হিন্দিতে বলা হয় কোস কোস পর বদলে পানী চার কোস পর বানী (कोस कोस पर बदले पानी चार कोस पर बानी, পানি বদল হয় প্রতি ক্রোশ দূরত্বে, আর ভাষা বদল হয় চার ক্রোশ পর পর)। পদ্মার পশ্চিম এবং পূর্ব পাড়ের বাঙালির আঞ্চলিক ভাষায় উচ্চারণের পার্থক্য ঢের। বাংলাদেশের পশ্চিমে দিনাজপুরের ভাষায় স্পর্শধ্বনি মান্য বাংলার স্পর্শধ্বনির মতই, উষ্মতা নেই; এবং র ও ড় এর পার্থক্য রক্ষিত। হ যথেষ্ট মহাপ্রাণ। ব্যঞ্জনধ্বনির মহাপ্রাণতাও স্পষ্ট।
উত্তরিয়া বাতোইস আর সুরুজ কাজিয়া করছল যে কার বেশি জোর। ঠিক অই সময়টাত একটা মানুষ গরম পিরহান পিন্ধি অই পাক দিয়া যাছল। বাতোইস আর সুরুজ ওমরা ঠিক কইল যে যায় অর পিরহানখান খুলিবা পারিবে অরহে জোর বেশি। তারপর উত্তরিয়া বাতোইস খুব জোরে বহিবা শুরু করিল। বাতোইস যত বারহেছে মানুষটা অর পিরহানখান ততয় শক্ত করি ধরি রাখেছে। দিশদুয়ার না পারি বাতোইস হার মানিল। এইবার সুরুজ তেজ বাড়াবা শুরু করিল। এতে সহিবা না পারি মানুষটা পিরহানখান খুলি ফেলাইল। এইটা দেখি বাতোইস মানি নিল যে সুরজয় বড়।
/ut̪ːoriɑ bɑtoi̯ʃ ɑr ʃurudʒ kɑdʒiɑ kɔrtʃʰɔlɔ dʒe kɑr beʃi dʒor. ʈʰik oi̯ ʃɔmɔĕʈɑt ekʈɑ mɑnuʃ ɡɔrom pirɦɑn pind̪ʱi oi̯ pɑk d̪iɑ dʒɑtʃʰɔlɔ. bɑtoiʃ ɑr surudʒ omrɑ ʈʰik koi̯l dʒaĕ ɔr pirɦɑnkʰɑn kʰulibɑ pɑribe ɔrhe dʒor beʃi. t̪ɑrpɔr ut̪ːoriɑ bɑtoi̯ʃ kʰub dʒore boɦibɑ ʃuru koril. bɑtoi̯ʃ dʒɔto bɑrhetʃʰe mɑnuʃʈɑ ɔr pirɦɑnkʰɑn tɔtɔĕ ʃɔkto kori d̪ʱori rɑkʰetʃʰe. diʃdu(ĕ)ɑr nɑ pɑri bɑtoi̯ʃ ɦɑr mɑnil. ei̯bɑr ʃurudʒ t̪edʒ bɑɽɑbɑ ʃuru koril. et̪e ʃoɦibɑ nɑ pɑri mɑnuʃʈɑ pirɦɑnkʰɑn kʰuli pʰælɑ(i̯)il. ei̯ʈɑ d̪ekʰi bɑtoi̯ʃ mɑni nil dʒe ʃurdʒɔĕ bɔɽo/
বাংলাদেশের দিনাজপুরের সদরের প্রান্তের ভাষা। কোনও রকম স্বরাঘাত চিহ্নের ব্যবহার করা হয় নি। আন্তর্জাতিক ধ্বনিতাত্ত্বিক বর্ণমালায় বিভিন্ন ভাষার উচ্চারণের উদাহরণ দিতে গিয়ে ঈশপের এই গল্পটিই উদ্ধৃত হয়।
Friday, October 31, 2008
Sunday, September 28, 2008
ঘর্ম, ঘাম, গরম
সংস্কৃতে ঘর্ম বা ঘর্ম্মের সাধারণ অর্থ গরম বা রৌদ্র, আর সেখান থেকে থেকে বাংলায় তদ্ভব ঘাম, অর্থ স্বেদ। বাংলায় তৎসম ঘর্ম অর্থও স্বেদ। হিন্দিতে অবশ্য ঘাম (घाम) শব্দের অর্থ রৌদ্র বা তাপ — বড়া ঘাম হৈ (बड़ा घाम है, অনেক গরম বা রোদ)। কালিদাসের মেঘদূতম-এর বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে, — গ্রীষ্মে খরতাপে তোমাকে পেয়ে তারা না যদি দিতে চায় মুক্তি (১/৬২)। সংস্কৃতে খরতাপের জন্য মূলের শব্দটি হল ঘর্ম। মনিয়ের-উইলিয়াম্স্-এ ঘর্মের প্রথম অর্থ তাপ, এবং চতুর্থ অর্থ স্বেদ। এই ঘর্ম থেকেই অন্য বাংলা শব্দ গরম, খানিকটা ঘোরা পথে। প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় *gʷʰer- (গরম) থেকে ফারসিতে গর্ম (گرم), আবেস্তা (garema) এবং পহলবি (garm) হয়ে। প্রত্নরূপ *gʷʰer- থেকে সংস্কৃতে ঘর্ম (घर्म), প্রাচীন গ্রিকে থেরমোস (θερμός) আর লাতিনে ফোরমুস (formus)। ইংরেজির warm (পুরনো ইংরেজিতে wearm) শব্দটিও একই উৎস থেকে ব্যুৎপন্ন।
Friday, September 26, 2008
পাঞ্জাবি, বাঙালির কুর্তা
পাকিস্তানে এক পোশাকের দোকানে এক বাঙালি গিয়ে নাকি পাঞ্জাবি খুঁজেছিল। অনেক কসরত এবং ইশারার পর দোকানির উত্তর ছিল — আপলোগ বংগালী কুর্তা মাংগতে হৈঁ (আপনি বাঙালি কুর্তা চাইছেন)? বাংলা দেশে যা পাঞ্জাবি বা পাঞ্জাবী, অবাঙালির কাছে তা বাঙালি কুর্তা। তাহলে পাঞ্জাবি কেন? পাঞ্জাবের লোকেরা এক ধরণের কুর্তা পড়ে ঠিকই, তবে তা দেখতে ঠিক পাঞ্জাবির মত নয়। তাই কি বাঙালি কুর্তা? বেশির ভাগ বাংলা অভিধানেই শব্দটির ব্যাপারে কোনও দিক্নির্দেশনা পাওয়া যায় না। বেশ কয়েকটি অভিধানে শব্দটিই নেই। দুয়েকটি অভিধানে শব্দটিকে দেশজ বলে ধরা হয়েছে। দেশজ শব্দ হলে পানজাবি লেখাই যুক্তিসঙ্গত, পাঞ্জাবি নয়। তবুও পাঞ্জাবের সাদৃশ্যে পাঞ্জাবি চলতে পারে। ঢাকার বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে বলা আছে ফারসি পানজাহ (پنجه), সাথে বাংলা প্রত্যয় ই বা ঈ যোগে ব্যুৎপন্ন। অর্থ পাঞ্জা (পাঁচের বা পাঁচ আঙ্গুলের সমাহার) বা হাতের তালু অবধি বিস্তৃত আস্তিনবিশিষ্ট ঢিলা জামা। কুর্তার আস্তিন সাধারণত ছোট হয়; বাঙালি কুর্তায় আস্তিন তালু পর্যন্ত লম্বিত; যুতসই বর্ণনা। ফারসি পানজাহ + বাংলা প্রত্যয় ই হতে পারে। তবে এতে বর্গ্য ব আসা একটু কঠিন; অন্তস্থ ব হলে ভাল হত। প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় *penkʷe (পাঁচ) থেকে সংস্কৃতে পঞ্চ (पंच) আর ফারসিতে পান্জ্ (پنج), যেখান থেকে পানজাহ। বাঙালি কুর্তা বা kurta (হিন্দিতে कुरता এবং উর্দুতে كرته) আদতে ফারসি থেকে আসা, অর্থ লম্বা ঢিলা জামাবিশেষ।
Thursday, September 25, 2008
চলভাষ না মুঠোফোন?
ইংরেজদের বুলিতে মোবাইল, ফোন বা সেট না বললেও চলে; মার্কিনি বুকনিতে এই একই বস্তু সেলুলার ফোন, সেলুলার বা শুধু সেল। আধুনিক যুগের হাতের মুঠোয় চলতে চলতে কথা বলার যন্ত্র। ২০০৩ এর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বইমেলায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু গুণের ‘মুঠোফোনের কাব্য’; প্রথম খণ্ড। চলতে চলতে মোবাইল ফোনে লিখে রাখা কবিতার সঙ্কলন। দেশে ছাপানো অলক সোম চৌধুরীর ‘বিজ্ঞাপনের মেয়ে’ গল্পে চলভাষ শব্দটির দেখা। এই মুঠোফোন শব্দটির ব্যঞ্জনায় হাতে ধরার ব্যাপারটি আছে, কিন্তু চলভাষে আছে চলার গতিময়তা। বাংলায় টেলিফোনের বাংলা দূরালাপনী বা দূরভাষ তেমন একটি চলে নি; তারা এখনও পরিভাষা। মুঠোফোন বা চলভাষের ব্যবহার শুরু হয়েছে। মুঠোফোন চলতি, আর চলভাষ গম্ভীর, খানিকটা পরিভাষার গন্ধ। গুগলে মুঠোফোন পাওয়া যায় ১,৩০,০০০ বার আর চলভাষ মোটে ৪ বার।
Wednesday, September 24, 2008
ঘুরে ঘুরে বাজার করা
ব্যাপারি-নৌকা সত্যি সত্যি হাটে-হাটে গস্ত করে বেড়াচ্ছে। এই গস্ত করার অর্থ ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করা। ফারসি শব্দ গশ্ত্ (گشت), শব্দের যাত্রায় শ পর্যবসিত স-এ। জ্ঞানেন্দ্রমোহনের অভিধানে অর্থ হাটে ঘোরা, গস্ত করা, হাটবাজার করা, মাল খরিদ করা। ফারসিতে অর্থ হাঁটা, ঘুরে বেড়ানো, পাহারা ভ্রমণ, ইত্যাদি। হিন্দিতে গশ্ত (गश्त) অর্থ পাহারা, আর গশ্ত লগানা (गश्त लगाना) অর্থ পাহারা দেওয়া। বাংলায় গস্ত থেকে গস্তিদার, 'যে দ্রব্যাদির অনুসন্ধান করিয়া বেড়ায়; কোন স্থানে কোন জিনিস সুবিধা ধরে বিক্রী হয় ইহা যে অনুসন্ধান করে।'
আকার যোগে এবং শ সহযোগে শব্দটি একটু ভিন্ন ব্যঞ্জনায়ও প্রচলিত আছে। তাবলিগ জামাতের লোকেরা ধর্মের কাজে বের হয়ে বিকেলে গাস্ত (উচ্চারণ গাশ্ত্) করতে যায় বা গাস্তে যায়, অর্থাৎ মসজিদের মহল্লার মানুষকে ধর্ম পথে ডাক দেয়।
আকার যোগে এবং শ সহযোগে শব্দটি একটু ভিন্ন ব্যঞ্জনায়ও প্রচলিত আছে। তাবলিগ জামাতের লোকেরা ধর্মের কাজে বের হয়ে বিকেলে গাস্ত (উচ্চারণ গাশ্ত্) করতে যায় বা গাস্তে যায়, অর্থাৎ মসজিদের মহল্লার মানুষকে ধর্ম পথে ডাক দেয়।
Sunday, August 24, 2008
শব্দের অর্থান্তর
অর্থের অন্তর একটি সাধারণ ঘটনা। যে কোনও ভাষাতেই। ইংরেজিতে meat বলতে একসময় কেবল খাদ্যকে বোঝাত এবং যেহেতু মাংসই তখন প্রধান খাদ্য ছিল, অনেক পরে এসে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় মাংস। খাদ্য অর্থের ছোঁওয়া এখনও sweetmeat বা মিষ্টান্ন শব্দে থেকেই গেছে। সংস্কৃতে এখনও মৃগ শব্দের অর্থ যে সবসময় হরিণ তা নয়। শব্দটির পুরনো এবং এখনও প্রচলিত একটি অর্থ পশু, যে কোনও পশু। মৃগপক্ষিন্ অর্থাৎ পশু এবং পাখিসমূহ। মৃগয়া বা বন্য পশু শিকার। অর্থ পাল্টে বাংলায় একমাত্র অর্থ হরিণ। অনেকেই গরুকে গোরু লিখে থাকে। এই গোত্রেরই একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সংস্কৃতে গোরূপ শব্দের অর্থ গোরুসদৃশ বা গোরুর মত। অর্থাৎ গোরুর মত যে কোনও পশু। সেখান থেকে প্রাকৃতে গোরুঅ এবং তার থেকে বাংলা গোরু বা গরু। অর্থ পাল্টে কেবলই গো, রূপ উধাও।
শব্দের এই অর্থ পাল্টানোর ব্যাপাটাকে ভাষাতত্ত্বে অর্থসংকোচ বা narrowing of meaning বলা হয়। কোনও শব্দ এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় প্রবেশ করার সময়ও প্রায়ই অর্থের সংকোচ ঘটে। বাংলা মোরগ অর্থ কুক্কুট বা কুঁকড়া। শব্দটি ফারসি মুর্গ্ (مرغ) থেকে আগত; পুরনো ফারসিতেও তাই, পহলবিতে মুরু (mūrū), জেন্দাবেস্তায় মেরেগা (meregha), খানিকটা সংস্কৃতের মৃগের (मृग) সাথেও সম্পর্কিত। শব্দটির আদি অর্থ যে কোনও পাখি, স্ত্রী বা পুরুষ, যদিও জন শেক্সপিয়ারের ফারসি অভিধানে মুরগা (مرغا) অর্থ কুক্কুট। ফারসিতে গৃহপালিত পাখিদের বলা হয় মুর্গ-ই-খানগি (مرغ خانگي), পানির পাখিদের বলা হয় মুর্গ-আবি (مرغابی), ইত্যাদি। বাংলায় মোরগ বলতে পুরুষ বোঝায়; কখনও বা আ-যোগে মোরগা বা মুরগা, বিশেষত আঞ্চলিক ভাষায়। আর ই-যোগে মুরগি হলে তা স্ত্রীলিঙ্গ। হিন্দি এবং উর্দুতেও তেমনই।
শব্দের এই অর্থ পাল্টানোর ব্যাপাটাকে ভাষাতত্ত্বে অর্থসংকোচ বা narrowing of meaning বলা হয়। কোনও শব্দ এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় প্রবেশ করার সময়ও প্রায়ই অর্থের সংকোচ ঘটে। বাংলা মোরগ অর্থ কুক্কুট বা কুঁকড়া। শব্দটি ফারসি মুর্গ্ (مرغ) থেকে আগত; পুরনো ফারসিতেও তাই, পহলবিতে মুরু (mūrū), জেন্দাবেস্তায় মেরেগা (meregha), খানিকটা সংস্কৃতের মৃগের (मृग) সাথেও সম্পর্কিত। শব্দটির আদি অর্থ যে কোনও পাখি, স্ত্রী বা পুরুষ, যদিও জন শেক্সপিয়ারের ফারসি অভিধানে মুরগা (مرغا) অর্থ কুক্কুট। ফারসিতে গৃহপালিত পাখিদের বলা হয় মুর্গ-ই-খানগি (مرغ خانگي), পানির পাখিদের বলা হয় মুর্গ-আবি (مرغابی), ইত্যাদি। বাংলায় মোরগ বলতে পুরুষ বোঝায়; কখনও বা আ-যোগে মোরগা বা মুরগা, বিশেষত আঞ্চলিক ভাষায়। আর ই-যোগে মুরগি হলে তা স্ত্রীলিঙ্গ। হিন্দি এবং উর্দুতেও তেমনই।
Thursday, July 31, 2008
হাঁটু-ভাঙ্গা দ আর পেট-কাটা মূর্ধন্য ষ
এলাকাভেদে বর্ণমালার পঠনও ভিন্ন। অনেকে বাচ্চাদের মনে রাখার সুবিধার জন্য দ না ব'লে বলে হাঁটু-ভাঙ্গা দ কিংবা মূর্ধন্য ষ না ব'লে বলে পেট-কাটা মুর্ধন্য ষ। ক-এ ষ যুক্ত অনেক জায়গায় পুরনো রীতি অনুযায়ী ক্ষিয়; অনেকের কাছে ঙ হল উম্অ আর ঞ হল নিয়্অ। তবে বাংলার বর্ণমালার স্বরবর্ণের প্রথম দুই হরফের নাম নিয়ে বেশ মতভেদ আছে। সাধারণ ভাবে এগুলো স্বরে অ বা স্বরে আ; অন্তত ছোটদের তাই শেখানো হয়। ফারসি বা উর্দুর নিয়মে স্বর-এ-অ আ স্বর-এ-আ কিন্তু নয়। তাই ধারণা করা হয় ‘স্বরের অ’ এবং ‘স্বরের আ’-র বিকৃত রূপ স্বরে অ এবং আ। কেবল অ এবং আ বললেই চলে যদিও।
স্বর হরফ সাথে উচ্চারণ: অ বা স্বরের অ (/ɔ/ বা /ʃɔrer ɔ/); আ বা স্বরের আ (/ɑ/ বা /ʃɔrer ɑ/); হ্রস্ব ই (/rɔʃːo i/); দীর্ঘ ঈ (/dirgʱo i/); হ্রস্ব উ (/rɔʃːo u/); দীর্ঘ ঊ (/dirgʱo u/); ঋ (/ri/); ঌ (/li/); এ (/e/); ঐ (/oi/); ও (/o/); এবং ঔ (/ou/)। আর ব্যঞ্জন হরফ: ক (/kɔ/); খ (/kʰɔ/); গ (/gɔ/); ঘ (/gʱɔ/); ঙ (/uɔ̃/ বা /ũɔ̃/); চ (/tʃɔ/); ছ (/tʃʰɔ/); বর্গীয় বা বর্গ্য জ (/borgio/ বা /bɔrgo dʒɔ/); ঝ (/dʒʱɔ/); ঞ (/iɔ̃/ বা /ɪ̃ɔ̃/); ট (/ʈɔ/); ঠ (/ʈʰɔ/); ড (/ɖɔ/); ঢ (/ɖʱɔ/); মূর্ধন্য ণ (/murd̪ʱonːo nɔ/); ত (/t̪ɔ/); থ (/t̪ʰɔ/); দ (/d̪ɔ/); ধ (/d̪ʱɔ/); দন্ত্য ন (/d̪ɔnt̪o nɔ/); প (/pɔ/); ফ (/pʰɔ/); বর্গীয় বা বর্গ্য ব (/borgio/ বা /bɔrgo bɔ/); ভ (/bʱɔ/); ম (/mɔ/); অন্তঃস্থ য (/ ɔnt̪ɔst̪ʰo dʒɔ/); র (/rɔ/); ল (/lɔ/); তালব্য শ (/t̪ɑlobːo ʃɔ/); মূর্ধন্য ষ (/murd̪ʱonːo ʃɔ/); দন্ত্য স (/d̪ɔnt̪o ʃɔ/); হ (/ɦɔ/); ড-এ শূন্য বা বিন্দু ড় (/ɖɔ-e ʃunːo/ বা /bind̪u ɽɔ/); ঢ-এ শূন্য বা বিন্দু ঢ় (/ɖʱɔ-e ʃunːo/ বা /bind̪u ɽʱɔ/); অন্তঃস্থ য় (/ɔnt̪ɔst̪ʰo ɔ/); খণ্ড ত (/kʰɔnɖo tɔ/); ং-অনু্স্বার (/onuʃːɑr/); ঃ-বিসর্গ (/biʃɔrgo/); এবং ঁ-চন্দ্রবিন্দু (/tʃɔnd̪robind̪u/)।
অনেকে আবার ড় থেকে পৃথক করার জন্য র কে ব-এ শূন্য বা বিন্দু র বলে। স্বরের বর্ণাশ্রয়ী চিহ্নগুলোকে কার বলা হয়, যেমন, আ-কার, হ্রস্ব ই-কার, ইত্যাদি। বর্ণপূর্ব বর্ণাশ্রয়ী র-কে রেফ এবং আরও বেশ কিছু উত্তর-বর্ণাশ্রয়ী ব্যঞ্জনের নাম ফলা, যেমন, ন-ফলা, ল-ফলা, ব-ফলা, ইত্যাদি। ক-এ ষ যুক্ত হরফের নাম যুক্ত খ। বঙ্গহরফে সংস্কুত লিখতে গেলে আধা মাত্রার হ-এর মত দেখতে একটি হরফের ব্যবহার করতে হয়, ঽ। হরফটির দেখা মেলে পুরনো সাধু বাংলায়ও, যেমন ততোঽধিক। এর নাম অবগ্রহ, হরফের নিজস্ব কোনও উচ্চারণ নেই, কেবন সন্ধিজাত শব্দাদ্য অ-এর লোপ নির্দেশ করে।
স্বর হরফ সাথে উচ্চারণ: অ বা স্বরের অ (/ɔ/ বা /ʃɔrer ɔ/); আ বা স্বরের আ (/ɑ/ বা /ʃɔrer ɑ/); হ্রস্ব ই (/rɔʃːo i/); দীর্ঘ ঈ (/dirgʱo i/); হ্রস্ব উ (/rɔʃːo u/); দীর্ঘ ঊ (/dirgʱo u/); ঋ (/ri/); ঌ (/li/); এ (/e/); ঐ (/oi/); ও (/o/); এবং ঔ (/ou/)। আর ব্যঞ্জন হরফ: ক (/kɔ/); খ (/kʰɔ/); গ (/gɔ/); ঘ (/gʱɔ/); ঙ (/uɔ̃/ বা /ũɔ̃/); চ (/tʃɔ/); ছ (/tʃʰɔ/); বর্গীয় বা বর্গ্য জ (/borgio/ বা /bɔrgo dʒɔ/); ঝ (/dʒʱɔ/); ঞ (/iɔ̃/ বা /ɪ̃ɔ̃/); ট (/ʈɔ/); ঠ (/ʈʰɔ/); ড (/ɖɔ/); ঢ (/ɖʱɔ/); মূর্ধন্য ণ (/murd̪ʱonːo nɔ/); ত (/t̪ɔ/); থ (/t̪ʰɔ/); দ (/d̪ɔ/); ধ (/d̪ʱɔ/); দন্ত্য ন (/d̪ɔnt̪o nɔ/); প (/pɔ/); ফ (/pʰɔ/); বর্গীয় বা বর্গ্য ব (/borgio/ বা /bɔrgo bɔ/); ভ (/bʱɔ/); ম (/mɔ/); অন্তঃস্থ য (/ ɔnt̪ɔst̪ʰo dʒɔ/); র (/rɔ/); ল (/lɔ/); তালব্য শ (/t̪ɑlobːo ʃɔ/); মূর্ধন্য ষ (/murd̪ʱonːo ʃɔ/); দন্ত্য স (/d̪ɔnt̪o ʃɔ/); হ (/ɦɔ/); ড-এ শূন্য বা বিন্দু ড় (/ɖɔ-e ʃunːo/ বা /bind̪u ɽɔ/); ঢ-এ শূন্য বা বিন্দু ঢ় (/ɖʱɔ-e ʃunːo/ বা /bind̪u ɽʱɔ/); অন্তঃস্থ য় (/ɔnt̪ɔst̪ʰo ɔ/); খণ্ড ত (/kʰɔnɖo tɔ/); ং-অনু্স্বার (/onuʃːɑr/); ঃ-বিসর্গ (/biʃɔrgo/); এবং ঁ-চন্দ্রবিন্দু (/tʃɔnd̪robind̪u/)।
