Saturday, September 22, 2007

বাংলার যতিচিহ্ন

বাংলার দাঁড়িই, দুই দাঁড়িও, কেবল নিজস্ব যতিচিহ্ন। বাকি সব বাংলায় এসেছে ইংরেজির অনুকরণে। নিয়মিত হয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরে। মধ্য বাংলায় বিরামের জন্য ব্যবহৃত হত তারকা চিহ্ন (*)। পরে সে স্থানে ব্যবহৃত হতে থাকে দাঁড়ি। দুই দাঁড়ি ছিল সাধারণত কবিতার সম্পত্তি, আগের যুগে। বর্তমানে তা টাইপোগ্রাফিক এমবেলিশমেন্ট। বাংলায় আরেকটি চিহ্নের ব্যবহার ছিল, মধ্যযুগেও। তার নাম কাকপদ (×)। প্রতিলিপির সময় কোথাও কিছু বোঝা না গেলে বা কোনও কিছু আমলে না নিলে, এখন যেমন ইংরেজি লোপচিহ্নের আদলে তিন-বিন্দু (...) ব্যবহার করা হয়, তখন বাংলা গুণনচিহ্নের মত তিনটি কাকপদ ব্যবহার করা হত।

বিদ্যাসাগরের বেতাল পঞ্চবিংশতির দশম সংস্করণ থেকে ইংরেজির আদলে যতি চিহ্নের ব্যবহার দেখা যায়। একদম শুরুর দিকে, ১৮৪০ সালে হিন্দু কলেজ পাঠশালাতে পড়ানোর জন্য 'শিশুসেবধি' নামের একটি প্রাইমার বা অ-আ-ক-খ'র বই ছাপানো হয়। এতে যতিচিহ্নের বর্ণনায় বলা আছে বাক্যের ভেদ বোধক রেখার নাম 'চিহ্ন' (,), বিচ্ছেদ ভেদবোধক রেখার নাম 'দাঁড়ি' (।) এবং লেখক কিংবা বক্তার কৃত যে প্রয়োগ তদ্বোধক চিহ্নের নাম 'অবিকল' (“”), যা এখন উদ্ধার চিহ্ন নামে পরিচিত।

নামগুলো পরে পালটে গিয়ে দাঁড়ায় পদচ্ছেদ (,), অর্ধচ্ছেদ (;), পূর্ণচ্ছেদ (।), দৃষ্টান্তচ্ছেদ (:), প্রশ্নচিহ্ন (?), বিস্ময়চিহ্ন (!), রেখাচিহ্ন (—), উদ্ধারচিহ্ন (“”) এবং পদযোজকচিহ্ন (-)। একসময় আবার বলা হত প্রাথমিকা (,), সামিকা (;)। কখনও বা কোলন ভুল করে বিসর্গ মনে না হয় তাই সাথে একটি ড্যাশ ব্যবহার করা শুরু হয়ে গিয়েছিল, নাম তার কোলন-ড্যাশ।

No comments: