রোমক হরফে বাংলা লেখার চল অনেক পুরনো। ১৮৯৪ সালে জেনেভায় এক সংস্কৃতজ্ঞ সম্মেলনে রোমক হরফে সংস্কৃত কি ভাবে লেখা হবে তা ঠিক করা হয়। সেই নিয়ম মেনেই রোমক হরফে বাংলাও লেখা হচ্ছিল এতকাল। তারও আগে ১৭৪৩ সালে লিসবন থেকে ছাপানো বাংলার প্রথম ব্যাকরণ বই কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ (Crepar Xaxtrer Orth,bhed,)-এ ঢাকার ভাওয়াল অঞ্চলের বাংলার যে উদাহরণ দেওয়া আছে তাও রোমক হরফে, পর্তুগিজের পঠনরীতি অনুযায়ী লেখা — পিতা আমারদিগের, পরম স্বর্গে আসল। তোমার সিদ্ধি নামেরে সেবা হউক: আইসুক আমারদিগেরে তোমার রাইজ্যত [রাজ্যে]: তোমার যে ইচ্ছা, সেই হউক: যেমন পরথিবীতে [পৃথিবীতে], তেমন স্বর্গে। (Pitá amaradiguer,/ Poromo xorgué aslo./ Tomar xidhi nameré,/ Xeba houq:/ Aixuq amardigueré/ Tomar raizot:/ Tomar zé icha,/ Xei houq:/ Zemon porthibité,/ Temon xorgué.) [আধুনিক বানানে বাংলায় লেখা হল]। এরপর ১৮০৩ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাপানো জন বোর্থউইক গিলক্রাইস্ট সম্পাদিত ওরিয়েন্টাল ফেবুলিস্ট নামের এক বইয়ে তারিণীচরণ মিত্রকৃত ঈশপের একটি গল্পের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয় রোমক হরফে। ১৮৮১ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুর্গেশনন্দিনী ছেপে বের হয় রোমক হরফে। এরপর ১৯৭১ সালে সুকুমার সেনের ইংরেজিতে লেখা বাংলাভাষার ব্যুৎপত্তিকোষেও (An Etymological Dictionary of Bengali) বাংলা শব্দ রোমক হরফে লেখা। মাঝে পুরো বই রোমক হরফে ছেপে বের না হলেও এই হরফে সংস্কৃত এবং বাংলা কি করে লেখা যায় তার দিক নির্দশনা দিয়েছে আর্থার কোক বার্নেল বা কার্ল রিকার্ড লেপ্সিউস-এর মত আরও অনেকেই।
সেই সংস্কৃতজ্ঞদের নিয়ম যা এখন আন্তর্জাতিক সংস্কৃত প্রতিবর্ণীকরণ বর্ণমালা (International Alphabet of Sanskrit Transliteration) নামে পরিচিত, তাতে অবশ্য বাংলা লেখায় কিঞ্চিৎ অসুবিধা হয়। কারণ সংস্কৃতে বাংলার মত য়, ড় এবং ঢ় নেই। রোমক y দিয়ে সংস্কৃত য (य) এবং বাংলা য এবং য়, আর ṛ (r এর নিচে বিন্দু) দিয়ে সংস্কৃত ঋ (ऋ) এবং বাংলা ঋ এবং ড় লেখা হয়। সমস্যা হল পাঠককে বুঝে নিতে হয় একই হরফ কখন য এবং কখন য়, বা কখন ঋ এবং কখন ড়। এ সমস্যা দূর করতে আন্তর্জাতিক মান সংস্থার প্রবর্তিত আমাস ১৫৯১৯: দেবনাগরী এবং সম্পর্কিত ইন্দীয় লেখার লাতিন হরফে প্রতিবর্ণীকরণ (ISO 15919 Transliteration of Devanagari and related Indic scripts into Latin characters) পদ্ধতিতে y এর উপর বিন্দু ẏ দিয়ে য় এবং y দিয়ে য বোঝানো হয় আর r এর নিচে বিন্দু ṛ দিয়ে ড় এবং r এর নিচে বৃত্ত r̥ দিয়ে ঋ বোঝানো হয়। সমস্ত নব্য ইন্দো-আর্য ভাষার ক্ষেত্রে একই নিয়ম। অনুস্বারের ক্ষেত্রে রোমক সংস্কৃত হরফের ṃ-এর নিচের বিন্দু উপরে উঠে ṁ আসে।
No comments:
Post a Comment