অনেকে আবার ড় থেকে পৃথক করার জন্য র কে ব-এ শূন্য বা বিন্দু র বলে। স্বরের বর্ণাশ্রয়ী চিহ্নগুলোকে কার বলা হয়, যেমন, আ-কার, হ্রস্ব ই-কার, ইত্যাদি। বর্ণপূর্ব বর্ণাশ্রয়ী র-কে রেফ এবং আরও বেশ কিছু উত্তর-বর্ণাশ্রয়ী ব্যঞ্জনের নাম ফলা, যেমন, ন-ফলা, ল-ফলা, ব-ফলা, ইত্যাদি। ক-এ ষ যুক্ত হরফের নাম যুক্ত খ। বঙ্গহরফে সংস্কুত লিখতে গেলে আধা মাত্রার হ-এর মত দেখতে একটি হরফের ব্যবহার করতে হয়, ঽ। হরফটির দেখা মেলে পুরনো সাধু বাংলায়ও, যেমন ততোঽধিক। এর নাম অবগ্রহ, হরফের নিজস্ব কোনও উচ্চারণ নেই, কেবন সন্ধিজাত শব্দাদ্য অ-এর লোপ নির্দেশ করে।
Monday, July 28, 2008
তেরিজ, আরবির আর বাংলার
কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটির ১৮১৯ সালে ছাপা ‘হার্লের অ্যারিথমেটিক: ফর দ্য ইউস অব বেঙ্গালি স্কুলস’ বা বাংলায় ‘গণিতাঙ্ক, পাঠশালার নিমিত্তে’ বইয়ে বর্তমানে প্রচলিত শব্দের পরিবর্তে কিছু আরবি এবং সংস্কৃত শব্দের দেখা মেলে। বইয়ে আছে,—
‘+ তেরিজের চিহ্ন এই; অর্থাৎ যে স্থানে এই চিহ্ন দেখিবা, সে সকল অঙ্কের তেরিজ করিতে হইবে জানিবা. ... যেমন ৫ + ৫ = ১০
- জমা খরচের চিহ্ন, .. যেমন ৫ - ৪ = ১
× পূরণের চিহ্ন, ... যেমন ৫ × ৫ = ২৫
÷ হরণের চিহ্ন, . . . যেমন ৮ ÷ ২ = ৪
= লব্ধের চিহ্ন, এই চিহ্ন সর্বত্রই ব্যবহার্য্য, যেমন ৫+৫ তেরিজ লব্ধ=১০।’
পূরণ, হরণ, লব্ধ এবং জমা খরচ বেশ বোঝা গেলেও তেরিজ শব্দটি বর্তমানে যথেষ্ট অচেনা। অথচ এক সময় এর বেশ প্রচলন ছিল। আরবি তা'রীজ় (تعريض, বিশেষ্য, বৃদ্ধি হওয় বা ঘটানো, জাহির করা, বিরোধিতা করা, আপত্তি করা, ইত্যাদি) এসেছে ʻআর্জ় (عرض, ক্রিয়াপদ, প্রশস্ত হওয়া বা করা, আর দ্বিতীয় অর্থ দেখানো বা পেশ করা) থেকে। জন টম্সন প্ল্যাট্স এবং জন শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানে শব্দটির দেখা মেলে। বাংলায় অর্থ পাল্টে গেছে।। তেরিজ কষা অর্থ অঙ্ক করা বা যোগফল বের করা। প্রমথ চৌধুরীতে আছে,— ‘ঠাকুরানি এখন আয়ব্যয়ের হিসাব তাঁর কাছে বুঝিয়ে দিতে চান; সেই জন্যই তাঁর তেরিজ খারিজ শেখা দরকার।’
তবে আরবির একই ধাতুমূল (عرض, আরজ) থেকে আসা আরেকটি শব্দকে বাংলার সম্পদ বলে চিনে নিতে কষ্ট হয় না মোটেও ,— আরজ, সাথে ফারসি গুজার (گذار, যে করছে এমন) অর্থাৎ আরজগুজার অর্থ আবেদনকারী, বা আরজ, সাথে ফারসি প্রত্যয় (ي, ই) অর্থাৎ আরজি ও আর্জি অর্থ আবেদনপত্র। উর্দুতেও আরজি একই অর্থে প্রচলিত।
‘+ তেরিজের চিহ্ন এই; অর্থাৎ যে স্থানে এই চিহ্ন দেখিবা, সে সকল অঙ্কের তেরিজ করিতে হইবে জানিবা. ... যেমন ৫ + ৫ = ১০
- জমা খরচের চিহ্ন, .. যেমন ৫ - ৪ = ১
× পূরণের চিহ্ন, ... যেমন ৫ × ৫ = ২৫
÷ হরণের চিহ্ন, . . . যেমন ৮ ÷ ২ = ৪
= লব্ধের চিহ্ন, এই চিহ্ন সর্বত্রই ব্যবহার্য্য, যেমন ৫+৫ তেরিজ লব্ধ=১০।’
পূরণ, হরণ, লব্ধ এবং জমা খরচ বেশ বোঝা গেলেও তেরিজ শব্দটি বর্তমানে যথেষ্ট অচেনা। অথচ এক সময় এর বেশ প্রচলন ছিল। আরবি তা'রীজ় (تعريض, বিশেষ্য, বৃদ্ধি হওয় বা ঘটানো, জাহির করা, বিরোধিতা করা, আপত্তি করা, ইত্যাদি) এসেছে ʻআর্জ় (عرض, ক্রিয়াপদ, প্রশস্ত হওয়া বা করা, আর দ্বিতীয় অর্থ দেখানো বা পেশ করা) থেকে। জন টম্সন প্ল্যাট্স এবং জন শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানে শব্দটির দেখা মেলে। বাংলায় অর্থ পাল্টে গেছে।। তেরিজ কষা অর্থ অঙ্ক করা বা যোগফল বের করা। প্রমথ চৌধুরীতে আছে,— ‘ঠাকুরানি এখন আয়ব্যয়ের হিসাব তাঁর কাছে বুঝিয়ে দিতে চান; সেই জন্যই তাঁর তেরিজ খারিজ শেখা দরকার।’
তবে আরবির একই ধাতুমূল (عرض, আরজ) থেকে আসা আরেকটি শব্দকে বাংলার সম্পদ বলে চিনে নিতে কষ্ট হয় না মোটেও ,— আরজ, সাথে ফারসি গুজার (گذار, যে করছে এমন) অর্থাৎ আরজগুজার অর্থ আবেদনকারী, বা আরজ, সাথে ফারসি প্রত্যয় (ي, ই) অর্থাৎ আরজি ও আর্জি অর্থ আবেদনপত্র। উর্দুতেও আরজি একই অর্থে প্রচলিত।
Saturday, July 26, 2008
চিত না পট?
একটি পয়সা উপরে ছুঁড়ে দিয়ে মাটিতে পড়ার অপেক্ষা। চিত না পট? চিত হলে কারুর জিত, আর পট হলে জিত অন্য কারুর। ইংরেজিতে একটি লোক-ঠকানো কথা আছে, – heads I win, tails you lose (চিত হলে আমার জিত, আর পট হলে তোমার হার)। হিন্দিতেও প্রায় একই রকম, তবে একটু বাড়িয়ে,– चित भी मेरी , पट भी मेरी (চিত ভী মেরী পট ভী মেরী, চিত হলেও আমার, পটও আমার); আর যেহেতু পয়সা কখনও কখনও কোনও দিকে না পড়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তাই সাথে বলা হয়,— खड़ा मेरे बाप का (খড়া মেরে বাপ কা, আর দাঁড়িয়ে থাকলে আমার বাবার)।
তা যাই হোক, প্রাচীন কাল থেকেই পয়সার একদিকে শাসনকর্তার ছবি আর অন্যদিকে যে কোনও ছবি থাকার চল। হালে অনেক দেশেই নিয়মটা যদিও পাল্টেছে। আগে যে দিকে শাসনকর্তার ছবি থাকত সে দিকে এখন অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীক। এই শাসনকর্তার মাথার ছবি বা রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীকের দিককে ইংরেজিতে বলা হয় obverse আর অন্য দিককে reverse; এই obverse-ই heads বা বাংলায় চিত, আর reverse হল tails বা বাংলায় পট। বাংলায় চিৎপটাং শব্দটির অর্থ ঊর্ধমুখে শয়ান এবং চিত-পটের চিতের ছবির মাথা আকাশের দিকে মুখ করে পড়া হলেও ‘চিত না পটে’র আগমন সম্ভবত হিন্দি चित या पट (চিত য়া পট) থেকে। চিত সংস্কৃত চিত্র থেকে, যার অর্থ চিত্র, উজ্জ্বল, স্পষ্ট, এমনকি আকাশ; আর পট সংস্কৃত পট্ থেকে যার অর্থ পড়া, নিচে ছোঁড়া, ইত্যাদি। বাংলায় পট শব্দের একটি অর্থ মূল ছবির পিছনের বা দূরের দৃশ্য।
তা যাই হোক, প্রাচীন কাল থেকেই পয়সার একদিকে শাসনকর্তার ছবি আর অন্যদিকে যে কোনও ছবি থাকার চল। হালে অনেক দেশেই নিয়মটা যদিও পাল্টেছে। আগে যে দিকে শাসনকর্তার ছবি থাকত সে দিকে এখন অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীক। এই শাসনকর্তার মাথার ছবি বা রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীকের দিককে ইংরেজিতে বলা হয় obverse আর অন্য দিককে reverse; এই obverse-ই heads বা বাংলায় চিত, আর reverse হল tails বা বাংলায় পট। বাংলায় চিৎপটাং শব্দটির অর্থ ঊর্ধমুখে শয়ান এবং চিত-পটের চিতের ছবির মাথা আকাশের দিকে মুখ করে পড়া হলেও ‘চিত না পটে’র আগমন সম্ভবত হিন্দি चित या पट (চিত য়া পট) থেকে। চিত সংস্কৃত চিত্র থেকে, যার অর্থ চিত্র, উজ্জ্বল, স্পষ্ট, এমনকি আকাশ; আর পট সংস্কৃত পট্ থেকে যার অর্থ পড়া, নিচে ছোঁড়া, ইত্যাদি। বাংলায় পট শব্দের একটি অর্থ মূল ছবির পিছনের বা দূরের দৃশ্য।
Sunday, July 20, 2008
পুরনো বাংলায় শব্দের পুনরুক্তি
পুরনো বাংলায় নিয়ম ছিল শব্দ দ্বিরুক্তির জন্য শব্দ একবার লিখে পরে, অনেক সময় তার প্রায় গায়ে লাগিয়ে, ২ সঙ্খ্যাটি লেখা — অর্থ আগের শব্দটি পুনরুক্ত হচ্ছে। যেমন, — ‘যেহেতুক পৃথিবীর মধ্যে যে২ কর্ম্ম হইয়াছে সে২ কর্ম্মহইতে এ কর্ম্ম বড়।’ শ্রীরামপুর থেকে মিশনারিদের প্রকাশিত মাসিক দিগ্দর্শন প্রথম সংখ্যার (এপ্রিল ১৮১৮) প্রথম পৃষ্ঠা থেকে নেওয়া। গেল শতকের মাঝামাঝির পরেও ছাপানো পুঁথিতে এই ব্যাপারটি চোখে পড়ে। পুরনো লেখায়, পুঁথি বা সাধারণ কাজে, এই নিয়মের প্রচলন ছিল। পুঁথিতে দেখা যায়, ‘কৃষ্ণ২ বলি গোপী ডাকে অচেতনে।’
১৮৯১ সালে অক্সফোর্ড ক্ল্যারেন্ডন প্রেসের ছাপানো সাহিত্যিক ও কথ্য রূপের বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (Grammar of the Bengali Language: Literary and Colloquial)-এ জন বিম্স-এর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, — যখন কোনও শব্দের পুনরুক্তি হয়, বিশেষত বাংলা যা প্রায়শই ঘটে, তখন শব্দটি একবার লেখার পর যতবার তার পুনরুক্তি ঘটবে তার সঙ্খ্যাটি লেখার নিয়ম। যেমন যে যে লেখা হয় যে২, পুনঃ পুনঃ লেখা হয় পুনঃ২, শ্রী শ্রী শ্রী লেখা হয় শ্রী৩।
আধুনিক মান্য সাহিত্যের বা চলতি বাংলায় নিয়মটি উঠে গেছে।
১৮৯১ সালে অক্সফোর্ড ক্ল্যারেন্ডন প্রেসের ছাপানো সাহিত্যিক ও কথ্য রূপের বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (Grammar of the Bengali Language: Literary and Colloquial)-এ জন বিম্স-এর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়, — যখন কোনও শব্দের পুনরুক্তি হয়, বিশেষত বাংলা যা প্রায়শই ঘটে, তখন শব্দটি একবার লেখার পর যতবার তার পুনরুক্তি ঘটবে তার সঙ্খ্যাটি লেখার নিয়ম। যেমন যে যে লেখা হয় যে২, পুনঃ পুনঃ লেখা হয় পুনঃ২, শ্রী শ্রী শ্রী লেখা হয় শ্রী৩।
আধুনিক মান্য সাহিত্যের বা চলতি বাংলায় নিয়মটি উঠে গেছে।
Wednesday, July 16, 2008
রেস্তোরাঁর চন্দ্রবিন্দু
কেউ খাবার কিনে খেতে পারে এমন জায়গাবিশেষের নাম রেস্তোরাঁ। রেস্তরাঁও লেখা হয়। শব্দটি বহুল প্রচলিত এবং বহুল ব্যবহৃত যদিও বেশিরভাগ বাংলা অভিধানে শব্দটির দেখা মেলে না। আর রাস্তার পাশে রেস্তোরাঁর নামে চন্দ্রবিন্দুটিও প্রায়ই অনুপস্থিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা মধুর ক্যান্টিন নামে পরিচিত সেখানে লেখা — মধুর রেস্তোরা; চন্দ্রবিন্দু নেই।
শব্দটি রাজশেখর বসু, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা যোগেশচন্দ্র রায়ে নেই, নেই কাজী আব্দুল ওদুদেও। বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনও বানান বা উচ্চারণ অভিধানেও নেই। এর দেখা মেলে কেবল বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক অভিধান এবং সাহিত্য সংসদের বাংলা অভিধানে। বাংলা একাডেমির অভিধানে ক্রমটি রেস্তোরাঁ, রেস্তরাঁ; ব্যুৎপত্তি ফারসি (ছাপার ভুল হয়ে থাকতে পারে); আর সংসদ অভিধানে রেস্তরাঁ, রেস্তোরাঁ; ব্যুৎপত্তি ইংরেজি হয়ে, ফরাসি থেকে। এর আরও দেখা মেলে পশ্চিম বঙ্গ আকাদেমির বানান অভিধানে, রেস্তোরাঁ; সাহিত্য সংসদের বানান অভিধানে, রেস্তরাঁ; এবং সাহিত্য সংসদের উচ্চারণ অভিধানে, রেস্তরাঁ।
তবে জন মেন্ডিস, জে সাইক্স, উইলিয়াম কেরি, হেনরি পিট্স ফর্স্টার বা পি, এস, ডি'রোজারিওর পুরনো দিনের কোনও বাংলা অভিধানে শব্দটি পাওয়া যায় না। শব্দটি বাংলায় প্রবেশ ফরাসি থেকে, ইংরেজির হাত ধরে হলে হতেও পারে। ইংরেজিতে শব্দটি এসেছে ফরাসি ক্রিয়া restaurer এর বর্তমান ক্রিয়াবাচক বিশেষণ restaurant থেকে, অর্থ সেই খাদ্য যা সতেজ করে। এই ফরাসি ক্রিয়ার আগমন পুরনো ফরাসি restorer থেকে, আর তার আগমন লাতিন restaurare (re- + -staurare) থেকে, অর্থ আবার তৈরি করা। আর ফরাসিতে কেনার পর বসে খাবার জায়গা অর্থে প্রথম ব্যবহার ১৭৬৫ সালে, আর ইংরেজিতে ১৮২৭ সালে।
গুগলে শব্দটির সাতটি বানান পাওয়া গেছে — রেস্তোরা, রেস্তোরাঁ, রেস্তোঁরা, রেঁস্তোরা, রেস্তরাঁ, রেস্তঁরা, রেঁস্তরা; এর বাইরে আর একটি বানানই কেবল সম্ভব — রেস্তরা; একটু খুঁজলে হয়তও তারও দেখা পাওয়া যাবে। ব্যবহার দেখে মনে হয় একসময় রেস্তোরাঁর চন্দ্রবিন্দুটি লুপ্ত হবে, বিশেষত পূর্ব বঙ্গে।
শব্দটি রাজশেখর বসু, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা যোগেশচন্দ্র রায়ে নেই, নেই কাজী আব্দুল ওদুদেও। বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনও বানান বা উচ্চারণ অভিধানেও নেই। এর দেখা মেলে কেবল বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক অভিধান এবং সাহিত্য সংসদের বাংলা অভিধানে। বাংলা একাডেমির অভিধানে ক্রমটি রেস্তোরাঁ, রেস্তরাঁ; ব্যুৎপত্তি ফারসি (ছাপার ভুল হয়ে থাকতে পারে); আর সংসদ অভিধানে রেস্তরাঁ, রেস্তোরাঁ; ব্যুৎপত্তি ইংরেজি হয়ে, ফরাসি থেকে। এর আরও দেখা মেলে পশ্চিম বঙ্গ আকাদেমির বানান অভিধানে, রেস্তোরাঁ; সাহিত্য সংসদের বানান অভিধানে, রেস্তরাঁ; এবং সাহিত্য সংসদের উচ্চারণ অভিধানে, রেস্তরাঁ।
তবে জন মেন্ডিস, জে সাইক্স, উইলিয়াম কেরি, হেনরি পিট্স ফর্স্টার বা পি, এস, ডি'রোজারিওর পুরনো দিনের কোনও বাংলা অভিধানে শব্দটি পাওয়া যায় না। শব্দটি বাংলায় প্রবেশ ফরাসি থেকে, ইংরেজির হাত ধরে হলে হতেও পারে। ইংরেজিতে শব্দটি এসেছে ফরাসি ক্রিয়া restaurer এর বর্তমান ক্রিয়াবাচক বিশেষণ restaurant থেকে, অর্থ সেই খাদ্য যা সতেজ করে। এই ফরাসি ক্রিয়ার আগমন পুরনো ফরাসি restorer থেকে, আর তার আগমন লাতিন restaurare (re- + -staurare) থেকে, অর্থ আবার তৈরি করা। আর ফরাসিতে কেনার পর বসে খাবার জায়গা অর্থে প্রথম ব্যবহার ১৭৬৫ সালে, আর ইংরেজিতে ১৮২৭ সালে।
গুগলে শব্দটির সাতটি বানান পাওয়া গেছে — রেস্তোরা, রেস্তোরাঁ, রেস্তোঁরা, রেঁস্তোরা, রেস্তরাঁ, রেস্তঁরা, রেঁস্তরা; এর বাইরে আর একটি বানানই কেবল সম্ভব — রেস্তরা; একটু খুঁজলে হয়তও তারও দেখা পাওয়া যাবে। ব্যবহার দেখে মনে হয় একসময় রেস্তোরাঁর চন্দ্রবিন্দুটি লুপ্ত হবে, বিশেষত পূর্ব বঙ্গে।
Tuesday, July 08, 2008
চন্দ্রবিন্দু, আগে না পরে?
