছে না, অথচ বাংলার অনেক উপভাষায় এর বিদ্যমানতা পরিলক্ষিত। শুদ্ধ বাংলার এ-ধ্বনি এ-র মতই, তবে ধ্বনিটি সিলেটের দিকে গেলেই, ভাষাতত্ত্বের ভাষায় একটু নিচের দিকে নেমে যায় — এ-ধ্বনি এবং অ্যা-ধ্বনির মাঝামাঝি। মেদিনিপুরের বাংলায়ও এই ধ্বনি বিদ্যমান। ফরাসি-জার্মানে ধ্বনিটি আছে। মার্কিনিদের ইংরেজি বুলিতেও আছে। ইংল্যান্ডে গৃহীত উচ্চারণ (Received Pronunciation) বলতে যা বোঝায়, তাতে এই ধ্বনি নেই। ভাষাতাত্ত্ববিদরা অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা বা এই বর্ণমালার কিছু হরফ ইংরেজির হরফের সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করে।
1 comment:
মেদিনিপুরের বাংলায়ও এই ধ্বনি বিদ্যমান।
খুব ঠিক কথা। অামাদের পরিবারে অামরা প্রায়ই মেদিনীপুরি অার কলকাত্তাইয়া ভাষার মধ্যে "code switching" করি। সে ক্ষেত্রে: "সে চিঠি লিখছে"-র মানে ঠিক হয় শেষের এ-কারের উচ্চারণ দিয়ে। কলকাতার /e/ উচ্চারণ হলে মানেও কলকাতার ভাষার অনুরূপ। কিন্তু মেদিনীপুরি /ɛ/ হলে মানেও সেই হিসাবে: "সে চিঠি লিখেছে"।
Post a Comment