গেল শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শুরুতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর পর্যুদস্ত পরিকল্পনার বেশ কিছুদিন আগে সরকার আরও একটি ব্যাপারে নড়াচড়া শুরু করেছিল। তা হল আরবি-ফারসি (সরকার এবং মদদগারদের ভাষায় উর্দু) হরফে বাংলা লেখার চেষ্টা। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের এ চেষ্টার নিন্দা জানায়। গুরুগম্ভীর কাজের জন্য, যেমন উর্দুতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায়, আরবি-ফারসি হরফে বাংলার প্রতিবর্ণীকরণ (transliteration) হতেই পারে। তবে সে সময়ের সরকার যা চেষ্টা করছিল তা হল লিপ্যন্তরীকরণ (transcription), বাংলা ভাষার উচ্চারণ অনুযায়ী উর্দুতে কাছাকাছি উচ্চারণে শব্দের পর শব্দ লিখে যাওয়া। আরবি-ফারসি হরফে বাংলার আলোচনা শোনা গেলেও ব্যাপারটা দেখতে কেমন তা বোঝা যায় না। দেখতে কেমন তার একটা ধারণা পাওয়া যায় মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্র ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত বঙ্গলা আদব কী তারীখ (বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস) বইয়ে। সেখানে মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরও অনেকের লেখা উর্দু হরফে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এমনই এক নমুনা, মধুসূদন দত্তর বঙ্গভাষা ---
হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;—
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর‐ধন‐লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
যদিও এক ভাষার হরফ আরেক ভাষা নিয়েছে বা আরেক ভাষার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি ভাষা তার নিজের হরফেই সুন্দর। জন বিম্স্ তার আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষার তুলনামূলক ব্যাকরণের ভূমিকায় বলেছিল --- ভারতীয় বর্ণমালার মধ্যে বাংলা সবচেয়ে সুন্দর এবং লেখতে সহজ... আধুনিক বাংলা হরফ এখন প্রাচীন ভারতীয় বর্ণমালাজাত যে কোন হরফের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং সহজে লেখা যায়।
No comments:
Post a Comment