চলতি প্রথায় চাঁদের বানান চ-এ চন্দ্রবিন্দু যোগ আ-কার আর দ। অন্তত এভাবেই শিশুদের বর্ণশিক্ষা দেওয়া হয়। কারণটি বোধ করি সীসার সাবেকি ছাঁদের হরফে চন্দ্রবিন্দু ছাপায় সাধারণত মূল ব্যঞ্জনের উপরে বসে। প্রযুক্তিগত কারণে। মূল হরফের সাথে একই ছাঁদে চন্দ্রবিন্দু ঢালাই করা হত যেন ছাপার সময় হরফ ভেঙ্গে না যায়। সেই ধারায় কম্পিউটারে ২৫৬-হরফের নিয়মে যখন বাংলা লেখা হয়, তখনও আগে মূল হরফ, তারপর চন্দ্রবিন্দু এবং তারপর কার বসানো হয়। হালে ইউনিকোড চালু হওয়ায় ক্রমটি পাল্টে গেছে। আগে মূল ব্যঞ্জন, পরে কার এবং শেষে চন্দ্রবিন্দু, কারণ চন্দ্রবিন্দুর কাজটি হল স্বর বা স্বরের চিহ্নকে আনুনাসিক করা, মূল ব্যঞ্জন হরফকে নয়। আবার স্বরের চিহ্ন ছাড়া চন্দ্রবিন্দু বসলে তা মূল হরফের পরেই বসে, তার কারণ চন্দ্রবিন্দু এখানে চ্ ব্যঞ্জনে নিহিত অ-এর উচ্চারণকে আনুনাসিক করে। ব্যাপারটা একটু গোলমেলে ঠেকলেও চাঁদ বানানে আ-কারের পরেই চন্দ্রবিন্দু বসা উচিত, চ-এর পরে নয়, আর আ-কার বসলে চ্-এর নিহিত অ-স্বরের কোনও অস্তিত্ব থাকে না।
Monday, June 30, 2008
মন (চিত্ত) এবং মন (ওজনের মাপ)
অনেকেরই ধারণা মন (চিত্ত) এবং মন (ওজনের মাপ বিশেষ), বিকল্প বানানে মণ, শব্দদুটির উচ্চারণ ভিন্ন। মান্য চলিত বাংলায় মনের (চিত্ত) উচ্চারণ, সমস্ত অভিধান মতে, মোন (/mon/), যদিও পুব বাংলায় প্রায়ই মন (/mɔn/) শ্রুত হয়। আবার ওজনের মাপ অর্থে মন, বা মণ, এর উচ্চারণও মোন (/mon/)। ১৮১৯ সালে চুঁচুঁড়া থেকে কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটীর (পুরনো বানান) দ্বারা ছাপানো 'হার্রলের গণিতাঙ্ক: পাঠশালার নিমিত্তে' নামের বইয়ে মন (ওজনের মাপ) এর বানান দেখা যায় মোন, বানানটি একটু চোখে ঠেকলেও, উচ্চারণটি বেশ বোঝা যায়।
Monday, May 26, 2008
বাংলায় সমাক্ষরের যুক্তি
বাংলার সমাক্ষরের যুক্তি, ইংরেজিতে যাকে geminate cluster বলা চলে, তার সঙ্খ্যা নিতান্তই কম নয়: ক্ক, গ্গ, চ্চ, জ্জ, ট্ট, ড্ড, ণ্ণ, ত্ত, দ্দ, ন্ন, প্প, ব্ব, ম্ম, য্য, এবং ল্ল। ঘোষ বা অঘোষ যাই হোক না কেন, সবগুলোই অল্পপ্রাণ। মহাপ্রাণে যে যুক্তি হয় না, তা অবশ্য নয়। ব্যাপারটি হল মহাপ্রাণ-মহাপ্রাণ যুক্তি হলে আগের অক্ষরটি তার মহাপ্রাণত্ব হারায়: চ্ছ, জ্ঝ, ত্থ, দ্ধ, ইত্যাদি। আরও যুক্তি সম্ভব, তবে সেগুলো এখনও সংস্কৃত, পালি বা প্রাকৃতের বৈশিষ্ট্য হিসেবে থেকে গেছে, বাংলার হয়ে ওঠে নি, যেমন অবহট্ঠ (পুরনো বাংলা হরফে ট-এ নিচে ঠ-এর যুক্তি), গর্ব্ভ (পুরনো বাংলা হরফে এবং সংস্কৃতে ব-এর নিচ ভ, উপরে রেফ), ইত্যাদি।
তবে প্রতিবর্ণনের সময় য্য-র দিকে আলাদা দৃষ্টি দিতে হয়। আন্তর্জাতিক মান সংস্থার প্রবর্তিত আমাস ১৫৯১৯: দেবনাগরী এবং সম্পর্কিত ইন্দীয় লেখার লাতিন হরফে প্রতিবর্ণীকরণ পদ্ধতিতে য্য-এর প্রতিবর্ণন ẏẏ। য-ফলা য-এর সাথে ছাড়া আর সব জায়গায় y, প্রতিবর্ণনে।
তবে প্রতিবর্ণনের সময় য্য-র দিকে আলাদা দৃষ্টি দিতে হয়। আন্তর্জাতিক মান সংস্থার প্রবর্তিত আমাস ১৫৯১৯: দেবনাগরী এবং সম্পর্কিত ইন্দীয় লেখার লাতিন হরফে প্রতিবর্ণীকরণ পদ্ধতিতে য্য-এর প্রতিবর্ণন ẏẏ। য-ফলা য-এর সাথে ছাড়া আর সব জায়গায় y, প্রতিবর্ণনে।
Friday, May 23, 2008
প্যাঁচের জিলাপি, তার দেশ ভ্রমণ
ময়রার দোকানে যা, পয়সা ফেলে দে, যত চাস জিলিপি পাবি। সুকুমার রায়ের দাশুর কীর্তি। জিলিপি কথ্য ভাষা, মান্য বাংলায় জিলাপি। জিলেপি, জিলেবি, জিলাবি ইত্যাদি রূপেও পাওয়া দুষ্কর নয়। শব্দটি বাংলায় ঢুকেছে হিন্দি जलेबी (জলেবী) বা जिलेबी (জিলেবী) থেকে। উর্দুতে বানান جلبى। ধারণা করা হয় হিন্দি শব্দটি আরবির زلابية (জ়ালাবিয়া) বা ফারসির زلیبیا (জ়োলেবিয়া) থেকে আগত। ভারতীয় ভাষায় শব্দটি পাওয়া যায় ১৫ শতকের দিকে, তার আগে নয়। হবসন-জবসনে বানান jelaubee, আর ব্যুৎপত্তিতে বলা আছে সম্ভবত আরবির জালাবিয়া বা ফারসির জলিবিয়া থেকে আগত। মিষ্টান্নটির হিস্পানি নাম zalabia, (আফ্রিকার) ফরাসিতেও তাই।
Sunday, May 18, 2008
চিকিৎসার্থ সাহায্যের আবেদন
নবকুমার পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমায় কোথায় লইয়া যাইতেছেন?” / কাপালিক কহিল, “পূজার স্থানে।” / নবকুমার কহিলেন, “কেন?” / কাপালিক কহিল, “বধার্থ।” — বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুণ্ডলা। বধার্থ অর্থ বধের হেতু, নিমিত্ত বা জন্য। অর্থ শব্দের একটি অর্থ। এক্ষেত্রে এ-বিভক্তির প্রয়োজন পড়ে না। যেমন, পরার্থ কর্ম, জনগণের স্বার্থ রক্ষার্থ আইন, চিকিৎসার্থ সাহায্যের আবেদন, ইত্যাদি। জ্যেষ্ঠ এক সহকর্মীর আক্ষেপ নিমিত্ত অর্থে প্রায়ই পত্রিকার পাতায় চিকিৎসার্থে সাহায্যের আবেদন করা হয়, অর্থাৎ এ-বিভক্তির বাহুল্য।
Wednesday, April 23, 2008
যুক্তাক্ষর: ল-এ থ
দেশ পত্রিকায় অনেক আগে ছাপা একটি বিজ্ঞাপনে একটি নতুন যুক্তহরফের দেখা মিলেছিল — হেল্থ। আবারও ল-এ থ। তবে যুক্তাক্ষরটি যে বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছিল তা হাতে লেখা; কোনও ফন্টের অংশ নয়। তবুও তা যুক্তাক্ষরই এবং বিধিবহির্ভূত। বিদেশি শব্দ লিখতে গিয়ে হসন্ত বা হলন্তের একটু চিন্তিত ব্যবহার করলেই নতুন যুক্তাক্ষর তৈরি করতে হয় না। হেল্থ কেয়ার না লিখে হেল্থ বা হেল্থ্ (দুটি হসন্ত একটু কেমন যেন দেখায়) কেয়ার লিখলেও স্বাস্থ্য সেবা বা পরিষেবাতে কোন দোষ হয় না।
Monday, April 21, 2008
লিখিবার আলমারি
মেজ বা লেখার জন্য ব্যবহার্য ছোট চৌকিকে নাকি বাংলায় 'লিখিবার আলমারি' বলা হয়। হত হয়ত। এখন তো চোখে পড়ে না। মনসিনিওর সেবাস্তিআঁউ রোদোল্ফো দালগাদো'র ইনফ্লুয়েন্সিয়া দো ভোকাবুলারিউ পোর্তুগেস এম লিঙ্গুয়াস আসিয়াতিকাস (Influência do vocabulario português em linguas asiáticas) এর ১৯৩৬ সালে ছাপানো আন্তনি হাভিয়ের সোআরেস-এর ইংরেজি অনুবাদ এশীয় ভাষায় পর্তুগিজ শব্দের প্রভাব (Portuguese vocables in Asiatic Languages)-এ তেমনটিই বলা আছে। বইটিতে হিন্দি থেকেও একই রকম উদাহরণ দেওয়া আছে: লিখনে কী আলমারী (लिखने की आलमारी)। যদিও আলমারি বলতে সাধারণত ইংরেজির almirah, cupboard বা closet-কেই বোঝায়। কোনও বাংলা অভিধানেই আলমারির চৌকি অর্থের দেখা মেলে না। বাংলার আলমারি এবং ইংরেজির almirah দুটি শব্দর উৎস এক: পর্তুগিজ armário।
Sunday, April 20, 2008
যুক্তাক্ষর: ল-এ স
দিনাজপুরে রেল স্টেশন থেকে একটু পশ্চিমে এগিয়ে রাস্তার দক্ষিণে ছোট একটা কাপড় ধোলাইয়ের দোকান। তার দরজার কাঠে লেখা 'এখানে ফল্স লাগানো হয়' — ল্ + স। অর্থাৎ আলগা কাপড়। যাই হোক, যুক্তাক্ষরটি নতুন, চোখে পড়ার মত আবার বাংলায় প্রচলিত যুক্ত হরফের তালিকার বাইরে। এই সময়ে বাংলা ইউনিকোড ফন্টের কারণে অনেক ধরণের যুক্তাক্ষরই লেখা যায়, যাওয়া উচিত কিনা তা যদিও বিতর্কের বিষয়। ফল্স বা ফল্স্ লিখলেই হত, যুক্তহরফের ঝামেলা না বাড়িয়ে।
Monday, April 07, 2008
জন মেন্ডিসের হরফ পরিবর্ধন
পরশুরামের দরকার পড়েছিল তারিণী কবিরাজের ভাষায় পূর্ববঙ্গীয় আমেজের; আর তাই ‘Zান্তি পারো না।’ হাসির গল্প বলে রোমক হরফের মিশেল দেওয়া। কিন্তু অভিধান বা গবেষণাধর্মী কাজে একটি বিশেষ নিয়মে ব্যবহার দেখা যায়। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানানের নিয়মে, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাজে এবং আরও অনেক জায়গায় পরিবর্ধিত হরফের ব্যবহার দেখা যায়। বিংশ শতকের শুরুর প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করে যে জ-এর নিচে ফুটকি জ় দিয়ে ইংরেজির জ়েড (z) বা আরবির জ়াল (ذ ,ز ,ض ,ظ) এবং সমধ্বনি বোঝানো হবে; বিকল্পে জ-এর পাশে নিচের দিকে ফুটকি, জ.। সুনীতিকুমার এবং জ্ঞানেন্দ্রমোহনেরও একই মত। তবে সুনীতিকুমারের পছন্দ পাশে ফুটকি, কারণ এতে করে নতুন হরফ বানাতে হত না; আর জ্ঞানেন্দ্রমোহনে পছন্দ নিচে ফুটকি।
বুদ্ধদেব বসু পরে জ-এর নিচে দুই ফুটকি দিয়ে, জ̤, এর ব্যবহার শুরু করে ফরাসি je (জ্য̤, আমি) বা রুশ жизнь (জি̤জ়ন্, জীবন) এর প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনি বোঝাতে। যদিও এই ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রমোহন এবং সুনীতিকুমারের বিধান ঝ় বা ঝ.। কিন্তু এরও বেশ আগে, আগের শতকের মাঝামাঝিতে, ১৮৫১ সালে কলকাতায় ছাপানো জন মেন্ডিসের কম্প্যানিঅন টু জনসন্'স ডিকশনারি: বেঙ্গলি অ্যান্ড ইংলিশ-এ এই হরফ পরিবর্ধনের একটি উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়। মেন্ডিসের অভিধানের একটি উল্লেখ করার মত বিষয় হল আরবি-ফারসি থেকে আসা শব্দে জ এবং জ় ধ্বনির বানানে পার্থক্য নির্দেশ, জ̤-এর নিচে দুই ফুটকি দিয়ে। ছবিতে উপরে আজি এবং আজিকার শব্দ দুটি বাংলার নিজের, আর নিচের আজি̤জ̤ এবং আজি̤ম শব্দ দুটি আরবি-ফারসির, জ-এর নিচে দুটি করে ফুটকি।
বুদ্ধদেব বসু পরে জ-এর নিচে দুই ফুটকি দিয়ে, জ̤, এর ব্যবহার শুরু করে ফরাসি je (জ্য̤, আমি) বা রুশ жизнь (জি̤জ়ন্, জীবন) এর প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনি বোঝাতে। যদিও এই ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রমোহন এবং সুনীতিকুমারের বিধান ঝ় বা ঝ.। কিন্তু এরও বেশ আগে, আগের শতকের মাঝামাঝিতে, ১৮৫১ সালে কলকাতায় ছাপানো জন মেন্ডিসের কম্প্যানিঅন টু জনসন্'স ডিকশনারি: বেঙ্গলি অ্যান্ড ইংলিশ-এ এই হরফ পরিবর্ধনের একটি উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়। মেন্ডিসের অভিধানের একটি উল্লেখ করার মত বিষয় হল আরবি-ফারসি থেকে আসা শব্দে জ এবং জ় ধ্বনির বানানে পার্থক্য নির্দেশ, জ̤-এর নিচে দুই ফুটকি দিয়ে। ছবিতে উপরে আজি এবং আজিকার শব্দ দুটি বাংলার নিজের, আর নিচের আজি̤জ̤ এবং আজি̤ম শব্দ দুটি আরবি-ফারসির, জ-এর নিচে দুটি করে ফুটকি।
Tuesday, April 01, 2008
আরবি-ফারসির র, বাংলায় ড়
আরবি বা ফারসির র বাংলায় ড় হয়ে যায়। সবক্ষেত্রে অবশ্যই নয়। তবে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে তার পুরোটা এখনও হয়ত জানা যায় নি। আপাতত দুটো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আজুড়ে বা আজাড়ে প্যাঁচাল, অর্থাৎ বেহুদা বা অত্যধিক বক্তৃতা — বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে আজুড়ে শব্দটার মূল ফারসি আজার (آزار, অর্থ অসুবিধা, বিরক্তি, উচ্ছৃঙ্খলা, ঝগড়া, অত্যাচার ইত্যাদি), সাথে বাংলা ইয়া প্রত্যয় যোগে আজাড়িয়া (ঢাকার ভাষায় প্রায়ই শোনা যায় আজাইরা, অপিনিহিতির উদাহরণ) এবং সেখান থেকে আজাড়ে, অভিশ্রুতি, এবং সেখান থেকে আজুড়ে। অনেক অভিধানে শব্দটি নেই আবার বাংলা একাডেমির বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে শব্দটি ব্যুৎপত্তি অন্যভাবে দেখানো হয়েছে; চলন্তিকা মতে যার জাড় (জড়) বা মূল নাই, অমূলক, যেমন আজাড়িয়া গল্প।
তেমনি ভাবে গোমড়া মুখ, অপ্রসন্ন, গুমট, মেঘাছন্ন অর্থে। ফারসিতে গুমরাহ্ (گمراه, অর্থ পথ-ভ্রষ্ট, বঞ্চিত, হতবুদ্ধি ইত্যাদি), অন্তত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে। বাঙ্গালা ভাষার অভিধান মত শব্দটি ফারসি গুমান (گمان, অর্থ মত, ধারণা, পছন্দ, চিন্তা, সন্দেহ, অবিশ্বাস ইত্যাদি, যা পহ্লবি গুমান gumān থেকে আগত) > হিন্দি গুমর (गुमर, অর্থ অভিমান, অহঙ্কার) থেকে ব্যুৎপন্ন।
