ভাষা পাল্টায় বিভিন্ন সময়ে আর ভাষা একই সময়ে পাল্টায় বাধায় — নদীই হোক, পাহাড়, জনপদের অভাব কিংবা রাজনৈতিক সীমরেখা। সময়ের রেখায় পাল্টানো ভাষার পরিচিতি পুরনো, মধ্যযুগীয় বা আধুনিক বাংলার মাঝে। ভিন্ন শতাব্দীর ভিন্ন বাংলাও এর নিদর্শন। আর একই সময়ে অবস্থানগত পাল্টানো বাংলার আরেক নাম আঞ্চলিকতা, ঢাকার বাংলা বা বীরভূমের বাংলা। এধরণের বাংলায় আবার সময়ে পাল্টানো বাংলার ছাপ থেকে যায়। তারপরেও, অত্যুৎসাহী কিছুলোকের ভাবাদর্শী মতের বাহুল্য বাদ দিলে, বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের মান্য চলতি বাংলা একই, লেখক বা ক্ষেত্রবিশেষে আরবি-ফারসি শব্দের আধিক্য বা সংস্কৃত শব্দের বাড়তি ওজন, এটুকুই যা বিবেচ্য। সাধারণভাবে কেবল কাকা-চাচা, মাসি-খালা, নমস্কার-সালাম বা জল-পানি ইত্যাদিই চোখে পড়ে বা সাধারণ আলোচনায় উঠে আসে। কারণ বোঝা বা বোঝানোর সুবিধা। কার্যসূচী-কার্যক্রম, জলহাওয়া-আবহাওয়া, কুড়ি-বিশ বা আরও অনেক শব্দের কথা নিয়ে আলোচনা দেখা যায় না। কলকাতায় মান্য বাংলায় প্রথম পুরুষের একবচনে সাধারণ অতীত কালে ক্রিয়ার শেষে -এ যোগ করা হয় (চলন্তিকা-রও তাই মত), ও কি বললে? ঢাকায় মান্য বাংলায় তেমনটি দেখা যায় না। কলকাতার 'ও কি বললে?'-র জায়গায় ঢাকায় হয়ত বলা হয় 'সে কি বলল?' এই 'ও' এবং 'সে' — সেও খানিকটা বিভদই। বাংলাদেশে একটা, দুইটা, তিনটা, চারটা এবং পাঁচটা, কিন্তু কলকাতায় একটি, দুটো, তিনটে, চারটে এবং পাঁচটা। সচেষ্ট বাচন ছাড়া বাংলাদেশে বাংলার চন্দ্রবিন্দুর দেখা পাওয়া (নাকি শোনা?) ভার। উচ্চারণেও কিছুটা গরমিল বর্তমান, যদিও মান্য বাচনে তা ধরা হয় না। কলকাতার লোকেরা আজকে /̍ɑdʒke/ উচ্চারণে জ-এর ঘোষতা বজায় রাখতে গিয়ে পরের ক-কে খানিকটা ঘোষতা প্রদান করে /̍ɑdʒk̬e/, আর ঢাকার লোকেরা ক-এর অঘোষতা বজায় রাখতে গিয়ে জ-কে ঘোষতারহিত করে ফেলে /̍ɑdʒ̊ke/। দুটোই সমীভবন, সামনে এবং পিছনে। একই রকমভাবে (চুল) আঁচড়ে /̍ɑ͂tʃɽe/ কলকাতায় /̍ɑ͂t̬ʃɽe/ আর ঢাকায় /̍ɑtʃre/। হয়ত অনেক অনেক দিন পর বাংলার দু'টি রূপ জন্ম নেবে — সময়ে, রাজনৈতিক সীমারেখায়। হয়ত তেমনটি ঘটবেই না, দুই রাজনৈতিক ভূখণ্ডের নৈকট্যের কারণে। তবে এখনও পর্যন্ত বাংলার মান্যরূপ হরেদরে একটিই, ঢাকায়ই হোক, কলকাতায় বা লন্ডনে।
No comments:
Post a Comment