বাংলার ফেঁকড়া বা ফ্যাঁকড়াও, মূল বিষয়ের আনুষাঙ্গিক বিঘ্ন অর্থে, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে আরবির ফিক়রাহ (فقرة, অর্থ চিহ্ন, উদ্দেশ্য ইত্যাদি) থেকে আগত। যদিও জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দটির উৎপত্তি হিসেবে তিনটি ভাষার শব্দ দেওয়া আছে, ওড়িয়া ফাঁকড়া (ଫାଁକଡ଼ା), সংস্কৃত ফর্ফরীক (फर्फरीक) আর অসমিয়া ফেরকেটা (ফেৰকেটা) । বাংলা একাডেমির অভিধানে আরবি শব্দের সাথে ওড়িয়া এবং সংস্কৃত শব্দদুটি দেওয়া আছে। আরবি থেকে এসে থাকলে শব্দটিতে র > ড় হতে পারে, কিন্তু চন্দ্রবিন্দুর কোন জায়গা দেখতে পাওয়া যায় না। হয়ত ওড়িয়া ফাঁকড়ার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে।
যদি আরবি-ফারসির ব্যুৎপত্তিগুলো ঠিক হয় তাহলে বলা যায় যে ফারসি বা আরবির র বাংলায় ড় হিসেবে দেখা যায়, ঠিক কতগুলো শব্দে তা বলা মুশকিল। তবে অভিধানগুলো ঘেঁটে দেখলে আরেকটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায় যে শব্দ ব্যুৎপত্তি নির্ধারণে বাংলায় অনেক কাজ করা বাকি।
তেমনি ভাবে গোমড়া মুখ, অপ্রসন্ন, গুমট, মেঘাছন্ন অর্থে। ফারসিতে গুমরাহ্ (گمراه, অর্থ পথ-ভ্রষ্ট, বঞ্চিত, হতবুদ্ধি ইত্যাদি), অন্তত ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে। বাঙ্গালা ভাষার অভিধান মত শব্দটি ফারসি গুমান (گمان, অর্থ মত, ধারণা, পছন্দ, চিন্তা, সন্দেহ, অবিশ্বাস ইত্যাদি, যা পহ্লবি গুমান gumān থেকে আগত) > হিন্দি গুমর (गुमर, অর্থ অভিমান, অহঙ্কার) থেকে ব্যুৎপন্ন।
বাংলার ফেঁকড়া বা ফ্যাঁকড়াও, মূল বিষয়ের আনুষাঙ্গিক বিঘ্ন অর্থে, ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে আরবির ফিক়রাহ (فقرة, অর্থ চিহ্ন, উদ্দেশ্য ইত্যাদি) থেকে আগত। যদিও জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দটির উৎপত্তি হিসেবে তিনটি ভাষার শব্দ দেওয়া আছে, ওড়িয়া ফাঁকড়া (ଫାଁକଡ଼ା), সংস্কৃত ফর্ফরীক (फर्फरीक) আর অসমিয়া ফেরকেটা (ফেৰকেটা) । বাংলা একাডেমির অভিধানে আরবি শব্দের সাথে ওড়িয়া এবং সংস্কৃত শব্দদুটি দেওয়া আছে। আরবি থেকে এসে থাকলে শব্দটিতে র > ড় হতে পারে, কিন্তু চন্দ্রবিন্দুর কোন জায়গা দেখতে পাওয়া যায় না। হয়ত ওড়িয়া ফাঁকড়ার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে।
যদি আরবি-ফারসির ব্যুৎপত্তিগুলো ঠিক হয় তাহলে বলা যায় যে ফারসি বা আরবির র বাংলায় ড় হিসেবে দেখা যায়, ঠিক কতগুলো শব্দে তা বলা মুশকিল। তবে অভিধানগুলো ঘেঁটে দেখলে আরেকটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায় যে শব্দ ব্যুৎপত্তি নির্ধারণে বাংলায় অনেক কাজ করা বাকি।
Thursday, March 13, 2008
রবীন্দ্রনাথ ও বুদ্ধদেবের হরফযোজনা
বাংলায় এ-কার দু'টি, দৃশ্যত। শুরুতে মাত্রা ছাড়া এ-কার শব্দের প্রথমে এবং মাত্রাসহ এ-কার মাঝে বসে। বাংলার হরফযোজনার এ-ই নিয়ম। কম্পিউটারের বাংলা লেখার সময়ও এই হাত-কম্পোজ-এর যুগের একটি নিয়মই এখনও মানা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে ছাপানো তার লেখায়, বিশেষত গানে, একটি নিয়ম মানা হত, এ-র বিবৃত উচ্চারণের (অ্যা) জন্য শব্দের প্রথমে মাত্রাসহ এ-কার বসানো হত।
বুদ্ধদেব বসুর লেখায়ও তেমন দুয়েকটি ব্যাপার দেখা যায়। তার প্রচেষ্টা ছিল হ-এ য-ফলার দু'রকম ব্যবহারের: য-ফলা খানিকটা ছোট হয়ে হ-এর গায়ে লাগানো রূপটি ব্যবহৃত হত সংস্কৃত শব্দ যেখানে জ-ঝ-এর উচ্চারণ সেখানে, যেমন সহ্য শব্দে; আবার তদ্ভব বা বিদেশি শব্দ যেখানে য-ফলা অ্যা-কারের ভূমিকা পালন করে সেখানে য-ফলা একটু বড় হয়ে হ-এর থেকে একটু দূরত্বে বসত, যেমন হ্যাঁ, হ্যাপা বা হ্যালসিঅন শব্দে। তার আরও একটি ব্যবহার বেশ কাজের এবং চোখে পড়বার মত। যেহেতু বইয়ে প্রতি পাতায় উপরের সাদা প্রান্তের পরিমাপ একই, তাই সাধারণভাবে দুই স্তবকের মাঝে ফাঁক থাকলেও কখনও স্তবক নতুন পাতায় শুরু হলে তার প্রথম চরণটি ইন্ডেন্ট (একটু ডানে সরিয়ে) করে ছাপানো হত, যেন স্তবকের শুরু বুঝতে অসুবিধা না হয়।
বুদ্ধদেবের ইলেক চিহ্নের ব্যবহার এখন অনেকাংশে উঠে গেলেও, ব্যবহার অন্য জায়গায়ও দেখা গেছে। রবীন্দ্রনাথের দুই এ-কারের ব্যবহার বা বুদ্ধদেবের হ-এ য-ফলার ব্যবহার তাদের লেখার ছাপাতেই সীমাবদ্ধ। নতুন গজিয়ে ওঠা অনেক প্রকাশনা সংস্থার অনেকেই, বিশেষত কম্পিউটারের ভিড়ে ছাপাখানার অনেক ছোটখাট নিয়ম হারিয়ে যাওয়ার যুগে, হয়ত জানে না এরকম হরফের এরকম ব্যবহার কখনও ছিল।
বুদ্ধদেব বসুর লেখায়ও তেমন দুয়েকটি ব্যাপার দেখা যায়। তার প্রচেষ্টা ছিল হ-এ য-ফলার দু'রকম ব্যবহারের: য-ফলা খানিকটা ছোট হয়ে হ-এর গায়ে লাগানো রূপটি ব্যবহৃত হত সংস্কৃত শব্দ যেখানে জ-ঝ-এর উচ্চারণ সেখানে, যেমন সহ্য শব্দে; আবার তদ্ভব বা বিদেশি শব্দ যেখানে য-ফলা অ্যা-কারের ভূমিকা পালন করে সেখানে য-ফলা একটু বড় হয়ে হ-এর থেকে একটু দূরত্বে বসত, যেমন হ্যাঁ, হ্যাপা বা হ্যালসিঅন শব্দে। তার আরও একটি ব্যবহার বেশ কাজের এবং চোখে পড়বার মত। যেহেতু বইয়ে প্রতি পাতায় উপরের সাদা প্রান্তের পরিমাপ একই, তাই সাধারণভাবে দুই স্তবকের মাঝে ফাঁক থাকলেও কখনও স্তবক নতুন পাতায় শুরু হলে তার প্রথম চরণটি ইন্ডেন্ট (একটু ডানে সরিয়ে) করে ছাপানো হত, যেন স্তবকের শুরু বুঝতে অসুবিধা না হয়।
বুদ্ধদেবের ইলেক চিহ্নের ব্যবহার এখন অনেকাংশে উঠে গেলেও, ব্যবহার অন্য জায়গায়ও দেখা গেছে। রবীন্দ্রনাথের দুই এ-কারের ব্যবহার বা বুদ্ধদেবের হ-এ য-ফলার ব্যবহার তাদের লেখার ছাপাতেই সীমাবদ্ধ। নতুন গজিয়ে ওঠা অনেক প্রকাশনা সংস্থার অনেকেই, বিশেষত কম্পিউটারের ভিড়ে ছাপাখানার অনেক ছোটখাট নিয়ম হারিয়ে যাওয়ার যুগে, হয়ত জানে না এরকম হরফের এরকম ব্যবহার কখনও ছিল।
Tuesday, March 11, 2008
হরফের রেখা আর চতুষ্কোণ
হরফের চেহারা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কিছু বিশেষ শব্দের প্রয়োজন পড়ে। রোমক হরফ নিয়ে বিস্তর চর্চা হবার ফলে ইংরেজি বা অন্য ইউরোপীয় ভাষায় বিষয়-সম্পর্কিত শব্দও ঢের। বাংলায় হরফের চেহারার চর্চা যারা টাইপ বানাত তাদের মধ্যে থাকলেও তাদের ব্যবহৃত শব্দগুলো বাইরের জগতে এসে পড়তে পারে নি, বোধ করি তেমন লেখালেখি না হবার কারণে। ধরা হয় রোমক হরফ চার সরলরেখার একটি অদৃশ্য নকশার ওপর বসানো: একদম উপরের রেখাটির নাম অ্যাসেন্ডার লাইন (ascenderline), তারপর ক্যাপলাইন (capline), তারপর বেসলাইন (baseline) এবং শেষে ডিসেন্ডারলাইন (descenderline); ক্যাপলাইন এবং বেসলাইনের মাঝে আরও একটি রেখা টানা হয়, ছোটহাতের হরফের উচ্চতা (x-height) বরাবর, তার নাম মিনলাইন ((meanline) বা মিডলাইন midline)।
বাংলা হরফও তেমনি একটি অদৃশ্য নকশার উপর বসানো যায়। মাত্রার সাথে যে রেখাটি চলে যাবে তার নাম হতে পারে মাত্রারেখা (১) বা headline। আর মাত্রা থেকে ঝুলে নিচে বেশির ভাগ হরফের নিচ যেখানে ঠেকে যাবে তার নাম হতে পারে ভূমিরেখা (২) বা baseline। এই মাত্রারেখা থেকে ভূমিরেখার দূরত্বকে ধরা হবে হরফের মূল উচ্চতা বা base height। মাত্রারেখার উপর আরও একটি রেখা টানা যেতে পারে যা ছুঁয়ে থাকবে ই-কারের উড়াল বা রেফের মাথা আর এই রেখাটির নাম হতে পারে শিরোরেখা (৩) বা topline। ঠিক তেমনিভাবে সবচেয়ে নিচে একটি রেখা টানা হবে, উ-কারের নিচ ছুঁয়ে, যার নাম হতে পারে পাদরেখা (৪) বা dropline। ক বা ত এর মূল রূপ যেখান থেকে শুরু সেখানে আরও একটি রেখা টানা যেতে পারে যার নাম হতে পারে মধ্যরেখা (৫) বা meanline। ভূমিরেখা থেকে মাত্রারেখার উচ্চতাকে হরফরের সাধারণ উচ্চতা (height) বলে ধরা হবে। পাদরেখা থেকে শিরোরেখার দূরত্বকে সাধারণভাবে হরফের উচ্চতা (letter height বা corps size) বলে ধরা যেতে পারে। রোমক হরফ ভূমিরেখার উপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে; বাংলায় কিন্তু হরফগুলো মাত্রারেখা থেকে ঝুলে থাকে; এবং অনেকক্ষেত্রেই হরফের নিম্নাংশ ভূমিরেখা ছোঁয় না। এ কারণে বোধহয় ফিওনা জি ই রস (Fiona GE Ross) তার মুদ্রিত বাংলা হরফ ও তার বিবর্তন (The Printed Bengali Character and its Evolution) বইয়ে একে বেসলাইন না বলে নোশ্যনাল (notional) বেসলাইন বা ধারণাগত বা ধরে-নেওয়া ভূমিরেখা বলেছে।
হরফ সাধারণত একটি অদৃশ্য চতুষ্কোণের মধ্যে বসানো থাকে। এবং এই চতুষ্কোণের দু'পাশে খানিকটা জায়গা ছেড়ে তারপর হরফটি বসে। এই চতুষ্কোণটি ছবিতে লাল রঙে আঁকা হয়েছে। আর হরফটি বসানো আছে সবুজ দু'টি দাগের মাঝে। এই লাল দাগ থেকে সবুজ দাগের ইংরেজি নাম সাইডবেয়ারিং (sidebearing), বাংলায় হতে পারে পার্শ্বস্থান। দু'পাশের পার্শস্থান বাদ দিলে বাকি জায়গা যেখানে হরফ বসানো থাকে তাকে হরফের মূল প্রস্থ বলা যায়। পাশাপাশি দু'টি হরফের পার্শ্বস্থান মিলে ধরা হয় দু'টি হরফের মাঝে ফাঁক।
বাংলা হরফও তেমনি একটি অদৃশ্য নকশার উপর বসানো যায়। মাত্রার সাথে যে রেখাটি চলে যাবে তার নাম হতে পারে মাত্রারেখা (১) বা headline। আর মাত্রা থেকে ঝুলে নিচে বেশির ভাগ হরফের নিচ যেখানে ঠেকে যাবে তার নাম হতে পারে ভূমিরেখা (২) বা baseline। এই মাত্রারেখা থেকে ভূমিরেখার দূরত্বকে ধরা হবে হরফের মূল উচ্চতা বা base height। মাত্রারেখার উপর আরও একটি রেখা টানা যেতে পারে যা ছুঁয়ে থাকবে ই-কারের উড়াল বা রেফের মাথা আর এই রেখাটির নাম হতে পারে শিরোরেখা (৩) বা topline। ঠিক তেমনিভাবে সবচেয়ে নিচে একটি রেখা টানা হবে, উ-কারের নিচ ছুঁয়ে, যার নাম হতে পারে পাদরেখা (৪) বা dropline। ক বা ত এর মূল রূপ যেখান থেকে শুরু সেখানে আরও একটি রেখা টানা যেতে পারে যার নাম হতে পারে মধ্যরেখা (৫) বা meanline। ভূমিরেখা থেকে মাত্রারেখার উচ্চতাকে হরফরের সাধারণ উচ্চতা (height) বলে ধরা হবে। পাদরেখা থেকে শিরোরেখার দূরত্বকে সাধারণভাবে হরফের উচ্চতা (letter height বা corps size) বলে ধরা যেতে পারে। রোমক হরফ ভূমিরেখার উপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে; বাংলায় কিন্তু হরফগুলো মাত্রারেখা থেকে ঝুলে থাকে; এবং অনেকক্ষেত্রেই হরফের নিম্নাংশ ভূমিরেখা ছোঁয় না। এ কারণে বোধহয় ফিওনা জি ই রস (Fiona GE Ross) তার মুদ্রিত বাংলা হরফ ও তার বিবর্তন (The Printed Bengali Character and its Evolution) বইয়ে একে বেসলাইন না বলে নোশ্যনাল (notional) বেসলাইন বা ধারণাগত বা ধরে-নেওয়া ভূমিরেখা বলেছে।
হরফ সাধারণত একটি অদৃশ্য চতুষ্কোণের মধ্যে বসানো থাকে। এবং এই চতুষ্কোণের দু'পাশে খানিকটা জায়গা ছেড়ে তারপর হরফটি বসে। এই চতুষ্কোণটি ছবিতে লাল রঙে আঁকা হয়েছে। আর হরফটি বসানো আছে সবুজ দু'টি দাগের মাঝে। এই লাল দাগ থেকে সবুজ দাগের ইংরেজি নাম সাইডবেয়ারিং (sidebearing), বাংলায় হতে পারে পার্শ্বস্থান। দু'পাশের পার্শস্থান বাদ দিলে বাকি জায়গা যেখানে হরফ বসানো থাকে তাকে হরফের মূল প্রস্থ বলা যায়। পাশাপাশি দু'টি হরফের পার্শ্বস্থান মিলে ধরা হয় দু'টি হরফের মাঝে ফাঁক।
Monday, March 10, 2008
স্বরধ্বনির দীর্ঘত্ব নাকি স্বরাঘাত?
সাধারণভাবে বলা হয় স্বরধ্বনির দীর্ঘত্ব-হ্রস্বত্ব বা স্বরাঘাতে বাংলায় অর্থের পার্থক্য হয় না। একাক্ষর শব্দে স্বরধ্বনি সাধারণত কিঞ্চিৎ দীর্ঘ। যেমন, দিন বা দীন /diˑn/ বা /diːn/, কিন্তু দিনাবসান /dinɑboʃɑn/, এখানে হ্রস্ব। ১৯২০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যায়লয়ের ছাপানো বিজয়চন্দ্র মজুমদারের ইংরেজিতে লেখা বাংলা ভাষার ইতিহাস (The History of the Bengali Language) নামের বইয়ে তিন ধরণের স্বরাঘাতের উল্লেখ পাওয়া যায় — উচ্চ, মধ্যম এবং নীচ। বিজয়চন্দ্রের ভাষায়: যদি রাজপুত্রের রা-তে উচ্চ স্বরাঘাত দেওয়া হয় [/ˈrɑdʒputːro/], তবে তা হবে বহুব্রীহি এবং অর্থ পুত্র রাজা যার; আর যদি স্বরাঘাত পড়ে শেষ অক্ষর ত্র-তে [/rɑdʒputːˈro/], তবে তা হবে তৎপুরুষ এবং অর্থ রাজার পুত্র। এই পার্থক্য কেউ করে কি? জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দটির অর্থ কিন্তু একটিই, রাজার পুত্র। একই রকমভাবে কলম /ˈkɔlom/ অর্থ লেখনী, আর কলম /kɔˈlom/ অর্থ গাছের জোড়। বইটিতে এরপর আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া আছে যেখানে স্বরাঘাতে অর্থ বদল হয়। যেমন, আটা /ˈɑʈɑ/ (গমচূর্ণ) ও আটা /ɑˈʈɑ/ (আঠা); কড়ি /ˈkoɽi/ (বরগা কাঠ) ও কড়ি /koˈɽi/ (টাকা); কানা /ˈkɑnɑ/ (অন্ধ) ও কানা /kɑˈnɑ/ (প্রান্ত); খোলা /ˈkʱolɑ/ (খুলে ফেলা) ও খোলা /kʱoˈlɑ/ (টালি); ছোঁড়া /ˈtʃoɽɑ/ (বালক) ও ছোঁড়া /tʃoˈɽɑ/ (ছুঁড়ে ফেলা); গেরো /ˈgero/ (বন্ধন) ও গেরো /geˈro/ (গ্রহ, মন্দভাগ্য), চান /ˈtʃɑn/ (গোসল) ও চান /tʃɑn/ (তিনি চান); ঘাট /ˈɡʱɑʈ/ (গোসলের চায়গা) ও ঘাট /ɡʱɑʈ/ (দায়িত্বে স্খলন)। বইতে আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালায় উচ্চারণগুলো দেখানো নেই। বিজয়চন্দ্রের ভাষায়, সুগন্ধ হলে স্বরাঘাত থাকে গন্ধের প্রথম অক্ষরে /ˈɡɔndʱo/, আর দুর্গন্ধ হলে থাকে পরের অক্ষরে /ɡɔnˈdʱo/। বিজয়চন্দ্রের উদাহরণে ব্যাপারটা কি স্বরাঘাতের নাকি স্বরধ্বনির দীর্ঘত্বের, বিশেষত যখন শব্দটি একাক্ষর, যেমন, চান এবং চান? বইতে শেষের গন্ধের উদাহরণ দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে গন্ধ-অ-অ। নির্দেশ কিন্তু দীর্ঘত্বের দিকে।
বাংলায় চায়ের উচ্চারণ চা /tʃɑˑ/ বা /tʃɑː/, এবং একাক্ষর বলে খানিকটা দীর্ঘ। সাথে -টা যোগে 'চা টা নিয়ে এস' হলে চা-র উচ্চারণ খানিকটা দীর্ঘই থাকে, টা-এর উচ্চারণ হ্রস্ব হয়, /tʃɑˑ ʈɑ/। কিন্তু যদি চা এর সাথে টা-এর ব্যাপার থাকে, যেমন চা-টা, চা-পানি অর্থে, তাহলে টা-এ উচ্চারণ আবার দীর্ঘ হয়ে যায়, /tʃɑˑ ʈɑˑ/। আবার চেটে নেওয়া অর্থে চাটা হলে কোনও স্বরই দীর্ঘ অনুমিত হয় না, যেমন /tʃɑʈɑ/, নাকি /ˈtʃɑʈɑ/, প্রথম স্বরে আঘাত বলে মনে হচ্ছে। বাংলায় প্রায় সব ক্ষেত্রেই দুটি অক্ষরের প্রথমটিতে খানিকটা স্বরাঘাত থাকে। এই স্বরাঘাত 'চা টা,' 'চা-টা,' এবং 'চাটা' সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে এই স্বরধ্বনির দীর্ঘত্ব বা হ্রস্বত্ব এবং স্বরাঘাত কোনওটিই বাংলার ধ্বনিমূলক (phonemic) বৈশিষ্ট্য নয়, উচ্চারণগত (phonological) বৈশিষ্ট্য।
বাংলায় চায়ের উচ্চারণ চা /tʃɑˑ/ বা /tʃɑː/, এবং একাক্ষর বলে খানিকটা দীর্ঘ। সাথে -টা যোগে 'চা টা নিয়ে এস' হলে চা-র উচ্চারণ খানিকটা দীর্ঘই থাকে, টা-এর উচ্চারণ হ্রস্ব হয়, /tʃɑˑ ʈɑ/। কিন্তু যদি চা এর সাথে টা-এর ব্যাপার থাকে, যেমন চা-টা, চা-পানি অর্থে, তাহলে টা-এ উচ্চারণ আবার দীর্ঘ হয়ে যায়, /tʃɑˑ ʈɑˑ/। আবার চেটে নেওয়া অর্থে চাটা হলে কোনও স্বরই দীর্ঘ অনুমিত হয় না, যেমন /tʃɑʈɑ/, নাকি /ˈtʃɑʈɑ/, প্রথম স্বরে আঘাত বলে মনে হচ্ছে। বাংলায় প্রায় সব ক্ষেত্রেই দুটি অক্ষরের প্রথমটিতে খানিকটা স্বরাঘাত থাকে। এই স্বরাঘাত 'চা টা,' 'চা-টা,' এবং 'চাটা' সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে এই স্বরধ্বনির দীর্ঘত্ব বা হ্রস্বত্ব এবং স্বরাঘাত কোনওটিই বাংলার ধ্বনিমূলক (phonemic) বৈশিষ্ট্য নয়, উচ্চারণগত (phonological) বৈশিষ্ট্য।
Friday, February 29, 2008
বাংলায় বহুবচনের আরবি-ফারসি প্রত্যয়
বাংলায় আইনের ভাষায় আরবির -আত প্রয়োগে বহুবচনের প্রচলন দেখা যায়, দুয়েকটি হলেও, বহুবচন হিসেবে হয়ত নয়, পুরো নতুন শব্দ হিসেবেই। অভিধানে দেখা মেলে কাগজাত, বা কাগজাদ-এর, অর্থ দলিলপত্র, বা কাগজপত্র। আরবি স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দের শেষে -আত যোগে গঠিত বহুবচনের রূপ, যা ফারসিতেও প্রচলিত: কাগজ (ফারসি كاغذ) + আত (আরবি/ফারসি ات), অর্থাৎ কাগজের বহুবচন, অনেকগুলো কাগজ। বাংলায় কাগজ বলতে তেমন জোরালোভাবে দলিল না বোঝালেও ফারসিতে একটি অর্থ দলিল। আবার খবরের কাগজ সংজ্ঞার্থটি ফারসিতেও আছে, বাংলাতেও। এই ফারসি কাগজ শব্দটি এসেছে পুরনো আরবি শব্দ কাগ়দ (كاغد) থেকে। আরবির কাগজ অর্থে আর একটি পুরনো শব্দ হল ক়ির্ত়াস্ (قرطاس), যা গ্রিক খ়ারতেস (χαρτές প্যাপিরাসের পাতা অর্থে) থেকে আগত। আরবির কাগজ অর্থে বর্তমানে প্রচলিত শব্দটি হল ব়ারাক়্ (ورق), অর্থ পর্ণরাজি বা পত্র, ব়ারাক়ু ক়ির্ত়াস্ (ورق قرطاس) এর সঙ্ক্ষেপ। ব়ারাক়া (ورقة) অর্থ কাগজের তা। পুরনো আরবিতে পাওয়া যায় আস়হাব আল-কাগ়দ (কাগজ বিক্রেতা) বা ত়ায়্য আল-কাগ়দ (কাগজের পাতার ভাঁজ)। যাই হোক, এই আরবি কাগ়দ শব্দটি সোগদীয় ভাষা থেকে আসা, যার মূল চিনা শব্দ গু-জি (榖紙, gǔ-zhǐ, গু অর্থ কাগজ-তুঁত আর জি অর্থ কাগজ), কাগজ-তুঁত গাছের বাকলের তৈরি কাগজ। হিন্দিতে কাগজ় (कागज़) ও মরাঠিতে কাগদ (कागद)। বর্তমান তুর্কিতে শব্দটি কায়িত (kağıt)। এরকম আরও বেশ কিছু শব্দের দেখা মেলে: বাগাত/ৎ (বাগানগুলো), দলিলাত/ৎ (দলিলগুলো), ইত্যাদি।
আরও দু'টি ফারসি বহুবচন প্রত্যয়ের দেখা মেলে বাংলায়, আদালতের ভাষাতেই: -হা (ها), যা খানিকটা বঙ্গীকরণের মাধ্যমে বাংলায় আমলাহায় (আমলারা) বা প্রজাহায় (প্রজারা); এবং -আন (ان), সাহেবান (সাহেবরা), বাবুয়ান (বাবুরা), বোজর্গান (বোজর্গেরা), ইত্যাদি।
আরও দু'টি ফারসি বহুবচন প্রত্যয়ের দেখা মেলে বাংলায়, আদালতের ভাষাতেই: -হা (ها), যা খানিকটা বঙ্গীকরণের মাধ্যমে বাংলায় আমলাহায় (আমলারা) বা প্রজাহায় (প্রজারা); এবং -আন (ان), সাহেবান (সাহেবরা), বাবুয়ান (বাবুরা), বোজর্গান (বোজর্গেরা), ইত্যাদি।
Friday, February 22, 2008
বাংলায় আরবির আসর
বাংলার তিন আসর — গল্পের আসর, জিনের আসর আর আসরের নামাজ। শেষের দুটোকে (বাংলা একাডেমির) ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে আছর বানানে দ্বিতীয় ভুক্তি হিসেবে পাওয়া গেলেও, সেগুলো নিতান্তই আঞ্চলিক উচ্চারণ-সংবাদী বানান, কারণ সেই অভিধানেই এগুলোর আলাদা উচ্চারণ দেওয়া নেই: আঞ্চলিক বাংলায় অনেকেই স-কে, যদি উচ্চারণ ইংরেজি s-এর মত হয়, ছ হিসেবে লেখে। তিনটি শব্দই আরবি থেকে আগত। আরও একটি আসর বাংলায় পাওয়া যায়, অন্তত (জ্ঞানেন্দ্রমোহনের) বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে, সংস্কৃত, রাক্ষস অর্থে; পুরনো শব্দ, বর্তমানে অপ্রচলিত।
১৮২৭ সালে ছাপানো উইলিয়াম কেরি বা ১৮৫১-তে ছাপানো জন মেন্ডিসের বাংলা অভিধানে কেবল একটি আসর (বৈঠক) পাওয়া যায়; ১৮০২ সালে ছাপানো হেনরি পিট্স্ ফর্স্টারের অভিধানে শব্দটি নেই। আঠার শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রণীত ওগ্যুস্ত্যাঁ ওসাঁর বাংলা-ফরাসি শব্দকোষ বা তারও পরে প্রনীত হ্যালহেডের পূর্ববঙ্গীয় মুনশি বাংলা-ফারসি শব্দকোষে আসর শব্দটি অনুপস্থিত। তিনটির মধ্যে বৈঠক অর্থে আসর শব্দটি বাংলার বোধ করি প্রথম মেহমান এবং বাংলায় তার প্রবেশ হয়ত আঠার শতকের একেবারে শেষের দিকে। বাংলা একাডেমির অভিধান ছাড়া আর মাত্র জ্ঞানেন্দ্রমোহনেই নামাজের সময় অর্থটি মেলে। বাকি সব অভিধানেই বৈঠক বা সভা।
প্রথম আসরটি আদতে আরবির আশর (عشر, অর্থ দশ, যা থেকে আশুরা, আরবি মাস মুহররমের দশ তারিখ)। দশ জনের সভা; গৌরবার্থক দশ, তার বেশিও হতে পারে। হরফ পাল্টেও উচ্চারণ একই থেকে গেছে, আশোর্ /ɑʃor/, বাংলার প্রায় সব উচ্চারণ অভিধান মতে। এবং এই অর্থেই শব্দটি প্রায় সব অভিধানে পাওয়া যায়। প্রথম দিকের বাংলা গদ্যে বানান দেখা যায়, আসোর: (ঘোড়া) ‘বাতকর্ম্ম করে আসোর জমকিয়ে দিলে,’ হুতোম প্যাঁচার নকশা থেকে। জ্ঞানেন্দ্রমোহনে উচ্চারণ দেওয়া আছে আশর্ /ɑʃɔr/, হয়ত পুরনো বা সচেষ্ট উচ্চারণ।
দ্বিতীয় আসরটি (প্রভাব অর্থে) আরবির আস়র্ (اثر, আরবিতে অন্যান্য অর্থ পদচিহ্ন, চিহ্ন, ফলাফল, ক্রিয়া, ইত্যাদি) থেকে, কেবল ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে পাওয়া যায়, বিকল্প বানানে আছর, উচ্চারণ দেওয়া আছে আসোর /ɑsor/। বোধ করি আছর বানান এবং আছোর্ /ɑtʃʰor/ উচ্চারণটি অনেক বেশি প্রচলিত এক্ষেত্রে। প্রথম আলো পত্রিকার ঈদ সঙ্খ্যায় ছাপানো মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি লেখা থেকে উদাহরণ: ‘আজকালকার দিনে লোকজনের ওপর জিন-ভুতের সেই রকম আছর হয় না।’ (বাংলা একাডেমির) বাংলা ভাষায় আরবী ফার্সী তুর্কী হিন্দী উর্দু শব্দের অভিধানেও এর দেখা মেলে।
তৃতীয় আসরটি আরবির আ়স়র্ (عصر, অর্থ সময়, কাল, অপরাহ্ণ, অপরাহ্ণের নামাজ বিশেষ)। ব্যবহারিক বাংলা অভিধান ছাড়া কেবল জ্ঞানেন্দ্রমোহনে এই অর্থ মেলে। জ্ঞানেন্দ্রমোহনে উদাহরণ: ‘আসরের সময় বিবাহ হইয়াছিল।’ বাংলা একাডেমির অভিধানে উচ্চারণ আসর্ /ɑsɔr/, যদিও জ্ঞানেন্দ্রমোহনে আশর্, /ɑʃɔr/। অনেকর মুখেই আদতে শব্দটি আশোর্ /ɑʃor/, আরবির উচ্চারণ না জানা গ্রামবাংলায় তো বটেই। বানানেও আছর, উচ্চারণে নয়, বেশ চোখে পড়ে: বাদ আছর জানাজার অনুষ্ঠান হয়, অর্থাৎ আসরের নামাজের পর জানাজার নামাজ পড়া হয।
১৮২৭ সালে ছাপানো উইলিয়াম কেরি বা ১৮৫১-তে ছাপানো জন মেন্ডিসের বাংলা অভিধানে কেবল একটি আসর (বৈঠক) পাওয়া যায়; ১৮০২ সালে ছাপানো হেনরি পিট্স্ ফর্স্টারের অভিধানে শব্দটি নেই। আঠার শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রণীত ওগ্যুস্ত্যাঁ ওসাঁর বাংলা-ফরাসি শব্দকোষ বা তারও পরে প্রনীত হ্যালহেডের পূর্ববঙ্গীয় মুনশি বাংলা-ফারসি শব্দকোষে আসর শব্দটি অনুপস্থিত। তিনটির মধ্যে বৈঠক অর্থে আসর শব্দটি বাংলার বোধ করি প্রথম মেহমান এবং বাংলায় তার প্রবেশ হয়ত আঠার শতকের একেবারে শেষের দিকে। বাংলা একাডেমির অভিধান ছাড়া আর মাত্র জ্ঞানেন্দ্রমোহনেই নামাজের সময় অর্থটি মেলে। বাকি সব অভিধানেই বৈঠক বা সভা।
প্রথম আসরটি আদতে আরবির আশর (عشر, অর্থ দশ, যা থেকে আশুরা, আরবি মাস মুহররমের দশ তারিখ)। দশ জনের সভা; গৌরবার্থক দশ, তার বেশিও হতে পারে। হরফ পাল্টেও উচ্চারণ একই থেকে গেছে, আশোর্ /ɑʃor/, বাংলার প্রায় সব উচ্চারণ অভিধান মতে। এবং এই অর্থেই শব্দটি প্রায় সব অভিধানে পাওয়া যায়। প্রথম দিকের বাংলা গদ্যে বানান দেখা যায়, আসোর: (ঘোড়া) ‘বাতকর্ম্ম করে আসোর জমকিয়ে দিলে,’ হুতোম প্যাঁচার নকশা থেকে। জ্ঞানেন্দ্রমোহনে উচ্চারণ দেওয়া আছে আশর্ /ɑʃɔr/, হয়ত পুরনো বা সচেষ্ট উচ্চারণ।
দ্বিতীয় আসরটি (প্রভাব অর্থে) আরবির আস়র্ (اثر, আরবিতে অন্যান্য অর্থ পদচিহ্ন, চিহ্ন, ফলাফল, ক্রিয়া, ইত্যাদি) থেকে, কেবল ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে পাওয়া যায়, বিকল্প বানানে আছর, উচ্চারণ দেওয়া আছে আসোর /ɑsor/। বোধ করি আছর বানান এবং আছোর্ /ɑtʃʰor/ উচ্চারণটি অনেক বেশি প্রচলিত এক্ষেত্রে। প্রথম আলো পত্রিকার ঈদ সঙ্খ্যায় ছাপানো মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি লেখা থেকে উদাহরণ: ‘আজকালকার দিনে লোকজনের ওপর জিন-ভুতের সেই রকম আছর হয় না।’ (বাংলা একাডেমির) বাংলা ভাষায় আরবী ফার্সী তুর্কী হিন্দী উর্দু শব্দের অভিধানেও এর দেখা মেলে।
তৃতীয় আসরটি আরবির আ়স়র্ (عصر, অর্থ সময়, কাল, অপরাহ্ণ, অপরাহ্ণের নামাজ বিশেষ)। ব্যবহারিক বাংলা অভিধান ছাড়া কেবল জ্ঞানেন্দ্রমোহনে এই অর্থ মেলে। জ্ঞানেন্দ্রমোহনে উদাহরণ: ‘আসরের সময় বিবাহ হইয়াছিল।’ বাংলা একাডেমির অভিধানে উচ্চারণ আসর্ /ɑsɔr/, যদিও জ্ঞানেন্দ্রমোহনে আশর্, /ɑʃɔr/। অনেকর মুখেই আদতে শব্দটি আশোর্ /ɑʃor/, আরবির উচ্চারণ না জানা গ্রামবাংলায় তো বটেই। বানানেও আছর, উচ্চারণে নয়, বেশ চোখে পড়ে: বাদ আছর জানাজার অনুষ্ঠান হয়, অর্থাৎ আসরের নামাজের পর জানাজার নামাজ পড়া হয।
Sunday, February 17, 2008
গোধুলি, গবাক্ষ এবং গবেষণা
জীবনানন্দ দাশের ‘বেদিয়া’য় — তার চেয়ে ভালো সুদূর গিরির গোধূলি-রঙিন জটা,/তার চেয়ে ভালো বেদিয়া বালার ক্ষিপ্র হাসির ছটা! গোধূলিতে দীর্ঘ ঊ। হ্রস্ব উ দিলেও অশুদ্ধ হবে না। জ্ঞানেন্দ্রমোহনেও -ঊ-, -উ-। মনিয়ের মনিয়ের-উইলিয়াম্সের সংস্কৃত অভিধান মতেও দুটি বানানই শুদ্ধ। জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দের ব্যুৎপত্তিতে বলা আছে ‘গোর (গোরুর) ধূলি (ক্ষুরাঘাতে উত্থিত রজঃ) হয় যে সময়ে,’ যেমনটি ছোটবেলায় ইশকুলে পড়ানো হত। তবুও অনেকেরই ধারণা ব্যুৎপত্তিটি ঠিক নয়। কারণ জ্ঞানেন্দ্রমোহনেই গো শব্দটির সংজ্ঞার্থ দেওয়া আছে ২০টি, যার একটি অর্থ কিরণ।শেষে টীকা — দ্রঃ-সকল অর্থ বাঙ্গালায় প্রচলিত নাই। বৈদিক সংস্কৃতে গো-এর অর্থ ছিল আলো এবং ধূলি-র অর্থ অন্ধকার,দুয়ে মিলে গো এবং ধূলির সন্ধিকাল, অর্থাৎ সন্ধ্যা। মনিয়ের-উইলিয়াম্সেও গো-এর একটি অর্থ আলোর কিরণ (rays of light), যদিও ধূলির আঁধার অর্থ নেই। গো আলো বোঝালেই গোধুলি শুনতে ভাল লাগে।
দিল্লি থেকে মতিলাল বানারসিদাসের প্রকাশিত কিরীট জোশির The Veda and Indian Culture: An Introducory Essay-র প্রথম অধ্যায়ে আছে গো বলতে গরু বোঝায় এক অর্থে, অন্য অর্থে আলো। যদি বেদের পঠনে গো অর্থ গরু ধরা হয় তবে বেশ কিছু দূর পর্যন্ত কাজ চলে যায়, কিন্তু অনেক জায়গায় কোনও অর্থ দাঁড়ায় না (... the word go means a cow, in one sence, but it also means light, in another sense. Now it is found that if the word go is interpreted to mean cow in the Veda, it serves well up to a certain point, but this interpretation breaks down at some most crucial points ...)। মার্কিন লোটাস লাইট পাবলিকেশন্স্-এর প্রকাশিত শ্রী অরবিন্দ ঘোষের The Secret of the Veda-য়, গো শব্দটির দেখা মেলে এক হাজারেরও বেশি জায়গায় এবং বত্রিশ অর্থে যেমন গরু, পানি, আলো, শব্দ, ইত্যাদি (The word go which occurs in more than one thousand verses is given thirty two different meanings ranging from cow, water, ray, sound etc.)। ঋগ্বেদে আছে गोभिरद्रिमैरयत् বা গোভিরদ্রিমৈরয়ৎ, অর্থাৎ (ইন্দ্র) আলো দিয়ে পাহাড় ভেদ করল। এখানে আলো দিয়ে না হয়ে, গরু দিয়ে হয় না। অনেকে পাহাড়কে অজ্ঞানতার প্রতীক হিসেবে দেখে।
এরপরও মনিয়ের-উইলিয়াম্সের অভিধানে গোধূলি অর্থ পৃথিবীর ধূলি (earth-dust), যখন মনে হয় পৃথিবী থেকে কুয়াশা উঠছে, যেমন গরম কালে যখন সূর্য অর্ধেক উঠে থাকে আর শীতকালে যখন পূর্ণ সূর্যের তেজ কম থাকে, বা সন্ধ্যা। পৃথিবী অর্থেও গো-এর প্রচলন বেদেই আছে – पदे गौः (পদে গৌঃ, পৃথিবীর চলা পথে, ইংরেজিতে in the footsteps of the earth। এ অর্থে শব্দটি বোধ করি গ্রিক γεος (geos) এর সমার্থক। গবাক্ষ শব্দের ব্যুৎপত্তিতে জ্ঞানেন্দ্রমোহনে লেখা আছে — গো (কিরণ) অক্ষ্ (বিস্তৃত কর) + অ (কর্তৃকারক), যে গৃহাদির মধ্যে কিরণ বিস্তার করে, বা গো-গোরু অক্ষি (চক্ষু) যে গোরুর চক্ষুর ন্যায় গোলাকার। এখানে গো অর্থ হয় আলো, নয়ত গরু, ফরাসি থেকে আসা ইংরেজি শব্দ œil-de-bœuf এর মত, bull's eye বা গরুর চোখ, সেই ছোট গোল জানালা বা bullseye window অর্থেই। কাকতালীয় কি? সংস্কৃতে অর্থ ষাঁড়ের চোখ, গোল জানালা, ইত্যাদি।
গবেষণা শব্দটি জ্ঞানেন্দ্রমোহনের মতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান। সংস্কৃতে গবেষণ, মনিয়ের-উইলিয়াম্সে অর্থ চাওয়া বা খোঁজা। জ্ঞানেন্দ্রমোহনে গো+এষণ-ইম্ (অন্বেষণকরা) + অন। অর্থ অন্বেষণ। ছোটবেলায় দুষ্টামি করে বলা হত গো অন্বেষণ বা গরু খোঁজা। গো-এর অর্থ আলো ধরে নিলে অর্থটা বেশ খেলে, আলো খোঁজা।
দিল্লি থেকে মতিলাল বানারসিদাসের প্রকাশিত কিরীট জোশির The Veda and Indian Culture: An Introducory Essay-র প্রথম অধ্যায়ে আছে গো বলতে গরু বোঝায় এক অর্থে, অন্য অর্থে আলো। যদি বেদের পঠনে গো অর্থ গরু ধরা হয় তবে বেশ কিছু দূর পর্যন্ত কাজ চলে যায়, কিন্তু অনেক জায়গায় কোনও অর্থ দাঁড়ায় না (... the word go means a cow, in one sence, but it also means light, in another sense. Now it is found that if the word go is interpreted to mean cow in the Veda, it serves well up to a certain point, but this interpretation breaks down at some most crucial points ...)। মার্কিন লোটাস লাইট পাবলিকেশন্স্-এর প্রকাশিত শ্রী অরবিন্দ ঘোষের The Secret of the Veda-য়, গো শব্দটির দেখা মেলে এক হাজারেরও বেশি জায়গায় এবং বত্রিশ অর্থে যেমন গরু, পানি, আলো, শব্দ, ইত্যাদি (The word go which occurs in more than one thousand verses is given thirty two different meanings ranging from cow, water, ray, sound etc.)। ঋগ্বেদে আছে गोभिरद्रिमैरयत् বা গোভিরদ্রিমৈরয়ৎ, অর্থাৎ (ইন্দ্র) আলো দিয়ে পাহাড় ভেদ করল। এখানে আলো দিয়ে না হয়ে, গরু দিয়ে হয় না। অনেকে পাহাড়কে অজ্ঞানতার প্রতীক হিসেবে দেখে।
এরপরও মনিয়ের-উইলিয়াম্সের অভিধানে গোধূলি অর্থ পৃথিবীর ধূলি (earth-dust), যখন মনে হয় পৃথিবী থেকে কুয়াশা উঠছে, যেমন গরম কালে যখন সূর্য অর্ধেক উঠে থাকে আর শীতকালে যখন পূর্ণ সূর্যের তেজ কম থাকে, বা সন্ধ্যা। পৃথিবী অর্থেও গো-এর প্রচলন বেদেই আছে – पदे गौः (পদে গৌঃ, পৃথিবীর চলা পথে, ইংরেজিতে in the footsteps of the earth। এ অর্থে শব্দটি বোধ করি গ্রিক γεος (geos) এর সমার্থক। গবাক্ষ শব্দের ব্যুৎপত্তিতে জ্ঞানেন্দ্রমোহনে লেখা আছে — গো (কিরণ) অক্ষ্ (বিস্তৃত কর) + অ (কর্তৃকারক), যে গৃহাদির মধ্যে কিরণ বিস্তার করে, বা গো-গোরু অক্ষি (চক্ষু) যে গোরুর চক্ষুর ন্যায় গোলাকার। এখানে গো অর্থ হয় আলো, নয়ত গরু, ফরাসি থেকে আসা ইংরেজি শব্দ œil-de-bœuf এর মত, bull's eye বা গরুর চোখ, সেই ছোট গোল জানালা বা bullseye window অর্থেই। কাকতালীয় কি? সংস্কৃতে অর্থ ষাঁড়ের চোখ, গোল জানালা, ইত্যাদি।
গবেষণা শব্দটি জ্ঞানেন্দ্রমোহনের মতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান। সংস্কৃতে গবেষণ, মনিয়ের-উইলিয়াম্সে অর্থ চাওয়া বা খোঁজা। জ্ঞানেন্দ্রমোহনে গো+এষণ-ইম্ (অন্বেষণকরা) + অন। অর্থ অন্বেষণ। ছোটবেলায় দুষ্টামি করে বলা হত গো অন্বেষণ বা গরু খোঁজা। গো-এর অর্থ আলো ধরে নিলে অর্থটা বেশ খেলে, আলো খোঁজা।
Tuesday, February 05, 2008
বাংলার নিজস্ব গণনাচিহ্ন
সাধারণ ভগ্নাংশ প্রকাশের জন্য বাংলার নিজস্ব চিহ্ন রয়েছে, কিংবা ছিল বলা যায়, যার ভিত্তি ষোল (১৬), ইংরেজিতে hexadecimal। তখন ষোল আনায় এক টাকা ছিল কি না? আগের দিনে শিশুবোধকে পাটীগণিত শেখাতে এইসব কড়াকিয়া বা পণকিয়া ব্যবহৃত হত। পুরনো দিনে লেখাপড়া শেখা লোকেদের দুই একজন নিয়মটা জেনে থাকলেও এখন হয়ত পরিবারের দৈনিক হিসেব নিকেশ করতে এর ব্যবহার আর করে না। ষোলর এক ভাগ থেকে শুরু হয়ে ষোলর পনের ভাগ, ষোল পূর্ণ হলে ১ (এক):
৴ ৵ ৶ ৷৹ ৷৴ ৷৵ ৷৶ ৷৷৹ ৷৷৴ ৷৷৵ ৷৷৶ ৸৹ ৸৴ ৸৵ ৸৶ ১.
পরের বার কেবল সামনে ১ বসবে, একত্রিশ পর্যন্ত, বত্রিশে ২.। (শেষেরটি দাঁড়ি, অঙ্কপাতনের অংশ নয়।) এভাবে চলতে থাকবে। আঠারশ' একান্ন সালে কলকাতায় ছাপানো জে মেন্ডিসের অভিধানে বাংলা চিহ্নের পরিচিতিতে এই ষোলটি সঙ্খ্যা দেওয়া আছে। ব্যাখ্যায় বলা আছে ষোল আনায় এক রুপি (টাকা), ষোল ছটাকে এক সের (ওজন) এবং ষোল পণে এক কাঠা (জমি)। কোনও কোনও পুরনো বইয়ে প্রতিটি সঙ্খ্যার শেষে ৹ লেখা দেখতে পাওয়া যায়, চার, আট এবং বার ছাড়া, কারণ সেখানে এমনিতে একটি অন্ত্য ৹ বিদ্যমান।
তত পুরনো নয় এমন বাংলা বইয়েও, সে অঙ্কেরই হোক বা সাহিত্যের, এই অঙ্কপাতনের ব্যবহার দেখা যায়। বিলেতি বইয়ের একটি নিয়ম হল পৃষ্ঠার নম্বর সঙ্খ্যায় ছাপা হওয়া শুরু হয় বইয়ের মূল পাঠ্যাংশ থেকে, যাকে ইংরজিতে main matter বলে। ইংরেজিতে যা front matter সেগুলোর মধ্যে প্রাথমিক বা অর্ধ নামপত্র বা আখ্যাপত্র থেকে ভূমিকা পর্যন্ত পাতা গণনা করা হলেও তাতে কোন পৃষ্ঠাঙ্ক থাকে না। এই ভূমিকা বা মুখবন্ধ থেকে মূল পাঠ্যাংশের আগের পৃষ্ঠাগুলোতে সাধারণত রোমক অঙ্কে পৃষ্ঠাঙ্ক দেওয়া হয়। বাংলায় এই ক্ষেত্রে এই পুরনো ষোল-ভিত্তির অঙ্কপাতনের ব্যবহার দেখা যায়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণে এমনটিই আছে। তবে অনেকেই এখন বন্ধনীর মধ্যে বা বানান করে পৃষ্ঠাঙ্ক দিয়ে থাকে।
৴ ৵ ৶ ৷৹ ৷৴ ৷৵ ৷৶ ৷৷৹ ৷৷৴ ৷৷৵ ৷৷৶ ৸৹ ৸৴ ৸৵ ৸৶ ১.
পরের বার কেবল সামনে ১ বসবে, একত্রিশ পর্যন্ত, বত্রিশে ২.। (শেষেরটি দাঁড়ি, অঙ্কপাতনের অংশ নয়।) এভাবে চলতে থাকবে। আঠারশ' একান্ন সালে কলকাতায় ছাপানো জে মেন্ডিসের অভিধানে বাংলা চিহ্নের পরিচিতিতে এই ষোলটি সঙ্খ্যা দেওয়া আছে। ব্যাখ্যায় বলা আছে ষোল আনায় এক রুপি (টাকা), ষোল ছটাকে এক সের (ওজন) এবং ষোল পণে এক কাঠা (জমি)। কোনও কোনও পুরনো বইয়ে প্রতিটি সঙ্খ্যার শেষে ৹ লেখা দেখতে পাওয়া যায়, চার, আট এবং বার ছাড়া, কারণ সেখানে এমনিতে একটি অন্ত্য ৹ বিদ্যমান।
তত পুরনো নয় এমন বাংলা বইয়েও, সে অঙ্কেরই হোক বা সাহিত্যের, এই অঙ্কপাতনের ব্যবহার দেখা যায়। বিলেতি বইয়ের একটি নিয়ম হল পৃষ্ঠার নম্বর সঙ্খ্যায় ছাপা হওয়া শুরু হয় বইয়ের মূল পাঠ্যাংশ থেকে, যাকে ইংরজিতে main matter বলে। ইংরেজিতে যা front matter সেগুলোর মধ্যে প্রাথমিক বা অর্ধ নামপত্র বা আখ্যাপত্র থেকে ভূমিকা পর্যন্ত পাতা গণনা করা হলেও তাতে কোন পৃষ্ঠাঙ্ক থাকে না। এই ভূমিকা বা মুখবন্ধ থেকে মূল পাঠ্যাংশের আগের পৃষ্ঠাগুলোতে সাধারণত রোমক অঙ্কে পৃষ্ঠাঙ্ক দেওয়া হয়। বাংলায় এই ক্ষেত্রে এই পুরনো ষোল-ভিত্তির অঙ্কপাতনের ব্যবহার দেখা যায়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণে এমনটিই আছে। তবে অনেকেই এখন বন্ধনীর মধ্যে বা বানান করে পৃষ্ঠাঙ্ক দিয়ে থাকে।
Sunday, February 03, 2008
হবে কি? কী হবে?
আপনি কি পড়ছেন? মানে, পড়ছেন কি? বা পড়ছেন? সাদামাটা প্রশ্ন: এ মুহূর্তে পড়ার কাজটা চলছে কি না? উত্তর হয় হ্যাঁ বা না। এখানে কি-এর কাজ প্রশ্ন করা, প্রশ্নবাচক অব্যয় (interrogative particle)। আবার আপনি কী পড়ছেন? মানে পড়ছেন টা কী? বা কোন বই বা লেখা পড়ছেন? এ মুহূর্তে কোন বই পড়ার কাজ চলছে? উত্তর হ্যাঁ-ও নয়, আবার না-ও নয়। অন্য কোনও কিছু। এখানে কী-এর কাজ সর্বনামের, সর্বনামবাচক অব্যয় (interrogative pronoun)। কি-এর ক্ষেত্রে স্বরাঘাত পড়ে ক্রিয়ার উপর, আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে কী-এর উপর। প্রথম ক্ষেত্রে ‘কি’ বাদ দেওয়া যায়, লেখায় এবং কথায়। লেখায় প্রশ্নসূচক চিহ্ন বলে দেবে এটি প্রশ্ন, কথায় (ধ্বনিতত্ত্বের ভাষায়) সাধারণ আরোহী স্বরাঘাতের দরকার পড়বে, অর্থাৎ শেষের অক্ষর (হরফ নয়) প্রথমটির চেয়ে জোরালো উচ্চারিত হবে। ‘কি’ হল প্রশ্ন, বিস্ময় বা সংশয়বোধক; আর ‘কী’ হল সর্বনামবাচক, ক্রিয়া বিশেষণ বা বিশেষণের বিশেষণ। কী আশ্চর্য! আশ্চর্য কি?
সংস্কৃত কিম্ থেকে প্রাকৃত হয়ে বাংলায় কি। তবে প্রাকৃতে ‘কি’ এবং ‘কী’ নির্বিশেষে ব্যবহৃত হয়। মধ্য বাংলা সাহিত্যে, এমনি উনিশ শতাব্দ, পর্যন্ত অবশ্য কী-এর ব্যবহার তেমন একটা নেই। কারণ ততদিনে বাংলা প্রাকৃতের বলয় থেকে বের হয়ে সংস্কৃতায়িত হয়েছে। কারণ সংস্কৃতের চর্চা এবং সংস্কৃতের মূল অনুযায়ী বানানের বিশুদ্ধতা রক্ষার চেষ্টা। মধ্য বাংলা সাহিত্যের শুরুর দিকে, শিক্ষিত বাঙালি অনেকের ঘরে তখন পাণ্ডুলিপি, যার অধিকাংশই সংস্কৃত। অনেক পরে এসে ‘কি’ এবং ‘কী’ আলাদা শব্দ হিসেবে অর্থভেদের প্রচেষ্টা পায়। কি, সংস্কৃত কিম্ (किम्) থেকে; আর কী, সংস্কৃত কীদৃক্ (कीदृक्) এর তুলনায়, যার অর্থ কিপ্রকার, কেমন বা কি রকম। সুভাষ ভট্টাচার্যের মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম অর্থভেদের সপক্ষতা করেছেন। শব্দতত্ত্বে আছে —‘অব্যয় শব্দ “কি” এবং সর্বনাম শব্দ “কী” এই দুইটি শব্দের সার্থকতা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তাদের ভিন্ন বানান না থাকলে অনেক স্থলেই অর্থ বুঝতে বাধা ঘটে। এমন-কি, প্রসঙ্গ বিচার করেও বাধা দূর হয় না। “তুমি কি জানো সে আমার কত প্রিয়” আর “তুমি কী জানো সে আমার কত প্রিয়”, এই দুই বাক্যের একটাতে জানা সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হচ্ছে আর একটাতে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে জানার প্রকৃতি বা পরিমাণ সম্বন্ধে...।’
এই বিচারে প্রশ্নসূচক সর্বনাম হিসেবে কিভাবে না লিখে কীভাবে এবং কিসের না লিখে কীসের লেখা উচিত। চলন্তিকায় কী-এর কদর তেমন একটা নয়: ‘কী (কি দেখ)।’ কি-এর উদাহরণে, কি জিনিস; আর ‘বেশী জোর দিতে (“কী সুন্দর! তোমার কী হয়েছে?”’ জ্ঞানেন্দ্রমোহন এবং হরিচরণে ‘কী সর্বনাশ!’ পাওয়া যায়, তবে কি এবং কী এর অর্থভেদের ব্যাপারটা স্পষ্ট নয়। জ্যোতিভূষণ চাকীর বাংলা ভাষার ব্যাকরণ এবং হায়াৎ মামুদের বাংলা লেখার নিয়মকানুনে অর্থভেদ সংরক্ষিত। অনেকেই পার্থক্য করে না, আবার অনেকে মেনে চলে।
সংস্কৃত কিম্ থেকে প্রাকৃত হয়ে বাংলায় কি। তবে প্রাকৃতে ‘কি’ এবং ‘কী’ নির্বিশেষে ব্যবহৃত হয়। মধ্য বাংলা সাহিত্যে, এমনি উনিশ শতাব্দ, পর্যন্ত অবশ্য কী-এর ব্যবহার তেমন একটা নেই। কারণ ততদিনে বাংলা প্রাকৃতের বলয় থেকে বের হয়ে সংস্কৃতায়িত হয়েছে। কারণ সংস্কৃতের চর্চা এবং সংস্কৃতের মূল অনুযায়ী বানানের বিশুদ্ধতা রক্ষার চেষ্টা। মধ্য বাংলা সাহিত্যের শুরুর দিকে, শিক্ষিত বাঙালি অনেকের ঘরে তখন পাণ্ডুলিপি, যার অধিকাংশই সংস্কৃত। অনেক পরে এসে ‘কি’ এবং ‘কী’ আলাদা শব্দ হিসেবে অর্থভেদের প্রচেষ্টা পায়। কি, সংস্কৃত কিম্ (किम्) থেকে; আর কী, সংস্কৃত কীদৃক্ (कीदृक्) এর তুলনায়, যার অর্থ কিপ্রকার, কেমন বা কি রকম। সুভাষ ভট্টাচার্যের মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম অর্থভেদের সপক্ষতা করেছেন। শব্দতত্ত্বে আছে —‘অব্যয় শব্দ “কি” এবং সর্বনাম শব্দ “কী” এই দুইটি শব্দের সার্থকতা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তাদের ভিন্ন বানান না থাকলে অনেক স্থলেই অর্থ বুঝতে বাধা ঘটে। এমন-কি, প্রসঙ্গ বিচার করেও বাধা দূর হয় না। “তুমি কি জানো সে আমার কত প্রিয়” আর “তুমি কী জানো সে আমার কত প্রিয়”, এই দুই বাক্যের একটাতে জানা সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হচ্ছে আর একটাতে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে জানার প্রকৃতি বা পরিমাণ সম্বন্ধে...।’
এই বিচারে প্রশ্নসূচক সর্বনাম হিসেবে কিভাবে না লিখে কীভাবে এবং কিসের না লিখে কীসের লেখা উচিত। চলন্তিকায় কী-এর কদর তেমন একটা নয়: ‘কী (কি দেখ)।’ কি-এর উদাহরণে, কি জিনিস; আর ‘বেশী জোর দিতে (“কী সুন্দর! তোমার কী হয়েছে?”’ জ্ঞানেন্দ্রমোহন এবং হরিচরণে ‘কী সর্বনাশ!’ পাওয়া যায়, তবে কি এবং কী এর অর্থভেদের ব্যাপারটা স্পষ্ট নয়। জ্যোতিভূষণ চাকীর বাংলা ভাষার ব্যাকরণ এবং হায়াৎ মামুদের বাংলা লেখার নিয়মকানুনে অর্থভেদ সংরক্ষিত। অনেকেই পার্থক্য করে না, আবার অনেকে মেনে চলে।
Wednesday, January 30, 2008
কোন মরদে সাদিয়া লবে তোর বিলাতের কড়ি
গোপীচন্দ্রে আছে — ‘কোন মরদে সাদিয়া লবে তোর বিলাতের কড়ি।’ মনসামঙ্গলে আছে — ‘আমি তোমার হুকুমে সকল বিলাতে ভ্রমি।’ কিংবা, ‘গণনা করিবার গেছিলাম বিলাতক নাগিয়া,’ আবারও গোপীচন্দ্র। অথবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায়শ্চিত্তে — ‘এমন সময়ে বিলাত হইতে সদ্যপ্রত্যাগতা আরক্তকপোলা আতাম্রকুন্তলা আনীললোচনা দুগ্ধফেনশুভ্রা হরিণলঘুগামিনী ইংরাজমহিলা স্বয়ং সভাস্থলে আসিয়া দাঁড়াইয়া প্রত্যেকের মুখ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন।’
প্রথম বাক্যে বিলাত অর্থ দেশ, দ্বিতীয় বাক্যে শাসনাধীন দেশ, রাজার দেশ বা রাজপাট, তৃতীয় বাক্যে বিদেশ, যেমন বিলেতি বেগুন অর্থাৎ টমেটো, কিংবা বিলেতি দ্রব্য, আর শেষ বাক্যে ইংল্যান্ড বা পুরনো বানানে ইংলণ্ড। এর অর্থ কখনও কখনও ইউরোপ বা য়ুরোপও বটে। আদতে শব্দটি আরবি, ব়িলায়াহ্ (ولاية — নিষ্পন্ন যে ধাতু, ولي, থেকে তার অর্থ শাসন করা)। ফারসি বা তুর্কিতে ব়িলায়াত্। অর্থ, (কাজির) শাসনাধীন দেশ, অনেকটা প্রদেশের মত, যা পরে রাজ্যের রূপ নেয়। জ্ঞানেন্দ্রমোহন আর হরিচরণ মিলিয়ে তাই দাঁড়ায়।
বলা হয় মোঘল শাসকরা ফারসিতে ভারতবর্ষীয়দের বলত তাদের ‘বিলায়ত’ বা দেশেও এরকমটি ঘটে। এভাবে বিলায়ত অর্থ দেশ থেকে শাসকদের দেশ হয়ে যায়। একারণে বিলায়ত বলতে এসময় পারস্যকে বোঝানো হত। পরে ইংরেজরা এলে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ইংল্যান্ড, ভারতের ইংরেজ শাসকরা মাঝে মাঝে বিলায়ত (স্বদেশ) যেত, হয়ত ছুটি কাটাতে বা কোনও কাজে। ১৮৫১ সালে কলকাতায় ছাপানো জন মেন্ডিসের বাংলা-ইংরেজি অভিধানে বিলাৎ বা ব়িলাৎ (অভিধানে অবশ্য অন্তঃস্থ ব-এর ক্ষেত্রে আসামি ৰ-এর মত সে সময়ে প্রচলিত হরফ দেওয়া আছে, এই পেট-কাটা হরফটি আসামিতে র, অন্তঃস্থ ব আসামিতে ৱ, বাংলা র-এরমত নিচের বিন্দু পরিবর্তে লম্বা টান) অর্থ দেশ, ইউরোপ। ফ্রান্সিস জোসেফ স্টেইনগ্লাসের ফারসি অভিধান মতে ভারতে শব্দটির অর্থ সাধারণত ইউরোপ, ইংল্যান্ড বা পারস্য। বাংলার অভিধানে বিলাতি অর্থ ইংল্যান্ডের বা ইউরোপের। জন শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানেও বিদেশি বা ইউরোপীয়।
আরবি ব়িলায়াহ্ এখন হিন্দি এবং উর্দুতে ব়িলায়ত (विलायत এবং ولاية)। বাংলার মত হিন্দিতে ব়িলায়ত (जिस समय गाँधीजी विलायत पढ़ने के लिए गए थे... জিস সময় গাঁধীজী ব়িলায়ত পঢ়নে কে লিএ গএ থে... যখন গান্ধীজী বিলাতে পড়তে গিয়েছিলেন...) বলতে ইংল্যান্ড বোঝালেও, বিদেশ অর্থও বিদ্যমান। উর্দুতে ব়িলায়ত অর্থ দেশ, প্রদেশ, বিদেশ, রাজত্ব বা ঈশ্বরের নৈকট্য। ফারসি অভিধানে শব্দটির অর্থ দেশ, প্রদেশ বা রাজত্ব। হবসন-জবসনের মতে আফগানিরা তাদের দেশকে বিলায়ত বলত। শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানে বিলায়েতি শব্দের একটা অর্থ হল আফগানি। দাগেস্তানে জেলাকে বলা হয় ভ়িলাইয়াত (вилайат)। আর আরবিতে ব়িলায়াহ্ বললে যুক্তরাষ্ট্র বোঝায়। পুরো শব্দবন্ধটি হল আল-ব়িলায়াত আল-মুত্তাহ়িদাহ্ (الولايات المتحدة), বা একীভূত রাষ্টসমূহ।
প্রথম বাক্যে বিলাত অর্থ দেশ, দ্বিতীয় বাক্যে শাসনাধীন দেশ, রাজার দেশ বা রাজপাট, তৃতীয় বাক্যে বিদেশ, যেমন বিলেতি বেগুন অর্থাৎ টমেটো, কিংবা বিলেতি দ্রব্য, আর শেষ বাক্যে ইংল্যান্ড বা পুরনো বানানে ইংলণ্ড। এর অর্থ কখনও কখনও ইউরোপ বা য়ুরোপও বটে। আদতে শব্দটি আরবি, ব়িলায়াহ্ (ولاية — নিষ্পন্ন যে ধাতু, ولي, থেকে তার অর্থ শাসন করা)। ফারসি বা তুর্কিতে ব়িলায়াত্। অর্থ, (কাজির) শাসনাধীন দেশ, অনেকটা প্রদেশের মত, যা পরে রাজ্যের রূপ নেয়। জ্ঞানেন্দ্রমোহন আর হরিচরণ মিলিয়ে তাই দাঁড়ায়।
বলা হয় মোঘল শাসকরা ফারসিতে ভারতবর্ষীয়দের বলত তাদের ‘বিলায়ত’ বা দেশেও এরকমটি ঘটে। এভাবে বিলায়ত অর্থ দেশ থেকে শাসকদের দেশ হয়ে যায়। একারণে বিলায়ত বলতে এসময় পারস্যকে বোঝানো হত। পরে ইংরেজরা এলে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ইংল্যান্ড, ভারতের ইংরেজ শাসকরা মাঝে মাঝে বিলায়ত (স্বদেশ) যেত, হয়ত ছুটি কাটাতে বা কোনও কাজে। ১৮৫১ সালে কলকাতায় ছাপানো জন মেন্ডিসের বাংলা-ইংরেজি অভিধানে বিলাৎ বা ব়িলাৎ (অভিধানে অবশ্য অন্তঃস্থ ব-এর ক্ষেত্রে আসামি ৰ-এর মত সে সময়ে প্রচলিত হরফ দেওয়া আছে, এই পেট-কাটা হরফটি আসামিতে র, অন্তঃস্থ ব আসামিতে ৱ, বাংলা র-এরমত নিচের বিন্দু পরিবর্তে লম্বা টান) অর্থ দেশ, ইউরোপ। ফ্রান্সিস জোসেফ স্টেইনগ্লাসের ফারসি অভিধান মতে ভারতে শব্দটির অর্থ সাধারণত ইউরোপ, ইংল্যান্ড বা পারস্য। বাংলার অভিধানে বিলাতি অর্থ ইংল্যান্ডের বা ইউরোপের। জন শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানেও বিদেশি বা ইউরোপীয়।
আরবি ব়িলায়াহ্ এখন হিন্দি এবং উর্দুতে ব়িলায়ত (विलायत এবং ولاية)। বাংলার মত হিন্দিতে ব়িলায়ত (जिस समय गाँधीजी विलायत पढ़ने के लिए गए थे... জিস সময় গাঁধীজী ব়িলায়ত পঢ়নে কে লিএ গএ থে... যখন গান্ধীজী বিলাতে পড়তে গিয়েছিলেন...) বলতে ইংল্যান্ড বোঝালেও, বিদেশ অর্থও বিদ্যমান। উর্দুতে ব়িলায়ত অর্থ দেশ, প্রদেশ, বিদেশ, রাজত্ব বা ঈশ্বরের নৈকট্য। ফারসি অভিধানে শব্দটির অর্থ দেশ, প্রদেশ বা রাজত্ব। হবসন-জবসনের মতে আফগানিরা তাদের দেশকে বিলায়ত বলত। শেক্সপিয়ারের উর্দু অভিধানে বিলায়েতি শব্দের একটা অর্থ হল আফগানি। দাগেস্তানে জেলাকে বলা হয় ভ়িলাইয়াত (вилайат)। আর আরবিতে ব়িলায়াহ্ বললে যুক্তরাষ্ট্র বোঝায়। পুরো শব্দবন্ধটি হল আল-ব়িলায়াত আল-মুত্তাহ়িদাহ্ (الولايات المتحدة), বা একীভূত রাষ্টসমূহ।
Sunday, January 20, 2008
অপদস্থ কর্মকর্তা আর অপদস্থ কর্মচারী
অপদস্থ অর্থ অপমানিত, অবমানিত, লাঞ্ছিত, বা অসম্মানিত; পরাভূত অর্থেও ব্যবহৃত হয়, তবে একটু অপ্রচলিত। এই অর্থে শব্দটি বাংলা ভাষার প্রায় সব অভিধানে পাওয়া যায়। শব্দটির আরেক অর্থে ব্যবহার হয় — পদস্থ নয়, পদাধিষ্ঠিত নয় বা উচ্চপদস্থ নয়। তবে আগের অর্থের তুলনায় পরের অর্থের ব্যবহার বেশ কম। ব্যবহার যাই হোক, শব্দটির, বা দুই অর্থে শব্দদু'টির, উচ্চারণ নিয়ে অমত বা দ্বিমতের অভাব নেই। সাহিত্য সংসদের প্রকাশিত সুভাষ ভট্টাচার্যের বাংলা উচ্চারণ অভিধান মতে অপদস্থ যদি অপমানিত হয় তবে উচ্চারণ অপোদস্থো (/ɔpod̪ɔst̪ʰo/) আর পদাধিষ্ঠিত নয় হলে অপদোস্থো (/ɔpɔd̪ost̪ʰo/); তবে প্রথম অর্থেও দ্বিতীয় উচ্চারণের চল আছে। সুভাষ ভট্টাচার্যেরই বাংলা প্রয়োগ অভিধান মতেও তাই, তবে লেখা থেকে বোঝার সুবিধার জন্য পরের অর্থে অ-পদস্থ লেখবার প্রস্তাব রয়েছে সেখানে।
জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দটির সবচেয়ে বেশি অর্থে পাওয়া যায়। এবং অভিধানটির উচ্চারণ কুঞ্চিকা মতে শব্দটির উচ্চারণ হওয়া উচিত অপদস্থো (/ɔpɔd̪ɔst̪ʰo/)। উচ্চারণ পাল্টায়। বিলাতে শিক্ষিতদের গৃহীত উচ্চারণ (Received Pronunciation) এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। খোদ বিলাতেই মিস্চিভ়াস (MISchievous, জোর প্রথম অক্ষরে) কে মিস্চিভ়াস (misCHIEVous, জোর দ্বিতীয় অক্ষরে) এবং চান্স্ (chance) কে খানিকটা চ্যান্স্-এর মত উচ্চারণ করা হচ্ছে, অবশ্য নতুন প্রজন্মের দ্বারা, জে, সি, ওয়েল্স্-এর জরিপ মতে। যদিও এখন কেউ হয়ত এখনও পদস্থ নয় অর্থে অপদস্থো (/ɔpɔd̪ɔst̪ʰo/) উচ্চারণ করে, প্রথম অর্থে কেউই হয়ত নয়। বাংলা একাডেমির প্রকাশিত নরেন বিশ্বাসের বাঙলা উচ্চারণ অভিধানে, যেখানে কেবল অপমানিত অর্থ বিদ্যমান, শব্দটির উচ্চারণ জ্ঞানেন্দ্রমোহনে যা আছে তাই — অপদস্থো (/ɔpɔd̪ɔst̪ʰo/)। বাংলাদেশের জাতীয় গণমাধ্যম ইন্স্টিটিউটের প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা উচ্চারণ অভিধান এবং আফসার ব্রাদার্সের প্রকাশিত প্রমিত উচ্চারণ অভিধান মতে অপমানিত অর্থে শব্দটির উচ্চারণ অপোদস্থো (/ɔpod̪ɔst̪ʰo/)। পদাধিষ্ঠিত নয় অর্থে শব্দটি বাংলা একাডেমি, গণমাধ্যম ইন্স্টিটিউট বা আফসার ব্রাদার্সের অভিধানে পাওয়া যায় না।
পদস্থ শব্দটির বাংলায় উচ্চারণ পদোস্থো (/pɔd̪ost̪ʰo/); বাংলায় স্বভাবতই দ্বিতীয় অ-অক্ষর ও হয়ে যায় আর শেষের যুক্ত অবশ্যই ও। গানে বা কবিতায় পদস্থো (/pɔd̪ɔst̪ʰo/) হতে পারে। পদাধিষ্ঠিত নয় অর্থে অপদোস্থো (/ɔpɔd̪ost̪ʰo/), কারণ উপসর্গের সাধারণত কোনও ক্ষমতা নেই উচ্চারণ পাল্টানোর। আর অপমানিত অর্থে শব্দটির উচ্চারণ অপোদস্থো (/ɔpod̪ɔst̪ʰo/) হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণটি হল নতুন অর্থ, পদস্থ-র বিপরীত নয়, বা পদের বিপরীতার্থক অপদ থেকেও আসেনি।। শব্দটি অপমানিত অর্থে বাংলা। মনিয়ের মানিয়ের-উইলিয়াম্স্-এ কেবল পদাধিষ্ঠিত নয় অর্থটি পাওয়া যায়।
জ্ঞানেন্দ্রমোহনে শব্দটির সবচেয়ে বেশি অর্থে পাওয়া যায়। এবং অভিধানটির উচ্চারণ কুঞ্চিকা মতে শব্দটির উচ্চারণ হওয়া উচিত অপদস্থো (/ɔpɔd̪ɔst̪ʰo/)। উচ্চারণ পাল্টায়। বিলাতে শিক্ষিতদের গৃহীত উচ্চারণ (Received Pronunciation) এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। খোদ বিলাতেই মিস্চিভ়াস (MISchievous, জোর প্রথম অক্ষরে) কে মিস্চিভ়াস (misCHIEVous, জোর দ্বিতীয় অক্ষরে) এবং চান্স্ (chance) কে খানিকটা চ্যান্স্-এর মত উচ্চারণ করা হচ্ছে, অবশ্য নতুন প্রজন্মের দ্বারা, জে, সি, ওয়েল্স্-এর জরিপ মতে। যদিও এখন কেউ হয়ত এখনও পদস্থ নয় অর্থে অপদস্থো (/ɔpɔd̪ɔst̪ʰo/) উচ্চারণ করে, প্রথম অর্থে কেউই হয়ত নয়। বাংলা একাডেমির প্রকাশিত নরেন বিশ্বাসের বাঙলা উচ্চারণ অভিধানে, যেখানে কেবল অপমানিত অর্থ বিদ্যমান, শব্দটির উচ্চারণ জ্ঞানেন্দ্রমোহনে যা আছে তাই — অপদস্থো (/ɔpɔd̪ɔst̪ʰo/)। বাংলাদেশের জাতীয় গণমাধ্যম ইন্স্টিটিউটের প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা উচ্চারণ অভিধান এবং আফসার ব্রাদার্সের প্রকাশিত প্রমিত উচ্চারণ অভিধান মতে অপমানিত অর্থে শব্দটির উচ্চারণ অপোদস্থো (/ɔpod̪ɔst̪ʰo/)। পদাধিষ্ঠিত নয় অর্থে শব্দটি বাংলা একাডেমি, গণমাধ্যম ইন্স্টিটিউট বা আফসার ব্রাদার্সের অভিধানে পাওয়া যায় না।
পদস্থ শব্দটির বাংলায় উচ্চারণ পদোস্থো (/pɔd̪ost̪ʰo/); বাংলায় স্বভাবতই দ্বিতীয় অ-অক্ষর ও হয়ে যায় আর শেষের যুক্ত অবশ্যই ও। গানে বা কবিতায় পদস্থো (/pɔd̪ɔst̪ʰo/) হতে পারে। পদাধিষ্ঠিত নয় অর্থে অপদোস্থো (/ɔpɔd̪ost̪ʰo/), কারণ উপসর্গের সাধারণত কোনও ক্ষমতা নেই উচ্চারণ পাল্টানোর। আর অপমানিত অর্থে শব্দটির উচ্চারণ অপোদস্থো (/ɔpod̪ɔst̪ʰo/) হওয়াটাই স্বাভাবিক, কারণটি হল নতুন অর্থ, পদস্থ-র বিপরীত নয়, বা পদের বিপরীতার্থক অপদ থেকেও আসেনি।। শব্দটি অপমানিত অর্থে বাংলা। মনিয়ের মানিয়ের-উইলিয়াম্স্-এ কেবল পদাধিষ্ঠিত নয় অর্থটি পাওয়া যায়।
Monday, January 14, 2008
ধরণির ধূলি আর ধরণীর ধূলী
বাংলা বানানের আধুনিক নিয়মে অ-সংস্কৃত সব শব্দে হ্রস্ব-ই ব্যবহারের রীতি। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি বা পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির তাই মত। রানী, কাহিনী এবং ভিখারিনি শব্দগুলোও এখন রানি, কাহিনি এবং ভিখারিনি হিসেবে লেখা হচ্ছে, যদিও অনেকের, বিশেষকরে প্রাচীনপন্থীদের, একটু চোখে লাগছেও। কিন্তু এমন অনেক শব্দ আছে যা খোদ সংস্কৃত ভাষাতেই বিকল্পে হ্রস্ব-ই বা দীর্ঘ-ঈ দিয়ে সিদ্ধ; এদের বেশিরভাগ শব্দই বাংলায় দীর্ঘ-ঈ দিয়ে প্রচলিত। তবে অনেকগুলোর ক্ষেত্রেই এখন হ্রস্ব-ই জায়গা করে নিচ্ছে। তরী, সূচী, সূরী, অন্তরীক্ষ, শ্রেণী, অবনী, নালী, কিংবদন্তী, কুটীর, কুম্ভীলক, গণ্ডী, চীৎকার, ধরণী, ধূলী, বীথী, ভঙ্গী, মঞ্জরী, মসী, শ্রোণী, গাণ্ডীব, পেশী, বল্লরী, বেণী, ব্রততী, মালতী, যুবতী, লহরী, মূষীক, সরণী এবং স্বাতী শব্দগুলোর সংস্কৃত ব্যাকরণ মতে তরি, সূচি, সূরি, অন্তরিক্ষ, শ্রেণি, অবনি, নালি, কিংবদন্তি, কুটির, কুম্ভিলক, গণ্ডি, চিৎকার, ধরণি, ধূলি, বীথি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, শ্রোণি, গাণ্ডিব, পেশি, বল্লরি, বেণি, ব্রততি, মালতি, যুবতি, লহরি, মুষিক, সরণি এবং স্বাতি হিসেবে লেখা সিদ্ধ। একতা বা সমতা বিধানের জন্য হ্রস্ব-ই দিয়েই শব্দগুলো লেখা উচিত।
রবীন্দ্রনাথের লেখার ক্ষেত্রে হয়ত অনেকের জন্য সমস্যা দেখা দেবে কি লেখা হবে তা নিয়ে। গান গেয়ে তরি (না তরী) বেয়ে কে আসে পারে। শব্দ না পাল্টে, বানান পাল্টানো অনেকটাই দস্তুর। শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের নাম The Tragedie of Hamlet থেকে The Tragedy of Hamlet হতে খুব বেশি সময় লাগে নি। প্রথম ফোলিও থেকে দ্বিতীয় ফোলিও, ১৬২৩ থেকে ১৬৩২; মাত্র ক'টা বছর। কোয়ার্টোতে অবশ্য নাম ছিল The Tragicall Historie of Hamlet। সেই হ্যামলেটেই প্রায় শুরুর দিকে ছিল Doth make the night ioynt labourer with the day; আমরা এখন পড়ি Doth make the night joint labourer with the day; আর মার্কিনি ছাপায় Doth make the night joint laborer with the day। কে বলে বানান পাল্টানো যায় না বা পাল্টায় না? আর স্যামুয়েল টেলর কোলারিজের ১৭৮৯-এর The Rime of Ancyent Marinere ১৮১৭-তে এসে The Rime of the Ancient Mariner, তার জীবদ্দশাতেই।
রবীন্দ্রনাথের লেখার ক্ষেত্রে হয়ত অনেকের জন্য সমস্যা দেখা দেবে কি লেখা হবে তা নিয়ে। গান গেয়ে তরি (না তরী) বেয়ে কে আসে পারে। শব্দ না পাল্টে, বানান পাল্টানো অনেকটাই দস্তুর। শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের নাম The Tragedie of Hamlet থেকে The Tragedy of Hamlet হতে খুব বেশি সময় লাগে নি। প্রথম ফোলিও থেকে দ্বিতীয় ফোলিও, ১৬২৩ থেকে ১৬৩২; মাত্র ক'টা বছর। কোয়ার্টোতে অবশ্য নাম ছিল The Tragicall Historie of Hamlet। সেই হ্যামলেটেই প্রায় শুরুর দিকে ছিল Doth make the night ioynt labourer with the day; আমরা এখন পড়ি Doth make the night joint labourer with the day; আর মার্কিনি ছাপায় Doth make the night joint laborer with the day। কে বলে বানান পাল্টানো যায় না বা পাল্টায় না? আর স্যামুয়েল টেলর কোলারিজের ১৭৮৯-এর The Rime of Ancyent Marinere ১৮১৭-তে এসে The Rime of the Ancient Mariner, তার জীবদ্দশাতেই।
Saturday, January 12, 2008
জশন-এ-জুলুস
জশন-এ-জুলুস বা জশনে জুলুস (جشن جلوس)। অনেক সময় আবার বানানভেদে জুলুছ। চোখে পড়ে একটি বড় শব্দবন্ধ হিসেবে — জশনে জুলুসে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (প্রচলিত বানানে), নবীর (পৃথিবীতে) আগমন উপলক্ষ্যে সমাবেশে আনন্দোৎসব। বাংলায় আরবি-ফারসি শব্দের অভিধানে শব্দ দুটি আলাদা ভাবে পাওয়া যায় — জশন (جشن) এবং জুলুস (جلوس)। জশন শব্দের অর্থ বাংলায় দাঁড়ায় আনন্দোৎসব; জুলুস অর্থ উপবেশন, একত্র হওয়া বা সামাজিক সমাবেশ। হিন্দিতে লেখা হয় জশ্ন (जश्न) বা জশন (जशन)। যারা এই অনুষ্ঠান পালন করে তাদের মতে জুলুস রূপকঅর্থে মিছিল বা শোভাযাত্রাকেও বোঝায়। জশনে জুলুস শব্দবন্ধটি কখনও আবার উর্দু বা ফারসিতে অভিষেক উৎসবকেও বোঝায়।
দুই শব্দের মাঝে এ বা ই ফারসির ইজ়াফাত (اضافه), যার আরবির ইজ়াফা থেকে আসা। উর্দুতেও বহুলব্যবহৃত। শব্দটির অর্থ যোগ, আর ব্যবহৃত হয় দুই বা তার বেশি বিশেষ্যের শব্দবন্ধে যার প্রথম শব্দের অর্থ প্রাধান্য পেয়ে পরের শব্দের সাথে সম্বন্ধিত হয়, যেমন চোখের পানি, আব্-এ-চশ্ম্ (آب چشم), উর্দুতে, বা মা'উল আইন (ماء العين), আরবিতে,বাংলায় যদিও ক্রমটি পাল্টে যায়। তবে উর্দুতে সাধারণত অশ্রুকে বলা হয় আঁসু (آنسو) আর আরবিতে দাম'উ (دمع)।
জুলুস শব্দটি আরবি ক্রিয়া জালাসা (جلس) বা বসা থেকে এসেছে, ফারসিতে। আর জশন শব্দটি পুরনো ফারসি: পহলবিতে yaśn, আবেস্তায় yaśna, ব্যুৎপন্ন yaz থেকে, যা কিনা সংস্কৃত যজ্ (यज्) এর সমগোত্রীয়। এই যজ্ থেকেই সংস্কৃত যজ্ঞ (यज्ञ) শব্দটি এসেছে; এসেছে সংস্কৃত যজমান (यजमान), যা হিন্দিতে জজমান (जजमान)।
দুই শব্দের মাঝে এ বা ই ফারসির ইজ়াফাত (اضافه), যার আরবির ইজ়াফা থেকে আসা। উর্দুতেও বহুলব্যবহৃত। শব্দটির অর্থ যোগ, আর ব্যবহৃত হয় দুই বা তার বেশি বিশেষ্যের শব্দবন্ধে যার প্রথম শব্দের অর্থ প্রাধান্য পেয়ে পরের শব্দের সাথে সম্বন্ধিত হয়, যেমন চোখের পানি, আব্-এ-চশ্ম্ (آب چشم), উর্দুতে, বা মা'উল আইন (ماء العين), আরবিতে,বাংলায় যদিও ক্রমটি পাল্টে যায়। তবে উর্দুতে সাধারণত অশ্রুকে বলা হয় আঁসু (آنسو) আর আরবিতে দাম'উ (دمع)।
জুলুস শব্দটি আরবি ক্রিয়া জালাসা (جلس) বা বসা থেকে এসেছে, ফারসিতে। আর জশন শব্দটি পুরনো ফারসি: পহলবিতে yaśn, আবেস্তায় yaśna, ব্যুৎপন্ন yaz থেকে, যা কিনা সংস্কৃত যজ্ (यज्) এর সমগোত্রীয়। এই যজ্ থেকেই সংস্কৃত যজ্ঞ (यज्ञ) শব্দটি এসেছে; এসেছে সংস্কৃত যজমান (यजमान), যা হিন্দিতে জজমান (जजमान)।
Thursday, January 10, 2008
রাজাই, ভোরাই, সাঁঝাই
প্রত্যয় হিসেবে -আই শুনতে বেশ লাগে, কিছু শব্দের ক্ষেত্রে তো বটেই। বাংলা অভিধানে পাওয়া যাবে রাজাই (রাজত্ব্), ভোরাই (ভোর বেলা), সাঁঝাই (সাঁঝ বেলা), ইত্যাদি; এর কিছু কিছু হয়ত কবিতাতেও মেলে। যদিও লোকের বুলিতে এই প্রত্যয় তেমন একটা পাওয়া যায় না, সেলাই, কামাই, ধোলাই আর বাঁধাই ছাড়া। দৈনিক পত্রিকার ছাপাখানায় বিভিন্ন ভাগের কাগজ একসাথে করে গুছিয়ে রাখার কাজ হল ঝাড়াই এবং বাছাই। দর্জির কাছে পোশাক বানানোর হল বানাই। এরকম আরও অনেকই আছে, অভিধানের পাতায়।
Sunday, January 06, 2008
সোচ্চার, উচ্চার এবং অনুচ্চার
রাজশেখর, জ্ঞানেন্দ্রমোহন, হরিচরণ, যোগেশচন্দ্র, বা কাজী আব্দুল ওদুদ কোথাওই সোচ্চার শব্দটি নেই। বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে প্রকাশিত উচ্চারণ অভিধানগুলোতে অবশ্য শব্দটি বিদ্যমান, (অত্যন্ত) মুখর বা সরব অর্থে। বাংলা একাডেমির বাংলা-ইংরেজি অভিধানেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। পাওয়া যায় বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে। শৈলেন্দ্র বিশ্বাসের সংসদ বাংলা অভিধানেও পাওয়া যায়: ‘সোচ্চার বিণ. ১। প্রবলভাবে উচ্চারিত বা উচ্চরবে ব্যক্ত (বেতনবৃদ্ধির দাবি সর্বত্র সোচ্চার); ২। অত্যন্ত মুখর (শ্রমিকগণ এ বিষয়ে সোচ্চার)। [বাং. স < সং. সহ + উচ্চার (=উচ্চারণ, কথন)]। (তু. অনুচ্চার)।’ বাংলা একাডেমি অভিধানে: ‘সোচ্চার - বিণ. তীব্র বা প্রবলভাবে উচ্চারিত হয় এমন; অত্যন্ত মুখর; তর্জন-গর্জন; চিৎকার; হৈ চৈ। [স. স + উৎ + চারি, বহু]।’ শব্দটি বাংলা; সংস্কৃতে, অন্তত মনিয়ের মনিয়ের-উইলিয়াম্স্-এ নেই, যদিও অনুচ্চার, উচ্চারণ না করা অর্থে, আছে। একটি ব্লগ থেকে জানা গেল প্রমথনাথ বিশীর হাতে নাকি চার দশক আগে বাংলায় শব্দের ভুল ব্যবহারের বিরোধিতা হয়েছিল। সোচ্চার তেমনই একটি শব্দ। কারণ জ্ঞানেন্দ্রমোহন-এ উচ্চার অর্থ মল এবং মলত্যাগ। স + উচ্চার অর্থ প্রতিবাদী না হয়ে উচ্চার (মলত্যাগ) অভিলাষীকেও বোঝাতে পারে। হরিচরণে উচ্চারের একমাত্র অর্থ উচ্চারণ। মনিয়ের মনিয়ের-উইলিয়াম্স্-এর সংস্কৃত-ইংরেজি অভিধান মতে মল, মলত্যাগ এবং উচ্চারণ। ক্রমটি লক্ষ্যণীয়। তারপরেও ইংরজি clamorous অর্থে সোচ্চার যতটা ভাল খেলে, মুখর তার চেয়ে কম, সরব আরও কম। বাংলার সম্পদ হিসেবেই অভিধানে শব্দটির থাকা উচিত ছিল।
Friday, January 04, 2008
ভ-এ ল-ফলা
ভ্লাদিমির নবোকভ (Владимир Набоков) বা ভ্লাদ্যিম্যির নবোকফ, রুশ উচ্চারণ মতে হয়ত এরকমই কিছু একটা হবে, এই য-ফলাটা তালব্যীভবনের (palatalisation) সূত্র। গেল ডিসেম্বরে দেশ-এর এক সঙ্খ্যায় ভ্লাদিমির পুতিন লিখতে গিয়ে একটি নতুন যুক্তাক্ষরের ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলায় সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ভ-এ হস্ চিহ্ন দিয়ে ল, ভ এর নিচে ল-ফলা বা লাইনোটাইপের যুগে (রাশিয়া থেকে প্রকাশিত পুরনো বইগুলোয় যেমনটি দেখতে পাওয়া যায়) ভ এর পাশে লম্বা দণ্ডযুক্ত নিচে ঝুলে পড়া ল-ফলা দিয়ে লেখা হত; এখনও তাই হয়। আনন্দবাজার ছাপানোর জন্য কম্পিউটারে নিজের তৈরি হরফ ব্যবহার করে। একাজে আনন্দবাজার প্রায় তিনটি আলাদা আলাদা ফন্ট ফাইল ব্যবহার করে, অন্তত দৈনিক পত্রিকাটির ওয়েব সাইট থেকে তাই মনে হয়। এর তিন নম্বর ফাইলে এই ভ এবং ল-এর যুক্তাক্ষরটি বেশ আগেই রাখা ছিল, ব্যবহার এতদিন তেমন একটা চোখে পড়ে নি। এই যুক্তাক্ষরটি বানানো হয়েছে ভ্র-এর আদলে। সাধারণভাবে প্রচলিত যক্তাক্ষরের বাইরে সাধারণত নতুন যুক্তাক্ষর প্রচলনের প্রয়োজন আছে কি?
Thursday, January 03, 2008
রেজামন্দি, ওয়াফা-বরদার
ঈদের (বানানটা কি ইদ হওয়া উচিত বিদেশি শব্দ হিসেবে, আরবিতে দীর্ঘ ঈ, عيد; ইংরেজিতে অল্প হলেও Id প্রচলিত আছে; হিন্দিতে ईद, ঈদ) জামাত বা প্রার্থনা সমাবেশে ইমামের ভাষণে শোনা গেল রেজামন্দি বা -মন্দী এবং ওয়াফা-বরদার, হয়ত ব়ফা-বরদার (প্রথমটিতে ব-এর নিচে বিন্দু, র নয়, আরবি و বোঝাতে)। ইমামের উপদেশ আমাদের খোদার রেজামন্দির জন্য কাজ করতে হবে এবং ওয়াফা-বরদার হতে হবে। রেজামন্দি (ফারসি رجامندى) শব্দের অর্থ খুশি, শব্দটি অন্যভাবে বাংলাদেশে, হয়ত অন্য কোনও জায়গায়ও, নাম হিসেবে প্রচলিত আছে, আরজুমন্দ (آرزو مند)। উইলিয়াম গোল্ডস্যাকের মুসলমানি বাংলা-ইংরেজি অভিধান এবং শেখ গুলাম মাকসুদ হিলালির বাংলায় আরবি-ফারসি উপাদানে শব্দটি দু'টি বানানে পাওয়া যায় — রেজামন্দী এবং রিজামন্দী। আরবি ও ফারসির ই-এর এ হওয়াটা বাংলায় হরহামেশাই ঘটে। শুদ্ধ বাংলা অভিধানে শব্দটির দেখা পাওয়া ভার। আর ওয়াফা-বরদার (وفابردار) শব্দটির অর্থ বিশ্বাসরক্ষাকারী। একটি শব্দবন্ধ হিসেবে না পাওয়া গেলেও ওয়াফা বা ওফা এবং বরদার হিসেবে প্রায় সব অভিধানেই বর্তমান। ইসলাম ধর্মীয় অনুশাসন আলোচনায় অনেক স্বল্পশিক্ষার এলাকায়ও এরকম আরও কিছু শব্দের ব্যবহার দেখা যায় যা সাধারণত মান্য বাংলায় ব্যবহৃত হয় না। ক্ষেত্রভেদে ভাষায় শব্দের এই ব্যবহার ভাষাপ্রকার, ইংরেজিতে register, নামে পরিচিত।
Subscribe to:
Posts (Atom)